দোদুল্যমান বুদ্ধিজীবী সমাচার
- খন্দকার হাসনাত করিম
- ২০ অক্টোবর ২০২৪, ২০:২৭
সৎ ও সত্যভাষী বুদ্ধিজীবীরা কষ্ট-নির্যাতন-অনটন-নির্বাসন হাসিমুখে সয়ে যান। কিন্তু অন্যায় ও অত্যাচারী শাসকের হুকুম তামিল করার কথা ভাবতেও পারেন না। দুই দু’টি মহাযুদ্ধে ইউরোপ-আমেরিকার লেখক, কবি-শিল্পীরা স্বাধীনতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সততায় ঝাণ্ডা তুলে ধরেছেন। হেমিংওয়ে মার্কিনি একচেটিয়া পুঁজিবাদের আলখেল্লা ছিঁড়ে ফেলতে গিয়ে জগতকে দেখিয়ে দেন স্বাধীনতার সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক সততার প্রশ্নটিও নিবিড়ভাবে জড়িত। হেমিংওয়ে তার প্রথম উপন্যাস ‘Torrents of Spring’-এ লেখকের প্রতিবাদ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দ্রোহের আগুন জ্বালান। তার লেখায় সাধারণ জীবন এবং উন্নত জীবনবোধের (Simple Living, High Thinking) প্রতি আদর্শিক অনুরাগ ফুটে ওঠে। কপটতা, মানসিক দাসত্ব, মিথ্যা এবং ভণ্ডামির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল হেমিংওয়ের লেখনী। ধনতন্ত্রের বাংকারে বসেও ডি. এইচ লরেন্স রুশ বিপ্লব ও সমাজতন্ত্রকে আলিঙ্গন করেন। কারণ তিনি জানতেন ভণ্ডদের গণতন্ত্রের চেয়ে সমাজতন্ত্র সমাজের জঞ্জাল ও শোষণকে তাড়াতে বেশি ভূমিকা রাখবে।
স্বৈরাচারের নিবর্তনে আত্মসমর্পণ করেননি জাঁ পল সার্ত্রে। স্বৈরাচারের বিরোধিতায় এবং সাম্যের প্রতি ভালোবাসায় অমরত্ব লাভ করেছেন রুশ কবি মায়াকোভস্কি। ম্যাক্সিম গোর্কি সমকালকে নিয়ে গেছেন মহাকালের অসীম বিস্তারে। সাম্য ও মানবতার জয়গান গেয়ে গেছেন বার্টোলড ব্রেখট। চিন্তার স্বাধীনতা ও সত্যের পূজারি ব্রেখট জগতের জন্য রেখে গেছেন বুদ্ধিবৃত্তির অপরিশোধযোগ্য মহাঋণ। হিটলারের নৃশংস স্বৈরাচার ও নিপীড়নের শিকার ব্রেখট নির্বাসনে বসেও মানবতা ও সাম্যের ঝাণ্ডা তুলে ধরেছেন। অনাহার-অপুষ্টিতে শীর্ণ হয়ে বাংলা সাহিত্যের এক মহাপুরুষ কবি ফররুখ আহমেদ তিলে তিলে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন, কিন্তু বিবেক ও ব্যক্তিত্বকে জলাঞ্জলি দেননি। স্বৈরশাসনের অকহতব্য নির্যাতন সয়েছেন আহমেদ ছফা। কিন্তু বিবেক বিসর্জনও দেননি, বন্ধকও দেননি কখনো। একজন সৎ ও বিবেকবান বুদ্ধিজীবী কখনো তার পক্ষের যুক্তি মাত্রাতিরিক্তভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাকুল হন না। তিনি তার যুক্তি অনুধাবন বা মূল্যায়নের জন্য অন্যদের বিবেক ও বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের সুযোগ দেন, যেন তারা তাদের যুক্তি কাজে লাগানের অবকাশ পান এবং তার বক্তব্যের তীব্রতার কারণে পুরোপুরি খণ্ডন করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। বুদ্ধিবৃত্তিক সততা হলো যুক্তি দিয়ে যুক্তি খণ্ডন করা, ক্রুদ্ধ হয়ে যাওয়া বা অন্যকে অপমান করা নয়।
সৎ বুদ্ধিজীবীরা আবেগ বা মতবাদগত পক্ষপাতিত্ব না করে তথ্য ও সংখ্যার ওপর নির্ভর করে থাকেন। চিলে কান নিয়ে গেল ধ্বনি তুলে চিলের পেছনে না দৌড়িয়ে তারা আগে কানে হাত দিয়ে দেখে নেন কানটি তার জায়গায় যেমন ছিল তেমনটিই রয়েছে কি না? একজনের ধারণ করা বক্তব্যের মূল যুক্তি বা যুক্তিগুলোর বিকল্প থাকতেই পারে। তখন তিনি সেই বিকল্পগুলো তালাশ করতে থাকেন। পৃথিবীতে কোনোটিই চ‚ড়ান্ত বা ধ্রæব সত্য বলে জ্ঞান করা একজন সৎ বুদ্ধিজীবীর পরিচয় দেয় না। হ্যাঁ, বিকল্প যুক্তিগুলো হয়তো মূল ধারণার মতো অতটা শক্তিশালী বা জোরালো নাও হতে পারে। তবে বিকল্প যুক্তিগুলো খোঁজ করার মধ্যে কোনো দুর্বলতা বা আপসমুখিতার লক্ষণ থাকতে পারে এমন মনে করার কারণ নেই। ফ্রান্সের স্কুল পাঠ্যবইতে ফরাসি বিপ্লবের ব্যাখ্যার ২৭টি সংস্করণ বের হয়েছে। সংস্করণের পর সংস্করণে ফরাসি বিপ্লবের গুরুত্ব বা ঐতিহাসিক তাৎপর্য ব্যাখ্যায় কোনো ঘাটতি হয়নি; বরং সে দেশের ইতিহাসচর্চা বা মননজগতের নিপুণতা এবং নির্ভুলতার প্রতি ফরাসিদের উৎকণ্ঠাই প্রকাশ পেয়েছে। কোনো সবল দিককে অতি প্রাধান্য দেয়া বা কোনো দুর্বল দিককে এড়িয়ে চলা কিংবা লঘুভাবে নেয়া (Overplay or Downplay) বুদ্ধিবৃত্তিক সততার কথা বলে না।
একজন সৎ বুদ্ধিজীবীর ব্যাখ্যা বা ধারণা-বিস্তারের মূল লক্ষ্য হলো সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা এবং মিথ্যাকে বাতিল করা। এইপর্যায়ে কোনো ধরনের দ্বিচারণ বা দ্বৈত ভূমিকা (Double Standard) বুদ্ধিবৃত্তিক অসাধুতারই পরিচয় দেয়। কেউ যখন কোনো ভুলকে সঠিক বলে প্রতিষ্ঠা করতে ব্যাকুল হয়ে পড়ে তখন তার উচিত হবে তার দেয়া ব্যাখ্যার ঐতিহাসিক পরম্পরা বা প্রাসঙ্গিকতার দিকে দৃষ্টি দেয়া। মতবাদের প্রতি আসক্তি ইতিহাসের অনেক সত্যকে মিথ্যা দ্বারা এবং অনেক মিথ্যাকে আপ্তবাক্য (Rhetorics) কিংবা স্লোগানধর্মী আবেগ দ্বারা স্থলাভিষিক্ত করার প্রবণতা দেখা গেছে। ইংল্যান্ডে রবার্ট ক্লাইভের প্রস্তর মূর্তি বসানো নিয়ে এক সময় এ ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সঙ্ঘাত দেখা দিয়েছিল। কিছু ব্রিটিশ বিবেকবান মানুষ ক্লাইভের প্রস্তর স্মৃতিস্তম্ভের প্রাসঙ্গিকতা এবং ন্যায়বোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। যেমন- বর্তমান সময়ের কিছু ইউরোপীয় বুদ্ধিজীবী আমেরিকার ইরাক আগ্রাসনের ন্যায্যতা ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তারা আন্তর্জাতিক আদালতে পুতিনের বিচার করার আগে বুশ বা ব্লেয়ারকে বিচারের আওতায় আনার কথাও বলছেন। প্রেসিডেন্ট বুশ বা প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার যে নিতান্তই একটি মিথ্যা অজুহাতে ইরাক ধ্বংসের নির্দেশ দেন, সেই অপরাধবোধে জর্জরিত বলেই এটি করছেন ওই বুদ্ধিজীবীরা। যেমনটি আজ করছে ইসরাইলি আগ্রাসী জায়নবাদবিরোধী বুদ্ধিজীবীরাও। তারা নতুন নাগরিকত্ব আইন করার আগে রক্ষণশীল লিকুদ কোয়ালিশনের পতন চাচ্ছেন এবং অসহায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইহুদিবাদী নৃশংসতার প্রতিবাদে আজ পথে নেমেছেন স্রেফ ন্যায়বোধের তাড়না এবং বিবেকের দংশন থেকেই।
গবেষক জামিলা ওসমান তার বিখ্যাত ‘What is Colonialism’ গ্রন্থে ‘God, Gold and Glory’ অধ্যায়ে ক্রিস্টোফার কলম্বাসকে ঔপনিবেশিক দখলদারি এবং শোষণ নীপিড়নের শিখণ্ডী তুলনা করেছেন। এরও আগে সুইডিশ গবেষক গুনার মিরডাল তার বিখ্যাত ‘Asian Drama’ গ্রন্থে ঔপনিবেশবাদ প্রতিষ্ঠার প্রথম কারিগরদেকে ‘মানবতার শত্রু’ বলে লাঞ্ছিত করেছেন। সেই নৃশংস ঔপনিবেশিকতাবাদের হয়তো আজ যুগাবসান ঘটেছে, কিন্তু এখনো যখন শুনি ‘Black Lives Matter’ কিংবা ‘Palestinian Lives Matter’ তখন জামিলা ওসমান, গুনার মিরডাল, নোয়াম চমস্কি, মিশেল ইগানতিফ, আমর খালিদ, অরুন্ধতী রায়, মিসরের ইউসুফ আল কারজাভী, তুরস্কের ওরহান পামুক, পাকিস্তানের মিরগুল বা আইজাস আহসান, ইরানের আবদাল করিম সারুশ, সুইজারল্যান্ডের তারিক রামাদান, উগান্ডার মোহাম্মদ হামদানি, যুক্তরাষ্ট্রের বার্নার্ড লুই, ইতালির উমবার্তো ইকো, ভারতের অমর্ত্য সেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফরিদ জাকারিয়া (আলজাজিরা), রাশিয়ার গ্যারি কাসপারভ, যুক্তরাজ্যের রিচার্ড ডকিনস, পেরুর থারিও ভার্গাসলোফা, স্যালি হাসলাঙ্গার, হার্ভার্ডের ক্যানিয়াল ডেনেট, জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির লিন্ডা অ্যালফক, শিকাগো ইউনিভার্সিটির মার্থান্যাসবস, অস্ট্র্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডেভিড শালমার্স, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলুর অধ্যাপক জেনিফার সওল, জার্মানির অধ্যাপক জুরগন হ্যাবারম্যাস, পেনসিলভিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রবার্ট বারনোস্কোনি, ইয়ালের অধ্যাপক জর্জ ইয়ানালি, কলাম্বিয়া ল’ স্কুলের অধ্যাপক জোসেফ রাজ, ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির চার্লস টেইলর, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ব্রায়ান লিটার, সাসেক্স ইউনিভার্সিটি ইইকের অধ্যাপক গ্রেইলিং, টোরান্টো ইউনিভার্সিটি, কানাডার অধ্যাপক চার্লস মিলস, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার (কানাডা) অধ্যাপক প্যাট্রিসিয়া চার্চল্যান্ড কিংবা বাংলাদেশের বিশ্বনন্দিত অধ্যাপক আলী রিয়াজ বা অধ্যাপক মামুনের কথা স্মরণ করব, যারা ঔপনিবেশিকতাবাদের কাছে ভূলুণ্ঠিত মানবতা এবং প্রাচ্যবাসীর স্বাধীনতা ও ইজ্জতের পুনরুদ্ধারে আজ তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক গরিমাকে উৎসর্গ করেছেন। আজ ৯৫ বছর বয়সেও গুরু অধ্যাপক ও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর নোয়াম চমস্কি জেহাদ চালিয়ে যাচ্ছেন মানবতার বিরুদ্ধে তথাকথিত পশ্চিমা ভণ্ড আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে, যারা তথাকথিত ‘সভ্যতার সঙ্ঘাত’-এর (Clash of Civilization) ধুয়া তুলে কার্যত ক্রুসেড যুদ্ধ নতুন করে বাধাতে চায়। একালের মুক্ত চিন্তার বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক প্লামেনাজ (Plamenatz) কঠিন ভাষায় ম্যাকিয়াভেলির দু’মুখো রাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করেছেন। তার মতে, আমরা যাকে মধ্যযুগ (Medieval) বলি, তা অন্তত রেনেসাঁ জামানার (Renaissance) চেয়ে শ্রেয় ছিল।
বর্তমান সময়ের উদীয়মান ফরাসি বুদ্ধিজীবী লোই নেভোঁ (Loic Nevouet) যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন, পশ্চিমা বিশ্ব এখন চীনের ব্যাপারে যে অবস্থান নিয়েছে তা নিতান্তই Double Standard. কারণ, এতকাল ‘কমিউনিজমের’ দোষ দেয়া হতো; এখন তো চীন মুক্তবাজার অর্থনীতি। সব জাতি উন্নতি করছে। চীনারা উন্নতি করছে বেশি। তারা এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। এতে তাদের দোষ কোথায়? পশ্চিমাদের কাছে মানুষ পেছালেও দোষ, এগোলেও দোষ! চীনারা তাদের জনগণের সুবিধা ও কল্যাণে অন্য অনেক তথাকথিত কল্যাণী রাষ্ট্রের চেয়েও অগ্রগামী। এটিই কি তাদের দোষ? এই যে চীনারা এখন রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে মধ্যস্থতা করছে, এতে বিশ্বশান্তির পথই সুগম হচ্ছে। এটিও কি তাদের দোষ? চীন রাশিয়া ইরান বা উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সমঝোতা করছে, এটিও তাদের দোষ? চীন, ভিয়েতনাম, লাওস, বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশের রফতানি কর নজিরবিহীন মাত্রায় মওকুফ করে তাদের অর্থনীতিকে ‘স্পেস’ (Space) দিচ্ছে, এটিও তাদের দোষ? চীনারা Road & Belt উদ্যোগের মাধ্যমে উন্নয়নে বহুজাতিক সহযোগিতার নতুন নতুন মডেল দাঁড় করিয়েছে, এটিও তাদের দোষ? বেশির ভাগ পশ্চিমী বুদ্ধিজীবী ইউক্রেনের কোনো দোষই দেখছে না। ইউক্রেন কি ৪০ দশকের হাঙ্গেরি বা পোল্যান্ড? ইউক্রেন যে ‘ন্যাটোর’ হয়ে লড়ছে, এই সত্যটি কি পশ্চিমা গণমাধ্যম এবং বুদ্ধিজীবীদের কর্ণকুহরে ঢুকছে না?
তথাকথিত ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’ তথা পুঁজিবাদের পক্ষের বুদ্ধিজীবীদের চোখের সামনে পুঁজি বা ধনতন্ত্রের ইমারত যে ধসে পড়ছে! এখন তারা চুপটি মেরে আছেন কেন? কই, ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও তো ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা লোকসানে, অকার্যকারিতায় বা অনাস্থার কারণে ভেঙে পড়েনি! বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সুদি ব্যাংকগুলোকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংক বিশ্বের সেরা এক হাজার ব্যাংকের কাতারে ঠাঁই পেয়েছে। ২০১২ থেকে এই ব্যাংকটি বিশ্বের ১৭০ বছরের প্রাচীন আর্থিক মূল্যায়নী প্রতিষ্ঠান (পত্রিকা) যুক্তরাজ্যের ‘দ্য ব্যাংকার’-এর বিবেচনায় বিশ্বের সেরা হাজার ব্যাংকের অন্যতম হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। সম্প্রতি তাদের World Ranking আরো ৩৪ ধাপ ওপরে উঠে এসেছে। এটি বাংলাদেশের গৌরব এবং সুদমুক্ত শরিয়াহপন্থী অর্থ প্রতিষ্ঠানের গর্ব। এটা যুক্তরাজ্যের আরো একটি প্রাচীন অর্থনৈতিক পত্রিকা The Economist বলেছে। কিন্তু বুদ্ধিজীবীরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সত্যটি প্রকাশে বা ইতিবাচক মতামত দিতে কুণ্ঠিত। এটিই হলো বুদ্ধিবৃত্তিক সততার অনুপস্থিতির আরেকটি দৃষ্টান্ত। এসব অসৎ বুদ্ধিজীবীর কি কোনো দিন বোধোদয় হবে?
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা