চাই দেশপ্রেমিক শক্তির সুদৃঢ় ঐক্য
- জালাল উদ্দিন ওমর
- ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:২৯
তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিবাদী শাসক শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের দোর্দণ্ড-প্রতাপ শাসনের অবসান হয়। বাংলাদেশে রচিত হয় অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় এক ইতিহাস। গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। তারা এখন দেশ পুনর্গঠন ও একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য কাজ করছেন। এখন দেশ এগিয়ে নেয়ার জন্য দরকার বিপ্লব সুসংহত করা। এজন্য সব দেশপ্রেমিক শক্তির সুদৃঢ় ঐক্য অপরিহার্য।
ছাত্র-জনতার অসীম আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে। এই আন্দোলন দমাতে সরকারি ও আওয়ামী লীগের দলীয় বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। তাতে দুই হাজার মানুষ জীবন দিয়েছে এবং প্রায় বিশ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। অনেকে বিভিন্ন অঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়েছে। আওয়ামী স্বৈরশাসনবিরোধী সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে শামিল হওয়ায় এই আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়। শেখ হাসিনার পতন হয়। এবারের আন্দোলন সরকার কোনোভাবেই দমন করতে পারেনি, কারণ এবারের আন্দোলনকারীরা ছিল ঐক্যবদ্ধ।
যেকোনো অর্জনের চেয়েও তা রক্ষা করা কঠিন। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে যেমন স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন, তেমনি কঠিন বিপ্লবের অর্জন ধরে রাখা। কারণ, পরাজিত শক্তি কখনো বসে থাকে না। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়, ষড়যন্ত্র করে এবং স্বাধীনতা এবং বিপ্লবকে ব্যর্থ করে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। তারা বরাবরই প্রতিবিপ্লব ঘটাতে সক্রিয় থাকে। বিপ্লববিরোধী দেশী-বিদেশী শক্তি এ কাজে সার্বিকভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা করে। সুতরাং বিপ্লবোত্তর সময়ে বিপ্লবীদের আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ, সক্রিয় ও সচেতন থাকতে হয়। তা না হলে বিপ্লব ছিনতাই হয়ে যেতে পারে, ঘটতে পারে প্রতিবিপ্লব। সে ক্ষেত্রে বিপ্লবীদের জীবনে নেমে আসতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়।
বাংলাদেশে যে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে তা এক কথায় এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর এক ঐতিহাসিক অর্জন। এরকম বিপ্লব কয়েক শতাব্দীতেই একবার ঘটে। সুতরাং এটি কোনো সহজ কাজ ছিল না। অর্জনটাও ছোট নয়। তাই সফল এই বিপ্লব যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। শুধু রক্ষা করলেই হবে না বরং এই বিপ্লবকে আরো সুসংহত এবং শক্তিশালী করতে হবে। বিপ্লবকে ধারণ করেই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। এজন্য সব দেশপ্রেমিক শক্তির ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়তে হবে। এই ঐক্য হতে হবে সর্বজনীন এবং সর্বকালের জন্য। অর্থাৎ এই ঐক্য আগামী দিনগুলোতে সব সময়ের জন্য বজায় রাখতে হবে।
আমরা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি (পার্থ এবং জাফর), হেফাজতে ইসলাম, খেলাফত মজলিশ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, এলডিপি, এবি পার্টি, এনডিএম, গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, গণফোরাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ দেশপ্রেমিক সব পক্ষকে এক হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। পাশাপাশি ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্রসমাজ, ছাত্রশক্তি, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনসহ সব ছাত্রসংগঠনকে এক থাকতে হবে। এছাড়া ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, লেখক, বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিক, আলেমসমাজ, অভিনয়শিল্পী, সঙ্গীতশিল্পীসহ সব পেশাজীবীকেও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মোট কথা এই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন এবং এই আন্দোলনে যারা সমর্থন দিয়েছেন তাদের সবাইকে এক হতে হবে, এক থাকতে হবে।
দেশের সব রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি এক নয়। কিন্তু মৌলিক ইস্যুতে ঐক্য হতে হবে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র -মানবাধিকার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দেশের অগ্রগতিÑএই তিন ইস্যু সবার কাছেই অভিন্ন ও সমান। এই তিন মৌলিক ইস্যুতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন। সবাই যার যার রাজনীতি করবে, কিন্তু মৌলিক ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ থাকবে। সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ রাখার স্বার্থে কিছু মৌলিক কাজ করতে হবে। প্রথমত সবাইকে পরস্পরের প্রতি সম্মান জানাতে হবে। পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে। সব পক্ষের লোকজন নিয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এই কমিটি সব দলের মাঝে ঐক্য বজায় রাখতে সমন্বয়ক হিসাবে কাজ করবে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সবখানেই এই লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করতে হবে। মনে রাখতে হবে ঐক্যই শক্তি।
ইউরোপ ও আমেরিকা সবসময় ঐক্যবদ্ধ থেকেছে, কখনোই বিভক্ত হয়নি। তাই তারা সবাই উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে এবং তাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সবসময় সুরক্ষিত থেকেছে। তারা পৃথিবীতে নেতৃত্ব দিতে পারছে। আর মুসলিম দেশসমূহ বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। ফলে তারা দুর্বল হয়েছে, পিছিয়ে পড়েছে এবং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়েছে।
ঐক্যের জন্য সবাই যদি দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে তাহলে আপনাআপনি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে উঠবে এবং সে ঐক্য কেউ ভাঙতে পারবে না। দেশপ্রেমিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে ষড়যন্ত্রকারীরা কখনোই সফল হবে না।
ঐক্য প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোকেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকেই এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে জামায়াতের ভূমিকাও অপরিসীম। আশা করা যায়, বিএনপি এবং জামায়াতের নেতৃত্ব এই বাস্তবতা অনুধাবন করবে এবং সর্বাবস্থায় ঐক্য বজায় রাখতে কাজ করবে।
এই দেশ আমার, আপনার এবং আমাদের সবার। আমরা সবাই বাংলাদেশী এই পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে। তাই জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব মানুষের মাঝে আজ একতা, সাম্য এবং সমতা বজায় রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করা যাবে না। যার ধর্ম সে পালন করবে, সবাই মিলে শান্তিতে বসবাস করবে। সর্বাবস্থায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করবে। পরাজিত অপশক্তি এবং তাদের দেশী-বিদেশী সহযোগীরা বসে নেই। আসুন দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা, অর্জিত বিপ্লবকে সুসংহত করা এবং দেশকে এগিয়ে নিতে সব দেশপ্রেমিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হই এবং ঐক্যবদ্ধ থাকি।
লেখক : প্রকৌশলী ও উন্নয়ন গবেষক
ই-মেল : [email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা