২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আইনের শাসন দরকার

- প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ভূমিকা বরাবরই আলোচিত হয়ে আসছে। এর মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না সাম্প্রতিক সময়ে নজর কেড়েছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে কিছুটা উত্তেজনা দেখা গেছে।

পান্নার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ আনা হয় ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় একজনকে হত্যা চেষ্টার জন্য। কিন্তু মামলার বাদি মো: বাকের, যিনি বনশ্রী এলাকায় সবজি বিক্রি করেন, প্রকাশ্যে স্বীকার করেন যে- তিনি আসামিকে চেনেন না এবং কতিপয় আইনজীবীদের পরামর্শে তিনি মামলাটি করেছেন। এই আইনজীবীর আগাম জামিন মঞ্জুর হয়েছে।

আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি করা দরকার। বিগত সরকারের সময় ভুতুড়ে ও গায়েবি মামলা দেখা গেছে। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক বিরোধীদের হয়রানি করা হয়েছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে আজগুবি সব মামলা দেয়া হয়েছিল। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিরোধীদলীয় নেতাদের নামে শাহবাগে সিটি করপোরেশনের গাড়ি পোড়ানোর মামলা দেয়া হয়।

বিগত সরকারের আমলে দেশে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যাপক দুর্নীতি পরিচালিত হয়েছে। বিশেষ করে বড় বড় মেগা প্রকল্পে বিপুল দুর্নীতি ও অপচয়ের চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও জনগণের আস্থা তাতে হারিয়ে যাচ্ছে, কারণ ব্যাপক অর্থপাচার ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে জনগণ ক্ষুব্ধ।

১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর বাস্তবতা এবং প্রকৃত সুফল কতটুকু তার নির্ণয় করা না গেলেও দুর্নীতি অর্থলোপাট হয়েছে ব্যাপক। সরকারবিরোধী ও সমালোচকদের মতে, এই প্রকল্পগুলোতে ‘মেগা দুর্নীতি’ হয়েছে। এই প্রকল্পের বাস্তবতা এবং এই প্রকল্পকে ঘিরে যাবতীয় দুর্নীতির শ্বেতপত্র জনসম্মুখে প্রকাশ করা দরকার বলে জনগণ মনে করে। জনগণ চায় প্রকৃত দুর্নীতিমুক্ত, গণতান্ত্রিক রাজনীতি যেখানে তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে, একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থায় সবার শিক্ষা-স্বাস্থ্য-চিকিৎসাসহ মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দীর্ঘস্থায়ী নয় এবং তাদের উদ্দেশ্য হলো একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন। পান্নার বিরুদ্ধে করা মামলার মতো ঘটনা, রাজনৈতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করছে এবং মানুষের মনে একটি অস্থিতিশীলতার জন্ম দিচ্ছে। এ জাতীয় কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে জটিল করতে পারে।

জেড আই খান পান্না ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করে এসেছেন। তিনি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলায় সরকারের সাথে তার বিরোধ শুরু হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, দেশের জনগণ তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে, তবে তাতে সরকারবিরোধী মতামত প্রকাশ করলেই নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

এ ধরনের মামলা ও হয়রানির মাধ্যমে সরকারের মূল সংস্কারের কাজ ব্যাহত হবে। গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য জনগণের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল