সাইবার সুরক্ষা আইন নিয়ে কিছু কথা
- মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী
- ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:৪৬
বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের প্রবর্তিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে যে নতুন সাইবার সুরক্ষা আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি নতুন মোড়কে পুরনো নিবর্তনমূলক আইন। এ আইনে মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকিতে পড়বে। ইতোমধ্যে উপদেষ্টাদের সভায় অনুমোদিত সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়ায় আওয়ামী সরকারের বিতর্কিত দু’টি আইনের প্রতিফলন ঘটেছে বলে টিআইবিসহ সচেতন নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। মূলত বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে এটি নিয়ন্ত্রণমূলক ও নজরদারির অধ্যাদেশে পরিণত হয়েছে। এখানে অধিকারের কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না; বরং মত প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ বা খর্ব করার এক ধরনের প্রক্রিয়া দেখা যায়। এটি বড়ই দুঃখজনক। এ অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়, যে সরকার ক্ষমতায় আসে সেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর খবরদারি করতে চেষ্টা চালায়। বলা বাহুল্য, সাইবার সুরক্ষা আইনটি তৈরির আগে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সাথে আলোচনা করার প্রয়োজন ছিল। এ ধরনের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নোয়াব, সম্পাদক পরিষদ বা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো আশা করে না। টিআইবি বলেছে, সরকার এটি একটি জগাখিচুড়ির অধ্যাদেশ তৈরি করেছে। সাইবার, ইন্টারনেট, ডিজিটাল সব মিলিয়ে গোঁজামিল করা হয়েছে। সাইবার সুরক্ষা নাম হলেও মূলত এটি আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের এক ধরনের পুনরাবৃত্তি বটে। যে আইন মানুষের মত প্রকাশের ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করে সে আইনের প্রতি জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব নয়। আইনটি মোটামুটি ধরে নেয়া যেতে পারে জনবিরোধী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অধ্যাদেশ বাংলাদেশের জন্য হতাশাজনক। সরকারে যেই থাকুক না কেন, সেই এর অপব্যবহার করবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য এই যে, নতুন বছরের শুরুতে ভারত সরকারও ঠিক আমাদের মতো ডিজিটাল মিডিয়ার উপর কড়া নজরদারি অর্থাৎ তথ্য নিয়ন্ত্রণে বিধি প্রকাশ করে এখন সমালোচনার মুখে পড়েছে। তবে তাদের এই আইন কার্যকর করার আগে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সাধারণ মানুষের মতামত প্রকাশ করার সুযোগ রেখেছে, যা আমাদের সাইবার সুরক্ষা আইনে রাখা হয়নি। ভারতের বিরোধী দল সরকারের তথ্য জানার অধিকার কেড়ে নেয়ার নানা উদ্যোগের সমালোচনা করছে।
বর্তমানে সংবাদপত্র পরিষদের ঘন ঘন বিবৃতিতে প্রশ্ন উঠছে যে, সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো নতুন করে হুমকির সম্মুখীন কি-না? ভারতের এক সিনিয়র সাংবাদিক বলেছেন, প্রত্যেক দেশের সংবিধানে, আইনে গণমাধ্যমের ও মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেটি যখন বাস্তবায়নের সময় আসে তখন ক্ষমতাসীনরা বাধা হয়ে দাঁড়ায়, আর এটিই বাস্তব। গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে অনেক সাংবাদিক খুন হয়েছেন। যুগ যুগ ধরে সংবাদপত্র নানামুখী চাপের মধ্য দিয়ে ক্রমবিকাশ লাভ করছে। এই চাপ কমবেশি সব দেশেই রয়েছে। তবে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের চাপ অতিমাত্রায় বিদ্যমান। রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে সংবাদপত্রের ওপর এক ধরনের হুমকি বা চাপ সৃষ্টি করে, আবার ক্ষমতার বাইরে থাকলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য চিৎকার করে থাকে।
বাংলাদেশের সাইবার সুরক্ষা আইনটিতে পুলিশি হয়রানির যথেষ্ট সুযোগ রাখা হয়েছে। যা কারো জন্য কাম্য নয়। এতে করে দেশের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের হেনস্তা বা হয়রানির মাত্রা আগের আইনের থেকে কমবে না; বরং বাড়বে। তাই সাইবার সুরক্ষা আইনটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানাই।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা