এইচএমপিভি ভাইরাসে মৃত্যু, প্রয়োজন সতর্কতা
- ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
- ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:২২
বিশ্বজুড়ে এখন নতুন আলোচিত ভাইরাসের নাম হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস, সংক্ষেপে যা এইচএমপিভি। করোনার পর কোনো ভাইরাসের নাম শুনলেই ভয়ে চুপসে যান অনেকে। করোনার সেই ভয়াবহতা আর নেই। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কার কথা প্রায়ই বলছেন বিজ্ঞানীরা। এবার সেই শঙ্কার মধ্যেই নতুন এক ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলো। ভাইরাসটি বর্তমান সময়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব বেড়েছে চীন জাপান, মালয়েশিয়া ও ভারতে। বাংলাদেশেও শনাক্ত হলো এটি।
এইচএমপিভি আক্রান্ত সানজিদা আক্তার (৩০) নামে এক নারী মারা গেছেন। ১৫ জানুয়ারি বুধবার রাতে রাজধানীর মহাখালী সংক্রামক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। দেশে এই ভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনা এটিই প্রথম। গত ১২ জানুয়ারি সানজিদার আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। তার বিদেশ সফরের কোনো ইতিহাস ছিল না।
বাংলাদেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভির বিস্তার ঠেকাতে গত ১৩ জানুয়ারি সোমবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিশেষ নির্দেশনা জারি করে। বিমানবন্দরের যাত্রী, স্টাফ ও দর্শনার্থীদের মুখে মাস্ক রাখা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে।
কারো জ্বর, কফ, শ্বাস ছোট হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরের হেলথ সার্ভিসে জানাতে বলা হয়েছে। দেশের বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনাকারী দেশী ও বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এবং যেসব দেশে এইচএমপিভি আক্রান্ত রোগী রয়েছে, সেসব দেশ থেকে যাত্রী আনার ক্ষেত্রেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ধাঁচের এই ভাইরাসে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। ভাইরাসটি করোনার মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের অনেকের শঙ্কা, ২০২৫ সালে আবার করোনার মতো নতুন কোনো মহামারির উদ্ভব হতে পারে। যদিও কোন রোগটি মহামারী আকার ধারণ করবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা এখনই দেয়া সম্ভব নয়। তবে এইচএমভির প্রাদুর্ভাব ভাবাচ্ছে তাদের। কোন রোগটি মহামারীর আকার নেবে তা নিশ্চিত নয় বলে আগাম মহামারীর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিজিজ এক্স’। হাম, কলেরা, বার্ড ফ্লু ও স্ক্যাবিসের মতো প্রায় ১১টি রোগকে সম্ভাব্য মহামারীর তালিকায় রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে এইচএমপিভির সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কপালে। আর আগামীর মহামারীর প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে মারাত্মক ছোঁয়াচে। মানুষের মৃত্যুহার পৌঁছাবে সর্বোচ্চে।
এইচএমপিভির উপসর্গগুলো
এইচএমপিভির উপসর্গগুলো ফ্লু ও অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের মতোই। সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট। এর ইনকিউবেশন পিরিয়ড বা উন্মেষপর্ব সাধারণত তিন থেকে ছয় দিনের মধ্যে হয়। তবে সংক্রমণের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে লক্ষণগুলো বিভিন্ন সময়কালের জন্য স্থায়ী হয়।
জ্বর, নাক বন্ধ, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো সাধারণ ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তী সময় এই ভাইরাসের সংক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় সংক্রমণের তীব্রতা ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা বা কানে ইনফেকশনের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
কিভাবে ছড়ায়
এইচএমপিভি অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের মতোই ছড়ায়। যার মধ্যে রয়েছে কাশি ও হাঁচি থেকে নিঃসরণ; হাত মেলানো বা স্পর্শ করা; সংক্রমিত স্থান স্পর্শ করা এবং তার পর মুখ, নাক বা চোখ হাত দিয়ে স্পর্শ করা।
সবচেয়ে ঝুঁকিতে যারা
করোনা ভাইরাসের মতো এই ভাইরাসেও সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। বিশেষ করে আগে যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল, তারা নতুন এই ভাইরাসের আক্রমণে নাজুক অবস্থায় আছেন। দেশে আগেও এইচএমপিভি ভাইরাসের অস্তিত্ব ছিল। এখনো শিশু আর প্রবীণদের শরীরে মিলবে এটির অস্তিত্ব। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। করোনার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই, সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
রাগ প্রতিরোধের উপায়
হাত ধোয়া : বারবার প্রয়োজনমতো সাবান পানি অথবা অ্যালকোহলভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে। বাইরে থেকে আসার পর, জীবাণু আছে এমন কিছু ধরার পর, আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে আসার পর অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে আপনার হাত ভাইরাসমুক্ত রাখতে হবে।
মুখমণ্ডল স্পর্শ থেকে বিরত থাকুন : হাত দিয়ে মুখ, নাক ও চোখ স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ হাত অনেক জিনিস স্পর্শ করে এবং তাতে ভাইরাস হাতে আসতে পারে। হাতে ভাইরাস থাকলে তা মুখ, নাক বা চোখে স্পর্শ করলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। যখনই স্পর্শ করার প্রয়োজন হবে আগে ভাল করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
সামাজিক দূরত্ব : আক্রান্ত ব্যক্তি বা আক্রান্ত হতে পারেন এমন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। কমপক্ষে ১ মিটার (৩ ফিট) দূরে থাকতে হবে। শুধু আক্রান্ত ব্যক্তি নয়, সম্ভব হলে সবার কাছ থেকেই দূরত্ব বজায় কথা বলা বা হাঁটাচলা করতে হবে।
শিষ্টাচার মেনে চলা : আক্রান্ত হলে কাশি শিষ্টাচার অনুশীলন করতে হবে। হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখতে হবে। কফ থুথু সেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং যথাযথ স্থানে তা ফেলতে হবে।
এড়িয়ে চলা : যেসব জায়গায় মানুষ বেশি জড়ো হয় সেসব স্থান এড়িয়ে চলতে হবে। সব ধরনের সভা সমাবেশ, মিছিল, সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতে হবে। এক কথায় মানুষের ভিড়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে হবে। যদি একবারেই সম্ভব না হয় তাহলে সতর্কতার সাথে চলাফেরা করতে হবে এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
ব্যবহার্য জিনিস : প্রতিনিয়ত স্পর্শ করতে হয় নিজের এমন ব্যবহার্য জিনিস যেমন মোবাইল, মানিব্যাগ, পানির বোতল, গ্লাস, কলম, চায়ের চাপ ইত্যাদি যতদূর সম্ভব স্যানিটাইজ করে ব্যবহার করুন।
মাস্ক ব্যবহার : মুখে মাস্ক পড়ে সামান্য সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে। ব্যাট-রিওভাইরাস তরল উৎস যেমন হাঁচি-কাশির ফোটা থেকে ফেস মাস্ক কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে। কিন্তু এর মাধ্যমে ভাইরাসের অতি সূক্ষ্মকণা আটকানো একেবারে সম্ভব নয়। তবে যিনি ভাইরাসে আক্রান্ত তার অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
আলাদা ব্যবহার : ঘরের ভিতর ও বাইরের জন্যে ব্যবহার্য জিনিস আলাদা করে রাখুন। যেমন বাইরে যেসব পোশাক পরিধান করবেন তা ঘরের ভেতর ব্যবহার করবেন না। ঘরের জিনিসের সাথে বাইরের জিনিস যেন না মিশে তা খেয়াল রাখবেন।
শিশু ও বয়স্কদের জন্যে বিশেষ কেয়ার : বয়স্ক মানুষদের বিশেষ করে যিনি অন্যান্য রোগে আক্রান্ত তাদের প্রতি স্পেশাল যত্ন নিতে হবে। বয়স্ক মানুষ আক্রান্ত হলে মৃত্যুহার অনেক বেশি।
ভাইরাস একটি অদৃশ্য বিষয়। তা কিভাবে আপনাকে আক্রান্ত করবে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে সব কিছুর মূল হচ্ছে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা। হাত না ধুয়ে নিজের মুখমণ্ডল স্পর্শ করবেন না। সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য নিয়মিত ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজে পরিষ্কার থাকবেন এবং আশপাশের সবাইকে পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে সচেতন করবেন।
পরিশেষে বলতে চাই, এইচএমপিভি এলোপ্যাথি চিকিৎসাপদ্ধতিতে কোনো চিকিৎসা নেই। তবে যেকোনো ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মতোই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে এর প্রকোপ রোধ করা যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা