২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা ও পরিণতি

- প্রতীকী ছবি

ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কায় অস্থির করে দিয়েছে। যদি বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তাহলে এটি বন্ধ করার জন্য কেউ জীবিত থাকবে কি? পয়লা অক্টোবর ইরানের পক্ষ থেকে ইসরাইলে মিসাইল বর্ষণের আগেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। ২৫ আগস্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমালোচনা করে সতর্ক করেছিলেন, আমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরাইল লেবাননে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর ওপর হামলা চালায় এবং পয়লা অক্টোবর ইরান ইসরাইলে ২০০ মিসাইল ছোড়ে। ইরান ইসরাইলে হামলার সেই যুক্তিই দেয়, যা ইসরাইল গাজায় বোমাবর্ষণের পর দিয়েছিল। ইসরাইল গাজা ও লেবাননে যখনই হামলা করেছে, বলেছে- আমরা তো আত্মরক্ষার জন্য এ সব করেছি। ইরানও ইসরাইলে মিসাইল হামলা করে বলেছে, আমরা আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে নিজেদের রক্ষার জন্য ইসরাইলে হামলা করেছি।

বিশ্বের মানচিত্রের ওপর দৃষ্টি বুলালে আপনি শুধু ফিলিস্তিন, লেবানন ও সিরিয়া নয়; বরং ইউক্রেনেও যুদ্ধের শিখা দেখতে পাবেন। ইউক্রেনে রাশিয়া ও আমেরিকার যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। পক্ষান্তরে ফিলিস্তিন, লেবানন ও সিরিয়ায় ইসরাইলের মোকাবেলা হচ্ছে ইরানের সাথে। ইসরাইলের পেছনে আমেরিকা ও ন্যাটো দাঁড়িয়ে আছে। পক্ষান্তরে ইরানের পেছনে রাশিয়া ও চীনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ইউক্রেন থেকে নিয়ে ফিলিস্তিন ও লেবানন পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ করা জাতিসঙ্ঘের দায়িত্ব। কিন্তু জাতিসঙ্ঘ বর্তমান সময়ের এক মহা তামাশার পাত্রে পরিণত হয়েছে। বিগত সাত দশক ধরে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ ফিলিস্তিন ও কাশ্মির বিবাদ নিয়ে একের পর এক প্রস্তাব মঞ্জুর করেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা কোনো প্রস্তাবই বাস্তবায়ন করাতে পারেনি। জাতিসঙ্ঘ ইসরাইলকে গাজায় ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এরপর ইসরাইল লেবানন ও সিরিয়াতেও হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে ইরান ইসরাইলে হামলা করে বসে। যদি এ যুদ্ধে আমেরিকা ও অপর পশ্চিমা দেশগুলো ইসরাইলের সাহায্যের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাহলে ইরানের সহায়তায় রাশিয়া ও চীনকে কে বাধা দেবে? যদি একের পর এক রণাঙ্গনের পথ খুলে যায়, তাহলে পাকিস্তানের জন্য পরিস্থিতি বেশ কঠিন হয়ে যাবে। পাকিস্তান একদিকে ইরানের প্রতিবেশী। অন্যদিকে চীনেরও ঘনিষ্ঠ। আবার আইএমএফের কাছ থেকে সাহায্যের জন্য পাকিস্তানকে আমেরিকার কাছে ধরনা দিতে হয়। পাকিস্তানের জনগণের বেশির ভাগই ইসরাইল ও ইরানের বর্তমান উত্তেজনাময় অবস্থায় ইরানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। পাকিস্তান চরম জ্বালানি সঙ্কটের সম্মুখীন। পাকিস্তান সরকার ইরান থেকে সস্তা মূল্যে গ্যাস ক্রয় করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমেরিকার চাপের কারণে পাকিস্তান এ গ্যাস ক্রয় করছে না। যদি অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তান তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে ইরানের ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে তাকে আমেরিকার অসন্তোষের মুখে পড়তে হবে। আমেরিকা সরাসরি হয়তো অসন্তোষ প্রকাশ করবে না, তবে এ কাজের জন্য সে ভারতকে ব্যবহার করতে পারে। ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন স্বার্থের নয়া ঠিকাদার। ভারতকে ব্যবহার করতে গিয়ে আমেরিকাকে তার মাশুল দিতে হতে পারে। কেননা, দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের সাথে ভারতের টানাপড়েন সম্পর্ক চলছে। তরতাজা উদাহরণ বাংলাদেশ। সেখানকার রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে ভারতবিরোধী বিদ্বেষ এখন বেশ চাঙ্গা। ভারত বাংলাদেশে সে ভুলটাই করেছে, যা পাকিস্তান আফগানিস্তানে করেছে। আজ ভারত বাংলাদেশে সেই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে, আফগানিস্তানে পাকিস্তান যার মুখোমুখি হয়েছে। অবশ্য পাকিস্তানের জন্য আফগানিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা বেশি কঠিন নয়। ইরান ও আফগানিস্তানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করা পাকিস্তানের জন্য অপরিহার্য। আর হাজার হাজার মাইল দূরে বসে মধ্যপ্রাচ্যে হস্তক্ষেপ করা থেকে আমেরিকার বিরত থাকা উচিত। আমেরিকার মনে রাখতে হবে, ইসরাইলকে অযৌক্তিক সহায়তা তার জন্য মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে অনেক বেশি জটিলতা সৃষ্টি করবে। যদি আমেরিকা ইসরাইলের পাশে দাঁড়িয়ে ইরানের ওপর পাল্টা আক্রমণ করে, তাহলে তার তাৎক্ষণিক ফলাফল আমেরিকা ও পশ্চিমাবিরোধী বিদ্বেষ নতুন স্রোতের আকারে প্রকাশ পাবে। পাকিস্তান থেকে নিয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত এবং জর্দান থেকে মিসর পর্যন্ত মুসলিম দেশগুলোর সরকার ইরানকে সহায়তা করতে বাধ্য হয়ে যাবে। যদি আমেরিকা ইরানকে সহায়তাকারীদের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার জন্য জাতিসঙ্ঘকে ব্যবহার করে, তাহলে এ যুদ্ধে জাতিসঙ্ঘ ধ্বংস হয়ে যাবে। মুসলিম দেশগুলোতে জাতিসঙ্ঘ এবং ওআইসির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্ব শেষ হয়ে গেছে। ইসরাইল ১৯৮০ সাল থেকে জেরুসালেমকে তাদের রাজধানী ঘোষণা দিয়ে আসছে, যা জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাবাবলির পরিপন্থী কাজ। আন্তর্জাতিক আদালত জর্দান নদীর পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুসালেমের ইহুদি বসতিগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী জেরুসালেম (আলকুদস) ফিলিস্তিনের অংশ ছিল, কিন্তু ইসরাইল ১৯৬৭ সালে সেটি অবৈধভাবে দখল করে নেয়। এরপর জাতিসঙ্ঘ জেরুসালেমকে একটি আন্তর্জাতিক শহর অভিহিত করে এটিকে জাতিসঙ্ঘের দায়িত্বাধীন ঘোষণা করে। তারপরও শহরটিতে ইসরাইলের দখল অব্যাহত থাকে। ইসরাইলের বর্তমান সরকারের মন্ত্রী বেনগাভির মসজিদে আকসাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে ইহুদি উপাসনালয় বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বহু ইহুদি তার এ বক্তব্যের নিন্দা করেছেন। তবে জাতিসঙ্ঘ ইসরাইলের বর্তমান বর্র্ণবাদী সরকারের কাছ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসের দখল ফিরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই জাতিসঙ্ঘকে ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যবহার করা হলে জাতিসঙ্ঘ সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে পড়বে। জাতিসঙ্ঘ অকার্যকার হওয়ার পর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা কে রোধ করবে?

ইরানের পক্ষ থেকে ইসরাইলে মিসাইল হামলার পর আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোকে ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে ধরে নেবেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আপনার মাথার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এ যুদ্ধ একবার শুরু হলে এতটাই পারমাণবিক বোমা হামলা চলবে যে, মানুষ তো দূরের কথা, কোনো পাখিও অবশিষ্ট থাকবে না।

পাকিস্তানের জাতীয় পত্রিকা দৈনিক জং ৩ অক্টোবর, ২০২৪ হতে উর্দু থেকে ভাষান্তর ইমতিয়াজ বিন মাহতাব
ahmadimtiajdr@gmail.com
লেখক : পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement
মিরপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ : শিশুসহ দগ্ধ ৭ সাবেক প্রধান বিচারপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ সুপ্রিমকোর্টের বিচারকাজ বন্ধ ফিরছেন শান্ত, অপেক্ষা বাড়ছে মুশফিকের জন্য পিক‌নিকের বা‌সে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু : পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাসহ বরখাস্ত ৭ কুয়াশায় ঢাকা কুড়িগ্রাম, তাপমাত্রা ১৫.৬ ডিগ্রি ‘স্বৈরাচার ও ফ্যাসীবাদমুক্ত দেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ রাশিয়ায় শিক্ষার্থীদের ‘নির্মমভাবে’ গ্রেফতারের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিবাদ সাবেক প্রধান বিচারপতি রুহুল আমিন আর নেই তাজরীন ট্র্যাজেডির এক যুগ : পুনর্বাসনের দাবি আহতদের সিইসিসহ নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনারদের শপথ আজ জর্ডানে ইসরাইলি দূতাবাসের কাছে গুলি, বন্দুকধারী নিহত

সকল