রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রশাসনিক সংস্কার
- আল-ইমরান বান্না
- ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:৪১
শ্বেতাঙ্গ আদালত একবার নেলসন ম্যান্ডেলার কাছে জানতে চান, কেন তিনি আইন অমান্য করলেন। ম্যান্ডেলা জবাব দেন, যে আইন কালো নাগরিকদের জন্য বৈষম্যমূলক তা অন্যায্য এবং এর প্রতিবাদ করা (এবং অমান্য করা) তার মানবিক অধিকার। বাংলাদেশের বিসিএস (প্রশাসন) ছাড়া অন্যান্য ক্যাডারে চাকরিরত কর্মকর্তারা বিশেষ করে পেশাজীবীরা তাদের পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধার শর্তাবলি ও কর্মরত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণকারী সচিবালয়/মন্ত্রণালয়ের কাঠামোতে তাদের প্রবেশের ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টিকারী বিধিবিধানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ন্যায়সঙ্গত বলে দাবি করছে। সচিবালয়/মন্ত্রণালয়ের কাঠামোতে পেশাজীবীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে যে বৈষম্যমূলক বিধান রয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন ক্যাডার কর্মকর্তারা এখন মুখোমুখি অবস্থানে। এই দ্বন্দ্ব শুধু ক্যাডার কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত পদোন্নতি বা রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাঠামোর শিখড়ে আরোহণের বিষয় নয়। এটি রাষ্ট্র সমাজ ও অর্থনীতি তথা রাষ্ট্র থেকে পুরো জনগোষ্ঠীর সেবা প্রাপ্তি, উন্নয়ন, অগ্রগতির সাথে সামগ্রিকভাবে ও আষ্টেপৃষ্ঠে সম্পৃক্ত।
টেকনির্ভর অর্থনীতির উপযোগী কাঠামো
বাংলাদেশের অর্থনীতিক কর্মকাণ্ড সমাজ জনজীবন সবই বর্তমানে বহুলাংশে প্রযুক্তি-নির্ভর। প্রযুক্তির ব্যবহার যতই বাড়বে ততই সহজ দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে রাষ্ট্রীয় সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আমাদের বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামো বর্তমান যুগের সর্বব্যাপী টেকনির্ভর কর্মকাণ্ড পরিচালনা তদারকি ও উন্নয়নমুখী করতে সম্পূর্ণ অনুপযোগী। প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ ও সদ্ব্যবহার এবং ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ঔৎকর্ষ বৃদ্ধি করতে হলে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে যথোপযোগী রূপে সংস্কার করে সাজাতে হবে। নাহলে সব খাতে আমরা বিশ্ব প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাবো।
আশার বিষয় ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশের সব অঙ্গনে পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সময়ের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন সেক্টর ও ক্ষেত্রে পরিবর্তন ও সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিশন গঠন করেছে।
রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাঠামোতে সংস্কারের উদ্দেশে আব্দুল মুহিত চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশন ইতোমধ্যে কিছু সাহসী সংস্কারমূলক খসড়া সুপারিশমালা প্রণয়ন করেছে।
ঔপনিবেশিক প্রশাসন ব্যবস্থার কূট লক্ষ্য
ঔপনিবেশিক স্বার্থরক্ষা ও ঔপনিবেশকে দীর্ঘ করার কূট উদ্দেশ্য নিয়ে যে প্রশাসনিক কাঠামো ব্রিটিশরা প্রবর্তন করেছিল তার ধারাবাহিকতা অনেকটা এখনো বিদ্যমান। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে গণজাগরণ ঠেকাতে সামাজিক উন্নয়নের গতিধারা নিয়ন্ত্রণপূর্বক ঔপনিবেশের জাঁতাকল দীর্ঘ করার মানসেই তৎকালীন প্রশাসনিক কাঠামো ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। ফলে এ ব্যবস্থায় সাধারণ জনতার সমাজ শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির যাত্রাপথ বাধাগ্রস্ত ছিল।
বিসমিল্লায় গলদ
মুহিত চৌধুরীর কমিশন বেশ কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে যার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পক্ষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এই কমিশন প্রশাসনের মৌলিক কাঠামো এবং সচিবালয়ের সাথে অধীনস্থ বিভাগ অধিদফতর ও সংস্থার কার্য সম্পর্কের (Functional Relations) ক্ষেত্রে কী ধরনের সংস্কার প্রবর্তনে আগ্রহী তা এখনো স্পষ্ট নয়। কিছু বিজ্ঞজনের ধারণা, আমলানির্ভর সংস্কার কমিশনের স্থলে যদি রাজনৈতিক নেতার নেতৃত্বে কমিশন গঠন করা যায় সে ক্ষেত্রেই কেবল বর্তমান আমলানির্ভর প্রশাসনিক কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন আনা সম্ভব। উল্লেখ্য, প্রাথমিকভাবে সংস্কার কমিশনে সচিবালয়ের বাইরের বিভাগ বা ক্যাডার থেকে কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে কমিশনে রাখা হয়নি। সংস্কার উদ্যোগে এটি ছিল বিসমিল্লায় গলদ ও একটি ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণাধীন সচিবালয়ের পক্ষপাতপুষ্ট মানসিকতার লক্ষণ। অন্যান্য ক্যাডারের ধারণা, তাদের সুবিধাবঞ্চিত রাখার মানসিকতা থেকেই এটা করা হয়। পরে প্রতিবাদের মুখে অন্যান্য ক্যাডার থেকে সদস্য নেয়া হয়েছে।
সংস্কারের সময় বিবেচ্য বিষয়াবলি
প্রশাসনিক কাঠামো সংস্কারের সময় মনে রাখতে হবে :
ক. মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী দায়িত্বে যারা থাকবেন তাদেরকে চলমান যুগান্তকারী পরিবর্তন ও আধুনিকায়ন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।
খ. এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় দেশ অনেক এগিয়েছে এবং সব সেক্টরে মেধাসম্পন্ন জনশক্তি নিয়োজিত রয়েছে যারা দেশকে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় এগিয়ে নিতে যথেষ্ট অবদান রাখতে সক্ষম। তাদেরকে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যুক্ত করা অপরিহার্য।
গ. নবম শ্রেণী থেকেই মেধাসম্পন্ন ছাত্রদের একটি বড় অংশ বিজ্ঞান শাখায় চলে যায়। তাদের বড় অংশ মেডিক্যাল ও প্রকৌশল শাখায় পড়াশোনা করে। এই মেধাবীদের রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ ধাপে সম্পৃক্ত করতে হবে। অন্যথায় তারা হয়ে বিদেশে পাড়ি জমাবে।
ঘ. মন্ত্রণালয় এবং পেশাগত উন্নয়নমূলক কাজে নিয়োজিত অধীনস্থ সংস্থাগুলোর মধ্যে কার্য সম্পর্ক এবং মর্যাদার সম্পর্ক এমন পর্যায়ে আনতে হবে যাতে প্রকৌশলী, ডাক্তার, কৃষিবিদ, কেমিস্টসহ সব পেশাজীবী তাদের নিজ নিজ পেশায় ও বিভাগে যোগদান এবং নিয়োজিত থাকতে অনুপ্রাণিত হবেন। এককালে জেলায় শুধু উপকমিশনার/ডিসি, সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপার কর্মরত থাকতেন। এখন অনেক জেলাতেই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, মেডিক্যাল ও সাধারণ কলেজের অধ্যক্ষ, কর কমিশনার, ডিআইজি, কৃষিবিদ উপপরিচালক/পরিচালক পদমর্যাদার বেশ কিছু সংখ্যক উঁচু/মধ্যম সারির কর্মকর্তা রয়েছেন। জেলাপর্যায়ে বিভিন্ন অফিস এবং বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে আন্তঃঅফিস সম্পর্কের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক অবস্থা ও মানসিকতার অবসান আনতে হবে।
ঙ. সব ক্যাডার এমনকি সব বিভাগের কর্মকর্তাদের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত রাখতে হবে যাতে সবার মধ্যে প্রশাসনিক কাঠামোর সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছানোর আকাক্সক্ষা জাগরিত হয়। এই আকাক্সক্ষা তাদেরকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করবে এবং জাতীয় জীবনে তারা অধিকতর অবদান রাখতে সমর্থ হবে।
চ. বর্তমানে সচিবালয় এবং অধীন সংস্থাগুলোর মধ্যে সম্পর্ক তেমন উষ্ণ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় নয়। একজন দাপুটে অবসরপ্রাপ্ত সচিব যখন অধীনস্ত একটি সংস্থার মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তখন মন্ত্রণালয়কে তিনি যন্ত্রণালয় বলে অভিহিত করেন।
মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছ (Cluster of Ministries)
মন্ত্রণালয়ের কাজ নীতিনির্ধারণ সংশোধন ও ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন যা নির্ভুল ও সুষ্ঠুভাবে করার জন্য একজন কর্মকর্তার এই সেক্টরে দীর্ঘকালের অভিজ্ঞতা অত্যাবশ্যক। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধীনস্ত সংস্থার কর্মকাণ্ডে যুগান্তকারী টেকনির্ভর আধুনিকায়ন এমনপর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এক মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের কাজের ধরন পরিচালন অন্য মন্ত্রণালয়ের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে জন্য প্রায় সমরূপ/সমধর্মী কাজে নিয়োজিত কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে মন্ত্রণালয়ের একটি গুচ্ছ তৈরি করা যায়। এভাবে সমস্ত মন্ত্রণালয়কে ১০-১২টি গুচ্ছে বিভক্ত করা যেতে পারে। একজন উপসচিব/যুগ্মসচিব সাত-আট বছর একটি গুচ্ছের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত থাকবে এবং এই মেয়াদের পর ভিন্ন গুচ্ছে বা অতিরিক্ত সচিব হিসেবে একই বা ভিন্ন গুচ্ছে পদায়ন পাবে। এই গুচ্ছ ব্যবস্থার মাধ্যমে একজন কর্মকর্তাকে একটি গুচ্ছের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমধর্মী ও এলাইড কাজে দক্ষ অভিজ্ঞ ও কার্যকরভাবে উপযোগী করে প্রস্তুত করা সম্ভব।
ডেপুটেশনে নির্দিষ্ট মেয়াদে পদায়ন ব্যবস্থা
বর্তমানে চালু ব্যবস্থায় একটি ক্যাডারের যেমন বিসিএস (কাস্টমস) বা বিসিএস (পূর্ত) ক্যাডারের কর্মকর্তার একবার সচিবালয়ে উপসচিবরূপে অন্তর্ভুক্তির পর নিজ ক্যাডারের কোনো পদে ডেপুটেশনে পদায়ন হয় না। সেসব ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তার যুগ্ম সচিব বা অতিরিক্ত সচিবরূপে ডেপুটেশনে পদায়ন সম্ভবপর হয় না। ফলে বিসিএস (কাস্টমস) বা বিসিএস (পূর্ত) ক্যাডারের সচিবালয়ে অন্তর্ভুক্ত কর্মকর্তা এবং নিজ বিভাগে থেকে যাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব এমনকি ব্যক্তিগত সম্পর্কে রেষারেষির সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া একবার সচিবালয়ে উপসচিবরূপে অন্তর্ভুক্তির পর মন্ত্রণালয়ে নীতিনির্ধারণ সংক্রান্ত যে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানার্জন করলেন, তার বিভাগে পুনরায় সম বা ঊর্ধ্বতন কোনো পদে পদায়ন অসম্ভব হওয়ায় সে তার অর্জিত নীতিনির্ধারণ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান নিজ বাস্তবায়ন বিভাগে এবং বাস্তবায়ন পর্যায়ে কাজে লাগাতে পারে না। অন্য দিকে বিসিএস (কাস্টমস) বা বিসিএস (পূর্ত) ক্যাডারে থেকে যাওয়া কর্মকর্তা ডেপুটেশনে যুগ্ম সচিব বা অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা না থাকায় তারা দীর্ঘকাল নিজ বিভাগে বাস্তবায়ন পর্যায়ে যে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানার্জন করল তার কোনো অবদান সচিবালয়ের নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়াতে যুক্ত করতে সমর্থ হলো না।
সহকারী/সিনিয়র সহকারী সচিব পদে মোট পদের ৩৫, উপসচিব পদে মোট পদের ১৫, যুগ্মসচিব পদে মোট পদের ১০ এবং অতিরিক্ত সচিব পদে মোট পদের ৫ শতাংশ বিভিন্ন ক্যাডার এমনকি নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদেরকে ডেপুটেশনে নির্দিষ্ট মেয়াদে পদায়নের জন্য সংরক্ষিত রাখা যুক্তিযুক্ত হবে। ডেপুটেশনে আসা কর্মকর্তা সহকারী/সিনিয়র সহকারী সচিব/উপসচিব পদে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে সর্বোচ্চ তিন বছর কর্মরত থাকতে পারবে। মেয়াদ শেষে তারা নিজ নিজ বিভাগে ফিরে যাবে এবং তাদের স্থলে নতুন কর্মকর্তা ডেপুটেশনে আসবে। এই ব্যবস্থায় মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণ সংক্রান্ত এবং বাস্তবায়ন বিভাগের বাস্তবিক অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের নিয়মিত যথাযথ বিনিময় নিশ্চিত হবে।
নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নিয়োগব্যবস্থা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদোন্নতি ও অবসরের প্রথার আদলে সচিবালয় প্রশাসনে উপরস্থ পর্যায়ে দক্ষ যোগ্য মেধাবী নেতৃত্ব গড়ে তোলার কৌশল হিসেবে উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে চাকরিকাল অথবা বয়সের সীমা বেঁধে দেয়া যেতে পারে। যেমন উপসচিব নিয়োগের পর যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি না হলে ৫০ বছর বয়সে অবসরে যাবে, যুগ্ম সচিব নিয়োগের পর অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি না হলে ৫৩ বছর বয়সে অবসরে যাবে, অতিরিক্ত সচিব নিয়োগের পর সচিব পদে পদোন্নতি না হলে ৫৬ বছর বয়সে অবসরে যাবে। সচিব পদে নিয়োগের পর কমপক্ষে তিন বছর ওই পদে বহাল থাকবে।
পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে পদোন্নতি
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পাকিস্তান আমলে পরিদৃষ্ট বৈষম্য দূর করে সব ক্যাডার সার্ভিস কর্মকর্তাদের মধ্যে সৌহার্দ্য সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সব ক্যাডারের নামকরণ করেছিলেন একই রকম, যেমন বিসিএস (প্রশাসন), বিসিএস (কাস্টমস), বিসিএস (কর), বিসিএস (নিরীক্ষ ও হিসাব), বিসিএস (পুলিশ)। পদোন্নতির বেলায় পাকিস্তান আমলে বিদ্যমান বৈষম্য রোধ করার লক্ষ্যে এবং মেধাবীদের বাছাই করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সচিবালয়ে উপসচিব পদে অন্তর্ভুক্তির জন্য সিনিয়র সার্ভিস পুল পরীক্ষার জন্য বিধি জারি করেছিলেন এবং দ্বিতীয় ধাপে পরীক্ষার সিলেবাসও প্রবর্তন করেছিলেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি এরশাদ একটি ব্যাচের কর্মকর্তাদের হাতে রাখার মাধ্যমে নির্বাচনে কারচুপি করে ক্ষমতা প্রলম্বিত করার মানসে পরীক্ষা পদ্ধতি বতিল করে দেন। মুহিত কমিশন পরীক্ষা পদ্ধতি পুনরায় প্রবর্তনের সুপারিশ করেছে।
পরীক্ষার মাধ্যমে উপসচিব, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় মধ্যম ও ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে মেধাভিত্তিক প্রশাসনিক নেতৃত্ব স্থাপন করা যাবে। বিসিএস একবার পাস করে চাকরি পাওয়ার পর সরকারি কর্মকমিশনের মেধাতালিকা অনুসারে পদোন্নতি প্রথা চালু থাকায় অনেক কর্মকর্তা নিজেদের মান ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হলে কর্মকর্তারা নিজেদের মান ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত সচেষ্ট থাকবে যাতে পরীক্ষা তথা বাছাই প্রক্রিয়ার সময় তারা নিজেদের মান ও সক্ষমতা প্রমাণপূর্বক প্রতিযোগিতায় সফল হতে পারে। পরীক্ষায় সফল মেধাবী কর্মকর্তারা এই প্রতিযোগিতায় আহরিত ও বর্ধিত জ্ঞান, কৌশল, অর্জিত আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায় কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে সঠিক মর্যাদাপূর্ণ আসনে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা