২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সম্ভাব্য ভারতীয় হুমকি মোকাবেলায় করণীয়

- প্রতীকী ছবি

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সম্প্রতি দেশের আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার ও সামরিক প্রস্তুতি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এটি বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। বাংলাদেশ যদি এ বক্তব্যকে আঞ্চলিক চাপ হিসেবে বিবেচনা করে, তাহলে তার প্রতিরক্ষার কৌশলগত দিকগুলোর পুনর্মূল্যায়ন জরুরি। এ প্রসঙ্গে পাকিস্তান ও চীনের সাথে সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব একটি কৌশলগত বিকল্প হতে পারে। তবে এর কিছু সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ রয়েছে :

পাকিস্তানের সাথে সামরিক সহযোগিতা : পাকিস্তানের সাথে সামরিক সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য কিছু কৌশলগত সুবিধা আনতে পারে, তবে এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও রাজনৈতিকভাবে জটিল। সম্ভাব্য সুবিধা ও চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণ করা হলো :

সম্ভাব্য সুবিধা
১. যুক্ত অভিজ্ঞতা : পাকিস্তান ভারতের সামরিক কৌশল সম্পর্কে সরাসরি অভিজ্ঞ। তাদের সাথে তথ্য ও কৌশলগত বিশ্লেষণ বিনিময় করলে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায় মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি পেতে পারে। বিশেষ করে কাশ্মির ও অন্যান্য সীমান্ত সঙ্ঘাত থেকে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য উপযোগী হতে পারে।

২. যৌথ প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি বিনিময় : পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ। যেমন- ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইবার সিকিউরিটি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা। এসব ক্ষেত্রে যৌথ প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহযোগিতা সম্ভব। পাকিস্তান তার প্রতিরক্ষা শিল্প উন্নয়নে এগিয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে কম খরচে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারে।

৩. প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধিতে সমন্বয় : বাংলাদেশের জন্য আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে পাকিস্তানের সাথে একযোগে কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভারতের সাথে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। ভারত একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হতে পারে, বিশেষ করে সীমান্ত ও নিরাপত্তা ইস্যুগুলোর কারণে। পাকিস্তানের সাথে সামরিক সম্পর্ক উন্নত করার মাধ্যমে, বাংলাদেশ আঞ্চলিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়, যেমন- সীমান্তে সংঘর্ষ, সন্ত্রাসবাদ ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উন্নত করতে পারবে।

সম্ভাব্য উপকারিতা : ভারতের সাথে সামরিক ভারসাম্য : পাকিস্তানের সাথে সুরক্ষিত সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুললে, বাংলাদেশ তার প্রতিরক্ষা কৌশল আরো শক্তিশালী করতে পারবে, যা ভারতের সামরিক ক্ষমতার সাথে ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করবে।

দ্বিপক্ষীয় সুরক্ষা চুক্তি : পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সুরক্ষা চুক্তি বা যৌথ সামরিক মহড়া আয়োজন করলে, উভয় দেশই সীমান্ত নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারবে।
প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি বিনিময় : পাকিস্তানের কাছ থেকে উন্নত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি অর্জন করা সম্ভব, যা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক হুমকির বিরুদ্ধে শক্তি জোগাবে।

চীনের সাথে সামরিক সম্পর্ক : প্রযুক্তিগত সহায়তা : চীন বিশ্বের অন্যতম প্রধান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহকারী দেশ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই চীনের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম যেমন- যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন, ট্যাংক, বিমান ও সাইবার সিকিউরিটি সিস্টেম কিনেছে। চীনের প্রতিরক্ষা শিল্পের ঔৎকর্ষ ও আধুনিক প্রযুক্তি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া চীনের সাথে যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি অর্জন এবং সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, চীনের সাথে যৌথভাবে ড্রোন নির্মাণ, সাইবার সিকিউরিটি ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিক রাডার সিস্টেমের উন্নয়নে সহযোগিতা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতকে আরো শক্তিশালী করতে পারে।

আন্তর্জাতিক অবস্থান : চীনের সাথে সম্পর্ক বাড়ালে বাংলাদেশ আঞ্চলিক রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান নিতে সক্ষম হবে। চীন, বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে, বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত সহযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার স্থান দৃঢ় করতে সহায়তা করতে পারে। চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাংলাদেশের জন্য বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হতে পারে। এ ছাড়া চীনের সাথে উন্নত সামরিক সম্পর্ক বাংলাদেশের জাতীয় সুরক্ষা কৌশল আরো কার্যকর এবং বহুমুখী করতে সাহায্য করবে।

উন্নত প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম :
চীন ও পাকিস্তানের সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ালে বাংলাদেশ উন্নত প্রযুক্তির প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম লাভের সুযোগ পাবো। এই সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং আধুনিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের মাধ্যমে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা পাবে। এটি শুধু প্রতিরক্ষা খাতেই নয়; বরং দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও শক্তিশালী করবে। উদাহরণস্বরূপ, চীনের সাথে যৌথভাবে উন্নত সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্থাপন, পাকিস্তানের সাথে মিলিটারি ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালু এবং যৌথভাবে নৌ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন করা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতকে আধুনিকীকরণে সহায়ক হতে পারে।

চ্যালেঞ্জ ও কৌশল
ভারতের প্রতিক্রিয়া : চীন বা পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভারতের সাথে উত্তেজনা বাড়াতে পারে। তাই ভারসাম্যপূর্ণ ক‚টনৈতিক নীতি অপরিহার্য।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া : যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ সামলাতে কৌশলগত সংলাপ বজায় রাখা জরুরি।

অর্থনৈতিক দিক : চীন ও পাকিস্তানের সাথে সহযোগিতার পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।

বাস্তবায়ন কৌশল
ধাপে ধাপে কৌশলগত সহযোগিতা : সরাসরি সামরিক জোট গঠনের পরিবর্তে, যৌথ সামরিক মহড়া, প্রশিক্ষণ ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার মতো নির্দিষ্ট উদ্যোগ নেয়া।

আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষা : পাকিস্তান ও চীনের সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর পাশাপাশি ভারতের সাথে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়া।

আন্তর্জাতিক অংশীদারদের আশ্বস্ত করা : বাংলাদেশের নিরপেক্ষ অবস্থান এবং নিজস্ব প্রতিরক্ষা ক্ষমতা জোরদারের ওপর জোর দেয়া। বাংলাদেশের উচিত প্রতিরক্ষা কৌশল এমনভাবে উন্নয়ন করা, যা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখে এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে। চীন ও পাকিস্তানের সাথে সামরিক সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্যোগ কৌশলগতভাবে কার্যকর হতে পারে, তবে তা ভারসাম্যপূর্ণ ও সুপরিকল্পিত হওয়া প্রয়োজন।

ভারতনির্ভরতা কমাতে হবে
বাংলাদেশের ভারতনির্ভরতা কমানোর চিন্তা একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হতে পারে। বিশেষ করে যদি এটি বহুমুখী বৈদেশিক নীতির আওতায় করা হয়। এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়; বরং কূটনৈতিক, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় হতে পারে। ভারত বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলেও একক নির্ভরতার ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য বিকল্প পথ অনুসন্ধান যুক্তিযুক্ত। নিচে এ বিষয়ে কিছু দিক তুলে ধরা হলো :

ভারতনির্ভরতা কেন কমানো উচিত : বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা : বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। বাংলাদেশ বিপুল পণ্য আমদানি করে, যা অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। বিকল্প বাজার খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত জরুরি।

পানি বণ্টন ও সীমান্ত সমস্যা : তিস্তা নদীর পানি বণ্টন সমস্যা এবং সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘ দিনের অমীমাংসিত ইস্যুগুলো দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ।

কৌশলগত স্বাধীনতা : একক দেশের ওপর নির্ভরতা বাংলাদেশের কৌশলগত সিদ্ধান্তগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে।

ভারতনির্ভরতা কমানোর কৌশল :
১. চীন : চীনের সাথে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। চীনের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) বাড়ানো যেতে পারে।

আঞ্চলিক বাজার : দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া (মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম) ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারকে আরো কার্যকরভাবে কাজে লাগানো।

ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা : ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য বাড়ানো এবং নতুন বাজার সৃষ্টিতে মনোযোগ দেয়া।

২. পরিবহন ও লজিস্টিকস বিকল্প তৈরি :
বন্দর : চট্টগ্রাম, পায়রা ও মংলা বন্দর ব্যবহারের বিকল্প হিসেবে চীন, জাপান ও থাইল্যান্ডের সাথে সংযোগ স্থাপন।

করিডোর : চীন-মিয়ানমার-বাংলাদেশ করিডোর ও চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (CPEC) সুবিধা কাজে লাগানো।

৩. প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সম্পর্ক : চীন ও পাকিস্তানের সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানো। রাশিয়া ও তুরস্কের সাথে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ে চুক্তি করা। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ জোরদার করে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে মনোযোগ দেয়া।

৪. জ্বালানি ও প্রযুক্তি সহযোগিতা : জ্বালানি : মধ্যপ্রাচ্য ও রাশিয়া থেকে সরাসরি জ্বালানি আমদানির সুযোগ তৈরি।

পরমাণু ও সবুজ জ্বালানি : চীন ও রাশিয়ার মতো দেশের সাথে পরমাণু এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব।

চ্যালেঞ্জ ও সতর্কতা
ভারতের প্রতিক্রিয়া : ভারতের সাথে সম্পর্কের অবনতি হলে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা : বহুমুখী সম্পর্ক গঠনের সময় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ভারসাম্য বজায় রাখা।

অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা : নতুন অংশীদারদের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন করতে সময় ও কৌশলগত বিনিয়োগ প্রয়োজন।

পরিশেষে ভারতনির্ভরতা কমানোর সিদ্ধান্ত কেবল বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কৌশলগত স্থিতি জোরদার করতে সহায়তা করবে না, এটি জাতীয় স্বার্থকেও সুরক্ষিত করবে। তবে, এটি করতে হবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও ধাপে ধাপে কৌশলগত পদক্ষেপের মাধ্যমে, যাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় থাকে। রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ। যদি এ সমস্যা সুস্থভাবে সমাধান না করা যায়, তবে এর প্রভাব বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের সম্পর্কের ওপর পড়তে পারে।

বাংলাদেশ, চীন, মিয়ানমারের সম্পর্ক :
মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক : রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য একটি বিশেষ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ ২০১৭ সাল থেকে প্রায় ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার এ সমস্যাটিকে অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হিসেবে দেখে এবং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করছে। যদি বাংলাদেশ এ সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের সাথে সমঝোতায় না আসতে পারে, তাহলে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে পারে।

চীনের সাথে সম্পর্ক : চীন মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু এবং বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ হিসেবেও চীনের বিশেষ কূটনৈতিক অবস্থান রয়েছে। চীন মিয়ানমারের সাথে গৃহীত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে একাধিক প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। চীন রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে মিয়ানমারের সমর্থনে অবস্থান নেয় এবং বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বা পুনর্বাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করতে থাকে, তবে এটি চীনের প্রতি বাংলাদেশের অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।

আঞ্চলিক রাজনীতি : রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সফল না হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে একা হয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে চীন ও মিয়ানমারের মতো শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সামনে। চীন ও মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক খারাপ হলে, বাংলাদেশের জন্য আঞ্চলিক সমর্থন সংগ্রহ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কঠিন হতে পারে।

সমাধানের গুরুত্ব : কূটনৈতিক সমাধান : বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের সাথে একটি ক‚টনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তবে এটি আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখতে এবং চীনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

আন্তর্জাতিক সহায়তা : রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অর্জন করার প্রয়োজন, যাতে এ সমস্যা মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি টেকসই সমাধানে পৌঁছাতে পারে।

রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারে। ভারতের দিক থেকে সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলার জন্য এই সমাধান প্রয়োজন। এ সমস্যার দ্রুত ও সুষ্ঠু সমাধান না হলে, আঞ্চলিক কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে এবং বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।

লেখক : সিনিয়র ফেলো, এসআইপিজি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি
ই-মেইল : marashid426@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement