২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ

-

দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে বহুমুখী সমস্যা। পিছিয়ে পড়ছে পড়াশোনায়। পাঠ্যবইয়ের সাথে দূরত্ব ক্রমে বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষাজীবন। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনলাইনে ক্লাস চালু রয়েছে। তবে তা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কতটা ধরে রাখতে সক্ষম? প্রথম দিকে অনলাইন ক্লাস নিয়ে যে উৎসাহ ছিল এখন আর নেই। ধীরে ধীরে যেখানে পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার কথা সেখানে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। কেন এমনটি হলো? তবে কি শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে গাইড করা হচ্ছে না? না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন ক্লাসের নামে যে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে তা চাহিদা অনুযায়ী হচ্ছে না? সমাধানটা জটিল বৈকি।

অনলাইন ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে শিশু-কিশোররা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ক্রমেই মোবাইল এবং ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। শিশু-কিশোররা নিয়ম-শৃঙ্খলার বাইরে মুক্তজীবন পছন্দ করে। কিন্তু এ সময়ে যদি তাদের সুনিয়ন্ত্রিত জীবনে অভ্যস্ত করা না যায় ভবিষ্যতের জন্য তা ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। ফলে তাদের মানসিক ও সামাজিক উন্নয়নে অত্যন্ত সতর্ক থাকা জরুরি। বাড়তি সতর্কতায় শুধু অনুশাসন নয়, প্রয়োজন স্নেহ, ভালোবাসা ও মমতার বাঁধনে বাঁধা। যে শিক্ষা উপকরণটি দেয়া হলো শিখন সহায়ক হিসেবে সেটি কোন কাজে ব্যবহার করছে তা দেখাশোনার দায়িত্ব মা-বাবার। শুধু ডিভাইস নির্ভর না বানিয়ে এটিকে সহায়ক নির্ভর করতে হবে। তাই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে সার্বক্ষণিক একটি ডিভাইস তুলে না দিয়ে, একটি রুটিনে এনে এর সফল ব্যবহার করাতে হবে। যেহেতু বিষয়টির মন্দ দিকগুলো প্রভাবিত করছে শিশুদের; তাই নজরদারির বিকল্প নেই।

দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা হাঁপিয়ে উঠেছে। অনেকের আচরণগত পরিবর্তনও লক্ষণীয়। ঘরবন্দী বা স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যের বিপরীতে থাকায় নেতিবাচক প্রভাব দিন দিন প্রকট হচ্ছে। মোবাইল ও ইন্টারনেটে গেইম আর বিনোদন নিয়ে সময় পার করছে তারা। মূল উদ্দেশ্য থেকে ক্রমে সরে যাচ্ছে। মোবাইল অ্যাডিক্টেট হওয়ায় পড়ালেখার কথা বললেই বিরক্তি প্রকাশ করছে। শোভন আচরণ করছে না। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাসের আওতায় এলেও গ্রামাঞ্চলের বহু স্কুল-কলেজ এখনো এর আওতায় আসেনি। অধিকাংশ অনলাইন ক্লাসে থাকে না কোনো ধারাবাহিকতা। আজকের অংশের সাথে পরের অংশের কোনো সঙ্গতি নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসের যে স্বাদ সেটি পায় না। অনলাইন ক্লাসের প্রতি অনাগ্রহের এটিও একটি কারণ।

যারা ডিভাইস ও ইন্টারনেট সুবিধাসহ বিভিন্ন কারণে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না, তারাই বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ছে। ক্লাসে ফিরে আসার আগ্রহ তাদেরই বেশি। অনেকে ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করতে জানে না। কারো আবার ব্যবহার উপযোগী ইলেকট্রনিকস ডিভাইস নেই। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে।

দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ার পাশাপাশি ভুগছে বিষণ্নতায়। অনেকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তাও দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বহু শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। বর্তমান সময় একটি ভিন্ন পরিস্থিতি। তাই মা-বাবাকে সন্তানের জন্য আরো যত্নশীল হয়ে কাজ করতে হবে। শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে।

শিশু-কিশোরদের এখন কিভাবে আনন্দে রাখা যায় এটিই মুখ্য। এ পরিস্থিতিতে সন্তানের সাথে বন্ধন আরো মজবুত করতে হবে। তাহলে পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে নেয়া সহজ হবে। এ জন্য প্রয়োজন ছেলেমেয়েদের সময় দেয়া। একবার নিয়মতান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত করা গেলে ভয়ের কোনো কারণ নেই। কিন্তু মা-বাবার অদূরদর্শিতা বা অবহেলায় উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠলে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা মুশকিল।

স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও জীবন থামিয়ে রাখা যাবে না। শিক্ষার্থীদেরও অগ্রসর হতে হবে। তাদের নিয়মতান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত রাখার লক্ষ্যে দৈনন্দিন কাজের একটি রুটিন তৈরি করা যেতে পারে। যাতে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতায় রাখা যায়। পারিবারিক আবহে বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। মানসিক শক্তি ধরে রাখার প্রয়াসে পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী অভিভাবকদের বিচক্ষণ হতে হবে। যদিও শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই সবচেয়ে সহায়ক। যেহেতু এটি আপাতত সম্ভব হচ্ছে না, তাই পরিবারকেই এর বিকল্প হয়ে কাজটি করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেবল অ্যাকাডেমিক বিষয়গুলোর চর্চা হয় না বরং এর বাইরে সামাজিকতা, নেতৃত্ব, মানবিক গুণাবলি অর্জনের মতো বিষয়গুলো তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে রপ্ত করে।

দেশের অনেক শিশু-কিশোরকে সংসারের ছোটখাটো কাজ তাদের দিয়ে করানো হয় না। সেটা স্নেহবশত হলেও তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলায় প্রতিবন্ধক। এই মানসিকতা বদলাতে হবে। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার শিক্ষাটি জীবনের শুরুতেই পরিবার থেকে পাওয়া উচিত। কিন্তু অনেক মা-বাবা এ জায়গায় ছেলেমেয়েদের পিছিয়ে রাখেন। অন্য দিকে তাদের শিখিয়ে দেয়া হয় এগুলো ছেলেদের কাজ। এগুলো মেয়েদের। মা-বাবার একটু পরিচর্যা এই সময়ে শিশু-কিশোরদের আরো ধৈর্যশীল ও পরিশ্রমী করে তুলতে পারে। যা তাদের অনাগত জীবনে সুফল বয়ে আনতে পারে। তাদের ভালো অভ্যাসে গড়ে তুলতে হবে। একটি নিয়মের মধ্য দিয়ে মা-বাবা সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। মূলকথা তাদের কাজে বৈচিত্র্য আনতে হবে। কাজগুলো তাদের কাছে প্রশংসাযোগ্য ভাবে উপস্থাপন করতে হবে। ভুল অবশ্যই ধরিয়ে দিতে হবে। তবে তাদের উপযোগী পন্থায়। এতে তাদের কাজে গতিশীলতা আসবে। ভালো কিছু করতে চাইবে। তবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবার যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে তখন অনেকে স্কুল-কলেজে যেতে চাইবে না। এ জন্য অবশ্যই নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে হবে তাদের। তা কোনোভাবেই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে যেন না যায়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশের দিকে লক্ষ রেখেই যেকোনো পদক্ষেপ নিতে হবে।
mijandu85@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
‘ভারত-বিরোধী নই, সম্মান ও সমতা নিয়ে সুসম্পর্ক চাই’ থাইল্যান্ডসহ ৫টি দেশে গমনেচ্ছু বাংলাদেশীদের জন্য সতর্কতা ইউক্রেনে নতুন রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার উদ্বেগজনক : জাতিসঙ্ঘ ঐতিহাসিক মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়ে মেহেদী মিরাজ পাশ্চাত্যে হামলার ইঙ্গিত পুতিনের! উত্তর গাজায় ১৫ ইসরাইলি সেনাকে হত্যার দাবি হামাসের আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারত ফেরত ২ নারী আটক গৌরনদীতে ট্রাক উল্টে ডোবায়, চালকসহ নিহত ২ লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৮২ প্রবাসী বাংলাদেশী সিইসিসহ নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনারদের শপথ রোববার যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও অন্যদের সাথে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠক

সকল