২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষ

- ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ক্ষণজন্মা মহান মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পেয়েছে একটি নতুন রাষ্ট্র, বাংলাদেশ।

যার হাত ধরে আমাদের এই গৌরবময় অর্জন, সঙ্গত কারণে তার ও তার পরিবার সম্বন্ধে জানার আগ্রহ আমাদের অনেকের।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে এবং তারও আগে অনেক ধর্মপ্রচারক সুদূর আরব থেকে বাংলাদেশে আসেন মহান ইসলাম ধর্মের বাণী নিয়ে। বঙ্গবন্ধুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমভাবে বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষরা বাগদাদ থেকে এই অঞ্চলে আসেন। মূল উদ্দেশ্য ধর্মপ্রচার হলেও এদের কেউ কেউ ব্যবসায় মনোযোগী ছিলেন। কলকাতা ছিল সে সময়ে ব্যবসার মূল কেন্দ্র। অল্পদিনের মধ্যে শেখ পরিবারের সদস্যরা বিরাট ভূ-সম্পত্তির মালিক হন। সে আমলে শেখ পরিবারের পূর্ব পুরুষরা মকিমপুর পরগনা এস্টেটের জমিদারের অধীনে ছিলেন।

সে সময় মকিমপুর পরগনা এস্টেটের জমিদার থাকতেন কলকাতায়। তবে পাঠগাতী বন্দরে (বর্তমান টুঙ্গিপাড়া উপজেলার একটি গ্রাম) জমিদারদের একটি বিরাট কাচারী ছিল। শেখ পরিবার তাদের প্রদত্ত ভূ-সম্পত্তির জন্য নির্ধারিত খাজনা এই কাচারী বাড়িতেই জমা দিতেন। জমিদারদের অনুমতি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর পূর্ব-পুরুষরা বসবাসের জন্য এখানে বাড়ি নির্মাণ করেন। তখন ফরিদপুর, মাদারীপুরের মধ্যে সর্বপ্রথম এই ভবনটিই নির্মিত হয়।

শেখ পরিবারের প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, বঙ্গবন্ধুর পিতামহের পিতামহ এর নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। পারিবারিক সূত্রগুলো বঙ্গবন্ধুর পিতামহের পিতামহ (একরামুল্লাহ শেখ) পূর্ব পুরুষের নাম জানাতে পারেননি। সূত্রগুলো থেকে জানতে পারা যায়, একরামুল্লাহ শেখের পিতামহ সর্বপ্রথম এ দেশে আসেন।

শেখ একরামুল্লাহরা ছিলেন দুই ভাই। শেখ একরামুল্লাহ ও শেখ কুদরতুল্লাহ। বঙ্গবন্ধুর পিতামহের পিতামহ ছিলেন শেখ একরামুল্লাহ। শেখ কুদরতুল্লাহ ছিলেন বড়। শেখ কুদরতুল্লাহর চার ছেলে। তাঁরা হলেন যথাক্রমে, শেখ আব্দুল গফুর, শেখ আব্দুল জব্বার, শেখ আব্দুল রহিম, শেখ আব্দুল খালেক। এদের মধ্যে শেখ আব্দুল খালেক ও শেখ আব্দুল গফুর শিশু বয়সেই মারা যায়। শেখ আব্দুল জব্বারের ছয় ছেলে হলেন, শেখ সৈয়দুল হক, শেখ অহিদুল হক, শেখ নিজামুল হক, শেখ শামসুল হক, শেখ সুলতানুল হক ও শেখ নূরল হক। সেই ছয়জনের ঔরসজাত ছেলে-মেয়েরা হলেন-

শেখ সৈয়দুল হক: এক মেয়ে, হোসনেয়ারা বেগম। হোসনেয়ারার দুই মেয়ে, জিন্নাতুন্নেছা বেগম (সাবেক শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলামের মা) ও ফজিলাতুন্নেছা বেগম (বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী)।
শেখ অহিদুল হক: এক ছেলে শেখ আশরাফুল হক।
শেখ নিজামুল হক: এক ছেলে শেখ ফরিদ
শেখ শামসুল হক: পাঁচ ছেলে- শেখ রিয়াজুল হক, শেখ রবিউল হক, শেখ মমিনুল হক, শেখ ইমামুল হক, শেখ শামিমুল হক।
শেখ সুলতানুল হক: এক ছেলে মারা গেছেন।
শেখ নুরুল হক: তিন ছেলে, তিন মেয়ে। শেখ ফজলুল হক মনি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ মারুফ, ফিরোজা (বাংলার বাণী সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর স্ত্রী), রেবা (সাবেক মন্ত্রী নাজিউর রহমান মঞ্জুর স্ত্রী) ও রেখা (চট্টগ্রামে স্বামীর সঙ্গে আছেন)।
শেখ আব্দুর রহিমেরও তিন ছেলে। তারা হলেন- শেখ আব্দুল হক, শেখ আব্দুল মান্নান ও শেখ আব্দুল হান্নান।
শেখ আব্দুল কদ্দুস এর দুই ছেলে। শেখ মুহম্মদ মুসা (সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলামের পিতা) ও শেখ মুহম্মদ ইয়াহিয়া। শেখ মুহম্মদ মুসার দুই ছেলে দুই মেয়ে। শেখ শহীদুল ইসলাম (সাবেক শিক্ষামন্ত্রী), শেখ সাহিদুল ইসলাম (জন্ম টুঙ্গিপাড়ার বাড়ীতে), ফরিদা বেগম, সাহিদা বেগম।
বঙ্গবন্ধুর পিতামহের পিতামহ ছিলেন শেখ একরামুল্লাহ। শেখ একরামুল্লাহর দুই ছেলে, তারা হলেন শেখ মোহাম্মদ জাকের ও শেখ মোহাম্মদ ওসিম উদ্দিন।
শেখ মোহাম্মদ জাকেরের তিন ছেলে। শেখ আব্দুল হামিদ (বঙ্গবন্ধুর দাদা), আব্দুর রশীদ ও শেখ আব্দুল মজিদ।
শেখ আব্দুল মজিদ: এক মেয়ে সাহেরা খাতুন (বঙ্গবন্ধুর মাতা)।
শেখ আব্দুল হামিদ: তিন ছেলে। শেখ লুৎফর রহমান (বঙ্গবন্ধুর পিতা), শেখ সফিউর রহমান (মরহুম), শেখ হাবিবুর রহমান (মরহুম)।
শেখ আব্দুর রশিদ: এক ছেলে শেখ মোশারফ হোসেন। প্রাক্তন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। এক মেয়ে তার নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেছেন।
শেখ লুৎফর রহমান: দুই ছেলে চার মেয়ে। শেখ আবু নাসের (খোঁড়া নাসের) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মরহুম ফাতেমা বেগম (ইলিয়াস আহমদ চৌধুরীর মা), আসমা বেগম (শেখ ফজলুল করিম সেলিমের মা), হেলেন (আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের স্ত্রী) ও খাদেজা বেগম।
শেখ সফিউর রহমান: নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেছেন।
শেখ হাবিবুর রহমান: এক ছেলে এক মেয়ে। হাফিজুর রহমান (ব্যবসায়ী) ও মেয়ে লুলু।
শেখ মুজিবুর রহমান: তিন ছেলে, দুই মেয়ে। শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী), শেখ রেহানা।
শেখ আবু নাসের: পাঁচ ছেলে তিন মেয়ে। সবাই খুলনায় বসবাস করেন। বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের পত্নী শেখ রাজিয়া নাসের ১৬ নভেম্বর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। তিনি বাগেরহাট-১ আসনের এমপি শেখ হেলাল উদ্দীনের মা।
শেখ মোহাম্মদ ওসম উদ্দিনের দুই ছেলে- মোহাম্মদ কাসেম ও মোহাম্মদ হাতেম।
শেখ মোহাম্মদ কাসেম: এক ছেলে জহুরুল হক (বঙ্গবন্ধুর শ্বশুর)।
শেখ জহুরুল হকের দুই মেয়ে, জিন্নাতুন্নেসা, ফজিলাতুন্নেছা (বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী)।
শেখ মোহাম্মদ হাতেম: নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেছেন।
বর্তমানে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের উল্লেখযোগ্য কেউ থাকেন না।

ব্রিটিশ আমলে মুসলমানরা যখন শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে ছিল তখনও শেখ পরিবারের সদস্যরা শিক্ষায় নিজেদের আদর্শ স্থানীয় করে গড়ে তোলেন। শেখ পরিবারের কয়েকজন সদস্য নিজ যোগ্যতা বলে ব্রিটিশ আমলে সরকারি বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। শেখ মুহম্মদ মুসা বঙ্গবন্ধুর ভায়রা ও শেখ শহীদুল ইসলামের পিতা ১৯৩৭ সালে কলকাতা ইবি রেলওয়েতে চাকরিতে যোগ দেন। শেখ মোশারফ হোসেন খান সাহেব পাকিস্তান আমলে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন।

শেখ পরিবারের সদস্য যারা বেঁচে আছেন তারা আজ সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রতিষ্ঠিত।

লেখক: কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement