১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩০, ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

শিক্ষা সংস্কারের উপযুক্ত সময় এখনই

- প্রতীকী ছবি

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে বহু শিক্ষানীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। সবই ছিল শাসকগোষ্ঠীর চিন্তাচেতনাকে সাধারণ জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রয়াস। এসব নীতিতে দেশের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও দর্শনের যথাযথভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এর ফলে পাঠ্যক্রমে খেয়ালখুশিমতো পরিবর্তন, রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় এবং অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় ধ্বংসের পথে দাঁড়িয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ২০২৪, তরুণ নেতৃত্বের গণজাগরণে স্বৈরাচারী শক্তির পতন ঘটার পর নতুন সম্ভাবনা ও পরিবর্তনের দ্বার উন্মোচিত হয়। এই নতুন অধ্যায়কে ‘বাংলাদেশ ২.০’ নামে অভিহিত করা হচ্ছে- যেখানে শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার ও পুনর্গঠন অন্যতম অগ্রাধিকার পাচ্ছে। জাতি গঠনের প্রধান নিয়ামক হিসেবে এ প্রজন্মের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী ও কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ মানবিকতা, যুক্তিবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা ও দেশপ্রেমের আদর্শ তুলে ধরা হলেও তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি; বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সমন্বয়হীন একটি সেকেলে শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ২০১২ সালের জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলে নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া হলেও তার বাস্তবায়নও সফল হয়নি। ২০২১ সালে চালু করা জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা নীতিনির্ধারণে অদূরদর্শিতার ও জাতিসত্তার সাথে সাংঘর্ষিক উপাদান থাকায় এটিও ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়াও উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে বিগত সরকারের গৃহীত সংশোধিত কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা (২০১৮-৩০) এর ক্রিটিক্যাল রিভিউ প্রয়োজন।

এমতাবস্থায়, ‘বাংলাদেশ ২.০’ এর নতুন অধ্যায়ে শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠনের মাধ্যমে একটি শিক্ষিত, নৈতিকতাসম্পন্ন ও দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার। শিক্ষা সংস্কারের লক্ষ্যে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে শিক্ষাদর্শন, ভিশন, মিশন এবং উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। দেশীয় সত্তা ও মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়ে কল্যাণমুখী রাষ্ট্র বিনির্মাণে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন, দক্ষ ও ভালো মানুষ গড়ে তোলাই জাতীয় শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। শিক্ষায় যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শহর-গ্রামীণ ভেদাভেদ দূর করে ভারসাম্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা বিশেষভাবে বিবেচনায় নিয়ে, তাদের জন্য শিক্ষাবাজেটে অগ্রাধিকার নীতি চালু করতে হবে।

বিগত বছরগুলোতে উচ্চশিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বিধায় উচ্চশিক্ষার মান ধরে রাখার জন্য সংখ্যা না বাড়িয়ে গুণগত মানের দিকে নজর দেয়া উচিত। এ লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকা ও জেলা শহরগুলোর পরিবর্তে বিভাগীয় শহরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন/অনুমোদন দেয়া যেতে পারে। দেশের শ্রমবাজার ও বিশ্ব শ্রমবাজারে জনশক্তি রফতানির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিপ্লোমা চালু করা উচিত, যাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা যায়। এ ছাড়া কারিগরি ধারায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করার জন্য কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্প্রসারণ, গবেষণা কার্যক্রম ও শিক্ষার মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ লক্ষ্যে জেলাভিত্তিক প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কারিগরি শিক্ষার বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা উচিত।

দেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়কে পুরোপুরি গবেষণানির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার পাশাপাশি সব বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬০ শতাংশ শিখননির্ভর এবং ৪০ শতাংশ গবেষণানির্ভর প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করা দরকার। বাংলাদেশ প্রধানত কৃষিনির্ভর দেশ। তাই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম সম্প্রসারণ করে উন্নত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যাপক-ভিত্তিতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। প্রথম-চতুর্থ আন্তর্জাতিক মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে গৃহীত (১৯৭৭-৮৩) মক্কা ডিক্লারেশনে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গৃহীত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে- যা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই পরবর্তী শিক্ষা সংস্কার কমিশন অবশ্যই সেই ডিক্লারেশনে গৃহীত সুপারিশমালার বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।

পাঠ্যক্রমে পরিবর্তনের ব্যাপারেও গুরুত্ব দেয়া দরকার। সব ধারার শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু সাধারণ বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যা ইংরেজি মাধ্যম, বাংলা মাধ্যম, আলিয়া মাদরাসা বা কওমি মাদরাসা- সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। এসব বিষয়ের মধ্যে থাকবে : বাংলাদেশ পরিচিতি, ইতিহাস ও সভ্যতা, সামাজিক বিজ্ঞান এবং ধর্মশিক্ষা।

