সারসকভ-২ : আল্ফা থেকে ওমিক্রন
- ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
- ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:০৫
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
করোনাভাইরাস হলো একটি প্রোটিন পার্টিকেল যার কেন্দ্রে থাকা রাইবোনিউক্লিক এসিড বা জিনোমটি সাধারণত ২৭ থেকে ৩৪ হাজার নিউক্লিওটাইডের অণু দিয়ে চেইনের মতো করে তৈরি। জিনোমটিকে তোয়ালের মতো প্যাঁচিয়ে রেখে সুরক্ষা দেয় ২৪৮-৩৬৫ অ্যামাইনো এসিড সমৃদ্ধ আরএনএ বাইন্ডিং প্রোটিন যাকে বলে নিওক্লিওক্যাপ্সিড প্রোটিন, আর পুরো জিনোম এবং নিউক্লিওক্যাপসিড প্রোটিনকে এনভেলপের মতো ঢেকে রাখে লিপিড বাই লেয়ারের একটি আবরণ যাকে বলে এনভেলপড মেমব্রেন।
করোনায় গড়ে মোট ৭৮টি স্পাইক প্রোটিন আছে। গড়ে এক হাজার ২৭৩টি এমাইনো এসিড দিয়ে তৈরি প্রতিটি স্পাইক প্রোটিন এন- টার্মিনাস (এমাইনো এসিড ১-১৩ নম্বর পর্যন্ত) এবং আরবিডি (এমাইনো এসিড ১৪-১২৭৩ নম্বর)-এই দুই অংশে বিভক্ত। আরবিডি অংশ আবার এস১ সাবিউনিট (১৪-৬৮৫ এমাইনো এসিড) এবং এস২ সাবিউনিট (৬৮৬-১২৭৩ এমাইনো এসিড)-এই দুই অংশে বিভক্ত যারা রিসেপ্টর বাইন্ডিং এবং মেমব্রেন ফিউশনের জন্য দায়ী।
প্রকৃতপক্ষে স্পাইক প্রোটিন হলো প্রকৃতির ২০টি এমাইনো এসিড দিয়ে পুঁতির মালার মতো করে সাজানো একটি চেইন। কোন অ্যামাইনো এসিড কোথায় বসবে তা জেনেটিক্যালি পূর্ব নির্ধারিত। জেনেটিক কোডে পরিবর্তনের ফলে এক হাজার ২৭৩ পয়েন্টের যেকোনো অ্যামাইনো এসিডের একটি, অন্য একটি অ্যামাইনো এসিড দিয়ে পরিবর্তিত কিংবা সংযোজন-বিয়োজন হলেই মিউটেশন।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট : বি.১.৬১৭.২ ( ভারত, অক্টোবর, ২০২০)
১১ মে, ২০২১ সালে ভারতে আবিষ্কৃত ভ্যারিয়েন্টি ১৭৬টি দেশে সংক্রমণ করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃৃত সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভ্যারিয়েন্ট এটি।
ডেল্টার বৈজ্ঞানিক কোড নাম : বি.১.৬১৭
লিনিয়েজ বি.১.৬১৭-এর তিনটি ভিন্নধর্মী সাব লিনিয়েজ বা সাব-টাইপ বা সাব-ভ্যারিয়েন্ট আছে। এগুলো হলোÑ বি.১.৬১৭.১; বি.১.৬১৭.২ এবং বি.১.৬১৭.৩। এর সবগুলো সাব-টাইপেই পি৬৮১আর মিউটেশন হয়। এ ছাড়া এই বি.১.৬১৭ লিনিএজের মধ্যে আছে এল৪৫২আর, ই৪৮৪কিউ এবং ডি৬১৪জি নামে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মিউটেশন।
গবেষণায় দেখা গেছে, ডেল্টায় পি৬৮১আর মিউটেশন থাকার কারণে এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শ্বাসতন্ত্রে অন্য ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্তদের তুলনায় এক হাজার গুণ বেশি ভাইরাস থাকে। ফলে হাঁচি-কাশি ও কথার মাধ্যমেও অনেক বেশি ইনফেকশন ছড়ায়।
ডি৬১৪জি : মানে স্পাইক প্রোটিনের অ্যামাইনো এসিড সিকুইন্সের ৬১৪ নম্বর পজিশনে বসা এস্পারটিক এসিড অ্যামাইনো এসিডটি গ্লাইসিনে রূপান্তর হয়।
এই মিউটেশনের ফলে ভাইরাসের সারফেসে যে স্পাইক প্রোটিন থাকে তার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। মানুষের তৈরি ফুরিন এনজাইমটিকে করোনাভাইরাস হাইজ্যাক করে স্পাইক প্রোটিনকে কাজে লাগিয়ে সেলে ঢোকে। ফলে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সহজেই মানব শরীরের সেলে ঢুকে যায়। এ কারণে এদের সংক্রমণ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
এল৪৫২আর : মানে পজিশন ৪৫২-তে অ্যামাইনো এসিড লিউসিনের পরিবর্তে আরজিনিন প্রতিস্থাপিত হয় ফলে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন মানুষের সেলের এসিই-২ রিসেপ্টরের প্রতি অধিক হারে আকৃষ্ট হয়।
ডেল্টার এই ভ্যারিয়েন্টটি কাপ্পা এবং এপ্সিলন ভ্যারিয়েন্টেও পাওয়া যায়। এই মিউটেশনের কারণে রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমাইন প্রোটিনকে কাজে লাগিয়ে এন্টিবডি দ্বারা ভাইরাস নিউট্রালাইজেশন প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়।
ডি৬১৪জি : ডেল্টায় যতগুলো স্পাইক মিউটেশন হয় তার একটির নাম ডি৬১৪জি।
ডি৯৫০এন : ডেল্টার এই মিউটেশনটি অন্য কোনো ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যায় না। এই স্পাইক মিউটেশনের নাম ডি৯৫০এন। এই মিউটেশনটি রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেইনের এরিয়ার বাইরে যাদের কাজ হলো ভাইরাসকে মানুষের কোষের সাথে মিশে শরীরে ঢুকতে সাহায্য করা। এর কারণে ভাইরাল লোডও বেড়ে জায়।
ভ্যারিয়েন্টগুলোতে নেই কেবল ডেল্টাতেই আছে। কিছু মিউটেশন থাকার কারণে এটি যেমন বেশি সংক্রমণশীল তেমনি বেশি রোগ সৃষ্টিকারী। এর এল৪৫২আর পজিশনে মিউটেশন থাকার কারণে বেশি ইনফেক্টিভ। টি৪৭৮কে মিউটেশন থাকার কারণে আমাদের শরীরের ইমিউন সেল চিনতে পারে না। অর্থাৎ ইমিউন সেল থেকে পালিয়ে থাকতে পারে। আর পি৬৮১আর পজিশনে মিউটেশন থাকার কারণে রোগটিকে বেশ সিভিয়ার করে ফেলতে পারে। অতিরিক্ত কে৪১৭এন মিউটেশনের কারণে নতুন আরেকটি ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা প্লাসের জন্ম হয়েছে নেপালে। এটি অরিজিনাল উহানের স্ট্রেইনের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি সংক্রমণশীল। আলফার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি থাকে এই ভ্যারিয়েন্টে। অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় ডেল্টার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কম কার্যকর।
ডেল্টার স্পাইক প্রোটিনের এন-টারমিনাল ডোমেইনে আরেকটি মিউটেশন হয় যার কাজ এন্টিবডি বাইন্ড করতে বাধা দেয়া।
ভাইরাসের জেনেটিক চেঞ্জ হয় যখন ভাইরাসটি হোস্ট পরিবর্তন করে। মানব শরীরের বাইরে এর রূপান্তর সম্ভব নয়।
ডেল্টা ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড মাত্র চার দিন অথচ উহানে আবিষ্কৃত অরিজিনাল সারসকভ-২-এর গড় ইনকিউবেশন পিরিয়ড ছিল সাত দিন।
ওমিক্রন বি.১.১.৫২৯ : গত ২৬ নভেম্বর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন সবচেয়ে খারাপ ও উদ্বেগ সৃষ্টিকারী এ পর্যন্ত পঞ্চম ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন এই ভ্যারিয়েন্টটির নাম দেন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট-বি.১.১.৫২৯। ধারণা করা হচ্ছে, এই ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও বেশি সংক্রমণশীল, মারাত্মক, ভ্যাকসিন কার্যকারিতা দ্রুত বিনষ্টকারী প্রকৃতির হবে। এ ছাড়াও এই ভ্যারিয়েন্ট ইমিউন সিস্টেমকে ফাঁকি দিয়ে অধিক সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন। এরা শুধু বয়স্ক নয় বরং অল্প বয়স্কদেরও আক্রান্ত করছে।
ওমিক্রনের জন্ম কিভাবে হলো?
প্রথমত, ইমিউনো কম্প্রামাইজড রোগীর দীর্ঘমেয়াদি অসম্পূর্ণ চিকিৎসা যে নতুন ভ্যারিয়েন্ট উৎপত্তির সবচেয়ে বড় কারণ এ ব্যাপারে সবাই একমত।
দ্বিতীয়ত, রিভার্স জুনোসিস প্রক্রিয়ায় এর উৎপত্তি। এ কথা সর্বজনবিদিত যে কোভিড-১৯ এসেছে বাদুর থেকে মানুষে, তারপর ধারণা করা হয় তা মানুষ থেকে অন্য প্রাণীতে, আবার অন্য প্রাণী থেকে মানুষে।
তৃতীয়ত, মলনুপিরাভির নামে এন্টিকরোনা ভাইরাল ড্রাগের অসম্পূর্ণ এবং অসতর্ক প্রয়োগ।
ফুসফুসের শ্বাসনালীতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রন প্রায় ৭০ গুণ দ্রুত র্যাপলিকেট করে ফলে এটি পূর্ববর্তী ডেল্টার তুলনায় কম গুরুতর কারণ এটি ফুসফুসে ডেল্টার তুলনায় ১০ গুণ কম আক্রান্ত করে। ওমিক্রন ডেল্টার তুলনায় ৯১ শতাংশ কম মারাত্মক, ৫১ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকিও কম।
ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ভ্যাকসিন ইন্ডিউসড এন্টিবডির ক্ষমতা ৪০ গুণ কমিয়ে দিতে পারে।
আলফা, বিটা, গামা এবং ডেল্টার স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশন সংখ্যাÑ ১০, ১১, ১২ ও ৯। আর ওমিক্রনের আছে ৬০টি মিউটেশন। এর মধ্যে ৫০টি অ্যামাইনো এসিড পরিবর্তনকারী মিউটেশন এবং ১০টি সাইলেন্ট মিউটেশন।
ওমিক্রনের মিউটেশন স্পাইক প্রোটিন, নিউক্লিওক্যাপসিড প্রোটিন এবং নিউক্লিওটাইড অণুতে সংঘটিত হয়।
স্পাইক প্রোটিনের ৩৬টি মিউটেশনের মধ্যে ২৩টি মিউটেশন অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোতেও পাওয়া যায়। বাকি ১৩টি ওমিক্রন স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশন কেবল ওমিক্রনের জন্যই নির্দিষ্ট।
ওমিক্রনের সাব-ভেরিয়েন্ট : গবেষকরা ওমিক্রনের আরো চারটি সাব-ভ্যারিয়েন্টের প্রমাণ পেয়েছেন। এগুলোÑ বিএ.১/বি.১.১.৫২৯.১, বিএ.২/বি.১.১.৫২৯.২, বিএ.৩?/বি.১.১.৫২৯.৩ এবং বি.এ.৩/বি.১.১.৫২৯.৪ নামে পরিচিত। মিউটেশনে পার্থক্য থাকার পাশাপাশি ডেল্টা ও ওমিক্রনের মধ্যে উপসর্গগত পার্থক্যও বিদ্যমান। ওমিক্রন ডেল্টার চেয়ে দ্বিগুণ এবং অরিজিনাল ভার্সনের চেয়ে চারগুণ সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন।
মুখের স্বাদ এবং ঘ্রাণশক্তি মোটামোটি ঠিক থাকে ওমিক্রনে। কিন্তু ডেল্টায় দু’টিই বেশ প্রভাবিত হয়। এ ছাড়া ওমিক্রনে ব্রেক থ্রু ইনফেকশন, রি-ইনফেকশন, আপার রেস্পিরেটরি ট্রাক্ট ইনফেকশন, ভ্যাকসিন ফাঁকি দেয়া ইত্যাদি বেশি। ডেল্টার মারণক্ষমতা ওমিক্রনের চেয়ে অনেক বেশি।
ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট : মাত্র দু’টি ভ্যারিয়েন্টকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে ঘোষণা করেছে।
ল্যাম্বডা (সি.৩৭) : পেরুতে প্রথম শনাক্ত হয়। ২৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে ঘোষণা করে। এন্টিবডির বিরুদ্ধে আলফা কিংবা বিটা ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও বেশি রেজিস্ট্যান্স গড়ে তোলে। কিন্তু সব মিলিয়ে অতটা প্রভাব বিস্তার করতে না পারার কারণে ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট নাম ধারণ করেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।
মিউ (বি.১.৬২১) : গ্রিক বর্ণমালার ১২তম বর্ণ। জানুয়ারি, ২০২১ সালে কলম্বিয়াতে প্রথম শনাক্ত হয়। দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপের কয়েকটি রাষ্ট্রে কিছুদিন সামান্য প্রভাব বিস্তার করার পর এখন প্রভাব নিভু নিভু।
ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার ইনভেস্টিগেশন : এপসিলনÑ বি.১.৪২৭/বি.১.৪২৯ (আমেরিকা, মার্চ, ২০২০) ২০২০ সালের জুলাই মাসে ক্যালিফোর্নিয়াতে শনাক্ত হয়। মে, ২০২১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে এপসিলন নামকরণ দিয়ে ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে ঘোষণা করে। তবে জুন, ২০২১ সালের পির থেকে এটিকে ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার ইনভেস্টিগেশনের আওতায় নিয়ে আসে।
জিটা : পি.২ (ব্রাজিল, এপ্রিল, ২০২০)। এটি ব্রাজিলে ২০২০ সালে শনাক্ত হয় এবং ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্টের মর্যাদা পায়। কিন্তু জুলাই, ২০২১ সালে একে ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার ইনভেস্টিগেশনের নামে নামাঙ্কিত করা হয়। থিটা (পি.৩) : (ফিলিপাইন, জানুয়ারি, ২০২১) হু’র হিসাবে এটাও বিলুপ্তপ্রায় ভ্যারিয়েন্ট।
ভ্যারিয়েন্টস আন্ডার মনিটরিং
ইটা : বি.১.৫২৫ (একাধিক দেশে, ডিসেম্বর, ২০২০) শনাক্ত হওয়ার পর দ্রুত ২৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়লে মার্চ, ২০২১ সালে ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার ইনভেস্টিগেশন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে এমন দু’টি মিউটেশন (ই৪৮৪কে এবং এফ৮৮৮এল) আছে যা ইতঃপূর্বে অন্য কোনো ভ্যারিয়েন্টে ছিল না। তবে বর্তমানে এটি বিলুপ্তপ্রায় ভ্যারিয়েন্ট।
কাপ্পা : বি.১.৬১৭.১ (ভারত, অক্টোবর, ২০২০)
অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট : ডেলমিক্রনÑ মূল সংক্রমণ সংখ্যার তুলনায় এদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। ডেলমিক্রন হলো বিরল ধরনের কো-ইনফেকশনের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
যখন একই ব্যক্তিকে একই সাথে একই সময়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এবং ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত করে। ডেলমিক্রন নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট না হওয়ার কারণে আলাদা কোনো উপসর্গও নেই।
ডেল্টা ও ওমিক্রন এই দু’টি ভ্যারিয়েন্টেরই তাদের নিজস্ব জিন অদলবদল করার ক্ষমতা থাকায় ডেলমিক্রনে দুই ভ্যারিয়েন্টেরই স্পাইক প্রোটিন থাকে। এই প্রক্রিয়াকে রিকম্বিনেশন বলে। ওমিক্রনের উচ্চ সংক্রমণ এবং ডেল্টার মারাত্মক রোগ তৈরি করার ক্ষমতা মিলেমিশে ডেলমিক্রন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে যদিও এটি খুবই বিরল ঘটনা।
টুইন্ডেমিক : মানে যমজ প্যান্ডেমিক। অর্থাৎ যদি কোনো কারণে দু’টি ভিন্ন নামের ভাইরাস দ্বারা সারা বিশ্বে একই সাথে দু’টি প্যান্ডেমিক মহামারী সমান তালে চলে তাকেই টুইন্ডেমিক বলে।
আমরা জানি, ১৯১৮ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে একটি বড় ধরনের মহামারীতে বিশ্বে কোটি কোটি লোকের প্রাণহানি হয়েছিল। সে ভাইরাসই রিফটিং-শিফটিং হয়ে গত ১০০ বছরে বেশ কয়েকটি মহামারী বিশ্ববাসীকে অনেক ভুগিয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের নতুন নতুন জেনেটিক পরিবর্তনের ফলে বছর বছর নতুন ভ্যাকসিন নিতে হয়। সম্প্রতি আমেরিকার চিকিৎসক, সংক্রামক রোগ এবং অতিমারী বিশেষজ্ঞ সে দেশের এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চলতি বছরে ফ্লুয়ের নতুন একটি স্ট্রেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রতি বছরই বিজ্ঞানীরা একটি আন্দাজ করে নেন সে বছরের শীতে ফ্লুয়ের জীবাণু কেমন আকার নেবে। সেই হিসাবে টিকাও তৈরি করা হয়। কিন্তু এ বছর এইচ৩এন২ নামের নতুন একটি প্রজাতির ফ্লু-ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এটির গড়ন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কোনো আন্দাজ ছিল না। তাদের কোনো পূর্বাভাস না থাকার ফলে এ বছর ফ্লুয়ের যে টিকাটি বাজারে এসেছে, তা জীবাণুটির প্রায় কোনো প্রভাব ফেলছে না। ফলে হু হু করে বাড়ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা-আক্রান্তের সংখ্যা। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘টুইন্ডেমিক’ অর্থাৎ যমজ অতিমারী। কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করলেও বর্তমান প্যান্ডেমিকে এর কোনো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
শীত কেটে গেলে এই সমস্যা কমবে বলেও আশা। সারা বিশ্বে টুইন্ডেমিক হলেও উপমহাদেশে এর সম্ভাবনা খুব কম। এখানে ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ বেশি বিধায় একই সাথে করোনা প্যান্ডেমিক হওয়ার সম্ভাবনা কম।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, শেরেবাংলা নগর
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা