বাংলাদেশ : স্বপ্ন সম্ভাবনা ও বাস্তবতা
- মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন
- ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২০:২৩
স্বপ্ন সেটি নয় যেটি মানুষ ঘুমিয়ে দেখে, স্বপ্ন সেটিই যেটি পূরণের প্রত্যাশায় মানুষ ঘুমানোর সুযোগ পায় না। বাংলাদেশের স্বপ্ন ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে নিতে হবে বাস্তবধর্মী উদ্যোগ। পরিবর্তন আনতে হবে মন-মানসিকতায় ও আচার-আচরণে, বিশেষ করে রাজনৈতিক বিভাজন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ঐক্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। কেননা, মাথা যেমন সমস্ত শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে তেমনি রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে একটি দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে। রাজনীতিতে সঙ্কট জিইয়ে রেখে কোনো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সুদূরপরাহত।
বাংলাদেশের সামনে যেমন সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি রয়েছে চ্যালেঞ্জও। আগামী দিনগুলোয় চীন, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও পিলিপাইন প্রভৃতি দেশের সাথে ব্যবসায়-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে। বিশেষ করে চীন ও ভারতের দিকে বাংলাদেশকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কেননা এ দু’টি দেশের সাথে বাংলাদেশের বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে এ দু’টি দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে। তারা বাংলাদেশের বাজার ধরতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। বাংলাদেশকেও চেষ্টা করতে হবে কীভাবে এ দু’টি দেশে পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করা যায়। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় বাংলাদেশী বিভিন্ন পণ্যের ব্যাপক চাহিদা ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। ভারতের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় বাংলাদেশকে ব্যবসায় করার সুযোগ তৈরি করতে হবে। এ ব্যাপারে যা যা সহযোগিতার দরকার- ভারতের তা করতে হবে বাংলাদেশকে। সহযোগিতা করতে হবে চীনের সাথে ব্যবসায়-বাণিজ্য সম্প্রসারণেও। বাংলাদেশকে চীনের বাজারে প্রবেশ করতে হলে ভারত, ভুটান ও নেপালের সহযোগিতার প্রয়োজন। তা ছাড়া মিয়ানমার দিয়েও বাংলাদেশ চীনে প্রবেশ করতে পারে।
বাংলাদেশের ‘স্ট্র্যাটেজিক’ সুবিধাগুলো এ অঞ্চলের অর্থনীতির গতি পরিবর্তনের নিয়ামক। রাজনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থানের দিক দিয়ে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। উপমহাদেশ এবং এ অঞ্চলের মানচিত্রের দিকে তাকালে এটি স্পষ্ট যে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার সাথে পশ্চিম এশিয়ার যোগসূত্র স্থাপন করে রেখেছে বাংলাদেশ তার আপন ভ‚খণ্ডের বৈচিত্র্য দিয়ে। বাংলাদেশের তিনদিক জুড়ে রয়েছে ভারত। তারপর দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে মিয়ানমার। এর পাশে রয়েছে চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া। তা ছাড়া রয়েছে ভুটান, নেপাল ও সিকিম। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে এই প্রতিটি দেশ খুব নিকটবর্তী। বাংলাদেশ থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ১৮ মাইল, ভুটানের ৪৫ মাইল এবং চীনের ৪০ মাইল। তা ছাড়া বাংলাদেশ সমুদ্র উপক‚লবর্তী দেশ। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানা শুরু সমুদ্রের জলরাশি দিয়ে। আর এ মহাসমুদ্র বাংলাদেশকে দিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানগত সুবিধা। তাই বাংলাদেশকে বলা হয় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগস্থল। এ জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এক বিরাট অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভ‚মিকা রয়েছে। তা ছাড়া চীন ও ভারতের অর্থনৈতিক উত্থান বাংলাদেশের এ ভ‚মিকাকে আরো জোরালো ও শক্তিশালী করেছে। এসব চিন্তা মাথায় নিয়ে রাজনীতিবিদদের পথ চলতে হবে এবং তৈরি করতে হবে কর্মকৌশল।
আগামী দিনগুলোয় যে কয়েকটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে তালিকায় ওপরে উঠে আসবে, এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত। স্ট্র্যাটেজিক দিক দিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। এটি বাংলাদেশের জন্য চমৎকার ভূরাজনৈতিক সুযোগ। এ জন্য বাংলাদেশকে দেখতে হবে ভিন্ন আঙ্গিকে ও ভিন্ন দৃষ্টিতে। চীন, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান, সিকিম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশসহ দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করার প্রবেশদ্বার বাংলাদেশের মধ্য ও পূর্বাঞ্চল। তা ছাড়া ‘সেভেন সিস্টারস’ বলে খ্যাত ভারতের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের প্রবেশদ্বারও বাংলাদেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল। ফলে প্রায় শত কোটি মানুষের ব্যবসায়-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রিত হবে বাংলাদেশের মধ্য ও পূর্বাঞ্চল ঘিরে।
জনসংখ্যার নিরিখে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ দেশ। বিশ্বের প্রতি ৫০ জনের মধ্যে একজন বাংলাদেশী। পরিবর্তিত বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আরো সুসংহত হয়েছে। চীন, ভারত ও পাকিস্তানসহ আরো বড় বড় দেশ বাংলাদেশের ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ! তৈরী পোশাক শিল্পে বিশ্বে চীনের পর বাংলাদেশের অবস্থান! জনশক্তি রফতানি ও ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ ভারত-পাকিস্তানের সাথে প্রতিযোগিতা করছে! কাজেই বাংলাদেশের শত্রু এখন চতুর্মুখী। উপরে উঠতে হলে বাংলাদেশকে এসব চিন্তা মাথায় রাখতে হবে, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে হবে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো শক্তিশালী করতে হবে; সুনিশ্চিত করতে হবে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। তাহলে কেবল একটি দেশের অর্থনীতির আকার বড় হতে পারে, দেশটি হতে পারে উন্নত, আধুনিক একটি দেশ।
লেখক : কলামিস্ট
belayethossen1@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা