২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অন্যায়ের ঋণ ও ন্যায়ের দায়

- প্রতীকী ছবি

অতীতে শত অন্যায় প্রতিবাদবিহীন সয়ে গেছেন। আবার কখনো কখনো অন্যায় কাজ ও সিদ্ধান্তে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। কারণ সে সবের অনেকগুলো আপনাকে সরাসরি সুবিধা দিয়েছে। আর বাকিগুলোর ব্যাপারে প্রতিবাদ করেননি, কারণ কিছু বললে যদি প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা হারান! মনে করে দেখুন, সেসব অন্যায় নতুন মোড়কে যখন ফিরে এসেছে তখন তীব্র প্রতিবাদ করছেন কিংবা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। কেননা, এবার এর সুফলভোগী অন্যরা। আপনি নিজেকে বঞ্চিত ভাবতে শুরু করেছেন। একই অন্যায় অথচ আপনার স্বার্থ এবং ক্ষতি বিবেচনায় এবার ভিন্নভাবে দেখছেন। আলাদা আলাদা করে ব্যাখ্যা করছেন। তখন ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এখন অপব্যবহারের বলি হচ্ছেন। মুক্তি কি মিলেছে? বরং চুপ থাকাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ সময় অন্যায় মেনে নিয়ে চুপ থেকে এবার যদি মুখ খোলেন তবে সেটিও আপনার জন্য কাল হবে। কী বিপদ! তাই না?

নিরপেক্ষভাবে যদি অন্যায়কে অন্যায় হিসেবে ঠাহর করতেন তাহলে অনুক‚ল সময়ে আপনি গা ভাসিয়ে দিতেন না এবং প্রতিক‚ল সময়েও ভেসে যেতেন না। ন্যায় সর্বদাই টিকে থাকে। সে স্রোতের বিপরীতে সাঁতরানোর সাহস রাখে। আপনার যা লাভ এবং যা ক্ষতি সে সবের দায়ভার আপনার। তখন চুপ থাকা এবং এখন প্রতিবাদ করা- এই দ্বিচারিতা আপনার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। তখন অন্যায়ের প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ না করার কারণে এখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েও দালাল হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন। আলোকে ভালো বলা এবং কালোকে অন্ধকার হিসেবে ঠাহর করলে আজ এই দুর্দিন দেখতে হতো না। আপনার সুদিনে অন্যায় কবুল করে নিয়েছিলেন বলে আজকের দুর্দিন ঘন মেঘ হয়ে ধেয়ে আসছে। গোটা জীবন বিপন্নতায় ডুবেছে। এই জীবন নিয়ে এখন আফসোস হচ্ছে।

সত্যকে বরণ করার জন্য যদি কিছু ত্যাগ করতেন, প্রত্যেক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাধ্যমতো প্রতিবাদ করতেন তবে আজ পালিয়ে বেড়াতে হতো না। চেয়ার চলে যেত না। আজ যারা অন্যায় করছে এটি কি কেবল অতীতের খেসারত হিসেবে বৈধতা পাবে? মোটেও না। প্রত্যেক অন্যায়ের দায় ভবিষ্যতে চুকাতে হবে। যা কিছু ভালো তা আবর্তিত হয়েই ভালো আলোর ফোয়ারা ছোটায়। যা কিছু খারাপ তা চক্রাকারে মন্দের প্রত্যেক অংশীদারকে তার হিস্যা বেশ ভালোভাবেই বোঝায়। জবাবদিহিবিহীন কোনো অপরাধ থেকে মুক্তি মিলবে না। এপারে কিংবা ওপারে- কৈফিয়ত দিতেই হবে। মানুষের আদালতে পক্ষপাত থাকতে পারে কিন্তু প্রভুর বিচারালয় সত্যের মানদণ্ডে প্রতিষ্ঠিত।

অন্যায়ের প্রতিবাদের মাত্রার ওপর ঈমান নির্ভরশীল। যদি স্বার্থের অনুকূল পরিস্থিতির জন্য অন্যায়কে কেউ চাদর হিসেবে বরণ করে তবে তার ক্ষমতার দাপট চিরদিন থাকবে না। কারো অধিকার হরণ করার, কাউকে অসম্মান করার এবং কারো সম্পদ লুটে নেয়ার দায় তাকে জীবদ্দশাতেই পূরণ করতে হবে। তখন সম্পদের ক্ষতিপূরণ শাস্তিতে বদলে যেতে পারে। বিবেক থাকার পরও জেনেশুনে যারা অন্যায় করে এবং অন্যায় মেনে নেয় তাদেরকে প্রভুও ক্ষমা করেন না।

আমরা দুনিয়াতে যা ভোগ করছি তা আমাদের কর্মের ফল। উত্তরাধিকারের অঙ্কে পূর্বসূরিদের সম্পদে মালিকানা স্থাপিত হলে তাদের কর্মের ফলও ভোগ করতে হবে। অন্যায়- তা যে স্তররেই হোক, প্রায়শ্চিত্ত ছাড়া মুক্তি মিলবে না। প্রজন্মের পর প্রজন্মের রক্ত এই অপরাধবোধ এবং অপরাধের শোধ বয়ে বেড়াতে হয়। কাজেই যদি ভেবে থাকেন, ‘যে দুনিয়ায় আপনি নাই সে দুনিয়ার আর কোনো মূল্য আপনার কাছে আছে?’-তবে ভুল করছেন। দুনিয়াতে প্রাণাধিক প্রিয় যে সন্তান এবং তার পরবর্তী বংশধর তাদের মধ্যেই আপনার অন্যায়ের রেশ প্রবাহিত হবে এবং ক্ষতিপূরণ তাদেরই চুকাতে হবে। আজ সজ্ঞানে যে অন্যায় করে যাচ্ছেন সেই অন্যায় প্রতিশোধবিহীন যাবে না। তবে ক্ষতিপূরণ দিতে সর্বাধিক যৌক্তিক ব্যক্তি হিসেবে যার অন্যায় তাকেই প্রস্তুত থাকতে হবে।

অসম্মানের চেয়ে বড় কোনো দণ্ড নাই- যদি কারো মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ থাকে। সামান্য লোভে, ক্ষমতার দম্ভে অন্যায়ের সাথে দোস্তি করা ঠিক নয়। যারা একবার অসততায় মিশে যায় তাদের জীবনের বিরুদ্ধে সততা শত্রæতা শুরু করে। স্বার্থের দ্বন্দ্বে অন্যায়ের সাথে সন্ধি করলে সে মানুষের সম্পদ বাড়তে পারে কিন্তু সম্মান বাড়ে না। মানুষ তাকে সাময়িক সময়ের জন্য ভয় করতে পারে কিন্তু অন্তর থেকে শ্রদ্ধা আসে না বরং ঘৃণা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বর্ষণ হতে থাকে। যাকে একবার অন্যায় তার আয়ত্তে পেয়েছে তাকে ধ্বংস না করে ছাড়েনি।
সাময়িক সুবিধার জন্য অন্যায়ের সাথে আপস করলে, কারো বিরুদ্ধে জুলুম করলে কিংবা কাউকে আঘাত করলে দীর্ঘসময়ের জন্য সেই পাপ/অপরাধের শাস্তি হিসেবে সব কিছু হারাতে হয়। এসবের নজির নির্দিষ্ট সময়ের অন্তর অন্তর সমাজ ও জাতির সামনে হাজির হয়েছে। এখনো হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। তার পরেও আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি না। সাবধান হওয়ার প্রয়োজন বোধ করি না। সময়ের স্রোত অপরাধীকে ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না। সব কিছুর নির্ভুল হিসাব রাখার জন্য একজন আছেন।

raju69alive@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement