১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১, ১২ রজব ১৪৪৬
`

ফুটপাথে হাঁটা নগরবাসীর অধিকার

- ছবি : সংগৃহীত

দৃষ্টিনন্দন ফুটপাথ নগরীর সৌন্দর্য বাড়ায়। আকর্ষণীয় চওড়া ফুটপাথ ধরে চলাচল করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন পথচারী। পথচারীদের নিরাপদে হাঁটা ও চলাচলের উপযুক্ত স্থান ফুটপাথ। প্রশস্ত ফুটপাথের ফলে যানজট বা দুর্ঘটনাও কমে অনেক। ব্যস্ত নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে স্বল্প দূরত্বে হেঁটে চলার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এই ফুটপাথ কি আসলেই পথচারীদের জন্য?

ফুটপাথের বর্তমান চিত্র হচ্ছে, ফুটপাথ আছে আবার ফুটপাথ নেই। ছোট ছোট দোকান, নির্মাণসামগ্রী, ব্যবসায়সামগ্রী আর হকারদের ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রতিদিনই হয়রানি পোহাচ্ছেন পথচারীরা। ফুটপাথে ব্যবসায় বা খাবার বিক্রয় কেন করবে। ফুটপাথে ভাসমান ব্যবসায়ী, হকার, অবৈধ পার্কিং ইত্যাদি কারণে ব্যস্ততম রাস্তাগুলোতে দিনের বেশির ভাগ সময় লেগে থাকে যানজট। মানুষ যেন মেনেই নিয়েছে এই পরিস্থিতিকে। আবার ফুটপাথে মাঝে মধ্যে গর্তও দেখা যায়। সেদিকে কে খেয়াল দেবেন?

অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে বিশেষ করে নগর ব্যবস্থাপনার মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে রয়েছে সমন্বয় ও সমঝোতার অভাব। বর্ষাকালে ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার, ওয়াসার লাইন স্থাপনের জন্য সংস্কার করা রাস্তা খুঁড়ে লাইন বসানো হয়। আবার কোথাও কোথাও রয়েছে ডাস্টবিন। বেশ কয়েকটি এলাকার ফুটপাথের চিত্র এমনই। স্রোতের মতো হকাররা আসতে থাকবে আর তারা ফুটপাথে ব্যবসায়-বাণিজ্য করবে, তারপর পুনর্বাসনের দাবি তুলবে, এটি কখনো বাস্তবসম্মত নয়। কারা প্রকৃত হকার তাদের তালিকা তৈরি করতে হবে। একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে।
গণসচেতনতা বাড়ানোর জন্য ফুটপাথ দখলকারী ব্যবসায়ীদের দোরগোড়ায় যেতে হবে। তাদের পথচারীদের অধিকার সম্পর্কে বুঝিয়ে বলতে হবে। আবার অনেক এলাকার রাস্তার ফুটপাথ সঙ্কীর্ণ, ভাঙাচোরা, কোথাও কোথাও এমন সঙ্কীর্ণ যে, একজন মানুষও হাঁটতে পারে না। কোথাও আবার সড়কের সাথে ফুটপাথ মিশে গেছে। এ ধরনের ফুটপাথ ঝুঁকিপূর্ণ। বেপরোয়া বাস ফুটপাথে উঠে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটায়।

জনবহুল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সাড়ে ছয় মিটার ফুটপাথ রাখার মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। যেখানে চার মিটার পথচারীদের জন্য, সবুজায়ন ও বিশ্রামের জন্য দেড় মিটার। অথচ এদেশে কোথাও বিশ্ব মানদণ্ড অনুসরণ করে ফুটপাথ নির্মাণ হচ্ছে না। মেইন রোডে ট্রাফিক জ্যাম থাকলে অনেক মোটরবাইক চালক মোটরবাইকটি ফুটপাথে উঠিয়ে দিচ্ছেন নির্দ্বিধায়। তারা একবারও ভেবে দেখেন না, এরকম পরিস্থিতিতে অপর দিক থেকে হেঁটে আসা মানুষ কী রকম অবস্থায় পড়তে পারে। তাছাড়া স্কুলে যাওয়া ছোট ছোট শিশুর হাঁটাও ঝুঁকিপূর্ণ। আচমকা মোটরবাইকের হর্ন বেজে ওঠার সাথে সাথেই ছোটাছুটি করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।

ফুটপাথ দখল করে প্রাইভেট গাড়ি পার্কিং করা হয়। নির্মাণাধীন ইমারতের কাজ চালানোর জন্য ইট, বালু, রড, সুরকি, লোহার গ্রিল ও অন্যান্য সামগ্রী রাখার জন্য ফুটপাথ ও সামনের রাস্তাটুকুই প্রধান এবং একমাত্র স্থান। মাঝে মধ্যে বিকট শব্দে মেশিন চালিয়ে ওখানেই খোয়া ভাঙানো হয়। কিন্তু হাঁটার পথ সরু হয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাদের দৃষ্টি থাকে না। ফুটপাথ দখল করার প্রক্রিয়া আপাতদৃষ্টিতে সরল হলেও কার্যত বেশ অভিনব। কিছু কিছু দোকানদার তাদের সামগ্রী-সমেত শোকেসগুলো সরাসরি দোকানের সামনেই ফুটপাথের ওপর নামিয়ে দেন। আবার, কোনো কোনো দোকানদার দোকানের মেঝের সাথে কাঠ বা লোহার পাটাতন জুড়ে দেন। যেগুলো ফুটপাথের উপর ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। তখন বাধ্য হয়ে হাঁটতে হয় মূল সড়ক দিয়ে। ফুটপাথ ব্যবহারের পাশাপাশি জেব্রা ক্রসিংও সড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পথচারীদের নিরাপদে সড়ক পার হওয়ার জন্য সাদা দাগ কেটে জেব্রা ক্রসিং তৈরি করা হয়। কিন্তু নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, যেসব স্থানে জেব্রা ক্রসিং আছে, সেখানে এর ব্যবহার তেমন নেই। অনেক জায়গায় ক্রসিংয়ের সাদা দাগের ওপরেই যানবাহন থেমে থাকছে। চালক জানেই না জেব্রা ক্রসিংয়ে গাড়ি থামাতে হয় না। জেব্রা ক্রসিংয়ের কাছাকাছি এলে গাড়ির গতি কমানোর নিয়ম। অনেক সময় জেব্রা ক্রসিংয়ে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলা হয় যানবাহনে।

রাস্তা পারাপারের জন্য ফুট ওভারব্রিজ বা জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার উপযোগী রাখতে সিটি করপোরেশন এবং ট্রাফিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। সিটি করপোরেশনের প্রবিধান, মোটরযান আইন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এবং ঢাকা সিটি ম্যানুয়াল-১৯৮২ ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত রাখতে বলা হয়েছে এবং ফুটপাথ পথচারীদের হাঁটার জন্য উপযোগী করার কথাও উল্লেখ রয়েছে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ এ পথচারীদের অগ্রাধিকার বিষয়ে তৃতীয় তফসিলের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে- পথচারী যেন পথ চলতে বিপদগ্রস্ত না হয় এবং নিরাপদে ও অনায়াসে পথ চলতে পারে, সে জন্য করপোরেশন প্রবিধান দিয়ে যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। পথচারীদের যেন কোনো অসুবিধা না হয় সে জন্য রয়েছে মোটরযান আইন ১৯৮৩। এ আইনে অসাবধানে কিংবা বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালনা, প্রকাশ্য স্থানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে জরিমানার বিধান আছে। পথচারী পারাপারের নির্ধারিত স্থানে কিংবা ঠিক পাশ দিয়ে ওভারটেকিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব স্থানে ওভারটেক করলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করার কথা বলা আছে। ভুল স্থানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে পায়ে চলা পথ বন্ধ করা, রাস্তায় বা সাধারণ মানুষ চলাচল করে এমন পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, কোনো পশু বা যানবাহন ভাড়া দেয়া বা বিক্রি করার জন্য প্রদর্শন করা, রাস্তায় যানবাহন মেরামত করা, রাস্তায় উৎপাত ইত্যাদি ঘটনাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

ফুটপাথ যেহেতু হেঁটে চলাচলের জন্য। তাই পথচারীদের এই নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পাওয়া জরুরি। তার জন্য সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল ভূমিকা অব্যাহত রাখতে হবে। এখানে আরেকটি কথা বলে রাখি, সময়ের চেয়ে আমাদের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। নিরাপদ রাস্তা পারাপারে জনগণকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। সবাই সচেতন হয়ে ফুট ওভারব্রিজ/জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করি এবং ফুটপাথ সমস্যার সমাধান করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনার হারও অনেক কমে যাবে। আমাদের হাঁটার পথ হোক নিরাপদ।

লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট


আরো সংবাদ



premium cement
শুল্ক হার বাড়ায় মিনিমাম প্রভাব পড়বে জুলাই বিপ্লবে নিহত মাহবুবের পরিবারের পাশে তারেক রহমান সীমান্ত সম্ভারে ৮ মিনিটে দিন-দুপুরে ১৫৯ ভরি স্বর্ণ চুরি সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব : নজরুল ইসলাম খান পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ কেরানীগঞ্জ কারাগারের অস্থায়ী আদালতে চলবে আমানতকারীদের স্বার্থে পর্ষদ সভায় ভূমিকা রাখছেন না স্বতন্ত্র পরিচালকরা এক নারীর শরীরে এইচএমপিভি শনাক্ত সুস্থ আছেন রুগ্ণ প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে নেয়ার এক্সিট পলিসি চান ব্যবসায়ীরা নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তান দল ঘোষণা পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী আহত তেল মারা বন্ধ করেন : সরকারি কর্মচারীদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল