২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ শাবান ১৪৪৬
`

বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ : একটি নাম একটি ইতিহাস

বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ (বামে) ও বারাকাহ ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্টরা - ছবি : নয়া দিগন্ত

মরহুম বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বাংলাদেশের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। তিনি একটি গতিশীল বাংলাদেশের জন্য সাধনায় লিপ্ত ছিলেন। প্রয়োজন সুন্দর গবেষণার মাধ্যমে সত্যকে তুলে আনা। বারাকাহ ফাউন্ডেশনের সাথেও তিনি ছিলেন ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে চাই।

তার জন্ম ১৯৩৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের গোষ্টা গ্রামে। মৃত্যু ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।)

‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব।’ সূরা বাকারা ১৫৬ নম্বর আয়াতে অংশবিশেষ এই আদি প্রকৃত্রিম ও চির সত্য কথাটা অনুসরণ করে ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ বিচারপতি মো: আব্দুর রউফ তার নিজের প্রতিষ্ঠিত ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতাল থেকে চলে গেলেন আল্লাহর কাছে।

সবাই শোক বিহ্বল। একজন কর্মময় মানুষের দুনিয়ার জীবন সমাপ্ত। রেখে গেলেন তার উত্তরসূরীদের তার অসমাপ্ত কাজগুলো আরো সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য। মৃত্যুও জীবনের কথা সূরা মুলকে আল্লাহ তায়ালা সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন এভাবে ‘পূণ্যময় সেই মহান সত্তা যার হাতে রাজত্ব এবং যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন যাতে করে তিনি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন কর্মের বিবেচনায় কে তোমাদের মধ্যে উত্তম।’ (সূরা মুলক ১-২)।

আল্লাহ তাকে দান করেছেন অনেক মহিমান্বিত গুণাবলী যা তাকে প্রতিষ্ঠিত করে বাংলাদেশের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে। আছে সন্তান সন্তানাদি, সহায় সম্পদ, সম্মান ও কল্যাণ। তার দু’ ছেলে, এক মেয়ে ও নাতি-নাতনি রয়েছে। বড় ছেলে মোহাম্মদ আশরাফ রউফ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল। তাকে আলোকিত করেছে অনেক বিষয়গুলো। গবেষকরাই এ সব বিষয়ে অনেক কিছু নির্ধারণ করবেন বলে আশা করি। আমিও তাকে দেখেছি তার সাথে মিশেছি হৃদয়মনের সকল আন্তরিকতায় সিকি শতাব্দীর ওপর। বলতে চাই কবির ভাষায় :

এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ।
মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।

বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মো: ইউনূসসহ নানা স্তরের হাজারো মানুষ, বিচারপতি আব্দুর রউফ সম্পর্কে যে সব মতামত ও মন্তব্য করেছেন তা যেকোনো মানুষকে বিমোহিত করবে। তার সম্পর্কে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের আমির প্রখ্যাত জননেতা ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘আইন এবং আদালত অঙ্গনে তার দীর্ঘ আইনগত পেশা জীবনে পেশাদারিত্ব, স্বচ্ছতা এবং দায়িত্ববোধের যে উদাহরণ স্থাপন করেছেন তা একেবারেই বিরল।’

আমার জানা মতে সত্যিকারের মজলুমদের পাশে দাঁড়াতে তিনি কখনো কারো সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টির পরোয়া করেননি। অনেক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে আইনের যে সহযোগিতা প্রদান করেছেন তা একেবারেই বিরল। তার এ লড়াই ইতিহাসের স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

তিনি আরো বলেন, তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে ১৯৯১ সালে জাতীয় একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিয়েছিলেন। যে নির্বাচন দেশ-বিদেশে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। তার নিরপেক্ষতা সততা যোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিজমের পর বর্তমান দেশে গণতন্ত্র আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সূচনা লগ্নে তার মতো একজন মহান অভিভাবকের বড় প্রয়োজন ছিল। তার ইন্তেকালে জাতি একজন অত্যন্ত আদর্শবান দেশপ্রেমিক উদার গণতন্ত্রমনা আইন বিশেষজ্ঞ ন্যায় বিচারক ও একজন ইসলামী ব্যক্তিত্বকে হারাল।

এই রকম দেশের অসংখ্য জ্ঞানী গুণী মনীষীরা তার ব্যাপারে সুন্দর সুন্দর মন্তব্য ও মতামত দিয়েছেন যা পরবর্তী মানব সভ্যতার জন্য হতে পারে অনেক কল্যাণের দিকনির্দেশনা। এত সবকিছু ছাড়িয়ে বারাকাহ ফাউন্ডেশন বিচারপতি আব্দুর রউফকে নিয়ে গেছে এক সুমহান উচ্চতায় তা আমরা কতজন জানি। আব্দুর রউফ ও বারাকাহ ফাউন্ডেশন জাতিকে এমন কিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন যা এখনো অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে। এ বিষয়ে আমরা কথা বলতে চাই, লিখতে চাই, বই প্রকাশ করতে চাই। আসুন এ গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু আমরা মানুষের কাছে উপস্থাপনের চেষ্টা করি।

বারাকাহ ফাউন্ডেশন এমনকি দান করল যা তাকে দিতে পারে অমরতা। গভীর অনুসন্ধানে ও বিশ্লেষণে জেনেছি তার এই সুমহান গুণাবলিকে আরো বিকশিত করার পেছনে ভূমিকায় রেখেছে বারাকাহ ফাউন্ডশন।

যে ব্যক্তি তাকে এই পথে সন্ধান দিয়ে নিজেও হয়েছেন অমর তার নাম মরহুম ডাক্তার ওমর ফারুক। আমি এই ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় একজন জীবন্ত সাক্ষী।

ইতোমধ্যে বারাকাহ ফাউন্ডেশনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ও অন্যদের সমন্বয়ে ড. আহসান হাবিব ইমরোজ, এ কাইয়ুম আল ফয়সাল সম্পাদনা পরিষদের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় স্বল্পব্যয়ে স্বাস্থ্যসেবার রূপকার ডাক্তার ওমর ফারুক স্মারক গ্রন্থ। বইটি বারাকাহ ফাউন্ডেশন সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক দলিল।

সেখানে বিচারপতি আব্দুর রউফ এক ঐতিহাসিক সত্যের দুয়ার উন্মুক্ত করে গেছেন বারাকাহ ফাউন্ডেশন ও ওমর ফারুক সম্পর্কে।
তিনি ওমর ফারুক স্মরণে বলেন, ‘তিনি ছিলেন আর্ত মানবতার সেবা প্রদানে এক নজিরবিহীন বিরাট সম্ভাবনাময় তরুণ চিকিৎসক । ১৯৯৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কর্মরত বিচারক অবস্থায় তার সহকর্মী আরো তিনজন তরুণ ডাক্তারের সাথে আমার পরিচয় ঘটে। তারা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে মানবসেবায় এক বিপ্লবাত্মক পরিকল্পনা উপস্থাপন করে আমার আশীর্বাদ কামনা করেন। এই পরিকল্পনা অত্যন্ত বাস্তবমুখী ও সাড়া জাগানোর মতো ছিল বিদায় অবসর জীবনে তাদের সাথে সম্পৃক্ততার বাসনা প্রকাশ করেছিলাম । তারই জের ধরে ১৯৯৯ সাল থেকে অরাজনৈতিক মানবসেবা ধর্মীয় সংস্থা বারাকাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছি।’

এটি ছিল বিচারপতি মো: আব্দুর রউফের অবসর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ জীবনধারা যা তাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অবসরে থাকতে দেয়নি। অবসর জীবনকে গতিময় জীবনের রূপ দিতে মরহুম ওমর ফারুক এর উদ্যোগটি কেন এতটা কার্যকরী এবং ম্যাজিক মেডিসিন মত কাজ করেছে তা এই জাতিকে অনুভব করতে হলে আমাদের ক্রমান্বয়ে আরেকটু পেছনে ফিরে যেতে হবে।

এ বিষয়ে প্রফেসর এম ফখরুল ইসলাম বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ইউরোলজিস্ট এবং বারাকাহ ফাউন্ডেশনের চিফ এক্সিকিউটিভ খুব চমৎকারভাবে এই রহস্যের দুয়ার উন্মোচন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তখন রাজধানীর মৌচাক রেলগেটের ভুইয়া পলি ক্লিনিকে নিয়মিত বৈকালিক চেম্বার ও প্রাইভেট প্র্যাকটিস করি। ১৯৯৩ সাল আবার চেম্বারে প্রাক যোগাযোগ সহকারে একজন ইয়ং স্মার্ট ছেলে এসে কিছু আলোচনা সূত্রপাত করল যা আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেল। বাল্যকাল থেকেই আমার বেশিরভাগ কাজ চিন্তাচেতনা ছিল গণমুখী। আলোচনার শুরুতেই তিনি বললেন, ফখরুল ভাই আমরা এমন একটা হাসপাতাল করতে যাচ্ছি যেখানে লোকস্ট সার্ভিস দেবো। সেই ওমর ফারুকের লো কস্ট (স্বল্প ব্যয়) হাইটেক মেডিক্যাল সার্ভিস কনসেপ্টটি গ্রহণ করি এবং এগিয়ে যাই তৈরি করি বারাকাহ ফাউন্ডেশন।’

প্রফেসর ডা: মতিউর রহমান বলেন, ‘ডাক্তার ওমর ফারুক স্বল্প ব্যয়ে চিকিৎসা সেবার যে ব্যবস্থা করে গেছেন আল্লাহ চাহে তো কেয়ামত পর্যন্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং এমনকি উচ্চ উচ্চবিত্তরা উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা পেয়ে কৃতজ্ঞ হবেন।’

ওমর ফারুকের সাথে আমার সোনালী সময় কেটেছে ময়মনসিংহের এই বিশাল জনপদে। আবার দেখা হল ৯০ সালে ঢাকায়। বলল, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চাকরি করার চেয়ে বরং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে চাই। আগত চিকিৎসকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির জন্য কাজ করতে চাই যাতে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে পারি। আমি এই নবীন চিকিৎসকের এই অনুভূতি ও সাহসকে স্বাচ্ছন্দে অনুমোদন করলাম, উৎসাহিত করলাম, দোয়া করলাম, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নত পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলাম।

সেই সব সিদ্ধান্তের ফসল হলো বারাকাহ ফাউন্ডেশন। যা আজ বিশাল গতিশীল একটি স্রোতোধারার নাম, একটি বিশাল নদী প্রবাহের নাম যা সাগর পানে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সাগর মহাসাগর পাড়ি দিয়ে এটি সত্য সুন্দরকে বাংলাদেশের জমিনে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে হেল্থ সেক্টরে আমাদের লো-কস্ট হাইটেক কনসেপ্ট যেভাবে সমর্থিত হলো এবং ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে জন্ম নিলো ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল মগবাজার, এবং রাজারবাগে দি বারাকাহ জেনারেল হাসপাতাল লিমিটেড, মদনপুর নারায়ণগঞ্জ ঢাকা চিটাগাং হাইওয়ের পার ঘেঁষে দি বারাকাহ হাসপাতাল মদনপুর।

এইসব হাসপাতালগুলো প্রতিষ্ঠায় যত বাধা আসুক প্রতিবন্ধকতা আসুক কোনো সমস্যা নেই আমাদের পাশে থাকতেন সব সময় বিচারপতি আব্দুর রউফ। তিনি সব সময় বলতেন ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে কখনো সাগর পাড়ি দেয়া যায় না। সাগর পাড়ি দিতে হলে বড় নৌকাই লাগবে। যা আমাদেরকে সব সময় অনুপ্রাণিত করেছে উৎসাহিত করেছে উজ্জীবিত করেছে।

সম্মানিত শেয়ারহোল্ডারদের জন্য, সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য আগত ভবিষ্যতের কর্ণধারদের জন্য তার সব সময়ের একটি অমীয় বাণী ছিল সার্ভিস ফাস্ট প্রফিট নেক্সট।

এই সকল কনসেপ্টগুলো এবং আমাদের সাহসের ওপর ভিত্তি করে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে আমরা তৈরি করতে যাচ্ছি মালিবাগ রেলগেটে বারাকাহ স্পেশালিস্ট হসপিটাল লিমিটেড।

সেখানে ট্রপিকাল হোমস লিমিটেডের মাধ্যমে তৈরি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের টলেস্ট ৪৫ তলা বিল্ডিং, টি এ টাওয়ার যেখানে হাসপাতাল ছাড়াও গড়ে উঠবে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে। আমরা এমন হাসপাতাল বিনির্মাণ করতে চাই যাতে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে।

বাংলাদেশী রোগীদের বিদেশে যে চিকিৎসা করার প্রবণতা রোদ হতে পারে বিদেশী রোগীরা বাংলাদেশে এসে আমাদের হাসপাতালে সেবা পেয়ে ধন্য হতে পারে এবং আমরা মানবকল্যাণে একটা শ্রেষ্ঠ নমুনা হয়ে গড়ে উঠতে পারে।

অবসরে থাকাকালীন বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ মানবসেবা ও মানবকল্যাণে বারাকা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অনুপ্রেরণার একটি উৎস কেন্দ্রে পরিণত হয়েছেন। তার সাথে যুক্ত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

যুক্ত হয়েছেন ট্রপিক্যাল হোমস এবং তার চেয়ারম্যান মরহুম ডাক্তার রেজাউল করিম।

আজ দু’জনেই মরহুম চলে গেছেন আল্লাহর কাছে সেখানে তারা শান্তিতে থাকুন, জান্নাতে থাকুন এবং গল্পে থাকুন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

তবে তাদের দু’জনের স্বপ্ন টি এ টাওয়ারে তৈরি হবে বারাকাহ ফাউন্ডেশনের অনেক বড় মাপের অফিস যা উৎসর্গীকৃত হবে মানবসেবা ও মেডিক্যাল শিক্ষা, গবেষণার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে। তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ কতদূর সময়ই তা বলে দেবে। আমরা অপেক্ষায় থাকলাম।

লেখক : ভাইস চেয়ারম্যান, দি বারাকাহ ফাউন্ডেশন ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ, সাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ


আরো সংবাদ



premium cement

সকল