০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

ভারতের মুসলিম রক্ষায় বাংলাদেশ-পাকিস্তানের দায়

ভারতের মুসলিম - ফাইল ছবি

ভারতে মুসলিম সম্প্রদায় দীর্ঘকাল ধরে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে আছে। তবে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিশেষ করে ২০১৪ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার গঠনের পর থেকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য ও সহিংসতার ঘটনা বাড়তে দেখা গেছে। এটি একটি সংবেদনশীল বিষয় এবং এর পেছনে সামাজিক, রাজনৈতিক, ও অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে। আরএসএস তথা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সঙ্ঘের ভারতের স্বাধীনতায় ন্যুনতম কোনো ভূমিকা নেই। বরং এই উগ্রবাদী সংঘটি মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিল। হত্যার পরে নিষিদ্ধ হয় আরএসএস। পরে আরএসএস রাজনীতি করতে না পারার শর্তে নিষিদ্ধকরণ উঠিয়ে নেয়া হয়। এজন্য আরএসএস রাজনীতি করতে রাজনৈতিক শাখা খোলে, যেটা আজকের বিজেপি। যেটা পৃথিবীর যত উগ্রবাদী দল আছে, তারমধ্যে অন্যতম।

ভারত রাষ্ট্রটি জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত একটি প্রিন্সলি স্টেটও অবশিষ্ট নেই। সবই দখল করেছে। হায়দারাবাদ থেকে সিকিম- সবাই স্বাধীনতা হারিয়েছে। আভ্যন্তরীণ মুসলমানদের অধিকার খর্বকায়। কোনো রকমে বেঁচে বর্তে আছে তৃতীয় শ্রেনির নাগরিকের মতো। ভারতে মুসলমানদের জীবনের নিরাপত্তা পোকামাকড়ের মতো। গরুর গোশত খাওয়া কিংবা রাখার দায়ে হত্যার শিকার হতে হয়। সুযোগ-সুবিধা, চাকরি, ব্যবসা বাণিজ্য খুবই অপ্রতুল। বিজেপির নেতারা রাজনৈতিক বক্তৃতায় মুসলমানদের বের হয়ে যেতে বলে। মুসলমানদের উপর হামলার হুমকি দেয় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে। বিজেপির আমলে মুসলমানদের অত্যাচার, অধিকার খর্ব ও দেশত্যাগে বাধ্য করতে আইন পর্যন্ত পাশ করেছে।

মুসলিমদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) পাস করে। এ আইন ভারতের অভ্যন্তরসহ সারাবিশ্বে বিতর্কের সৃষ্টি করলেও বিজেপি তার কাজ করেই যায়।

মুসলমানদের চাইলেই গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা যায়। বিজেপির পৃষ্ঠপোষকতা মব লিঞ্চিং বা গণপিটুনিকে অনানুষ্ঠানিক বৈধতা দেয়া হয়েছে। এই অপরাধে কোনো বিচার তো হয়ই না, এফআইআর নেয়া হয় না।

বিজেপির মুসলমানদের উপর হামলার কমন গ্রাউন্ড হলো ধর্মের কল্পিত উপস্থিতি। সেটা হবে কোনো মুসলিম এলাকায় না হলে মসজিদ বা মাদরাসায়। রামের নামে বা কৃষ্ণের নামে ধর্মীয় মহানুভবতার বদলে ঘৃণা ও হিংসার চাষাবাদ করে হিন্দু ধর্মকেই হিংসার ধর্মে পরিণত করেছে। নাহলে বিজেপিকে ভারতীয়দের ভোটই দেয়ার কথা না।

মুসলমানদের উপর এ পর্যন্ত বহুবার হামলা করেছে হিন্দুত্ববাদীরা ধর্মের আবরণে। এর ভেতরে উল্লেখযোগ্য -

১৯৬৯ সালে আহমেদাবাদের গুজরাটে দাঙ্গা বাধিয়ে হত্যা করে ৪৩০ মুসলমান।
১৯৮৩ সালে আসামের নেলি নামক জায়গায় বেআইনি অভিবাসনের ধোয়া তুলে হত্যাকাণ্ড চালায়। শহীদ হয় প্রায় ২১৯১ জন মুসলিম।

১৯৮৯ সালে বিহারের ভগতালপুরে হত্যা করে প্রায় ১০০০ মুসলিমকে।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর দাঙ্গায় প্রায় ২০০০ জন নিহত হন
২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় নারী, শিশু-বৃদ্ধ কেউ বাদ যায়নি। আনুমানিক ২০০০-২৫০০ মুসলমান নিহত হন। ঘর বাড়ি পুড়িয়ে ছাই করা হয়। পুড়িয়ে মারা মুসলমানদের।
২০২০ দিল্লির দাঙ্গায় প্রায় ৩৮ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়। মুসলমানদের ঘরবাড়ি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল করে নেয় হিন্দুরা।
এছাড়া উল্লেখযোগ্য অনেক মুসলিম হত্যাকাণ্ডের ভেতর থেকে কিছু উপস্থাপন করছি
১৯৭৯ সালে মহারাষ্ট্রের জলগাঁও দাঙ্গায় ৩০০ জনকে হত্যা করে।
১৯৮৪ বিহার শরিফ দাঙ্গায় ৬৬ জনকে হত্যা করে।
১৯৮৭ সালে উতর প্রদেশের হাশিমপুরায় ৪২ জন মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
১৯৯৩ বোম্বে দাঙ্গায় ৯০০ জন মারা যায়।

মুসলমানদের নির্যাতন করতে করতে এমন একপর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। একটা বন্য প্রাণীর চেয়ে মুসলমানদের জীবনের মূল্যও কম।

এই যখন পরিস্থিতি তখন প্রশ্ন উঠতেই পারে পাকিস্তান আন্দোলনের যে উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদের জন্য স্বতন্ত্র আবাস। সেটা পেয়ে ভারতে বাস করা মুসলমানদের কী ভুলে যেতে হবে! ভারতের দু'পাশে দুটি মুসলিম দেশ। যাদের জন্ম হয়েছিল মুসলিম অধিকারের ভিত্তিতে। তারা কেন হাত পা গুটিয়ে বসে আছে? বিগত পৌনে এক শ' বছর ধরে তারা শুধু দেখেই যাচ্ছে আর মাঝে মধ্যে বিবৃতি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে।

ভারতের মুসলমানদের রক্ষা করতে বিশ্বফোরামে তাদের হয়ে কথা বলতে, বৈশ্বিক গণমাধ্যমে তথ্য প্রচার করতে কিছু সুনির্দিষ্ট কাজ করা দরকার। যেটা করতে হবে পাকিস্তান আর বাংলাদেশকে যৌথভাবে। এর সাথে যদি আফগানিস্তান ও অন্যান্য মুসলিম দেশ যুক্ত হয় তাদেরও নিতে হবে। এমন একটা সংস্থা বা ফোরাম দরকার যেখানে ভারতীয় মুসলমানেরা নিজেদের কথা বলবে। বিশ্ব জনমত গড়বে। এই ভূমিকা নেয়া পাকিস্তান ও বাংলাদেশের দায়। এটা নিতে হবে। ভারতের মুসলমানদের উপর লাগাতার অত্যাচার চালিয়ে বিশ্বাস জন্মেছে মুসলমানদের হত্যা করলেও কিছুই যায় আসে না। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের যৌথভাবে অতিসত্ত্বর একটি অভিন্ন প্লাটফর্মে আসা উচিত। একা পাকিস্তান বা একা বাংলাদেশ ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে না। ভারতীয় মুসলমানদের উচ্চশিক্ষা, গবেষণা এবং বৈশ্বিক সংস্পর্শে আসার সুযোগ-সুবিধা নিয়েও দেশ দুটির চিন্তা করা উচিত। এটা কিভাবে হবে জানি না। তবে দু'দেশের ভেতর থেকে এই বিষয়ে কথা বলা শুরু করা দরকার। আশা করব, বাংলাদেশের ভেতর থেকে এই বিষয়ে কথা বলা শুরু হবে, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়তে পারে। জনমত এবং সমর্থন তৈরি হতে পারে। ভারতের মুসলমানদের নিরাপত্তার সাথে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ অনেক ইস্যু জড়িত, যা রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে। ভারতের ভেতরে জ্বলা আগুন নেভাতে হবে। তা না হলে ওই আগুনে পাশের দু'মুসলিম দেশও পুড়বে। নিজের দেশ ও জাতির স্বার্থে হলেও ভারতের মুসলমানদের হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।

লেখক : ইতিহাস, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক


আরো সংবাদ



premium cement
চোরতন্ত্রে পরিণত হয় দেশ বাংলাদেশে সুইডেনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা বিএনপি ক্ষমতা পেলে ফ্যামিলি ও ফার্মার্স কার্ড দেয়া হবে পশ্চিমতীরকে যুক্ত করে নিতে ইসরাইলের খসড়া পরিকল্পনা তৈরি দেশ স্থিতিশীল রাখতে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিক তাঁবেদার রেজিম উৎখাতে ভারতের নীতিনির্ধারকরা এখন বেসামাল বাংলাদেশী সংখ্যালঘুদের দলে দলে ভারত পালানোর তথ্য সঠিক নয় ৫ আগস্টের পর ভারতের সাথে সম্পর্কে সমস্যা চলছে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে মোদির কাছে আবদার মমতার মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত অধ্যায়ে রূপ নেয়

সকল