০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১, ৫ শাবান ১৪৪৬
`

জুলাই বিপ্লব ও আমাদের অর্থনীতি

-

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বলতে গেলে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা, বিনিয়োগ ও শিল্প খাত, ব্যাংক ও আর্থিক খাত, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ও রেমিট্যান্স এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিকে বিবেচনায় আনতে হবে। আমার জানি, একটি দেশের ভেতরে যত পণ্য ও সেবা উৎপাদিত হয়, তা-ই জিডিপি। আগের বছরের চেয়ে জিডিপি বৃদ্ধির হারকে বলা হয় প্রবৃদ্ধি। জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া মানে হলো অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে যাওয়া। এতে আগের চেয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার কমে যায়। বেকার বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়। ব্যবসায় বাণিজ্য দ্রুতগতিতে না বাড়লে, কারখানায় উৎপাদন না বাড়লে মানুষের আয় বৃদ্ধির সুযোগ কমে যায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে সাধারণত ৬ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে হয়েছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে নামে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। যদিও দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জিডিপি বাড়িয়ে দেখানো হতো। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর ২০২৪-এ মানুষের আয় বেড়েছে ৮ শতাংশের কিছু বেশি। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম, অর্থাৎ বাংলাদেশে ডিসেম্বর ২০২৪ শেষে দেশে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ; অর্থাৎ হারটি এক অঙ্কে নামেনি। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিয়ে তারা সুফল পেয়েছে। বাংলাদেশ যথাসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। তাই সুফলও এখনো পায়নি। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকেও খুব ভিন্ন কিছু করতে দেখা যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার বাড়াচ্ছে মূল্যস্ফীতি কমাতে। অন্য দিকে সরকার কর বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়াবে।

বাংলাদেশ একটি নিম্ন-মধ্য আয়ের উন্নয়নশীল দেশ। যেখানে রয়েছে স্থিতিশীল বাজার অর্থনীতি। এই অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে মধ্যম হারের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, পরিব্যাপ্ত দারিদ্র্য, আয় বণ্টনে অসমতা, শ্রমশক্তির উল্লেখযোগ্য বেকারত্ব, জ্বালানি, খাদ্যশস্য এবং মূলধনী যন্ত্রপাতির জন্য আমদানিনির্ভরতা, জাতীয় সঞ্চয়ের নিম্নহার, বৈদেশিক সাহায্যের ওপর ক্রমহ্রাসমান নির্ভরতা এবং কৃষি খাতের সঙ্কোচনের সাথে সাথে সেবা খাতের দ্রুত প্রবৃদ্ধি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জনে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প বিশ্বের বৃহত্তম শিল্পের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮০ সালের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত পাট ও পাটজাত পণ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এ সময় পাট রফতানি করে দেশটি অধিকাংশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করত।

গত চার-পাঁচ বছরে বৈশ্বিক নানা ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করেছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ বাংলাদেশ অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। যেমন দেশজ অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। অতিমারীর কারণে সরকারি সম্পদের একটি বিরাট অংশ অতিমারী মোকাবেলায় ব্যয়িত হচ্ছিল। ফলে দেশের উৎপাদন খাত ও সামাজিক খাতে সম্পদের ঘাটতি পড়ে যায়। অন্য দিকে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ অতিমারী বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, কোভিড-১৯-এর কারণে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উৎপাদন ও রফতানি উভয়ই ব্যাহত হয়। এসব কারণ বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি গতিধারায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে। এর পরই এলো ইউক্রেন যুদ্ধ, যা বৈশ্বিক জোগান ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেয়। ফলে বৈশ্বিক বাজারে খাদ্যসামগ্রী ও জ্বালানির মূল্য বেড়ে যায়।

যেহেতু বাংলাদেশ খাদ্যসামগ্রী ও জ্বালানি দু’টিই আমদানি করে, ফলে এ দুই সামগ্রীর বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশর অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতিকেও বাড়িয়ে দেয়। ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বিঘ্নিত হয়। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের মোট দেশজ উৎপাদন বা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির তথ্য নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনমানের অবস্থা বোঝা যায় না। কিংবা মূল্যায়ন করা যায় না সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রকৃত অবস্থা। অর্থনীতিতে নানা সমস্যা সত্ত্বেও দীর্ঘসময় ধরে বাংলাদেশের অর্তনীতিতে ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী প্রবৃদ্ধি প্রবণতা অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষকেও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দেয়। কারণ পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ের যে তথ্য তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। তবে যে যাই বলুক না কেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের মধ্যে ৩৫তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) ২৯তম যা দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয়। বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে গড়ে ৬.৩ শতাংশ হার ধরে রেখে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং বর্তমানে বিশ্বের সপ্তম দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতি। বাংলাদেশের অর্থনীতির ধারার কথা বলতে গেলে, তিন ভাগে সময়কে ভাগ করে নিতে হবে। স্বৈরাচারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের অর্থনীতি, তার আগের অর্থনীতি ও ৫ আগস্ট ২০২৪-পরবর্তী অর্থনীতি।

বিগত সময়ে স্বপ্ন দেখিয়ে রূপকল্প ঘোষণা করেছিল শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার। নানা কথামালার ফুলঝুরি আর পরিসংখ্যান জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থনীতির নানা সূচককে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করবে এমন প্রচার-প্রপাগান্ডা ছিল তুঙ্গে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময় বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু হাসিনার সরকার অপ্রয়োজনীয় নানা প্রকল্পে উদারহস্তে ঋণগ্রহণ করে ১০৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণের ভার এ দেশের সাধারণ জনগণের কাঁধে চাপিয়ে গেছে। অন্য দিকে অর্থপাচারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হয়েছে। হাসিনার শাসনামলে দেশের অর্থনীতির পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, অর্থনীতির সমৃদ্ধি নিয়ে যে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল, তার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল ছিল না। সোনালি দিনের কথা বলে মিথ্যাচার করা হয়েছে। তথ্যের বিকৃতি ঘটিয়ে প্রবৃদ্ধি বেশি দেখানো হয়েছিল। ব্যাংক খাত দুর্দশায় নিপতিত হয়েছিল। যখনই সঙ্কটের মাত্রা বেড়েছে, তখনই মিথ্যাচার করে সঙ্কটকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় বৈদেশিক ঋণ ও অর্থপাচারের ফলে বিগত হাসিনার শাসনামলে দেশের অর্থনীতি দেউলিয়া হওয়ার দিকে যাচ্ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দেশের ব্যাংক খাতকে ধসিয়ে দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট এক এস আলম গ্রুপের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে দেশের সাতটি ইসলামী ব্যাংক। নামে-বেনামে হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের নামে এস আলম কমপক্ষে দুই লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপ ৫০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। হাতিয়ে নেয়া এসব অর্থের প্রায় পুরোটাই বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন। শেয়ারবাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে। শুধু বন্ডের মাধ্যমে সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে বাজার থেকে।

দেশের অন্যতম প্রধান ব্যবসায়ী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ যৌথভাবে প্রতি মাসে যে পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) প্রকাশ করে, তাতে দেখা যাচ্ছে, দেশে জুলাই ও আগস্ট মাসের ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বর মাসেও অর্থনীতি সঙ্কোচনের ধারায় ছিল। তবে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের তুলনায় সঙ্কোচনের গতি সামান্য কমেছে। আগস্ট ২০২৪-এর তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে পিএমআইয়ের মান ৬ দশমিক ২ পয়েন্ট বেড়েছে।

সেপ্টেম্বর-২০২৪ মাসে পিএমআই সূচক ছিল ৪৯ দশমিক ৭, আগস্ট মাসে যা ছিল ৪৩ দশমিক ৫। পিএমআই সূচকের মান ৫০-এর নিচে থাকার অর্থ হলো অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে। মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে এই সূচক প্রণয়ন করা হয়, অর্থনীতির মূল চারটি খাতের ভিত্তিতে কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবা। দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ কেবল উৎপাদন খাত সম্প্রসারণের ধারায় ফিরেছে। বাকি তিনটি খাত সঙ্কোচনের ধারায় ছিল।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জুলাই ও আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অর্থনীতির নানা সমস্যা, অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র জনগণের কাছে পরিষ্কার হতে থাকে। ব্যাংক খাত, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মেগা প্রকল্পসহ যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও নানা রকম দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি ও অর্থ আত্মসাৎ এবং পাচারের মতো ঘটনাও উঠে আসে। এক কথায় অর্থনীতির প্রতিটি খাতে বৈষম্য ও লুটপাটের চিত্র উঠে আসে। বিগত ১৬ বছরে জনগণকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে, বড় অঙ্কের অর্থ পাচার করে কিছু ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তি। যার ফল বর্তমান জনগণকে ভোগ করতে হচ্ছে। সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে আনার দুই সপ্তাহ পর সংশোধিত বিশ্বব্যাংকের এই পূর্বাভাস প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থার প্রতিফলন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, দীর্ঘ সময় ধরে কম বিনিয়োগ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, খেলাপি ঋণের লাগামহীন ধারা আর সামষ্টিক অর্থনীতিতে গুরুতর কিছু দুর্বলতা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমায় মূল অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে।

তার ওপর মাস দুয়েক ধরে অর্থাৎ অর্থনীতি চরম স্থবিরতায় জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরো সঙ্কুুচিত হওয়াই স্বাভাবিক। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমার কারণে হতাশা অনুভূত হলেও হাহুতাশ করার কিছু নেই; বরং ভুলভাল তথ্য-পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে না হয়ে সত্যি সত্যি ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলে, তা নানামুখী সঙ্কটে থাকা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য টেকসই হবে।

শেখ হাসিনার পলায়নের পর চলমান অর্থনীতি নানাবিধ সঙ্কটে পতিত হচ্ছে। গত সরকার অপ্রয়োজনীয় নানা প্রকল্পে উদারহস্তে ঋণগ্রহণ করে ১০৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণের ভার এ দেশের সাধারণ জনগণের কাঁধে চাপিয়ে গেছে। অন্য দিকে অর্থপাচারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হয়েছে। হাসিনার আমলে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার হয়েছে বলে শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা। আবার বিদেশ থেকে যেসব ঋণ নেয়া হয়েছিল, তার একটি অংশও পাচার হয়ে গেছে। অন্য দিকে আগামী ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের। কিন্তু এ উত্তরণের ফলে অর্থনীতিতে যেসব চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে সেগুলো মোকাবেলা নিয়ে ইতোমধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সময় আরো পিছিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংক দেশের অর্থনীতির জন্য চারটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো মূল্যস্ফীতি, যা কিছুটা কমলেও উচ্চহারে থাকবে; বহিঃস্থ খাতের চাপ, যার মূল কারণ প্রয়োজনের তুলনায় কম রিজার্ভ; আর্থিক খাতের দুর্বলতা, যা দূর করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কাজ করতে হবে এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। দেশের অর্থনীতিতে বিদেশী ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের জুন শেষে ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা (১২০ টাকা দরে)।

তথ্য বলছে, ২০০৮-০৯ সাল শেষে সরকারের বিদেশী ঋণ ছিল ২১ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে ১৫ বছরে বেড়েছে ৮২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার; যা দেশীয় মুদ্রা টাকার অঙ্কে প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ৩৮ বছরে যে পরিমাণ ঋণ করেছে বিগত সরকারগুলো, আওয়ামী লীগ সরকার মাত্র ১৫ বছরে তার চারগুণ ঋণ করেছে।

অর্থনীতির বড় অনিশ্চয়তা এখন উৎপাদন খাতে। নানা রকম উদ্যোগের পরও সবচেয়ে বড় রফতানি শিল্প পোশাক খাতে উৎপাদনব্যবস্থা এখনো ভঙ্গুর রয়ে গেছে। জুলাই মাস থেকে পোশাক শিল্প এলাকা শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা গেছে। সম্প্রতি পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও তা টেকসই হয়েছে কি না, সেটি এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। পোশাক শিল্পের মালিকদের সমিতি জানিয়েছে, তাদের উৎপাদন ও রফতানিতে যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনি কিছু ক্রয়াদেশ অন্য দেশে চলে গেছে। বর্তমানে অর্থনীতির এহেন হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সমাধান বের করতে হবে সরকারকে। দুর্নীতি, পুঁজি-লুণ্ঠন এবং পুঁজিপাচারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করতে হবে। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে জোর দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে, ব্যাংক ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।

লেখক : অর্থনীতি বিশ্লেষক ও ব্যাংকার
ইমেইল: [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
চার প্রদেশ, নতুন বিভাগ, ডিসি-ইউএনও পদবি পরিবর্তনসহ সংস্কারে যত প্রস্তাব স্বপ্নের ফাইনালে চিটাগং কিংস উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের সুপারিশ সহজ জয়ে আর্জেন্টিনা, লড়তে হলো ব্রাজিলকে সাবেক এমপি ফজলে করিমকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ হাটহাজারীতে চেয়ারম্যান গ্রেফতার, সমর্থকদের হামলায় ওসি-ডিবিসহ আহত ৬ হাসিনার যেকোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপের জন্য ভারত দায়ী থাকবে : নাহিদ স্বর্ণের দামে ফের রেকর্ড, ভরি ১৪৭৮১৮ টাকা মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই : বাউবি ভিসি হেটমায়ারের ঝড়ো হাফ-সেঞ্চুরিতে খুলনার সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১৬৩ রান নিখোঁজ আব্দুল মজিদের লাশ উদ্ধার

সকল