প্রতিদিন মাকে ভালোবাসি
- আজহার মাহমুদ
- ০৮ মে ২০২১, ২০:২৫
মে মাসের দ্বিতীয় রোববার ‘বিশ্ব মা দিবস’। এ দিনটি নিয়ে মানুষের নানান আয়োজন, উৎসব ও আমেজের শেষ থাকে না। মনে হয় এই এক দিনের জন্য সবাই মায়ের প্রতি ভালোবাসা জমিয়ে রাখে। এই যে মা দিবস, এটির সম্পূর্ণ বিরোধিতা করছি না। সব মায়ের সম্মানার্থে এমন একটি দিন থাকাটা মন্দ কিছু নয়। তার মানে এই নয় যে, শুধু এই দিনটাই মায়েদের জন্য। অন্য সময় আর তাদের খোঁজখবর রাখা হয় না।
সারা বছর আমি যদি মাকে অসম্মান অশ্রদ্ধা করি এই এক দিনে কি সেই কষ্ট মুছে ফেলা সম্ভব? আবার এই একদিন মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা প্রকাশ করে, এরপরের দিনই যদি মায়ের মনে আঘাত দেয়া হয় তাহলে এমন দিবস দিয়ে কী হবে? প্রকৃতপক্ষে আজকের আধুনিক সমাজে এমনটিই অহরহ হচ্ছে।
অসুস্থ মাকে জঙ্গলে ফেলে আসছে, মারধর করছে এখনকার কিছু কুলাঙ্গার। আজ অনেক মা বৃদ্ধাশ্রমে দিন কাটাচ্ছেন একা একাই। অথচ যে সন্তানরা মায়ের সাথে এমন অন্যায় করছে তারাও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখে, ‘সকল মাকে জানাই ভালোবাসা, সবাই মাকে ভালোবাসুন’। এটি নিছক প্রতারণা।
এরকম অনেক লোকদেখানো ‘মা প্রেমিক’ এই সমাজে রয়েছে যাদের আসল চেহারা সবাই জানেও না, দেখেও না। এটি নিয়ে একটা বাস্তব ঘটনা আছে, আমার এক দুঃসম্পর্কের চাচা আছেন। আজ থেকে চার বছর আগে তার মা ইন্তেকাল করেন। যখন বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই দেখতাম তিনি দাদীকে মানে মাকে মারতেন। আমি আম্মুকে জিজ্ঞেস করতাম, কেন মারছে? আম্মু বলেন, তোর চাচীর সাথে ঝগড়া করছে, এ জন্য। অর্থাৎ আমার চাচা স্ত্রীকে খুশি করার জন্য আপন মাকে মারতেন। তখন ক্লাস সিক্সে পড়তাম। আম্মু মাঝে মধ্যে আমাকে বলতেন, তোরাও আমাকে এভাবে মারবি বউয়ের সাথে ঝগড়া হলে। শুনে লজ্জা পেতাম। কিন্তু বয়স যখন বাড়ছে তখন ভাবতাম, মায়ের শরীরে কিভাবে সন্তান হাত তোলে! এটি তো মারাত্মক পাপ। একদিন দেখলাম, চাচা দাদীকে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলেছেন। আম্মুরা অনেক কষ্ট করে দাদীকে রক্ষা করেছেন। এরপর এক সময় আমরা গ্রাম থেকে শহরে চলে এলাম। বাবা এমন বিশ্রী পরিবেশে আমাদের রাখতে চাননি।
কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুললাম নিজের। কিছু দিনের মধ্যেই গ্রামের অনেক আত্মীয়স্বজন বন্ধু তালিকায় যুক্ত হয়ে গেল। ভালো লেগেছে। দূরে থাকলেও তাদের দেখতে পাচ্ছি। একদিন সেই চাচাটির রিকুয়েস্ট দিলো। অ্যাড না করলে আবার ‘বেয়াদব’ মনে করতে পারে তাই অ্যাড করেছিলাম। তবে তার প্রতি ছোট থেকেই একরকম ঘৃণা কাজ করত। অ্যাড করেই দেখলাম, মা দিবসে তিনি ফেসবুকে দাদীর সাথে ছবি দিয়ে লিখলেন, ‘আমার মাকে অনেক ভালোবাসি’। অবাক হলাম। ভাবলাম এই লোকটি কি ভালো হয়ে গেছে?
কিন্তু গ্রামে বেড়াতে গিয়ে সেই ধারণাটা পাল্টে গেল। অন্যদের মুখে শুনতাম, মাসে পাঁচ-ছয় বার দাদীকে নির্যাতন করে ওই চাচা। তার বউও নাকি গায়ে হাত তুলতে শুরু করেছে। এভাবে একদিন দাদী ইন্তেকাল করেন। যেদিন দাদী মারা যান, তার পরের দিন চাচা ফেসবুকে পোস্ট দিলেন, ‘মাগো, এভাবে চলে গেলে, এখন আমি কার সেবা যত্ন করব?’
এমন পোস্ট দেখে আমি তো অবাক। একজন মানুষ ভেতরে যতটা নোংরা, বাইরে ততটা সুন্দর হতে চায়। মায়ের মৃত্যুর পরও অনুশোচনা না করে, ক্ষমা না চেয়ে মানুষের কাছ থেকে সহানুভূতি নেয়ার জন্য ফেসবুকে এমন পোস্ট দেয়া মানুষগুলো অনেক বড় মাপের প্রতারকও।
এমন আরো অনেক লোক এই সমাজে আমাদের সাথেই বসবাস করে যাচ্ছে; যারা কেউ কেউ বাইরে ভেতরে সবখানেই মাকে অপমান, অশ্রদ্ধা, আঘাত করে, আবার কেউ কেউ বাইরে অভিনয় করে ভেতরে সেই পশুর মতো আচরণ করে মায়ের সাথে।
এমন সন্তান কোনো মা-ই আশা করেন না। ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ করে এই পৃথিবীতে সন্তানকে এনে যদি সেই সন্তানের আঘাত সহ্য করতে হয়, সেই মায়ের জীবন আর কেমন হতে পারে!
সুতরাং একটা বিশেষ দিন মাকে নিয়ে স্ট্যাটাস, ছবি আপলোড করা কিংবা মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার চেয়ে প্রতিদিন মাকে শ্রদ্ধা, সম্মান এবং ভালোবাসা দিতে পারাটাই সার্থকতা। আসুন, মায়েদের কষ্ট না দিয়ে সম্মান শ্রদ্ধা করি সবসময়।
azharmahmud705@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা