মহামারী, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ সবই মানব সৃষ্ট
- ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
- ০৯ অক্টোবর ২০২১, ২০:৪৩
সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী পরস্পরের সাথে পরিবেশে টিকে থাকার অনিঃশেষ লড়াইয়ে অবতীর্ণ। মানব সভ্যতার শুরু থেকে প্রধানত তিন ধরনের বৈরী শক্তির মোকাবেলা করে মানুষকে টিকে থাকতে হয়েছে। প্রথমত, নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়। দ্বিতীয়ত, অন্য প্রাণী থেকে আত্মরক্ষার লড়াই। তৃতীয়ত, মানুষে মানুষে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। যুগে যুগে পৃথিবীর দিকে দিকে আধিপত্য বিস্তারে মানুষের সাথে মানুষের লোমহর্ষক রক্তক্ষয়ী লড়াই বিশ্ব ইতিহাসের পাতায় পাতায় লিপিবদ্ধ আছে।
প্রথম শক্তি প্রকৃতির বৈরিতার কারণ মূলত দু’টি- প্রথমত, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় জরুরি। কিন্তু তা হতে হবে প্রকৃতির তার নিজের মতো করে। দ্বিতীয়ত, ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রকৃতি, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী-উদ্ভিদের সহাবস্থান জরুরি। কিন্তু সেটি আমরাই মানছি না। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যাবে- পৃথিবীর যত হানাহানি আর মৃত্যু কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয় তার বেশির ভাগই মানবসৃষ্ট। প্রকৃতিকে তার নিজের মতো চলতে দিলে এ অবস্থা হতো না। প্রকৃতির শিক্ষা হলো প্রকৃতি, অন্যান্য প্রাণী ও মানুষের সহাবস্থান। উদাহরণস্বরূপ চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের শরীরে যত কোষ আছে তার ১০ গুণ বেশি অণুজীব যাদের ওজন হলো সব মিলিয়ে মাত্র সাড়ে সাত গ্রাম, আমাদের চামড়া, নাক, মুখ, ইন্টেস্টাইন ও কোলন ইত্যাদিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অথচ আমাদের কোনো অসুখ হচ্ছে না। এর কারণ হলো আমাদের ইমিউন সিস্টেম এদের সাথে সহাবস্থানের সুযোগ দিচ্ছে এবং এই অণুজীবগুলোকে বিদেশী হিসেবে চিহ্নিত করছে না; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এদের উপস্থিতি আমাদের একান্ত প্রয়োজন। দেখা যাচ্ছে, মানুষের শরীরই সবার সাথে মিলেমিশে বসবাসের শিক্ষা দেয়ার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে প্রয়োজন মানুষ, প্রকৃতি (মাটি, পানি, বায়ু) এবং অন্যান্য প্রাণী-উদ্ভিদ মিলে একটি ত্রিভুজ সাইকেল তৈরি করা যেন সবার জন্য বসবাসযোগ্য এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে ওঠে। কিন্তু যুগে যুগে এই সহাবস্থানের ব্যতিক্রম ঘটেছে, যে কারণে পারস্পরিক প্রতিশোধের আগুন পৃথিবীকে করেছে অশান্তিময়। সহাবস্থান বজায় রাখার চেষ্টা তো করছিই না, উপরন্তু পরিবেশ নষ্ট করার জন্য যা যা দরকার তার সবই করছি। অতএব, ঝড়-তুফান, ভ‚মিকম্প প্রভৃতি প্রকৃতির পক্ষ থেকে মানুষের অসহযোগিতার উত্তম জবাব।
এবার দেখুন, দ্বিতীয় যে বৈরী শক্তি অর্থাৎ অন্যান্য প্রাণীদের আমরা যেভাবে মোকাবেলা করছি, তার মধ্যেও মানুষের কালো হাতের থাবা কত বেশি অপরিণামদর্শী। মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণী বলতে পশুপাখি থেকে শুরু করে ইলেকট্র্রন মাইক্রোস্কপিক প্রাণীকে বলা হচ্ছে।
আমাদের বর্তমান বড় লড়াই অতি ক্ষুদ্র অণুজীব করোনার বিরুদ্ধে। এর কারণও এই আমরাই। এর আগে যতগুলো মহামারী মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল, তার সবই জুনোটিক ডিজিজ অর্থাৎ রোগজীবাণুর উৎপত্তি মানুষ থেকে মানুষে নয়, বরং মানুষের অসংযত আচরণের কারণে অন্য প্রাণী থেকে মানুষকে আক্রান্ত করেছে। অনেক অণুজীব আছে অন্য প্রাণীর সাথে তাদের আক্রান্ত না করেই সহাবস্থান করছে কিন্তু আমাদের জন্য মারাত্মক। কোন কারণে মানুষের অসতর্কতায়, যখন এই অণুজীব অন্য কোনো প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে চলে আসে, তখন তা অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। যেমন- ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস নামক ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ১৩৪৬-৫২ সাল পর্যন্ত ইউরেশিয়ায় তাণ্ডব চালিয়ে ২০ কোটি লোকের প্রাণ কেড়ে নেয়। প্লেগ মূলত রডেন্ট জাতীয় প্রাণীর মধ্যকার রোগ। এটি ছড়িয়েছিল মানুষের অসতর্কতার কারণে। যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ১৯১৮-১৯২০ সালে পৃথিবীব্যাপী পাঁচ কোটি লোকের প্রাণ কেড়ে নেয় সেই ভাইরাসের উৎসও পাখি এবং ওই অসতর্কতার কারণেই তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছিল। যে হর্সশু বাদুর থেকে করোনাভাইরাস মানব সমাজকে আক্রান্ত করে ধরাশায়ী করল সেটির সহাবস্থান তো ওই বাদুরের সাথেই ছিল।
তৃতীয় যে প্রতিক‚লতার মোকাবেলা করে আমরা টিকে আছি সেটি হলো, মানুষের আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, মানুষের পথচলার শুরু থেকে আজ অবধি যুগে যুগে জলে-স্থলে অন্তরীক্ষে যুদ্ধ বিগ্রহের ফলে যে বিপর্যয় হয়েছে তা-ও শতভাগ মানবসৃষ্ট।
পৃথিবীতে গড়ে প্রতি বছর লোক মারা যায় পাঁচ-ছয় কোটি লোক। বেড়ে যায় আট কোটি ৫০ লাখ লোক। লোকের মৃত্যু ঘটে মূলত ছয়টি প্রধান কারণে। প্রথমত, স্বাভাবিক মৃত্যু; দ্বিতীয়ত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ; তৃতীয়ত, মহামারী; চতুর্থত, যুদ্ধবিগ্রহ; পঞ্চমত, মানবসৃষ্ট বৈষম্য; ষষ্ঠত, দুর্যোগ-পরবর্তী মানবিক বিপর্যয়।
ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, স্বাভাবিক মৃত্যুর পরই মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী কিংবা যুদ্ধ-পরবর্তী মানবিক বিপর্যয়।
আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে যুগে যুগে যে ধ্বংসযজ্ঞ মৃত্যু বিভীষিকা মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে তার কিঞ্চিৎ তুলে ধরছি। লক্ষণীয় বিষয় হলো, মানুষে মানুষে যুদ্ধবিগ্রহের সূচনা থেকে আজ অবধি চারটি ধ্রুব সত্যের মতো ঘটনা বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই একই নিয়মে ঘটতে দেখা গেছে। তার প্রথমটি ছিল, তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে শুধু আধিপত্য বিস্তারের জন্য লড়াই করা, দ্বিতীয়টি ছিল জনগণের কল্যাণের কথা বলে ক্ষমতায় এসে অকল্যাণের কাজটিই করা, তৃতীয়টি ছিল যুদ্ধের পরপরই মহামারী কিংবা দুর্ভিক্ষে পতিত হওয়া এবং চতুর্থটি ছিল যুদ্ধে যত লোক মারা গেছে তার চেয়েও অনেক বেশি লোক মারা গেছে যুদ্ধ-পরবর্তী মহামারী কিংবা দুর্ভিক্ষ অথবা উভয়ের কারণে। তবে ইতিহাসে যেসব যুদ্ধ সঙ্গত কারণে হয়েছিল এবং সত্যপন্থীরা জয়লাভ করেছিলেন, সেসব ক্ষেত্রে এ নিয়মের ব্যতিক্রম ছিল।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪৯-৫৩০ (পৃথিবীর মোট লোকসংখ্যা ছিল ৮-১০ কোটি) পার্সিয়ান সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেট এবং আরবদের মধ্যকার যুদ্ধে, খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৬-৩২৩ (লোক সংখ্যা ১২-১৪ কোটি) মেসিডোনিয়ার রাজা আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট এবং বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের মধ্যকার যুদ্ধে, খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৪-১৪৬ (লোকসংখ্যা ১৫ কোটি) রুমান সাম্রাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের সাথে যুদ্ধে এবং ২৬২ থেকে ২৬৪ খ্রিষ্টাব্দ (লোকসংখ্যা ১৬ কোটি) পর্যন্ত ভারতের কলিঙ্গের যুদ্ধে যথাক্রমে এক লাখ, এক লাখ ৫০ হাজার, ১২-১৮ লাখ এবং দুই লাখ সেনা নিহত হয়।
তা ছাড়াও ৬৬-১৩৬ খ্রিষ্টাব্দ সময়কালে (পৃথিবীর লোকসংখ্যা ১৫-১৫.৫ কোটি) পর্যন্ত ইহুদি ও রোমানদের মধ্যকার যুদ্ধে ১২-২০ লাখ সেনা নিহত হয়েছিল। লক্ষণীয় বিষয় হলো, প্রতিটি যুদ্ধের পরপরই মহামারী কিংবা দুর্ভিক্ষে তার চেয়ে বেশি লোক মারা গিয়েছিল। মধ্যযুগে পুরো ইউরেশিয়ায় মোঙ্গলদের তাণ্ডব চালানো ১২০৬-১৩৬৮ খ্রিষ্টাব্দ সময়কালের যুদ্ধে ছয় কোটিরও বেশি লোক মারা গিয়েছিল। অথচ যুদ্ধের পরপরই ১৩৪৬-১৩৫৩ খ্রিষ্টাব্দ সময়কালে ইউরেশিয়ায় কেবল প্লেগে ২০ কোটি লোক মারা যায়। অথচ তখন পৃথিবীর মোট লোকসংখ্যাই ছিল মোট ৪৪ কোটি।
১৯১৪-১৮ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সময়কালে সামরিক-বেসামরিক মিলিয়ে চার কোটি নিহত হয়। অথচ যুদ্ধের পর ১৯১৯-২০ সময়কালে কেবল ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীতেই পাঁচ কোটি লোকের মৃত্যু হয়। তখন পৃথিবীতে লোকসংখ্যা ছিল ২০০ কোটি।
একই সময়ে ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবে ১৫ লাখ লোক এবং ১৯১৭-২২ সময়কার রুশ বিপ্লব-পরবর্তী ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনশাসিত রাশিয়ায় গৃহযুদ্ধ, দাঙ্গা- হাঙ্গামা ও দুর্ভিক্ষে মারা যায় আরো ৮০ লাখ লোক। এরপর জোসেফ স্ট্যালিনের সময়কার শাসনকালে অন্তত দুই কোটি লোক দুর্ভিক্ষ, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প ও দেশান্তর প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন কারণে মারা গিয়েছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-৪৫ খ্রিষ্টাব্দ) মিলিটারি-সিভিলিয়ান মিলে মোট সাত কোটি ৫০ লাখ লোক মারা যায়। যুদ্ধ-পরবর্তীকালে ইউরোপের বাইরেই দুর্ভিক্ষ- মহামারীতে মারা যায় পাঁচ কোটি লোক। তখন পৃথিবীর লোকসংখ্যা ছিল ২৩৫-২৪০ কোটি।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় ১৯০ বছরে দুর্ভিক্ষ-দাঙ্গায় মারা যায় ছয় কোটি লোক। এমনকি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ব্রিটিশদের ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসির কারণে বাংলা ১১৭৬ সালের মনন্তর (১৭৭০ ইংরেজি সাল) এবং ১৮৭৬-১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দের শাসনামলের প্রতিটিতে এক কোটি করে লোক মারা গিয়েছিল। এখানে দেখা যাচ্ছে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ১৭৫৭ ও ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশরা সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণের পর এই দু’টি বড় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। অথচ মুঘলদের তিন শতাধিক বছরের ইতিহাসে সম্রাট শাজাহানের আমলে একটি দুর্ভিক্ষে (১৬৩০-৩২) ৫০-৬০ লাখ লোক মারা যাওয়া ছাড়া দুর্ভিক্ষের বড় কোনো ইতিহাস নেই।
১৯৪৫-৪৯ সাল পর্যন্ত চীনা গৃহযুদ্ধে দুই কোটি এবং পরবর্তীতে ১৯৫৯-৬২ সালে চীনকে কমিউনিস্ট রাষ্ট্র্রে রূপান্তর করতে ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’ কর্মসূচির নামে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও মাও সেতুং কর্তৃক নির্যাতনে পাঁচ কোটি থেকে আট কোটি লোক নিহত হয়েছিল। চীনের এই দুর্ভিক্ষকে বিশ্ব ইতিহাসে অল্প সময়ের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ হিসেবে গণ্য করা হয়, যার পুরোটাই মানবসৃষ্ট ও বিপ্লব-পরবর্তী সময়ের ঘটনা।
সাম্প্রতিককালে ইরান-ইরাক ও সিরিয়ার যুদ্ধের প্রতিটিতেই এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ করে লোক নিহত হয়েছে। ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষে এবং আফগানিস্তানের সরাসরি দুই যুদ্ধে যথাক্রমে দুই লাখ ৩১ হাজার এবং সাড়ে পাঁচ লাখ মতান্তরে ২০ লাখ লোক নিহত হয়েছে।
সাম্প্রতিককালের মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তানের ঘটনাপ্রবাহ কি এ কথা বলে না যে, এসব যুদ্ধ মিথ্যা অজুহাত আর তুচ্ছ ঘটনার জেরে ঘটে চলেছে। উদ্দেশ্য পরিষ্কার আর তা হলো- পরের দেশের সম্পদ লুট আর নিজের আধিপত্য বিস্তার। এভাবেই পশ্চিমারা আমাদেরকে গণতন্ত্রের পাঠ দিয়ে যাচ্ছে।
জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে সংঘটিত ফেতনা-ফ্যাসাদ মানুষের হাতের কামাই: ‘জলে স্থলে ফেতনা-ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়া মানুষের নিজদেরই কৃতকর্মের কামাই, যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সূরা রুম-৪১)
কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষাই হলো, ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয়া। কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন মানুষকে বিপদ স্পর্শ করে, তখন সে শুয়ে, বসে বা দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে। অতঃপর আমি যখন তার বিপদ দূর করে দিই, তখন সে এমনভাবে চলতে থাকে মনে হয় যেন তাকে কোনো বিপদ স্পর্শ করার কারণে সে আমাকে কখনো ডাকেইনি। এভাবেই সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য তারা যা আমল করত, তা শোভিত করে দেয়া হয়েছে।’ (সূরা ইউনুস-১২)
আল্লাহর নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইনের দৃষ্টিতে এসব ঘটনার কারণ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ খুব সুন্দরভাবে মানুষকে বলে দিয়েছেন।
এখন থেকে খ্রিষ্টপূর্ব (১২৭৯-১৩ সালে) অর্থাৎ আনুমানিক তিন হাজার ৩০০ বছর আগে ফেরাউন রামসেস-২ এর শাসনকালে বিভিন্ন পর্যায়ে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, রক্তবৃষ্টি, ঝড়-তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ইত্যাদি প্রাকৃতিক ঘটনার দ্বারা বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। সুতরাং আমি তাদের বিরুদ্ধে বিস্তারিত নিদর্শনাবলি হিসেবে পাঠালাম তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত। তার পরও তারা অহঙ্কার করল। আর তারা ছিল এক অপরাধী কওম।’ (সূরা আরাফ-১৩৩)
মানুষে মানুষে এই সত্য-মিথ্যার দ্ব›দ্ব ও রক্তপাত একটি অনিবার্য বিষয়। এভাবে এক দলকে দিয়ে আরেক দলকে থামিয়ে দেয়ার বিধান না থাকলে সারা দুনিয়া ফেতনা-ফ্যাসাদে ভরে যেত। সে হিসাবে এগুলো সাময়িক বিপর্যয় হলেও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যাণকর। তবে আল্লাহও বলেন, ‘সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের এ বিধান থেকে বেশির ভাগ মানুষ শিক্ষা নেয় না।’
অতএব, ইতিহাস থেকেই প্রমাণিত হলো : সৃষ্টির সূচনা থেকে মানুষ প্রকৃতি, অন্যান্য জীব এবং নিজেদের বিরুদ্ধে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অর্থহীন আর আধিপত্য বিস্তারের যুদ্ধে লিপ্ত। প্রাকৃতিক বিপর্যয় আর সব মহামারীর জন্য মানুষ অনেকাংশেই দায়ী আর মানুষে মানুষে যুদ্ধে মানুষ শতভাগ দায়ী। সব অন্যায় ও অন্যায্য যুদ্ধই তুচ্ছ ঘটনার কারণ দেখিয়ে ঘটানো এবং মূলত সম্পদ লুট আর আধিপত্য বিস্তারের জন্য। সব ক্ষেত্রেই অন্যায্য যুদ্ধের পরবর্তীতে মহামারী-দুর্ভিক্ষ আর বর্ধিত অশান্তির দাবানল যদিও ক্ষমতার আগে প্রতিশ্রæতিতে থাকত শান্তির আস্ফালন। প্রকৃতির সাথে সহাবস্থানে না থাকলে প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়। ইতিহাস থেকে মানুষ শিক্ষা নেয় না। ফলে ইতিহাসে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চক্রাকারে।
আশাব্যঞ্জক কথা হলো, অসুস্থ হয় বলেই মানুষ সুস্থ থাকার লড়াই করে, সমাজে যত খারাপ মানুষের আধিক্য হয়, বিপরীতে তত ভালো মানুষ তৈরি হয়ে যায় এবং খারাপিকে দূর করার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। সত্য-মিথ্যার এ দ্ব›দ্ব চিরকালীন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা