২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

চলে গেলেন অভিভাবক আতাউর রহমান

চলে গেলেন অভিভাবক আতাউর রহমান - ছবি : সংগৃহীত

কমোডর অব: এম আতাউর রহমান। শিল্পোদ্যোক্তা, সমাজকর্মী, সংগঠক, বিদ্যানুরাগী এবং সর্বোপরি একজন দেশহিতৈষী দরদি মানুষ কমোডর অব: আতাউর রহমানের জীবনজুড়ে ছড়িয়ে আছে দেশ ও মানুষের কল্যাণ উদ্যোগ। গত ২০ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ মহৎপ্রাণ মানুষটি চলে গেলেন ধরাধাম থেকে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। মরহুম এম আতাউর রহমান দেশের বৃহত্তম ব্যাংক ও বিশ্বের সহস্র ব্যাংকের অন্যতম ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনায় সংযুক্ত ছিলেন। ১৯৮৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান। এর আগে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়ার্টার ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি), চালনা পোর্ট অথরিটি, টিসিবি ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

বিদ্যোৎসাহী মানুষটির নামের সাথে জড়িয়ে আছে মানারাত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিশিষ্ট ওষুধ উৎপাদনকারী সংস্থা ইবনে সিনার নাম। সাধারণ মানুষের জন্য সুলভে মানসম্পন্ন চিকিৎসার ক্ষেত্রে ইবনে সিনা সেবাগুচ্ছ এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ, যার অধীনে রয়েছে ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, ইবনে সিনা ডায়গনস্টিক অ্যান্ড ইমেজিং, ইবনে সিনা স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ইবনে সিনা মেডিক্যাল ইমেজিং সেন্টার, ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, ডি. ল্যাব অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, সিলেটস্থ ইবনে সিনা হাসপাতল এবং এ ছাড়া যশোর, বগুড়া, সাভারসহ ঢাকায় ১০টি পৃথক ইবনে সিনা ডায়গনস্টিক ও ইমেজিং সেন্টার। এই বিশাল সেবা কর্মযজ্ঞের অন্যতম অধিনায়ক ছিলেন কমোডর অব: আতাউর রহমান।

দেশে বস্তুনিষ্ঠ ও আদর্শ অনুরাগী গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় অসামান্য অবদান রেখে গেছেন তিনি। তিনি দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে এ দেশের গণমাধ্যম জগতে অসামান্য অবদান রাখেন।

১৯২৭ সালের ১৮ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানাধীন পোভাকার্দি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কমোডর অব: আতাউর রহমান। ১৯৪৯ সালে কলকাতার বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫১ সালে ব্রিটেনের মনোডন পলিমাউথ থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি দেশে ফিরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগ দেন এবং কমোডর হিসেবে অবসরে যান।

পরোপকারী সুহৃদ ও সুজন হিসেবে আতাউর রহমান ছিলেন একজন কিংবদন্তিতুল্য মানুষ। বহু স্কুল, কলেজ, পাঠাগার ও শিক্ষা-বিকাশী প্রকল্প এবং উদ্যোগের কাণ্ডারি ছিলেন বিদ্যানুরাগী মানুষটি। তার ব্যক্তিগত ব্যবহার, আচরণ ও সৌজন্যবোধও ছিল অনুকরণীয়। সমবয়সীদের পরম সুহৃদ, অনুজের আদর্শ শিক্ষক ও সমাজের পিছিয়ে থাকা মানুষদের কাছে তিনি ছিলেন এক পরম আস্থাশীল মহৎপ্রাণ মানুষ। তার দীর্ঘ দিনের এবং বিভিন্ন কর্মস্থলের সহকর্মীদের কাছে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন মহৎ মানবীয় গুণাবলি এবং একজন সৎ, সাহসী ও সুযোগ্য নেতার আসনে, যারা তার মৃত্যুতে শুধু শোকাহতই নন, রীতিমতো প্রিয়জনহারা ব্যথিত মানুষের কাতারে শামিল। শোকাচ্ছন্ন আজ তার সাবেক সহকর্মী ও সহযোদ্ধারা। অশিক্ষা, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, অসাম্য ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আলোকিত জীবনে উত্তরণের যুদ্ধে তারা সবাই আজ শোকে পাথর, অশ্রুধারায় সিক্ত। এই করোনাকালেও তার সব ক’টি নামাজে জানাজায় শোকাহত মানুষের ঢল ছিল সত্যিই স্বতঃস্ফূর্ত ও অপ্রতিরোধ্য। অসংখ্য মানবহিতৈষী কাজে শীর্ষ অবদানের সাদাকার দৌলতে পরম করুণাময় যেন তাকে জান্নাতের নসিব দান করেন, এই প্রার্থনায় সমবেত আজ সবাই।


আরো সংবাদ



premium cement