২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হোন্ডা ও গুণ্ডা ছাড়াই ভোটকেন্দ্র ঠাণ্ডা!

হোন্ডা ও গুণ্ডা ছাড়াই ভোটকেন্দ্র ঠাণ্ডা! - ছবি : সংগ্রহ

হয়ে গেল ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন। কিন্তু এতে বিভিন্ন অনিয়মসহ ভোটার উপস্থিতি খুব কম হওয়ায় সমালোচনা ও বিশ্লেষণ চলছে। ভোটারদের মতামত না নিয়েই তাদের নামে যার যা ইচ্ছা বলেই যাচ্ছেন। কিছু বক্তা নিজেকে খুব শিক্ষিত, চতুর এবং নীতিবান জাহির করছেন এবং এ নিয়ে গর্বও করছেন। কেউ বা বলছেন, ‘ভোটাররা শিক্ষিত নন, তাই ইভিএমে ভোট দিতে যাননি।’ অথচ আগে বলা হয়েছে, ১৬ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারীর দেশে ইভিএমে ভোট দেয়া ‘কোনো সমস্যাই নয়’। অথচ এখন ভোল পাল্টে গেছে। এ ছাড়াও ‘তিন দিনের ছুটিতে ভোটাররা বাড়ি চলে গেছেন’, ‘দেশ উন্নত হয়ে গেছে, তাই ভোট দিতে আসেননি’ বলা হচ্ছে। যা হোক, প্রার্থীদের ইশতেহার আশার আলো দেখাতে পারেনি। কখনো বলা হয়, স্থানীয় নির্বাচনে ভোট পড়ে বেশি। বিরোধী দলের কথিত ‘নেতিবাচক’ প্রচারণাকেও দায়ী করা হয়েছে। আসলে ভোটারদের অনাস্থা ও ত্রুটির কারণে ইভিএম ভরসা হারিয়েছে।

বিরোধী দলের আশঙ্কার বাস্তব প্রতিফলন দেখা দেছে। ইসি আরো নিষ্কলুষ থাকলে ভোটের এই দশা হতো না। ‘জাল ভোট দেয়া যাবে না’ বলা হলেও ভোটাররা কষ্ট করে কেন্দ্রে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেয়ার পর চোখের সামনে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য কেউ অপছন্দের প্রতীকে ভোট দিয়ে দেয় এবং এই বলে শাসিয়ে যায় যে, এ কথা ভোটারদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ‘খবর আছে’। তাই হতাশ এবং অপদস্থ হতে ভোটাররা ভোট দিতে যায়নি। ভোট দিয়ে লাভ নেই, এ উপলব্ধি ব্যাপক হয়ে পড়েছে।

বিরোধীদলীয় এজেন্ট না থাকায় ভোটারদের যেন সহায়তা করার কেউ নেই। প্রশাসন, নিরাপত্তাবাহিনীসহ প্রায় সবাই একতরফা বিশেষ দলের কর্মী। কিন্তু বিরোধী দলের এজেন্ট না থাকলে কারচুপি কি করতে হবে? বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, সরকারি দলের ভোটাররাও কেন্দ্রে তেমন যায়নি, তারা যেন জেনেই গেছে, ভোট যা-ই হোক, কে কিভাবে নির্বাচিত হবে, তা ঠিক করা আছে আগে থেকেই। তাই তারাও ভোটকেন্দ্রে যেতে আগ্রহী ছিল না। ফলাফলও হয়েছে তেমনিই। কিন্তু সমস্যা হলো, সরকার দোষ করলেও তা বলা যাবে না, বললেই যত দোষ নন্দ ঘোষের।

বিরোধী দলের আশঙ্কার সাথে বাস্তবতা মিলে গেছে। কিছু ভোটার কেন্দ্রে গেছেন। তাদের অনেকেরই ভোট মনের সুখে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। নির্বাচিত মেয়র ও কমিশনাররা এ ভোটগুলো কি ফিরিয়ে দেবেন? নাকি ভুয়া জনপ্রিয়তা প্রদর্শন করবেন? প্রায় ১৫ হাজার ইভিএমে ১০টি করেও ‘ছিনতাই’ গণনা করা ভোট হলে দেড় লাখ ভোট হয়ে যায়। ২০টি হলে ‘বিজয়ী’দের নিজেদের ভোটই বেশি অবশিষ্ট থাকে না। প্রিজাইডিং অফিসারসহ কর্মকর্তাদের সংরক্ষিত ভোট থাকে সরকারি দলের জন্য রিজার্ভ। হিসাব করলে সর্বমোট যত ভোট কাস্ট হয়েছে, এত ভোটার কেন্দ্রে যাওয়ার হিসাব মেলে না। অনিয়ম করেই, এত ভোট কাস্ট হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। তবে জুলুম কখনোই ভালো নয়, তা বড়জোর সাময়িক মজাদার হতে পারে। ‘যুদ্ধ এবং রাজনীতিতে সবই ঠিক’ এমন ভাবনা, চরম অজ্ঞতা ও বর্বরতা ছাড়া কিছু নয়। আল্লাহ তায়ালা মিথ্যাবাদীকে অপছন্দ করেন। এদের ধ্বংস অনিবার্য। ইভিএমে সমস্যা ছিল, এর পরিচালকদেরও সমস্যা ছিল।

ভোটাররা ভোটের আগেই ঢাকা ছাড়ার কারণে বাড়তি জনস্রোত দেখা যায়নি নির্বাচনের দিন। ভোটাররা ভোট না দেয়ার মতো অশিক্ষিতও নয়। ইসি, সরকার ও ভোটের প্রতি অনাস্থার কারণেই তারা ভোট প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ঘরে বসে অনেকে দিন কাটিয়েছে। ভুয়া ও মারাত্মক মামলায় কেউ আক্রান্ত। বিপদের আশঙ্কায় বিরোধী দলের এজেন্টরা ভোটকেন্দ্রে যাননি। বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা প্রকাশ পাওয়ার পরও বাতিল করা হচ্ছে না কেন?

তবে বিরোধী দলও ভয় পেয়ে পালিয়ে থাকলে নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দেয়া হয় না। নির্ভয় দেয়া হতে হবে। যা হোক, বিএনপি এত ভোট পাওয়া তাদের সাফল্যই বটে। সোজা কথা, দেশের স্বার্থে ভোটের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতেই হবে। এ জন্য কেবল ইসি নয়; সরকার, প্রশাসন, নিরাপত্তাবাহিনীসহ সবাইকেই সৎসাহসী এবং নিরপেক্ষ হতে হবে। বিশেষ সময়ের ভোটের অনিয়মের উদাহরণ দিয়ে নিজেদের খারাপ নির্বাচনকে বৈধ করা যায় না। এখন গণতান্ত্রিক সময়, সামরিক নয়, তাই এ নিয়ে ভোটারদের ধোঁকা দেয়া সহজ নয়।

অবস্থা এখন এতই খারাপ যে, অতীতের গুণ্ডা হোন্ডার সময়ে ও মানুষ কেন্দ্রে আসত। নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর আস্থা ছিল, এখন তা-ও নেই। এত অবনতি কেন হলো? এটাও কারো কারো কাছে শত বছরের সেরা ভোট!


আরো সংবাদ



premium cement