১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ব্যক্তি ও দলের সংস্কার চাই

-

দেশের প্রশাসন, বিচার, পুলিশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন- কোনো কিছু সুষ্ঠুভাবে চলছে না। তাই দাবি উঠেছে, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার এবং সরকার ইতোমধ্যেই সংস্কারের লক্ষ্যে বিভাগভিত্তিক কমিশন গঠন করেছে। রাজনীতিক দল ও সুশীল সমাজ এবং সরকার সবাই সংস্কারের পক্ষে। প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যক্তি ও দলের সংস্কার ছাড়া রাষ্ট্রের সংস্কার পুরোপুরি সফল হবে কি?

আমাদের ব্যক্তিচরিত্র কদর্যপূর্ণ। মিথ্যা-শঠতা-ধোঁকা-প্রতারণা-হিংসা-বিদ্বেষে আমরা নিমজ্জিত। সমাজে এত দুর্নীতি ও গুম-খুনের অন্যতম কারণ আমাদের চরিত্রহীনতা। চরিত্রের উৎকর্ষতা আসে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ থেকে। মানুষের জন্য যা অকল্যাণকর তা সব ধর্মে নিষিদ্ধ। ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের মধ্যে ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসহীনতার কারণে সহজেই অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। আমরা যদি মানুষের বিশ্বাসের ভিত্তিতে শিশু-কিশোর-যুবক সর্বস্তরের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারতাম তাহলে ব্যক্তিচরিত্রের সংস্কার সহজেই সম্ভব হতো। নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার পাশাপাশি প্রয়োজন অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আইনের চোখে ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-লিঙ্গ-দল সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে সবাই সমান এবং সবার প্রতি ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব।

মানুষ বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে অভ্যস্ত। এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকৃত সত্য খুঁজে বের করা দুরূহ। অনর্গল মিথ্যা ও ভুয়া খবর প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসকেও ছাড়িয়ে গেছে। ইউটিউবে যারা সরব তাদের অনেককে কখনো স্বৈরাচারের দোসর আবার কখনো মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে মনে হয়। বর্ণচোরা, তাদের চেনা দায়, বহুরূপী। যথার্থ দেশপ্রেমিক খুঁজে পাওয়া দায়। এক বিধ্বস্ত দেশ, দেশ গঠনের জন্য আগে প্রয়োজন নিজেদের চরিত্রের পরিশুদ্ধি। তাতে কোনো খবর নেই। দুশ্চরিত্রবানদের দ্বারা ভালো কিছু আশা করা কঠিন।

সব দল চায় নাগরিকের ভোটাধিকার ও দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা যাতে মানুষ অবাধে নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে কি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা আছে? ইউনিয়ন থেকে সর্বস্তরে স্বাধীনভাবে নেতা নির্বাচনের সুযোগ নেই। দলের নিয়মিত কাউন্সিল হয় না। এককথায় জবাব, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা নেই এবং সে সদিচ্ছাও নেই। এত দিন স্বৈরাচারের অনুমতি ছিল না কিন্তু এখন সুযোগ এসেছে মেয়াদোত্তীর্ণ সব পর্যায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি পুনর্গঠনের। রাজনৈতিক দলগুলো আগে চায় জাতীয় নির্বাচন কিন্তু তার আগে অনুকূল পরিবেশে নিজেদের দলীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে আগ্রহী নয়।

রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো- আর যেন নতুন করে কোনো স্বৈরাচারের আবির্ভাব না হয়। সেটি রুখতে হলে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার দরকার। বর্তমান ব্যবস্থায় নির্বাচনে পেশিশক্তি ও অর্থশক্তির বলে বলীয়ান সমাজে যারা গডফাদার হিসেবে পরিচিত তারাই নির্বাচিত হয়ে আসে। গডফাদারের ভয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট পর্যন্ত দিতে পারে না। প্রকৃত রাজনীতিকরা এই ব্যবস্থাপনায় প্রায়ই পিছিয়ে পড়ে এবং ব্যবসায়ী ও অবসরপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজ আমলারা এগিয়ে যায়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করতে চান। জাতীয় সংসদ নির্বাচন আনুপাতিক হারে হলে প্রতিটি দলের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত হয়। এমন হলে পার্লামেন্ট হবে যোগ্যদের মিলনমেলা। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোনো দলের না থাকায় জোট সরকার হবে এবং এমন অবস্থায় সরকারের স্বৈরাচার হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। কোনো একটি দল মোট কাস্টিং ভোটের ১ শতাংশ পেলে জাতীয় সংসদে তাদের আসন হবে তিনটি এবং ০.৩৩ শতাংশ হলে আসন হবে একটি। সংসদে যাদের আসন থাকবে তারাই রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃত হবে।

গণতান্ত্রিক দেশে সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দলও অপরিহার্য এবং সংসদে আসনের ভিত্তিতে সব দলকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সম্মানী দেয়া যায়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছোট দলগুলো সবাই আনুপাতিক নির্বাচন দাবি করবে। স্বৈরাচার ও তার দোসর বাদে আন্দোলনকারী সব দলের সংসদে আসনের ভিত্তিতে প্রতিনিধি নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠিত হতে পারে। আল্লাহ আমাদের দেশকে রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে মুক্ত করে একটি স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ দান করুন।

লেখক : উপাধ্যক্ষ (অব:), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ


আরো সংবাদ



premium cement