১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩০, ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

শিক্ষা সংস্কারের নতুন দিগন্ত

- প্রতীকী ছবি

শিক্ষা যেন কেবল জ্ঞান আহরণের উপায় নয়; বরং তা হয়ে উঠুুক জাতি গঠনের প্রধান ভিত্তি। এই ভিত্তিকে সুসংহত করতে হলে শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের একযুগ আগের শিক্ষাব্যবস্থা মুখস্থবিদ্যা এবং লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে পাস করা জাতি তৈরি করলেও গত আওয়ামী সরকারের ফিনল্যান্ডের ধার করা শিক্ষাব্যবস্থা অভিভাবকদের মধ্যে বিশাল উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করেছিল যা শিক্ষার্থীদের বই থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। এই শিক্ষাপদ্ধতি, সৃজনশীলতা ও সমস্যা সমাধানে জোর দিলেও আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রায়ই কার্যকরী নয়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তবতা, সামাজিক কাঠামো এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের সাথে সঙ্গতি রেখে শিক্ষার নীতি ও কৌশল প্রণয়ন করা আবশ্যক। তারই আলোকে অভিভাবকদের দীর্ঘদিনের দাবি এবং প্রতিবাদের মুখে ২০২৩ সালে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমের আলোচনা-সমালোচনাকে বিবেচনায় ধরে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসে এই কারিকুলামের স্থলে ২০১২ সালের কারিকুলামের ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেয় যা অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক, তবে ২০২৬ সালে নতুন বা পরিমার্জিত কারিকুলাম আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত একরকম চক্রাকারে চলে আসছে পুরোনো ধারা। পাঠ্যক্রমের ভার, মুখস্থবিদ্যার বাড়বাড়ন্ত এবং সৃজনশীল চিন্তার অভাব শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত চাপের মুখে ফেলছে। এই পুরোনো কাঠামো আধুনিক যুগের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না, ফলে শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে অক্ষম হচ্ছে। শিক্ষা কাঠামোতে এক নতুন ধারা প্রয়োজন, যেখানে শিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে সৃজনশীলতা, বিশ্লেষণাত্মক চিন্তা ও বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধান। বর্তমান সময়ে, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধির জন্য পাঠ্যক্রমকে সময়োপযোগী এবং উদ্ভাবনী ধারায় সাজানো উচিত। উদাহরণস্বরূপ- STEM (Science, Technology, Engineering, and Mathematics) শিক্ষা পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের কার্যকর সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে, যা তাদের চিন্তাশক্তি এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়ন করে। শিক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতিও সংস্কারের অন্তর্ভুক্ত। পরীক্ষাগুলোর উপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া হলে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। তাই মূল্যায়নে প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি এবং মৌলিক ধারণার বিশ্লেষণ করা উচিত।

শিক্ষা শুধু পাঠ্যপুস্তকেই সীমাবদ্ধ নয়, এর মধ্যে নিহিত থাকতে হবে মানবিকতা ও নৈতিকতার বীজ। মানবিক মূল্যবোধ এবং নৈতিক শিক্ষার অভাব গত কয়েক বছর যাবত আমাদের সমাজে ভয়াবহ ফল বয়ে আনতে শুরু করেছিল। তাই, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহনশীলতা, সম্মানবোধ ও সামাজিক দায়িত্বশীলতা জাগ্রত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান শিক্ষার উদ্দেশ্য যেন কেবল ভালো ফলাফলের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে; বরং তা জীবনের সর্বস্তরে দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরি করার জন্য গড়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ- বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প ও সেবা-learning কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানবিক দিকের বিকাশ ঘটানো সম্ভব। এ ধরনের কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত সমস্যার মুখোমুখি হয় এবং তাদের সমাধান করতে শিখে, যা তাদের নৈতিক ও সামাজিক চেতনা জাগিয়ে তোলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত, যাতে তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে পারেন। এ ছাড়া, পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সব স্তরে মানবিকতার চর্চা হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক ও নৈতিক ভাবনার বৃদ্ধি ঘটবে। সর্বোপরি, একটি কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে মানবিক ও নৈতিক শিক্ষা অপরিহার্য।

বিশ্ব এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। এই বিপ্লবের মধ্যে, তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রেও একটি বিপরীতমুখী পরিবর্তন নিয়ে আসার সক্ষমতা রাখে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এই তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার একান্ত জরুরি, কারণ এটি শেখার প্রক্রিয়াকে অধিক ফলপ্রসূ এবং আকর্ষণীয় করে তোলে। বিশেষত, প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষায় ডিজিটাল পাঠদান, অনলাইন শিক্ষার সুযোগ এবং ইন্টারেক্টিভ লার্নিং মডেল প্রয়োগ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ- ভার্চুয়াল ক্লাসরুম এবং লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (LMS) ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় ও স্থানে পাঠ গ্রহণ করতে পারবে, যা তাদের শেখার অভিজ্ঞতাকে উন্নত করবে। দূরবর্তী অঞ্চলে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষকদের তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তোলা সময়ের দাবি। এটি নিশ্চিত করতে হবে যে প্রযুক্তির সুবিধা দেশের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে যায়। সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর যৌথ উদ্যোগে ইন্টারনেট সংযোগ বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকরা যদি তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে দক্ষ হন, তবে তারা পাঠদানে সৃজনশীলতা আনতে পারবেন এবং শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধানে সক্ষম করবেন।

শিক্ষকদের হাত ধরেই তৈরি হয় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, যারা একদিন দেশকে নেতৃত্ব দেবে। তবে, আজকের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকদের ভ‚মিকা এবং দায়িত্ব পুনর্মূল্যায়নের সময় এসেছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে এবং একটি নৈতিক সমাজ গঠনে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, সঠিক দায়িত্ব পালন এবং সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নত করা ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। শিক্ষকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, কর্মশালা ও সেমিনারের ব্যবস্থা করা দরকার, যেখানে তারা আধুনিক পাঠ্যক্রম এবং শিখন পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারবেন। শুধু একাডেমিক শিক্ষায় সীমাবদ্ধ না থেকে শিক্ষকদের নৈতিক শিক্ষা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রশিক্ষণও দরকার, যাতে তারা শিক্ষার্থীদের সার্বিকভাবে গড়ে তুলতে পারেন। শিক্ষকদের পেশাগত জীবনে উৎসাহিত রাখতে তাদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের দিনে অনেক শিক্ষকেরই বেতন কাঠামো বা আর্থিক সুবিধা পর্যাপ্ত নয়, যা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে মনোবল কমিয়ে দেয়। আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে শিক্ষকদের এই দুরবস্থার কারণে তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্লাসে পাঠদানের পরিবর্তে প্রাইভেট পড়ানোর ক্ষেত্রে জোর দিয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের জীবন গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা কেবল শ্রেণীকক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; তাদের সামগ্রিকভাবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষকদের অভিভাবকের মতো দায়িত্ব পালন করতে হবে। শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা আজকের সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিশ্বায়নের কারণে অনেক সময় শিক্ষকতার প্রতি আগের মতো সম্মান প্রদর্শন করা হয় না। তাই তাদের কাজ এবং অবদানকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় সম্মান করা উচিত।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়, গবেষণা ও উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার অভাব লক্ষ্যণীয়। এটি শিক্ষার গুণগত মানকে ক্ষুণ্ন করে, যা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার একটি বড় বাধা। তাই, শিক্ষাকে গবেষণা ও উদ্ভাবনের কেন্দ্রে স্থান দেয়া অত্যন্ত জরুরি। গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন ও উপযুক্ত অবকাঠামো সৃষ্টি করা আবশ্যক। শিক্ষাকেন্দ্রে আধুনিক গবেষণাগার ও উপকরণ নিশ্চিত করা উচিত, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের ধারণাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের গবেষণায় সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে তারা নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা নিয়ে কাজ করতে পারে এবং দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া, শিক্ষকদের জন্য গবেষণার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বোঝাতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। শিক্ষকদের যদি গবেষণায় জড়িত করার উদ্যোগ নেয়া যায়, তবে তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্ভাবনী চিন্তা ও গবেষণার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারবে। গবেষণাভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমন্বিত প্রকল্প ও আন্তঃবিভাগীয় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করলে তাদের সৃজনশীলতা বাড়বে এবং তারা নতুন চিন্তা তৈরি করতে পারবে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য আরো বেশি অর্থায়ন বৃদ্ধি করতে হবে। বর্তমানে দেশে গবেষণার জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাত থেকে খুবই নগণ্য অর্থায়ন হচ্ছে, যা উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে।

একটি সুসজ্জিত ও আধুনিক শিক্ষা পরিবেশ শিক্ষার্থীদের শেখার প্রতি আগ্রহ এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা জরুরি। শ্রেণিকক্ষে একটি সুস্থ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ তৈরি করা খুবই জরুরি। আধুনিক টেকনোলজির ব্যবহার, যেমন- স্মার্ট বোর্ড, মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম এবং উচ্চমানের আসবাবপত্র শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া, পর্যাপ্ত আলো ও বায়ু চলাচল নিশ্চিত করা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গবেষণা সুবিধার প্রয়োজন রয়েছে। গবেষণাগার, লাইব্রেরি ও ইনোভেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তা বিকাশে সহায়তা করা যায়। এই সুযোগগুলো শিক্ষার্থীদের বাস্তব জ্ঞানার্জনে সহায়ক হবে এবং তাদের পেশাগত দক্ষতা বাড়াবে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে খেলাধুলার ভ‚মিকা অপরিসীম। সুতরাং, স্কুল ও কলেজে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ এবং বিনোদনমূলক কার্যক্রমের সুযোগ থাকা উচিত। খেলাধুলা শিক্ষার্থীদের দলে কাজ করার ক্ষমতা ও নেতৃত্ব গুণাবলি বাড়াতে সাহায্য করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা, নিরাপত্তা গার্ড এবং অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুবিধা বাড়ানোর জন্য একটি কার্যকর পরিবহন ব্যবস্থা থাকা জরুরি। শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ও সহজ পরিবহন নিশ্চিত করা তাদের শিক্ষা গ্রহণের পথে বাধা কমাবে এবং তাদের সময় ও শক্তি সাশ্রয় করবে।

বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ জিডিপির প্রায় ২ শতাংশেরও কম, যা এশিয়ার উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। উদাহরণস্বরূপ- ভারত ও পাকিস্তানের শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ যথাক্রমে ৩ এবং ২.৬ শতাংশের বেশি, যা তাদের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি ও উন্নয়নকে সহায়তা করছে। সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোর শিক্ষায় বিনিয়োগের হার ৪ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছায়, ফলে তারা দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে, যা তাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিশেষ ভ‚মিকা রেখেছে। উন্নত দেশগুলোর মতো আমাদের শিক্ষার জন্য অর্থায়ন বাড়ানো প্রয়োজন। বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে অর্থায়ন বাড়ানো হলে এটি শুধু গবেষণা, প্রযুক্তি এবং শিক্ষার মান বাড়াতে সাহায্য করবে না; বরং তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ সুগম করবে। অতএব, দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষার অর্থায়ন বৃদ্ধি করা একান্তই অপরিহার্য।

বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির একটি উল্লেøখযোগ্য অংশ হলেও এটি এখনো বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন। বিভিন্ন সূত্র অনুসারে, বাংলাদেশের জিডিপির শতাংশ হিসাবে উচ্চ শিক্ষার জন্য সরাসরি বরাদ্দ সাধারণত কম, প্রায় ০.৬ থেকে ১ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ থেকে ৬ শতাংশ ব্যয় করাকে আদর্শ ধরা হয়। এই অঙ্কের সাথে সঙ্গতি রেখে, আমাদের উচিত বাজেটের ব্যয় বৃদ্ধির দাবি তুলতে, যাতে শিক্ষা খাতের উন্নয়ন ঘটানো যায় এবং একটি শক্তিশালী জাতি গঠনের জন্য ভিত্তি প্রস্তুত হয়।

বর্তমান বিশ্বে শিক্ষা শুধু জ্ঞানার্জনের মাধ্যম নয়; এটি উদ্ভাবন, মানবিকতা ও ন্যায়পরায়ণতা অর্জনের হাতিয়ার। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থী সৃজনশীল চিন্তা, সমস্যার সমাধান এবং সামাজিক ন্যায়ের প্রতি সচেতন হতে পারে। শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে, উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের চিন্তার স্বাধীনতা, নতুন ধারণা উদ্ভাবনের সুযোগ ও প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া প্রয়োজন। মানবিকতা শিক্ষার অন্যতম ভিত্তি হওয়া উচিত, যাতে শিক্ষার্থীরা সহানুভূতি ও সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা অনুভব করে। ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করতে, শিক্ষাব্যবস্থায় সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, যেন সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়। এভাবে, একটি নতুন জাতি গঠন করা সম্ভব হবে, যেখানে উদ্ভাবন মানবিকতা ও ন্যায়পরায়ণতা একসাথে বিদ্যমান থাকবে। এই স্বপ্নের শিক্ষা আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরি করবে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম


আরো সংবাদ



premium cement