নানা সমস্যায় দুর্বল ভারত
- প্রফেসর এম এ রশীদ
- ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৫৯
ভারত একটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং দক্ষিণ এশিয়ার একটি প্রভাবশালী দেশ হলেও বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই দুর্বলতাগুলো ভারতের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা, সামাজিক ঐক্য এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে।
ভারতে ধনী-গরিবের বৈষম্য ও দারিদ্র্যের সমস্যা প্রকট। কর্মসংস্থানের সুযোগ শহরাঞ্চল কেন্দ্রিক। গ্রামীণ এলাকা অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অবকাঠামোর ক্ষেত্রে উন্নয়নের অভাবের কারণে গ্রামের মানুষ মূলধারার অর্থনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে পারছে না। দ্রæত শিল্পায়ন এবং নগরায়ন হয়েছে সুষম উন্নয়ন উপেক্ষিত থেকেছে। এতে ভারতের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে থেকে যাচ্ছে। এই বৈষম্য শুধু মানুষের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে না, বরং দেশের সার্বিক অর্থনীতিকেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সঙ্ঘাত
ভারতের ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বৈচিত্র্য দেশের সাংস্কৃতিক শক্তি হলেও একইভাবে অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। বহুত্ববাদী সমাজে, যেখানে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, জৈনসহ বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে। ভারতের সুলতানি আমল এবং মোগল শাসনের সময় সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা দেখা না দিলেও ব্রিটিশ আমল এবং বর্তমান ভারতের সাম্প্রদায়িক উসকানি এবং উন্মাদনা প্রবল, বিশেষ করে নেহরু ডকট্রিন, আরএসএস এবং বিজিপি ডকট্রিন এর কারণে মুসলিমরা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছে, মুসলিমরা মোট জনসংখ্যার ১৯% হলেও সরকারি চাকরিতে তাদের অবস্থান ১% এর অনেক নিচে। এটি সা¤প্রদায়িক সঙ্ঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা দেশের সামাজিক ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষ করে নির্বাচনী বা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, ধর্মীয় সহিংসতা ও সা¤প্রদায়িক সঙ্ঘাতের ঘটনা ঘটে। হিন্দু-মুসলিম সহিংসতা বা অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ দেশের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি। ১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা এর গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ, যেখানে সহিংসতা অনেক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়, বিশেষ করে মুসলিমদের। এসব সহিংসতা আস্থাহীনতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
দেশটিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ব্যবহার করা হয়। কিছু রাজনৈতিক দল বা নেতারা ধর্মীয় রেফারেন্স ব্যবহার করে নির্বাচনী সুবিধা নিতে চেষ্টা করেন, যা সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করতে ভ‚মিকা রাখে। এই ধরনের রাজনীতি, বিশেষ করে নির্বাচনী সময়ে সহিংসতা ও দাঙ্গার সৃষ্টি করে, যা দেশের সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
সামাজিক বৈষম্য ও শোষণের কারণে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সঙ্ঘাত আরো তীব্র হয়। ভারতের নিম্নবর্ণের জনগণ বা দলিত সম্প্রদায় এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণ সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে বঞ্চনার শিকার হন। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি শত্রুতা এবং অবজ্ঞা এক সাধারণ বিষয়।
ভারতে কিছু ক্ষেত্রে ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসবাদও একটি সমস্যা হিসেবে উদ্ভূত হয়েছে। বিশেষ করে হিন্দু উগ্রবাদী গোষ্ঠী মাঝে মাঝে সহিংস কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে, যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। এই উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতা থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য সহিংসতার মাধ্যমে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করেছে।
ভারতের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কেবল অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়; এটি আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের ভাবমূর্তি এবং সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত মুসলিম বিশ্ব এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্ক কূটনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, সা¤প্রদায়িক সঙ্ঘাত আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
ভারতে দুর্নীতি একটি বহুল আলোচিত সমস্যা, যা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। দুর্নীতি শুধু সরকারি খাতেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি বেসরকারি খাতেও ব্যাপকভাবে বিস্তৃত এবং দেশের বিভিন্ন স্তরের জনসেবা ও সামাজিক কল্যাণ কার্যক্রমে এর প্রভাব অত্যন্ত গভীর।
ভারতের রাজনৈতিক দুর্নীতি দেশটির প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আরো দুর্বল করে তোলে। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ঘুষ, দুর্নীতি এবং নির্বাচনী কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা লাভের ঘটনা দেখা যায়, যা দেশের জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ ধরনের দুর্নীতি সাধারণ মানুষের আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি করে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। ভারতের দুর্নীতি বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেশী কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করার সময় রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে দুর্নীতির স্তর পর্যালোচনা করে এবং অনেক সময় এসব কারণে তারা ভারতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয় না।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের চ্যালেঞ্জ
ভারতের স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা খাতের চ্যালেঞ্জ দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুই খাতে ঘাটতির ফলে, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে, জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে সমস্যা দেখা দেয় এবং তাদের জীবনযাত্রার মান অপর্যাপ্ত হয়ে পড়ে। ভারতের স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতিও একটি বড় বাধা। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ঘুষ নেয়া এবং অসৎ চিকিৎসকদের কারণে অনেক সময় রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়। চিকিৎসকদের সঠিক নিয়োগ হয় না, ওষুধের মূল্য নিয়ে কারচুপি এবং হাসপাতালের সেবা নিতে গিয়েও জনগণকে দুর্নীতির শিকার হতে হয়।
ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় অনেক কম উন্নত। গ্রামীণ অঞ্চলের স্কুলগুলোতে শিক্ষক সঙ্কট, শিক্ষা উপকরণের অভাব এবং সঠিক অবকাঠামো নেই। এ ছাড়া, উচ্চশিক্ষার সুযোগও শহরের তুলনায় গ্রামের ছাত্রদের জন্য সীমিত। অনেক ক্ষেত্রে ভারতের স্কুলে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মান অত্যন্ত কম। শিক্ষকরা প্রয়োজনীয় শিক্ষণ কৌশল বা পদ্ধতি সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত নন, যা শিক্ষার মান হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া, অনেক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম লক্ষ করা যায়।
রাজনৈতিক অসন্তোষ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন
ভারতে রাজনৈতিক অসন্তোষ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন একটি দীর্ঘকালীন সমস্যা, যা দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব আন্দোলন বিশেষ করে কিছু রাজ্যে এবং অঞ্চলে, যেখানে স্থানীয় জনগণের মধ্যে জাতীয় সংহতির প্রতি সন্দেহ এবং ক্ষোভ বিরাজমান, সেখানে লক্ষ্য করা যায়। কাশ্মির, নাগাল্যান্ড, আসাম, মনিপুর এবং ভারতের অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে এ ধরনের আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
মুসলিম রাজ্য হওয়া সত্ত্বেও ভারত ১৯৪৭ সাল থেকে কাশ্মির দখল করে রেখেছে এটি জটিল এবং দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। বহু বছর ধরে কাশ্মিরের স্বাধীনতা আন্দোলন চলছে। একটা অংশ পাকিস্তানের সাথে একীকরণের দাবি জানিয়ে আসছে। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভাজন পরবর্তী কাশ্মিরের জনগণের মধ্যে স্বাধীনতা অথবা পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন অনেকাংশে তীব্র হয়ে উঠেছে। ভারতের সরকার কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামীদের মোকাবেলায় লাখ লাখ দখলদার সৈন্য মোতায়েন করে চরম নির্যাতন, নিপীড়ন করে আসছে। গুম, খুন, ধর্ষণ চরম আকার ধারণ করছে । জাতিসঙ্ঘ ও পশ্চিমা দুনিয়া চুপ হয়ে বসে আছে। বঞ্চিতদের পক্ষে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। খালিস্তান আন্দোলন হলো একটি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আন্দোলন, যা ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলে একটি স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র ‘খালিস্তান’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুরু হয়েছিল। ১৯৮০-৯০ এর দশকে পাঞ্জাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। আন্দোলনটি অনেক সময় হিংসাত্মক হয়ে ওঠে, যার ফলে হাজারো মানুষের মৃত্যু হয়।
নাগাল্যান্ড ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নাগাল্যান্ড, মনিপুর, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং অন্যান্য রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ও সশস্ত্র সংগঠকরা দীর্ঘকাল ধরে নিজেদের আঞ্চলিক স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে আসছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ভারতের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় ঐক্য এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি বড় হুমকি সৃষ্টি করে।
উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বেকারত্ব
ভারতের উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বেকারত্ব সমস্যা দেশটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। এই সমস্যাগুলো একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং তাদের সমাধান করার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপের প্রয়োজন। ভারতের জনসংখ্যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং এটি দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটিতে পৌঁছেছে এবং এটি ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হতে পারে।
দক্ষতা এবং শিক্ষাব্যবস্থার অমিল
ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়ন এবং কারিগরি প্রশিক্ষণের দিকে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেয় না। অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করলেও তাদের হাতে এমন দক্ষতা নেই যা বাজারে প্রয়োজনীয়। ফলে, কর্মসংস্থান বাজারে তারা প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে না।
কৃষি খাতের সঙ্কট
ভারতের বৃহত্তম কর্মসংস্থান খাত হলো কৃষি, তবে এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। কৃষির অপ্রতুল প্রযুক্তি, বৃষ্টিপাতের অভাব এবং জমির সঙ্কটের কারণে কৃষকদের আয় কমে গেছে এবং শহরাঞ্চলে কাজের সুযোগ বাড়ানোর জন্য গ্রামের তরুণরা বেশি শহরমুখী হচ্ছে। এটি শহরে বেকারত্বের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বেকারত্বের সমস্যা সামাজিক অস্থিরতা এবং অপরাধ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। সামাজিক অস্থিরতা, অপরাধ বৃদ্ধি, নিরাশার মানসিক প্রভাব চরমভাবে পড়ছে দেশটিতে। ২০২৩ সালের গেøাবাল হাঙ্গার ইনডেক্স অনুযায়ী, ভারত ১২১টি দেশের মধ্যে ১১১তম স্থানে রয়েছে। এটি ইঙ্গিত করে যে দেশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পুষ্টিকর খাবার পেতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে অপরাধের সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত, সাইবার অপরাধ, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং আর্থিক জালিয়াতি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
দূষণ
ভারতের শহরাঞ্চলে বায়ুদূষণ একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা এবং চেন্নাইয়ের মতো বড় শহরগুলোতে বায়ুদূষণের মাত্রা উচ্চ। ভারতীয় শহরগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে, যা বায়ুদূষণ বাড়াচ্ছে।
এর ফলে গাড়ির ধোঁয়া এবং তেল পোড়ানোর কারণে বিষাক্ত গ্যাস বায়ুমণ্ডলে মিশছে। কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া এবং দূষিত কণিকা মানুষের শ্বাসতন্ত্রে প্রবাহিত হয়ে স্বাস্থ্য সমস্যা প্রকট করছে। হৃদরোগ এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের মতো রোগ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত, শিশু ও বৃদ্ধরা এই সমস্যাগুলোর সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে।
ভারতের অনেক অঞ্চলে পানিদূষণ একটি গুরুতর আকারে দেখা যাচ্ছে। শিল্প বর্জ্য, কৃষি রাসায়নিক এবং বর্জ্য পদার্থ সরাসরি নদী, জলাশয় এবং অন্যান্য পানির উৎসে মিশে যাচ্ছে। ভারত বনভ‚মি হ্রাস পাচ্ছে। যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশটি কাবু হচ্ছে।
অবকাঠামো ঘাটতি
ভারতের অবকাঠামো ঘাটতি দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বড় শহরগুলোতে সড়ক ব্যবস্থার ওপর চাপ খুবই বেশি। সড়কগুলোর সঙ্কীর্ণতা এবং ট্রাফিকের কারণে দৈনন্দিন যাতায়াতের সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশটিতে রেলপথে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন বেশি হয়। প্রয়োজনের তুলনায় সেটা পর্যাপ্ত নয়। যদিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে রেলপথ আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তবুও পুরনো রেলস্টেশন, নিরাপত্তাহীন রেললাইন এবং দুর্ঘটনার হার এখনো একটি বড় সমস্যা।
ভারতে পানির সঙ্কট পুরনো। বহু অঞ্চলে পানির সরবরাহ ন্যূনতম পরিমাণে এবং পরিষ্কার পানি পাওয়া দুষ্কর। দেশটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ খাতের বড় সমস্যাও রয়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়। যদিও দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবুও কিছু অঞ্চলে বিদ্যুতের ঘাটতি অব্যাহত রয়েছে।
সার্বিকভাবে, ভারতের মতো বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় একটি দেশে এসব সমস্যার সমাধান অত্যন্ত জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টার প্রয়োজন। ভারতের আগ্রাসী নীতির কারণে ভারত বিশাল সামরিক খরচ গ্রহণ করে এবং যা তার সমগ্র অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সব প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক খারাপ। চিন, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও দূরবর্তী কানাডা, মালয়েশিয়া, তুর্কির সাথে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রনীতি সাম্প্রতিককালে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। আগ্রাসী নীতি থেকে ভারত বের হয়ে আসলে ভারতের জনগণ উপকৃত হবে।
লেখক : সিনিয়র ফেলো এসআইপিজি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি
Emai: marashid426@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা