পিলখানা হত্যাকাণ্ড : ন্যায়বিচারের দাবি
- ব্রি. জে. (অব:) রোকন উদ্দিন, পিএসসি
- ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৭
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা বিডিআর সদর দফতরে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনাগুলোর একটি। ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, যাদের মধ্যে ছিলেন দেশের কিছু সর্বোচ্চ সম্মানিত সামরিক নেতা, বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদস্যদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। পাশাপাশি প্রাণ হারান কিছু বেসামরিক ব্যক্তিও। এই নৃশংসতা ছিল অকল্পনীয়। দেহাবশেষ এতটাই বিকৃত করা হয় যে, অনেককে চেনা যায়নি। পরিবারগুলো অপমানিত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছিল এবং জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি অভ্যন্তরীণভাবে ভেঙে পড়েছিল।
এই হত্যাকাণ্ড শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর ভিতও নাড়িয়ে দিয়েছিল। এতে সামরিক বাহিনীর চেইন অব কমান্ড এবং মনোবল গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই সাথে, সশস্ত্রবাহিনী ও আধা-সামরিক সংস্থাগুলোর মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। এই ট্র্যাজেডি দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দুর্বলতা উন্মোচন করে। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে, সবচেয়ে নিরাপদ স্থাপনাগুলোর মাঝে এমন একটি ঘটনা কিভাবে ঘটতে পারল তা নিয়ে উদ্বেগজনক প্রশ্ন ওঠে।
পনেরো বছর পরেও ওই হত্যার ন্যায়বিচার হয়নি। হত্যাকাণ্ডের পেছনের রহস্য উদঘাটিত না হওয়ায় এবং অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা থেকে যাওয়ায় এই বিশ্বাসঘাতকতা এবং ক্ষতির অনুভূতি আরো গভীর হয়েছে। অনেক অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা এবং বেসামরিক নাগরিক পুনঃতদন্তে বিলম্ব নিয়ে গভীর হতাশা ও সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
অপরাধের প্রকৃতি
পিলখানা হত্যাকাণ্ড কোনো সাধারণ বিদ্রোহ ছিল না। এটি ছিল একটি পূর্বপরিকল্পিত ও সমন্বিত সন্ত্রাসী কার্যক্রম, যা বার্ষিক ‘বিডিআর সপ্তাহ’ চলাকালীন সংঘটিত হয়। বিদ্রোহীরা তাদের কমান্ডিং অফিসারদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় এবং নির্মমভাবে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে ছিল ব্যাপক লুটপাট, কর্মকর্তাদের পরিবারের প্রতি অপমানজনক আচরণ। এই হত্যাকাণ্ডের ফলে জাতির মধ্যে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, তা গভীরভাবে নাড়া দেয়।
প্রশ্ন ও অজানা রহস্য
কিভাবে এই বিদ্রোহ ঘটল? এটি কি শুধু বেতন, কর্মপরিবেশ এবং কথিত দুর্ব্যবহারের কারণে সাধারণ সৈনিকদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল? নাকি এটি ছিল বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীকে অস্থিতিশীল করার কোনো বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ? হামলার প্রকৃতি এমন ইঙ্গিত দেয় যে, এর পেছনে ব্যারাকের বাইরের প্রভাবশালী কারো হাত থাকতে পারে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিদেশী সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে অনেক জল্পনা রয়েছে। এই আক্রমণের সময়কাল, পরিশীলন এবং রাজনৈতিক প্রভাব বোঝায় যে, এটি শুধু অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ছিল না; বরং একটি বহিরাগত সমর্থিত অপারেশন। এর সম্ভাব্য উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে সীমান্ত সংঘর্ষে, যেমন পদুয়া ও রৌমারীতে বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর বিজয়ের প্রতিশোধ।
ঘটনা : একটি সমন্বিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড
এই হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ প্রকৃতি বিদ্রোহ নাটকের পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এটি কি শুধু বেতন ও কর্মপরিবেশের কারণে সৃষ্ট এক স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ ছিল, নাকি এটি ছিল একটি সুচিন্তিত ও পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যা বাইরের শক্তিগুলোর দ্বারা পরিচালিত? এই ঘটনার সমন্বয়ের মাত্রা এবং সিনিয়র সামরিক নেতৃত্বকে নির্দিষ্টভাবে টার্গেট করার কৌশল একটি গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়।
বিদেশী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ভারতের ভূমিকা নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছে। সমালোচকরা অভিযোগ করেন, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই বিদ্রোহ উসকে দিয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীকে অস্থিতিশীল করা। এই তত্ত্বের সমর্থকরা ইঙ্গিত করেন যে, সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের নির্দিষ্টভাবে টার্গেট করা, দ্রুতগতিতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেয়া এবং বিদ্রোহীদের সুসমন্বিত দাবি, এসবই কেবল বেতন ও সুবিধাজনিত ক্ষোভ থেকে সৃষ্ট বিদ্রোহের চেয়ে অনেক বেশি পরিকল্পিত বলে মনে হয়।
পিলখানা হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের সামরিক চেইন অব কমান্ড কার্যত পঙ্গু করে দেয়। এ থেকে অনেকে মনে করেন, এই ফলাফল একটি আঞ্চলিক শক্তির স্বার্থের সাথে মিলে যায়, যারা একটি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা দুর্বল করতে চায়। পর্যবেক্ষকরা আরো উল্লেখ করেন যে, বিদ্রোহের সময় বহিরাগত যোগাযোগ বা অর্থায়নের কোনো সম্ভাব্য সূত্রের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হয়নি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি কোনো প্রমাণ সামনে আসেনি। তবে সমালোচকরা মনে করেন, এই প্রমাণের অভাব হয় সংবেদনশীল ভূরাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে তদন্তে অনীহা থেকে। অথবা এসব তথ্য সক্রিয়ভাবে চেপে রাখা হয়েছে। বিদেশী সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি এখনো জনগণ, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাএবং বিশ্লেষকদের গভীরভাবে আলোড়িত করে। এটি ঘটনার সুষ্ঠু পুনঃতদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি তীব্রতর করেছে।
হাসিনা সরকারের প্রতিক্রিয়া
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার তীব্র চাপের মুখে পড়ে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে এবং জন-আস্থা পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে। সরকার কিছু তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যেমন, সন্দেহভাজন বিডিআর বিদ্রোহীদের ব্যাপক ধরপাকড় এবং বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা। তাদের সামগ্রিক প্রতিক্রিয়া অনেকের দৃষ্টিতে ছিল অপর্যাপ্ত এবং আংশিক।
হাজার হাজার বিডিআর সদস্যকে গ্রেফতার করা হয় এবং শত শত জনকে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে সমালোচকরা মনে করেন, সরকারের পদক্ষেপে গভীরতা ও ন্যায্যতার অভাব ছিল। নিম্নস্তরের বিডিআর সৈনিকদের কঠোর শাস্তি প্রদানে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল, অথচ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতাদের শনাক্ত ও বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে গড়িমসি করা হয়েছে। এই বাছাইমূলক পদ্ধতি সরকারের সত্যিকার উদ্দেশ্য এবং তদন্তের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
২০১০ সালে বিডিআর-এর নতুন নামকরণ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) করা হয়। বাহিনীর পুনর্গঠন ও এর প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে নাম পাল্টানো হয় বলে দাবি করা হলেও অনেকের মতে এটি ছিল বিদ্রোহের অন্ধকার ইতিহাস দ্রুত মুছে ফেলার চেষ্টা। কারণ সরকার বাহিনীর অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত সমস্যাগুলো যথাযথভাবে সমাধান করেনি। বিদ্রোহের মূল কারণ উদ্ঘাটন না করে, এমন উদ্যোগগুলো কেবল গভীর সমস্যা আড়াল করার ঝুঁকি বহন করেছিল।
সরকারের তদন্ত পরিচালনার পদ্ধতি বিদেশী প্রভাব নিয়ে সন্দেহও উসকে দেয়, বিশেষত ভারতের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে। সমালোচকরা উল্লেখ করেন, কিছু সংবেদনশীল বিষয়, যেমন সম্ভাব্য বিদেশী সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা, সরকারের বিবরণে লক্ষণীয়ভাবে অনুপস্থিত ছিল। অনেকের ধারণা, ভারতের সাথে কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ দিকগুলোর পর্যাপ্ত অনুসন্ধান করা হয়নি। এই স্বচ্ছতার অভাব একটি পূর্বপরিকল্পিত গোপনীয়তার ধারণা আরো শক্তিশালী করে। ফলে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।
তদুপরি, বিচার প্রক্রিয়ায় গুরুতর ত্রুটির অভিযোগ ওঠে। হাজার হাজার সন্দেহভাজনকে একত্রে বিচার করায় ব্যক্তিগত রক্ষার বা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের সুযোগ সীমিত ছিল। বিচার প্রক্রিয়ার দ্রুততা সম্ভবত দৃঢ় পদক্ষেপ প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে করা; কিন্তু এটি এর গ্রহণযোগ্যতা দুর্বল করেছে। অনেকেই মনে করেন, নিম্নস্তরের সৈনিকদের বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে, আর বিদ্রোহের প্রকৃত পরিকল্পনাকারীরা মুক্ত থেকে গেছেন।
সরকার সামরিক নেতৃত্বের সাথে অর্থপূর্ণভাবে সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হওয়ায় সশস্ত্রবাহিনীর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী তিক্ততা তৈরি হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের সামরিক কাঠামো ও মনোবলে যে বিধ্বংসী প্রভাব ফেলেছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে আরো সমন্বিত ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ সশস্ত্রবাহিনী এবং তাদের পরিবারকে ন্যায়বিচারের ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে পারত।
জাতীয় আলোচনায় পিলখানা হত্যাকাণ্ড মোকাবেলায় হাসিনা প্রশাসনের ব্যর্থতা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর দীর্ঘস্থায়ী কালো ছায়া ফেলে। অনেকের কাছে, মূল পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করতে ব্যর্থতা এবং বিদেশী সংশ্লিষ্টতার সন্দেহ দূর করতে অক্ষমতা হয় সত্যের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছার অভাব অথবা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে একটি গভীর ভূরাজনৈতিক আপসরফার ইঙ্গিত। এই অমীমাংসিত ট্র্যাজেডি জনমনে অসন্তোষ ও সন্দেহ আরো ঘনীভূত করেছে, যা নতুন করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জোরালো করেছে।
বর্তমান পরিস্থিতি : নতুন আশার সঞ্চার
সাম্প্রতিক রক্তাক্ত পটপরিবর্তনের পর, ন্যায়বিচারের নতুন দাবি উঠেছে। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা এবং নিহতদের পরিবার স্বচ্ছ পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছে। দাবির মধ্যে রয়েছে :
প্রমাণ পুনঃপরীক্ষা : মূল তদন্তের ফলাফলগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখা জরুরি, কারণ অনেকের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ উপেক্ষা করা হয়েছে বা ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করা হয়েছে। একটি পুনঃতদন্তে ফরেনসিক তথ্য, সাক্ষীদের জবানবন্দী এবং লুকানো রেকর্ডগুলো বিশ্লেষণ করা উচিত।
মূল পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করা : বিদ্রোহে সরাসরি জড়িত সৈনিকদের শাস্তি দিলেই ন্যায়বিচার হবে না। প্রকৃত পরিকল্পনাকারী বা অর্থায়নকারী ব্যক্তিদেরও খুঁজে বের করতে হবে।
আন্তর্জাতিক নজরদারি নিশ্চিত করা : বিদেশী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এবং পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা বিবেচনায় একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থা তদন্তের তদারকি করতে পারে। জাতিসঙ্ঘ বা স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালগুলো এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সশস্ত্রবাহিনীর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা : পুনঃতদন্ত প্রক্রিয়ায় সামরিক নেতৃত্বকে অন্তর্ভুক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের অংশগ্রহণ শুধু তদন্তে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে না, বরং সশস্ত্রবাহিনী ও রাষ্ট্রের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে।
যা করা প্রয়োজন : এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বক্তব্য দেয়ার ফলে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন সমালোচনা ও বিতর্কের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আগামী ৫ দিনের মধ্যে তদন্ত আদালত গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন। জনগণ এ বিষয়ে প্রহসনের তদন্ত না করার হুঁশিয়ারি ব্যক্ত করে।
সরকারকে যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে
বিশেষ কমিশন গঠন : পিলখানা হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য একটি শক্তিশালী, স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে। এই কমিশনে সৎ ও অভিজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, সামরিক বিশেষজ্ঞ যারা চেইন অব কমান্ড সম্পর্কে সরাসরি জ্ঞান রাখেন এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক থাকতে হবে। কমিশনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হতে হবে : মূল পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করা, প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ট্র্যাজেডি এড়াতে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের সুপারিশ করা। আওয়ামী সরকারের সুবিধভোগী, দালাল বা কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে যেন নিয়োগ দেয়া না হয় সরকারের তা খেয়াল রাখতে হবে।
স্বচ্ছতায় অগ্রাধিকার দেয়া : সরকারকে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট প্রদান করতে হবে। জনগণের সাথে খোলামেলা যোগাযোগ অপরিহার্য, যাতে ভুল তথ্য প্রতিরোধ করা যায় এবং প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা তৈরি হয়। বিস্তারিত প্রতিবেদন, সংবাদ সম্মেলন এবং গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়গুলোর জন্য স্বচ্ছ সময়সীমা জনগণকে আশ্বস্ত করতে পারে যে, ন্যায়বিচারের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করা হচ্ছে।
জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করা
পিলখানা ট্র্যাজেডির শিক্ষা জাতীয় নিরাপত্তানীতির সামগ্রিক সংস্কারের ভিত্তি হওয়া উচিত। এর মধ্যে আধা-সামরিক বাহিনীর বৈধ অভিযোগ, যেমন ন্যায্য বেতন, সুস্পষ্ট কমান্ড কাঠামো এবং পেশাদারি উন্নয়নের সুযোগের মতো বিষয়গুলোর সমাধান অন্তর্ভুক্ত। একই সময়ে, রাষ্ট্রের প্রতি তাদের আনুগত্য নিশ্চিত করতে এবং অসন্তোষ বিদ্রোহে রূপ নেয়া থেকে রোধ করতে শক্তিশালী ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি।
বহিরাগত চাপ প্রতিরোধ : সরকারকে অবশ্যই জাতীয় স্বার্থকে বিদেশী প্রভাবের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, নির্ভয়ে এবং পক্ষপাতহীনভাবে কাজ করা, এমনকি এতে শক্তিশালী মিত্রদের চ্যালেঞ্জ জানানো বা বিদেশী হস্তক্ষেপ সম্পর্কে অস্বস্তিকর সত্যের মুখোমুখি হওয়ার দৃঢ়তা প্রদর্শন।
উপসংহার
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। তাদের সামনে ঐতিহাসিক সুযোগ রয়েছে অতীতের ভুল সংশোধন এবং বহু প্রতীক্ষিত জবাবদিহি নিশ্চিত করার। তারা দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে জনসাধারণের অসন্তোষ বাড়বে এবং দেশের বিচার, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি প্রতিশ্রুতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা