২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৬ শাবান ১৪৪৬
`

হালাল পণ্যের বাজারে বাংলাদেশ

-

হালাল পণ্য ও সেবা বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। মুসলমানদের জন্য হালাল পণ্য অত্যন্ত জরুরি। সে জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে হালাল পণ্য ও সেবা সরবরাহ বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের বাজার দ্রুত বিকশিত হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে অনেক বড় প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশে প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষ মুসলমান। এখানে হালাল পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের বিশাল সম্ভাবনা আছে। সেই সাথে আন্তর্জাতিক হালাল পণ্যের বাজারে প্রবেশেরও সুযোগ অবারিত। এ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

হালাল পণ্যের বাজারের পরিচিতি : হালাল পণ্য বলতে সেসব পণ্যকে বোঝানো হয়, যেগুলো ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী প্রস্তুত ও উপযুক্ত। হালাল পণ্য হতে পারে খাদ্য, প্রসাধনী, ওষুধ, ফিন্যান্সিয়াল পণ্য, এমনকি পর্যটনসেবা। এই পণ্যের বাজারের পরিধি বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত হয়েছে। ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের বাজার প্রায় পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে এবং তা ২০৩০ সালের মধ্যে আরো বাড়তে পারে। বিভিন্ন মুসলিম দেশ যেমন মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব হালাল পণ্যের প্রধান বাজার।

বাংলাদেশে হালাল পণ্যের বাজার : বাংলাদেশে হালাল পণ্যের উৎপাদন ও বিপণন শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। হালাল খাদ্যপণ্য উৎপাদনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে এসব পণ্যের বিশ্ব বাজারে প্রবেশে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য কিছু বড় বাধাও ছিল। বাংলাদেশে হালাল পণ্যসংক্রান্ত একটি সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালার অভাব ছিল। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ বিষয়ে অনেক কাজ করেছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভূমিকা : প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ইসলামের শিক্ষা ও অনুশীলনের প্রচার এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের কল্যাণে কাজ করা। বাংলাদেশে হালাল পণ্যসংক্রান্ত গবেষণা ও মান নির্ধারণের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২০১১ সালে, ‘বাংলাদেশ হালাল এক্সটেনশন প্রোগ্রাম’ চালু করে, যার মাধ্যমে হালাল সনদ দেয়া হয়। এই সনদ প্রদান প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হয়, যা হালাল পণ্যের গুণমান ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে ‘বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এবং ‘বাংলাদেশ হালাল অথরিটি’ যার মাধ্যমে হালাল সনদ প্রদান, পণ্য পরীক্ষা এবং নির্দিষ্ট পণ্যগুলোর উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুসন্ধান করা হয়। এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশী পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা : বাংলাদেশের হালাল পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, আন্তর্জাতিক বাজারের শীর্ষে থাকা দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করতে গেলে পণ্যের গুণমান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববাজারে শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং কৌশল প্রয়োজন। তৃতীয়ত, বাংলাদেশের পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং উৎপাদনপ্রক্রিয়া প্রায়ই আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

তবে হালাল পণ্যের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের প্রবেশের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের খামার এবং কৃষি ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন হয়েছে এবং এখানকার কৃষিপণ্য আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য উপযুক্ত হতে পারে। বাংলাদেশের প্রসাধনী ও স্বাস্থ্যসেবা খাতও হালাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদন করতে এবং বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম।

বিশ্বের শীর্ষ বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান : বর্তমানে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো হালাল পণ্যের বৃহত্তম বাজার। বাংলাদেশের জন্য এসব বাজারে প্রবেশের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তারা আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তাদের পরিচালিত হালাল সনদ প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করছে।

বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের সম্ভাবনা ও বাংলাদেশের জন্য পথপ্রদর্শন : বিশ্বে হালাল পণ্যের বাজার সুবিশাল। বিশ্বব্যাপী মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সাথে মুসলিমদের মধ্যে হালাল পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে। তাই বাংলাদেশের জন্য বিশ্বের হালাল পণ্যের বাজারে প্রবেশ একটি বিশাল সুযোগ। এ ক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশন গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সাহায্য ও সহায়তা প্রদান করছে।

বাংলাদেশের হালাল পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ, প্রশিক্ষণ এবং সনদ প্রদান প্রক্রিয়া দেশের হালাল পণ্যের গুণগত মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য আরো উন্নয়ন এবং সক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগ আছে। সেটি হলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বিপুলভাবে বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এ দেশের অবস্থান শক্তিশালী হবে।

লেখক : গণসংযোগ কর্মকর্তা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement