বঙ্গবন্ধুর জীবনপঞ্জী
- মোশাররফ হোসেন ভূঞা
- ১৬ মার্চ ২০২১, ২১:১৫
১৯২০ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। শেখ লুৎফর রহমান ও মোসাম্মৎ সায়েরা বেগমের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে তৃতীয় সন্তান মুজিব! বাবা-মা ডাকতেন খোকা বলে। খোকার শৈশবকাল কাটে টুঙ্গীপাড়ায়।
১৯২৭ : ৭ বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন। নয় বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। পরে তিনি স্থানীয় মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন।
১৯৩৪ : ১৪ বছর বয়সে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে তার একটি চোখ কলকাতায় অপারেশন করা হয় এবং চক্ষুরোগের কারণে তার লেখাপড়ায় সাময়িক বিরতি ঘটে।
১৯৩৮ : ১৮ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু ও বেগম ফজিলান্নেসার আনুষ্ঠানিক বিয়ে সম্পন্ন হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা দুই কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা এবং তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের জনক-জননী।
১৯৩৯ : অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল পরিদর্শন করতে গেলে দেখেন স্কুলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। ছাদ সারাবার জন্য ও ছাত্রাবাসের দাবি স্কুলছাত্রদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিব তুলে ধরেন।
১৯৪০ : নিখিল ভারত মুসিলম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদান করেন এবং এক বছরের জন্য বেঙ্গল মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তাকে গোপালগঞ্জ মুসলিম ডিফেন্স কমিটির সেক্রেটারি নিযুক্ত করা হয়।
১৯৪২ : এন্ট্রান্স (এসএসসি) পাস করেন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে মানবিক বিভাগে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন। ধর্মতলা স্ট্রিটের বেকার হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা হয়। বঙ্গবন্ধু এ বছরেই পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন।
১৯৮৩ : কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগদান এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি কলকাতাস্থ ফরিদপুরবাসীদের একটি সংস্থা ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৪৬ : ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন।
১৯৪৭ : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসসহ ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন। ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে কলকাতায় দাঙ্গা প্রতিরোধ তৎপরতায় নির্যাতিত মুসলমানদের পাশে থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
১৯৪৮ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে তিনি ভর্তি হন এবং ৪ জানুয়ারি মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন আইন পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উর্দুকে রাষ্ট্র্রভাষা হিসেবে মেনে নেবে বলে ঘোষণা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে বঙ্গবন্ধু এর প্রতিবাদ জানান। খাজা নাজিমুদ্দিনের বক্তব্যে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তিনি মুসলিম লীগের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য কর্মতৎপরতা শুরু করেন। ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করেন।
২ মার্চ ভাষা প্রশ্নে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবক্রমে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। সংগ্রাম পরিষদ বাংলা ভাষা নিয়ে মুসলিম লীগের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করে। ১১ মার্চ বাংলা ভাষার দাবিতে ধর্মঘট পালনকালে সহকর্মীদের সাথে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভরত অবস্থায় গ্রেফতার হন। তার গ্রেফতারে সারা দেশে ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। মুসলিম লীগ সরকার ছাত্রদের আন্দোলনের চাপে গ্রেফতারকৃত ছাত্র নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তিনি ১৫ মার্চ মুক্তিলাভ করেন। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ছাত্র-জনতার সভার আয়োজন করা হয়। এই সময়ে তিনি সভাপতিত্ব করেন। সভায় পুলিশ হামলা চালায়। পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সভা থেকে ১৭ মার্চ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানান। ১৯ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১১ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৪৯ : ২১ জানুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা দাবি-দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে ধর্মঘট ঘোষণা করলে এ ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানান। কর্মচারীদের এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অযৌক্তিকভাবে জরিমানা করে। তিনি এ অন্যায় নির্দেশ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইল উপ-নির্বাচনে মুসলিম লীগবিরোধী প্রার্থী শামসুল হককে সমর্থন জানান ও তার পক্ষে কাজ করেন। এপ্রিলে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করার কারণে গ্রেফতার হন। ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় এবং জেলে থাকা অবস্থায় এ দলের যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। জুন মাসের শেষের দিকে মুক্তিলাভ করেন। জেল থেকে বেরিয়েই দেশে বিরাজমান প্রকট খাদ্য সঙ্কটের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করতে থাকেন। সেপ্টেম্বর ১৪৪ ধারা ভঙ্গের দায়ে গ্রেফতার হন এবং পরে মুক্তি পান। অক্টোবরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের সভায় নূরুল আমিনের পদত্যাগ দাবি করেন। এর। অব্যবহিত পরে অক্টোবরের শেষ দিকে লিয়াকত আলী খানের কাছে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে যাওয়া জন্য ভাসানীর সাথে পুনরায় গ্রেফতার হন।
১৯৫০ : ১ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের আগমন উপলক্ষে আওয়ামী মুসলিম লীগ ভুখা মিছিল বের করে। এই মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার সময় শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। এবারে তাঁকে প্রায় দুই বছর জেলে আটক রাখা হয়।
১৯৫২ : ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এর প্রতিবাদে বন্দী থাকা অবস্থায় ২১ ফেব্রুয়ারিকে রাজবন্দী মুক্তি এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি দিবস হিসেবে পালন করার জন্য রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান। ১৪ ফেব্রুয়ারি এ দাবিতে জেলখানায় অনশন শুরু করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র সমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, বরকত, রফিক, শফিউরসহ অনেকে শহীদ হন। জেলখানা থেকে এক বিবৃতিতে ছাত্র মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একটানা ১৭ দিন অনশন অব্যাহত রাখেন। জেলখানা থেকে আন্দোলনকারীদের সাথে যোগাযোগ রাখার দায়ে ঢাকা জেলখানা থেকে তাকে ফরিদপুর জেলে সরিয়ে নেয়া হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেল থেকে তিনি মুক্তিলাভ করেন।
১৯৫৩ : ৯ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করার লক্ষ্যে মওলানা ভাসানী, এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মধ্যে ঐক্যের চেষ্টা হয়। এই লক্ষ্যে ১৪ নভেম্বর দলের বিশেষ কাউন্সিল ডাকা হয় এবং এতে যুক্তফ্রন্ট গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়।
১৯৫৪ : ১০ মার্চ প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট লাভ করে ২২৩টি আসন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ১৪৩টি আসন। শেখ মুজিব গোপালগঞ্জের আসনে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে ১৩ হাজার ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। ১৫ মে প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। ২৯ মে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বাতিল করে দেয়। ৩০ মে করাচি থেকে ঢাকায় ফিরে গ্রেফতার হন। ২৩ ডিসেম্বর তিনি মুক্তিলাভ করেন। ৫ জুন জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ১৭ জুন ঢাকার পল্টন ময়দানের জনসভা থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করে ২১ দফা ঘোষণা করা হয়। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা না হলে দলীয় সদস্যরা আইনসভা থেকে পদত্যাগ করবেন। আগস্টের গণপরিষদের তিনি বলেন, আমাদের দাবি এ অঞ্চলের নাম ‘বাংলা’ হবে। বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য দুই-ই রয়েছে। ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ কাউন্সিলে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দ প্রত্যাহার এবং তাকে পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৬ : ৩ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে খসড়া শাসনতন্ত্রে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান। ১৪ জুলাই আওয়ামী লীগের সভায় প্রশাসনে সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্বের বিরোধিতা করে একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্ত প্রস্তাব আনেন শেখ মুজিব। ৪ সেপ্টেম্বর তার নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে খাদ্যের দাবিতে ভুখা মিছিল বের করা হয়। চকবাজার এলাকায় পুলিশ মিছিলে গুলি চালালে ৩ জন নিহত হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড দফতরের মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৫৭ সংগঠনকে সুসংগঠিত করবার উদ্দেশে ৩০ মে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ৭ আগস্ট চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন।
১৯৫৮ : ৭ অক্টোবর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেন। ১১ অক্টোবর তাকে গ্রেফতার করা হয়। একের পর এক মিথ্যা মামলার দায়ে হয়রানি করা হয়। প্রায় ১৪ মাস জেলখানায় থাকার পর তাকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় জেল গেটেই গ্রেফতার করা হয়।
১৯৬১ : ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করে তিনি মুক্তিলাভ করেন। সামরিক শাসন ও আইয়ুববিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে গোপন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।
১৯৬২ : ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়। ২ জুন চার বছরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটলে ১৮ জুন মুক্তিলাভ করেন। ২৫ জুন জাতীয় নেতৃবৃন্দ আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যৌথ বিবৃতি দেন। ৫ জুলাই পল্টনের জনসভায় আইয়ুব সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর লাহোর যান, এখানে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে বিরোধী দলীয় মোর্চা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠিত হয়। অক্টোবর মাসে গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের পক্ষে জনমত গৃষ্টির জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে সারা বাংলা সফর করেন। এ সময়ই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য বিশিষ্ট ছাত্র নেতৃবৃন্দের দ্বারা ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামে একটি গোপন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৬৬ : ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরের বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করেন। প্রস্তাবিত ৬ দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ। ১ মার্চ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ৬ দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সারা বাংলায় গণসংযোগ শুরু করেন। এ সময় তাকে সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকায় বারবার গ্রেফতার করা হয়। এ বছর প্রথম তিন মাসে আটবার গ্রেফতার হন। ৮ মে নারায়ণগঞ্জে পাটকল শ্রমিকদের জনসভায় বক্তৃতা শেষে তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয়। ৭ জুন তার ও আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘটের সময় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গীতে পুলিশের গুলিতে শ্রমিকসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়।
১৯৬৮ : ৩ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার তাকে এক নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জন বাঙালি সেনা ও সিএসপি অফিসারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। ১৭ জানুয়ারি জেল থেকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় জেল গেট থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা সেনানিবাসে আটক রাখা হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্ত আসামিদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের বিচার কার্য শুরু হয়।
১৯৬৯ : ৫ জানুয়ারি ৬ দফাসহ ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও শেখ সাহেবের মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলন গণ আন্দোলনে পরিণত হয়। পরে ১৪৪ ধারা ও কার্ফ্যু ভঙ্গ, পুলিশ-ইপিআর-এর গুলিবর্ষণ, বহু হতাহতের মধ্য দিয়ে গণ অভ্যুত্থানে রূপ নিলে আইয়ুব সরকার ১ ফেব্রুয়ারি গোলটেবিল বৈঠকের আহ্বান জানায় এবং তাঁকে প্যারোলে মুক্তিদান করা হবে বলে ঘোষণা দেয়। তিনি প্যারোলে মুক্তিদান প্রত্যাখ্যান করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি জনগণের অব্যাহত চাপের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে তাকেসহ অন্যান্য আসামিকে মুক্তিদানে বাধ্য হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। প্রায় ১০ লাখ ছাত্র-জনতার এই সংবর্ধনা সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু রেসকোর্সের ভাষণে ছাত্র সমাজের ১১ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান। ২৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু রাওয়ালপিন্ডিতে আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধু গোলটেবিল বৈঠকে আওয়ামী লীগের ৬ দফাসহ ছাত্র সমাজের ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করে বলেন, ‘গণ অসন্তোষ নিরসনে ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও রাজনীতিবিদরা বঙ্গবন্ধুর দাবি অগ্রাহ্য করলে ১৩ মার্চ তিনি গোলটেবিল বৈঠক ত্যাগ করেন এবং ১৪ মার্চ ঢাকায় ফিরে আসেন। ২৫ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হন। ২৫ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু তিন সপ্তাহের সাংগঠনিক সফরে লন্ডন গমন করেন। ৫ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন বাংলাদেশ’। তিনি বলেন, আমাদের আবাসভূমির নাম পূর্ব পাকিস্তান নয়, হবে বাংলাদেশ।
১৯৭০ : ৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পুনরায় আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হন। ১ এপ্রিল আওয়ামী লীগ কার্যকরী পরিষদের সভায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ৭ জুন রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু ৬ দফার প্রশ্নে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। ১৭ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু তার দলের নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ‘নৌকা প্রতীক পছন্দ করেন এবং ঢাকার ধোলাইখালে প্রথম নির্বাচনী জনসভার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। ২৮ অক্টোবর তিনি জাতির উদ্দেশে বেতার-টিভি ভাষণে ৬ দফা বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়যুক্ত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আবেদন জানান। ১২ নভেম্বরের গোর্কিতে উপকূলীয় এলাকায় ১০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটলে বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারণা বাতিল করে দুর্গত এলাকায় চলে যান এবং আর্তমানবতার প্রতি পাকিস্তানি শাসকদের ঔদাসীন্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি গোর্কিউপদ্রুত মানুষের ত্রাণের জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান। ৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামী লীগ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টি আসনের মধ্যে ৩০৫টি আসন লাভ করে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা