তরুণ প্রজন্ম ও ৭ নভেম্বরের বিপ্লব
- ড. মোর্শেদ হাসান খান
- ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২০:১৯, আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৬
বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীর সংখ্যা তিন কোটির ঘরে, যা জনসংখ্যার ২০ শতাংশ। ছাত্র-জনতার জুলাই ’২৪ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এরা আমাদের সবার শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা অর্জন করছে। অকুতোভয় আন্দোলনকারীরা বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দিয়েছে; হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি, নির্যাতন-গুম তাদেরকে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পরেনি। পকেটে নাম-ঠিকানা, পিতা-মাতার নাম লেখা কাগজ নিয়ে রাস্তায় নেমেছে- এদের অনেকে ঘরে ফিরে আসেনি। তদের সঙ্কল্প এবং আত্মত্যাগ সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং ছাত্র-জনতার যৌথ আন্দোলন শেখ হাসিনার রাষ্ট্র ধ্বংসকারী ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে তিনটি দিন ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে এবং বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, সার্বভৌম এবং আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র গঠনের ধারায় ফিরিয়ে এনেছে। দিবস তিনটি হলো ৭ নভেম্বর ১৯৭৫, ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ এবং ৫ আগস্ট ২০২৪। ৭ নভেম্বরের তাৎপর্য আমরা প্রবীণরা যেভাবে উপলব্ধি করতে পরি, আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য তা সহজ নয়। তাদের জন্ম ২০০০ থেকে ২০১০ এর মধ্যে এবং ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দূর অতীতের কথা। আশার কথা আমাদের তরুণরা অনেক তথ্য-উপাত্ত নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করে এবং পর্যালোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচারের চেষ্টা করে। তা না হলে মুজিবময় পাঠ্যপুস্তক, শপথবাক্য আর আওয়ামী সরকারের মুজিব বন্দনার বিপরীতে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠতে পারত না।
তরুণদের কথা বিবেচনায় রেখে ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আজকের উপস্থাপনা।
৭ নভেম্বরের পটভূমি রচিত হয় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনালগ্নে।
শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগের সরকার এমনকি করেছিল যে স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় দেশে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়? শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথমত তার পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনের রক্ষক এবং দলের প্রতিপালক ও প্রশ্রয় দাতা। ’৭২-’৭৫ সালের তার নেতৃত্বাধীন সরকার এতটাই দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল যে দেশের অসহায় অনাহারক্লিষ্ট মানুষের ত্রাণসামগ্রীও তারা আত্মস্মাৎ করেছিল। দলীয় ছত্রছায়ায় চোরাকারবারি, কালোবাজারি ও মজুদকারীতে দেশ ছেয়ে যায়। চালের সঙ্কট এতটাই প্রকট হয়ে ওঠে যে, দুবেলা ভাত খাওয়ার অবস্থা ছিল না। ১৯৭৪ সালের শেষদিকে সারা দেশে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ, অনাহারে মারা যায় এক লাখের বেশি মানুষ। যথেষ্ট খাদ্য সরবরাহ থাকা সত্তে¡ও অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল।
দেশে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছিল। শেখ মুজিব আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে সেনাবাহিনীকে তিনবার মাঠে নামান। তারা অপরাধীদের ধরলেও আওয়ামী নেতা এবং শেখ মুজিবের সুপারিশে ছাড়া পেয়ে যায়। শেখ মুজিব তৈরি করেন লাল বাহিনী এবং রক্ষীবাহিনীর মতো মিলিশিয়া বাহিনী। এদের কাজ ছিল প্রতিবাদী, সমালোচক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নির্যাতন এবং গুম-খুনের মাধ্যমে নিস্তব্ধ করা। রক্ষীবাহিনী ছিল মুজিব বাহিনীর উত্তরসূরি এবং তৈরি করা হয়েছিল ভারতীয় গোয়েন্দাদের তত্ত্বাবধানে। উদ্দেশ্য ছিল শেখ মুজিবের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করা।
শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে, চারটি ছাড়া সব সংবাদপত্র বন্ধ করে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেন। গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখানো শেখ মুজিব পুরোদস্তুর ফ্যাসিস্ট শাসক বনে যান।
মুজিব শাসনের ব্যর্থতা এতটা প্রকট হতে থাকে যে, দেশের মানুষের স্বাধীনতার আনন্দ বিলীন হয়ে যায়। অভাব, দুঃশাসন, দুর্নীতি, অরাজকতা এবং জুলুমে জর্জরিত জনগণ মুক্তির উপায় খুঁজতে থাকে। এমন পটভ‚মিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছু ক্ষুব্ধ মেজর শেখ মুজিবকে হত্যার মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করে।
শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর অভ্যুত্থানে জড়িত মেজররা খন্দকার মোশতাকের হাতে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব অর্পণ করে। সংসদ বলবৎ থাকে এবং নতুন মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে। নতুন মন্ত্রীদের অধিকাংশই শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য। খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি হলেও বঙ্গভবনে অবস্থান নিয়ে অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড মেজর ফারুক এবং মেজর রশীদ সব সিদ্ধান্ত দিতেন। বঙ্গভবন পাহারায় ফারুকের ট্যাংক বাহিনী নিয়োজিত থাকে। শেখ মুজিব ও তার পরিবারবর্গ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দায়মুক্তি দেয়া হয়। আগস্টের শেষে জাতীয় চার নেতাকে কারান্তরীণ করা হয়।
শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পর অবস্থা এতটাই স্বাভাবিক ছিল যে ১৪৪ ধারা জারি করারও প্রয়োজন হয়নি। উল্টো জনগণের মাঝে উৎসবের আমেজ দেখা যায়। একদিনের ব্যবধানে চাল কেজি প্রতি ৭ টাকা থেকে ৪ টাকায় নেমে আসে।
তবে সেনাবাহিনীতে বেশ শৃঙ্খলাবিরোধী পরিবেশ বিরাজ করছিল। ২/৩ নভেম্বর মাঝ রাতে শাফায়াত জামিল তার বিদ্রোহের সূচনা করেন। প্রথমেই সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে তার গৃহে অন্তরীণ করা হয়। এরপর খালেদ মোশাররফ বিদ্রোহের নিয়ন্ত্রণ নেন। তিনি মেজরদের সেনানিবাসে ফেরত আসার নির্দেশ দেন। সারা দিনের উত্তপ্ত বাদানুবাদ শেষে মেজর মহিউদ্দিন ছাড়া বাকি ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকারীরা ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় পরিবারসহ থাইল্যান্ডে চলে যান। ইতোমধ্যে জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করা হয়।
৪ নভেম্বর সকালে খালেদ মোশাররফ এবং শাফায়াত জামিল জানতে পারেন, ২/৩ নভেম্বর ভোর রাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক এবং মেজর রশীদের অনুমতিতে চার নেতাকে হত্যা করা হয়। খালেদ মোশাররফ এবং শাফায়াত জামিল উভয়ে খন্দকার মোশতাক এবং অভ্যুত্থানে জড়িত মেজরদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। কিন্তু ততক্ষণে মেজররা থাইল্যান্ড পৌঁছে গেছে। বেলা বাড়তেই খালেদ মোশাররফ বঙ্গভবনে তার দাবি নিয়ে উপস্থিত হন। জিয়াউর রহমানের পরিবর্তে নিজে সেনাপ্রধান হতে অভিপ্রায় প্রকাশ করেন এবং খন্দকার মোশতাককে রাষ্ট্রপতি রেখে মন্ত্রিপরিষদ ভেঙে দেয়ার দাবি জানান। আলোচনা সারা দিন ধরে চলতে থাকে। এক পর্যায়ে শাফায়াত জামিল অধৈর্য হয়ে সেনানিবাস থেকে বঙ্গভবনে যান এবং মন্ত্রিপরিষদের মিটিংয়ে সশস্ত্র অবস্থায় প্রবেশ করেন। ভীত খন্দকার মোশতাক জিয়াউর রহমানের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে খালেদ মোশাররফকে মেজর জেনারেলে পদোন্নতি দেন এবং সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেন। খন্দকার মোশতাক পদত্যাগ করেন। ৬ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন।
এত কিছুর পরও খালেদ মোশাররফ ও শাফায়াত জামিল অভ্যুত্থান টিকিয়ে রাখতে পারেননি। ৩ নভেম্বর থেকে রেডিও টিভিতে কোনো সংবাদ প্রচারিত হচ্ছিল না। সেনানিবাস এবং বঙ্গভবনের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সাধারণ জনগণ এমনকি সেনাবাহিনী অন্ধকারে ছিল। অনিশ্চয়তা এবং ভারতীয় আগ্রাসনের ভীতির মাঝে জনতার দিন কাটছিল। তার উপর সেনাবাহিনীর মধ্যে ধারণা তৈরি হয় খালেদ মোশাররফ ভারতের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ সরকারকে পুনর্বাসিত করবেন। এমন ধারণা তৈরির কারণ কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে জাসদের গণবাহিনী এবং বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার ব্যাপক প্রচারণা। একই সময় কিছু ঘটনা ঘটে যা খালেদ মোশাররফের উদ্দেশ্য নিয়ে সিপাহি জনতার মাঝে সন্দেহ তৈরি হয়। কুখ্যাত রক্ষীবাহিনীর অফিসারদের বিদ্রোহে অংশগ্রহণ সিপাহিদের নজরে পড়ে। তার উপর ৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগের একটি মিছিল বের হয় শেখ মুজিব এবং চার নেতা হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে। এ মিছিলের সামনে ছিলেন খালেদ মোশাররফের মা ও বড় ভাই রাশেদ মোশাররফÑ আওয়ামী লীগের এমপি। এই ছবি ৫ নভেম্বর প্রতিটি পত্রিকার প্রথম পাতায় খালেদ মোশাররফের র্যাংক পরার ছবির নিচে ছাপা হয়। আরেকটি ঘটনা ঘটে সেনানিবাসের প্রধান প্রবেশপথে। ৪ নভেম্বর ভারতীয় দূতাবাসের সামরিক অ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার ভোরা এসে খালেদ মোশাররফের সাথে দেখা করতে চান। খালেদ মোশাররফ সেনানিবাসে অনুপস্থিত থাকায় ব্রিগেডিয়ার ভোরা খালেদ মোশাররফের জন্য একটি উপহার বাক্স রেখে যান। এমনিতেই সেনাবাহিনীতে খালেদ মোশাররফ এবং শাফায়াত জামিল শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত ছিলেন, তার উপর এসব ঘটনা সিপাহি-জনতার মনে সন্দেহ ঘনীভূত করে।
জিয়াউর রহমান গৃহান্তরীণ হওয়ার পর সেনানিবাসে গোপনে সিপাহিদের মাঝে বিদ্রোহ তৈরিতে উদ্যোগী হন জাসদ নেতা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম। জিয়াউর রহমান গৃহান্তরীণ অবস্থায় তাহেরের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সফল হয়েছিলেন। তাহের নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন। তার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল। তিনি একটি সমাজতান্ত্রিক দেশের স্বপ্ন দেখতেন। এ জন্য তিনি জাসদের উগ্র রাজনীতিতে জড়িয়ে যান। জাসদের সশস্ত্র ইউনিট গণবাহিনীর প্রশিক্ষকের দায়িত্ব নেন। ৭২-৭৫ সালে শেখ মুজিবের ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিরোধ গড়েছিল জাসদ। পরবর্তীকালে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জাসদ ও সর্বহারা পার্টিকে মেধা এবং তারুণ্যের অপচয় বলে মতামত দিয়েছেন।
যাই হোক, আবু তাহের সেনাবাহিনীতে যে অসন্তোষের বীজ বুনেছিলেন তার রেশ ধরে ’৭৫ থেকে ’৭৭ এই তিন বছর সামরিক বাহিনীতে অসংখ্য সিপাহি এবং অফিসারের রক্ত ঝরেছে। তাহেরের বিপ্লবী সিপাহিদের ৭ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ, নাজমুল হুদা এবং কর্নেল এ টি এম হায়দারকে হত্যার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীতে ভাতৃহত্যার সূচনা হয়।
৩ নভেম্বর ’৭৫ খালেদ মোশাররফ এবং শাফায়াত জামিল বিদ্রোহ করলে আবু তাহের তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মোক্ষম সুযোগ পেয়ে যান। তিনি জিয়ার কাঁধে বন্দুক রেখে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ছক কষেন। তাহেরের অনুগত বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ঢাকা সেনানিবাসে ৪ নভেম্বর থেকে ১২ দফা দাবি সংবলিত লিফলেট বিতরণ শুরু করে।
সিপাহিদের ন্যায্য কিছু দাবির সাথে সুকৌশলে তার সমাজতান্ত্রিক দাবি ঢুকিয়ে দেন। ৬/৭ নভেম্বর মাঝরাতে ঢাকা সেনানিবাসের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিপাহিরা ফাঁকা গুলি করে বিদ্রোহ জানান দেয়। এরপর ঘটনা দ্রæত ঘটতে শুরু করে। মেজর মহিউদ্দিন (১৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে জড়িত-দেশে থেকে যাওয়া একমাত্র অফিসার) এবং সুবেদার মেজর আনিসুল হক অনুগত কিছু সৈন্য নিয়ে জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী থেকে উদ্ধার করেন।
উদ্ধারের পর সেকেন্ড ফিল্ড রেজিমেন্টের অফিসে অবস্থানকালে এই রেজিমেন্ট এবং চতুর্থ বেঙ্গলের অফিসার, নন-কমিশন্ড অফিসার এবং সিপাহিরা জিয়াকে আগলে রাখে।
সেকেন্ড ফিল্ড রেজিমেন্টের অফিসে নিজের অবস্থান সংহত করার পর জিয়াউর রহমান সেনানিবাসে অবস্থানরত সকল সিনিয়র অফিসারকে তার কাছে হাজির করার আদেশ দেন। সৈনিকরা নিজ উদ্যোগে সেনানিবাসের সব অফিসারকে খুঁজে জিয়ার সামনে হাজির করে। এসব অফিসার এবং অনুগত সৈনিকরা জিয়ার চারদিকে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে এবং তাকে সুরক্ষিত রাখে।
কর্নেল তাহের ৭ নভেম্বর ভোর রাতে সেনানিবাসে এসে জিয়াউর রহমানকে রেডিও স্টেশনে উপস্থিত হয়ে ভাষণ দেয়ার আহ্বান জানান। জিয়াউর রহমানের প্রাণহানির আশঙ্কায় উপস্থিত সেনা কর্মকর্তারা তাকে সেনানিবাসের বাইরে যেতে বাধা দেন এবং রেকর্ডকৃত ভাষণ প্রচারের সিদ্ধান্ত নেন। তাহের বিফল হয়ে ফেরত যান। সে দিন তাহেরের সাথে সেনানিবাস থেকে বের না হওয়া ছিল জিয়াউর রহমানের সঠিক সিদ্ধান্ত। এর ফলে দেশ গৃহযুদ্ধ থেকে বেঁচে যায়।
১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় জনতা যেমন সম্বিত ফিরে পেয়েছিল তেমনি ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে জিয়ার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার ভাষণ শুনে জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, চলমান অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পায়। সাধারণ সিপাহিরা ট্রাক নিয়ে, ট্যাংক নিয়ে জনতার সাথে আনন্দ মিছিলে যোগ দিতে ৭ নভেম্বর সকালেই সেনানিবাস থেকে বের হয়ে আসে। এরপর জনতা সামরিক ট্রাক এবং ট্যাংকের ওপর উঠে আনন্দ করতে থাকে। এই আনন্দ স্বাধীনতা রক্ষার আনন্দ, অপশক্তি প্রতিরোধের আনন্দ। এই সফল বিপ্লব সিপাহি-জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অর্জিত হয়েছিল যার ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।
৭ নভেম্বর না হলে বাংলাদেশ উদার গণতন্ত্র এবং সুশাসনের ধারায় ফিরত না। দারিদ্র্য, দুর্নীতি এবং নৈরাজ্যে জর্জরিত এক ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতো।
সিপাহি-জনতার বিপ্লবের সেই আদর্শ ধারণ করে আমাদের তরুণদের ৫ আগস্ট ’২৪ বিপ্লবের ফসল ঘরে তুলতে হবে। হাজার শহীদের রক্ত বৃথা যাবে যদি আমরা সফল হতে না পারি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা