২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য

- ছবি : সংগৃহীত

ভাড়া নির্ধারণের দুই মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও গণপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ হয়নি। বিআরটিএ নির্ধারিত চার্টের নিয়ম অনুসারে ভাড়া আদায় করার কথা। কিন্তু বাসের হেলপার-কন্ডাকটররা ওয়েবিল পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় করতে গিয়ে বাস থেকে যাত্রী ফেলে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন না। তাদের দুর্ব্যবহার ও অমানবিক আচরণে যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ওয়েবিল পদ্ধতির নামে যাত্রীদের হেনস্তা করা হচ্ছে। কিলোমিটার-প্রতি ভাড়া নেয়ার কথা থাকলেও ওয়েবিলের দোহাই দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

গত বছরের নভেম্বরে ডিজেলের দাম বাড়ায় ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য দেখা দেয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংশ্লিষ্ট নেতাদের সমন্বয়ে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। অথচ যাত্রীদের এখনো দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় সিটিং সার্ভিস বন্ধ হলেও লোকাল সার্ভিসে সিটিং সার্ভিসের ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে বিআরটিএ’র দৃশ্যমান ভূমিকা চোখে পড়েনি। ওয়েবিল চেকের নামে ভাড়া নৈরাজ্য চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতা হতাশাজনক।

শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়ার দাবিতে আন্দোলন করলে একপর্যায়ে দাবি মেনে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবু সড়কে ভাড়া নৈরাজ্য থামেনি। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে হাফ ভাড়া নিয়ে তর্কবিতর্ক লেগেই থাকে। নতুন ভাড়া নির্ধারণ করার পর কোনো পরিবহন বেশি ভাড়া নিলে জাতীয় জরুরি সেবা সার্ভিস নম্বর ৯৯৯-এ অভিযোগ করলে পুলিশ গাড়ি আটক করার পাশাপাশি জরিমানা করত। এখন আর তেমনটি দেখা যায় না। বিআরটিএ জনবল দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য কিছুটা হলেও কমতো। রাজধানী ঢাকায় কোনো কোনো রুটে ওয়েবিল পদ্ধতির নামে যাত্রীদের পকেট কাটা হচ্ছে তা বিআরটিএর অজানা নয়। প্রকাশ্যে নির্দিষ্ট জায়গায় চেকিং হচ্ছে। বিআরটিএ উদ্যোগী হলে ওয়েবিল পদ্ধতি বাতিল করতে পারে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করতে পারে। যাত্রীদের সুবিধার্থে জাতীয় জরুরি সেবা সার্ভিসের মতো বিআরটিএ জরুরি সেবা সার্ভিস চালু করতে পারে। আমরা মালিকপক্ষের চেকিংয়ের বিরোধী নই; সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায়ের পক্ষে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরোধী। প্রত্যেকটি বাসে ভাড়ার চাট রাখা বাধ্যতামূলক হলেও বেশির ভাগ বাসই ভাড়ার তালিকা রাখছে না। যাত্রীরা তালিকা অনুযায়ী ন্যায্য ভাড়া দিতে চাইলেও কন্ডাকটর-হেলপার বিরোধে জড়াচ্ছেন। বাস থেকে ফেলে যাত্রী হত্যা করছেন। গত ২০ জানুয়ারি এক যাত্রী ডেমরা থেকে বাসে করে গুলিস্তানে যাচ্ছিলেন; ভাড়া নিয়ে বাগ্নিতণ্ডার জেরে রাজধানীর ওয়ারিতে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এতে ওই যাত্রী মারা যান। কন্ডাকটর ২০ টাকা ভাড়া চাইলে ওই যাত্রী ১৫ টাকা ভাড়া দেন। মাত্র পাঁচ টাকার জন্য একজন যাত্রীকে এভাবে বাস থেকে ফেলে দেয়ার ঘটনায় বিআরটিএ কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা আমরা জানি না। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।

ওয়েবিল পদ্ধতিতে মালিকপক্ষের লোকেরা একই রুটের কয়েকটি জায়গায় চেক করে থাকে। ফলে যাত্রীরা যেখানেই নামুন না কেন নির্দিষ্ট দূরত্বের ওয়েবিল চেকের মূল্যে ভাড়া দিতে হয়। ওয়েবিল পদ্ধতি যাত্রীদের কল্যাণে করা হয়নি; বরং মালিকের পকেট ভারী করার সুবিধার্থে করা হয়েছে। ফলে ওয়েবিল চেকিং ফাঁদে প্রতি যাত্রীকে প্রতি চেকিংয়ে অতিরিক্ত পাঁচ টাকা দিতে হচ্ছে। যেমন- খামারবাড়িতে কোনো পরিবহনের চেকিং পোস্ট থাকলে; একজন যাত্রী মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ (খামারবাড়ি) থেকে আসাদগেট যাবেন। ওয়েবিল চেকিংয়ের কারণে তাকে ১৫ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা দিলেও তারা তা নিচ্ছেন না। ফার্মগেট থেকে কোনো যাত্রী উঠতে চাইলে এবং আসাদগেট থেকে কোনো যাত্রী উঠতে চাইলে আগেই বলা হচ্ছে ১৫ টাকা ভাড়া দিতে হবে। ওয়েবিল হিসাবে ভাড়া না দিলে কন্ডাকটর গাড়ি থেকে নামিয়ে দিচ্ছেন। এ রকম ঘটনার অগণিত উদাহরণ দেয়া যাবে।

দেশের পরিবহন ব্যবস্থার নৈরাজ্য নতুন নয়! বছরের পর বছর ধরে এ নৈরাজ্য চলে আসছে। সড়কে যাত্রীবাহী যানবাহনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা, বেপরোয়া আচরণ, চালকের অদক্ষতা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের আধিক্যে সারা দেশে ২০২১ সালে পাঁচ হাজার ৩৭১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ২৮৪ জন নিহত এবং সাত হাজার ৪৬৮ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৮০৩ জন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে বাসের চালক ও হেলপারদের জিজ্ঞেস করেছিলাম- সরকার নির্ধারিত ভাড়া না নিয়ে ওয়েবিলে ভাড়া নিচ্ছেন কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তাদের সাফ উত্তর, মালিক আমাদের যেভাবে ভাড়া নিতে বলছেন আমরা সেভাবেই নিচ্ছি। চার্টে কী আছে, কিলোতে কত টাকা সেসব জানার দরকার নেই।’ গণপরিবহনের অনিয়ম রোধে বা নিয়ন্ত্রণে বিআরটিএর ভূমিকা সন্তোষজনক নয়! ফলে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছে না। ভাড়া নৈরাজ্য কমাতে রাজধানী ঢাকায় যেসব পরিবহনের চেকিং আছে ওই সব স্থানে নির্দিষ্ট ভাড়ার চার্ট এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে জরিমানা ও শাস্তির বিধান বিলবোর্ডে লিখে টাঙিয়ে দেয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে হাইকোর্টেরও একটি আদেশ আছে। সম্প্রতি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এক আইনজীবীর দায়ের করা রিটে, গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বাস থামানোর প্রতিটি নির্দিষ্ট জায়গায় প্রকাশ্যে ও যাত্রীদের কাছে সহজে দৃশ্যমান স্থানে ভাড়ার তালিকা প্রকাশ ও ইলেকট্রনিক বিলবোর্ডের মাধ্যমে ওই তালিকা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হাইকোর্টের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় বন্ধ করতে বিআরটিএকে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়ন হলে ওয়েবিল নামের প্রতারণার ফাঁদ থেকে যাত্রীরা মুক্তি পেতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement
রাজধানীতে সংঘর্ষে ২ যুবক নিহত জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা তুলে ধরবেন ড. ইউনূস কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু তোফাজ্জল হত্যা : ঢাবির ৬ শিক্ষার্থীর দায় স্বীকার কুমিল্লা-১০ বিনির্মাণে আমাদেরকে কাজ করতে হবে : ইয়াছিন আরাফাত উন্নয়নের নামে দুর্নীতির মহোৎসবে মেতেছিল আ’লীগ : হামিদ আজাদ ভাইকে হত্যা করাতে ১৪ মাসের ষড়যন্ত্র ভান্ডালজুড়ি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে ঢাবি ও জাবিতে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে খুলনায় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাংবাদিক রনো ও তার পরিবার চট্টগ্রাম পানগাঁও নৌরুট জনপ্রিয় করার উদ্যোগ

সকল