২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

টিসিবির পণ্য যেন সোনার হরিণ

-

করোনা পরিস্থিতিতে সমগ্র বিশ্ব স্থবির হয়ে আছে। বিশ্ব অবস্থান করছে এক সঙ্কটময় অবস্থায়। শুধুই সঙ্কট নয়, মনে হচ্ছে পৃথিবী তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। এ যেন এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। চার দিকে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবুও থেমে নেই মানুষের জীবনযাত্রা। প্রতিনিয়তই মানুষ নিজের জীবন-জীবিকার তাগিদে ছুটে চলছে। এক মুঠো ভাত সন্তানের মুখে উঠিয়ে দিতে, এ যেন চিঠির রানারের মতো বিরতিহীন ছুটে চলা। মাথার উপর ছাদ হয়ে আছে সুবিশাল আকাশ, প্রখর রোদ কিংবা ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে ইট-পাথরের গড়া শক্ত ফুটপাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে মধ্যবিত্ত হাজারো নারী-পুরুষ। কেউ মাস্ক পরে আবার কেউ মুখে নেকাব পরে মাথা নিচু করে, কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে। কপালে চিন্তার ভাঁজ, শিল্পী আবদুল জব্বারের কালজয়ী একটি গানের ভাষায় ‘বিধিও যাদের কান্না শোনে না’। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা ও পেঁয়াজসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। পাঁচজনের সংসারে রোজগার একজনের। এতে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। দুই লিটার তেলের দাম বাজারে ৪০০ টাকা। টিসিবির ট্রাকে সেই তেল ২২০ টাকা পেলে ৮০ টাকা সাশ্রয়। যার জন্য রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। মানুষগুলোর দৌড় দেখলে মনে হবে, খাদ্যের জন্য হাহাকার চলছে। কম দামে টিসিবির পণ্য পেতে পেটের ক্ষুধা মেটাতে কষ্টে থাকা মানুষগুলোর এক নিদারুণ চেষ্টা। সুকান্ত ভট্টাচার্যের কথায়- ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’। দেশে দিনের পর দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম। নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত পরিবারের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের বাজার। এ পরিস্থিতিতে কম টাকায় টিসিবির পণ্য কিনতে সড়কে সড়কে ছুটে চলছে এই দুই শ্রেণীর পরিবারের নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে শিশুরাও। এ দিকে নানা অভিযোগ, অনুযোগ ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলছে সরকারি সংস্থা- ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি। পণ্যের স্বল্পতা, ওজনে কম দেয়া, দেরি করে স্পটে পণ্য নিয়ে আসা, জোর করে অপ্রয়োজনীয় পণ্য গছিয়ে দেয়া, দীর্ঘসময় ধরে লাইনে দাঁড় করানোর পর ‘পণ্য নাই’ বলে ক্রেতা বিদায় করে দেয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। ফলে ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। এতে ক্ষুব্ধ হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের রোষানলে পড়া মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, টিসিবির একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর সাথে যোগসাজশ করে সরকারের এ উদ্যোগ ব্যর্থ করার পাঁয়তারায় লিপ্ত। তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ টিসিবি।

টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ২০০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে এসব পণ্য বিক্রি করে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৫টি, চট্টগ্রামে ১৫টি, অন্যান্য বিভাগীয় শহরে পাঁচ-ছয়টি ও জেলা সদরে দু’টি করে ট্রাকে পণ্য বিক্রি করা হয়। আর প্রতিটি ট্রাকে প্রতিদিন থাকে ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি করে মসুর ডাল, ৩৫০ থেকে ৪০০ কেজি চিনি, ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি পেঁয়াজ এবং ৩০০ থেকে ৪০০ লিটার সয়াবিন তেল।

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বাজার স্থিতিশীল ও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকার টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে চিনি, ছোলা, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় পণ্যের সরবরাহ কম থাকায় সাধারণ ক্রেতা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য পান না। মানুষ ছোলার জন্য লাইনে দাঁড়ালেও প্রায়ই পান না, আবার পেলে তার সাথে মসুর ডাল নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। মসুর ডাল নিতে চাইলে ক্রেতার কাছে ছোলা বিক্রি করে না। ‘খুচরা নাই’ এমন অজুহাতে রাখা হচ্ছে বাড়তি মূল্য। বাড়তি মূল্য দিতে না চাইলে ক্রেতাকে লাইন থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। ক্রেতা যখন খুচরা নিয়ে আসছেন, তখন আর আগের লাইনে দাঁড়ানো সুযোগ পাচ্ছেন না। দাঁড়াতে হচ্ছে নতুন লাইনে। আর নতুন লাইনে দাঁড়ালে আবার ঘণ্টা পর ঘণ্টা পার। আর পণ্যের ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ তো বহু পুরনো। এ কঠিন সময় দুই বেলা দুই মুঠো আহার মুখে দেয়াই দুষ্কর। মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়ে কী লাভ? পারলে চাল-ডালের দাম কমিয়ে মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ দূর করার চেষ্টা করলে জনগণের উপকার হয়। সত্যি কথা বলতে কী, দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের পরিবারে খাবারের জন্য হাহাকার লেগেই আছে। এই দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও মানুষ স্বপ্ন দেখে আগামী দিনের আশা নিয়ে। এই আশা নিয়ে ঘরে ঘরে প্রতিদিন বেঁচে থাকে আধপেট খাওয়া মানুষ, আর আশা করে ভালো দিন আসবে; কিন্তু দিনের নাগাল পাওয়া আর হয়ে ওঠে না।

সরকার নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহের লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকার ৩০টি পয়েন্টসহ জেলা, উপজেলায় খোলা ট্রাকে করে এবং নির্ধারিত ডিলারদের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু করেছে। শুরুর পর থেকেই অভিযোগ উঠেছে টিসিবির এই পণ্য বিক্রি কার্যক্রম নিয়ে।

আর ডিলারদের খামখেয়ালি তো রয়েছেই- কারো কারো অভিযোগ, দলীয় লোকদের ডিলার করায় তাদের ইচ্ছামতো আসে আর ইচ্ছামতো বন্ধ করে। সকাল ১০টা থেকে সরকার নির্ধারিত স্পটে ট্রাক নিয়ে এসে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও দুপুর ১২টায় স্পটগুলোতে ট্রাক আসে, কখনো দিন পার হয়ে যায়। ১২টার পর এসে নানা ধরনের আনুষঙ্গিক কাজ সারতে পার করে দেয় এক ঘণ্টার বেশি সময়। এই দীর্ঘ সময় প্রচণ্ড রোদে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্রেতারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ বিষয়টির প্রতি ডিলার বা ট্রাক সেলের সাথে সম্পৃক্তদের ভ্রুক্ষেপ নেই। আর এসব কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগছেন খেটেখাওয়া দিনমজুর শ্রেণীর মানুষগুলো, যারা প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন কিনে খান। তারা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। তারা কিভাবে এই বাড়তি দামের সাথে খাপ খাইয়ে চলবেন? জিনিসের দাম বেড়েছে, বাড়েনি মানুষের শ্রমের মূল্য। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো- এই অস্থিতিশীল অবস্থা নিরসনের সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
tafazzalh59@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতের মাটিতে ইতিহাস লিখলেন হাসান মাহমুদ চুয়াডাঙ্গায় ড্রাগন বাগানে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শ্রমিকের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রে বিচারককে হত্যার দায়ে এক শেরিফ গ্রেফতার বাড়িতে আশ্রয় নেয়া তরুণকে বাঁচাতে এসিডে ঝলসে গেল ২ নারী আজ থেকে ভারতে ‘অবৈধ’ শেখ হাসিনা, এখন কী পদক্ষেপ নেবে ভারত জুলাই-আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে নতুন ধারার রাজনীতি সূচনা করবে ছাত্রদল ফলো-অনের শঙ্কায় বাংলাদেশ রাঙ্গামাটিতে সংঘর্ষ-ভাঙচুর, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও রাজনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে চায় বাংলাদেশ সাবেক খতিব ফিরে আসাকে ঘিরে বায়তুল মোকাররমে উত্তেজনা আগামী সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সকল