পাশাপাশি ভাষাগত দক্ষতা ও কম্পিউটার দক্ষতা অর্জনকেও বাধ্যতামূলক করতে হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রমে অবশ্যই বাংলা, ইংরেজি ও আরবি- তিনটি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আরবি পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ ভাষা, একই সাথে দেশের একটি বিশাল জনশক্তি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত। সব স্তরের পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচিতে জীবনমুখী দক্ষতা ও বিষয়ভিত্তিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের যথাযথ সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় সব স্তরে ‘ফান্ডামেন্টালস অব রিলিজিয়ন’ তথা মুসলিমদের জন্য ‘ফান্ডামেন্টালস অব ইসলাম’ বিষয় বাধ্যতামূলক করতে হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রতিটি বিষয়ের সাথে ‘প্রাসঙ্গিক ধর্মীয় কোর্স’ বাধ্যতামূলক করতে হবে। যেমন- অর্থনীতিতে ইসলামী অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তা, আইনে ইসলামিক লিগ্যাল থিওরি ইত্যাদি। আমাদের দেশের শিল্প ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর সাথে মিল রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভাগ চালু ও শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করা, যাতে আমাদের দেশকে ভিন্ন দেশ থেকে লোক নিয়োগ করতে না হয়। যে বিষয়ে আমাদের দক্ষ জনশক্তি দরকার, সেই পরিমাণ জনশক্তি তৈরিতে ব্যর্থ হচ্ছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষায় করপোরেট ইন্টারেস্টে সংযুক্ত অপ্রয়োজনীয় পাঠ্যবিষয়গুলো বাদ দিয়ে সোস্যাল ইন্টারেস্টে প্রয়োজনীয় নতুন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একই সাথে শ্রমবাজারের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যেসব বিষয়ের বাস্তব প্রয়োগ নেই, সেগুলোকে ধীরে ধীরে অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সাথে একীভ‚ত করে বিলুপ্ত করতে হবে।

কওমি মাদরাসায় ভালো আলেম গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এবং কওমি শিক্ষাব্যবস্থার স্বকীয়তা বজায় রেখে সিলেবাসকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে কওমি শিক্ষাবোর্ডকেও অন্যান্য বোর্ডের মতো ক্ষমতায়িত করে শিক্ষকদের শিখনদক্ষতা বাড়াতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় শিক্ষকদের সরকারি এমপিওভুক্তি করা যেতে পারে। আলিয়া ও কওমি মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিতদের মূল ধারায় সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাদরাসার ইসলামী বিষয়ের সাথে সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং বাধ্যতামূলকভাবে ভাষা ও তথ্যপ্রযুক্তি দক্ষতা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষায় কারিগরি শিক্ষা ব্যাপকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মাদরাসা শিক্ষায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গবেষণার ক্ষেত্রও তৈরি করতে হবে।

শিক্ষা সংস্কারে শিক্ষক প্রশিক্ষণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বস্তরের শিক্ষকের জন্য পেডাগজি স্কিলস বা আর্ট অব টিচিংয়ের পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক পাঠদান পদ্ধতির ওপর শিখন প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য জাতীয়ভাবে পৃথক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট চালু করতে হবে, যেখানে শিক্ষকদের প্রি-সার্ভিস ও ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া ওই ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষকদের বাধ্যতামূলক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিদেশী ডিগ্রিধারী হতে হবে। প্রাথমিক স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষকদের সবার জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের মাধ্যমে শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া মেধাবীরা যাতে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন (বিজেএসসি) ও বাংলাদেশ কর্ম-কমিশনের (পিএসসি) আদলে ‘এডুকেশন সার্ভিস কমিশন (ইএমসি)’ গঠন করতে হবে, যা অন্যান্য কর্মক্ষেত্রের তুলনায় সামঞ্জস্যপূর্ণ ও বৈষম্যবিহীন হবে।

মূল্যায়ন-সংক্রান্ত বিবেচনায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। সব লেভেলের শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন পদ্ধতিতে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান, ব্যবহারিক দক্ষতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে। মূল্যায়ন এমন হতে পারে : বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান ৫০, বিশেষায়িত জ্ঞান ২০, জীবনমুখী দক্ষতা ১০, নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধ ১০, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ ১০ শতাংশ। সব লেভেলের শিক্ষক মূল্যায়নেও অনুরূপ/কাছাকাছি ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের শিক্ষকদের টিচিং ও গবেষণায় যথাক্রমে ন্যূনতম ৬০ ও ৪০ শতাংশ হারে মূল্যায়ন ব্যবস্থা থাকা দরকার।

ব্যবস্থাপনায় নতুন ধারা চালু করতে হবে। সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের অবশ্যই স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড লিডারশিপে ডিগ্রি থাকতে হবে। সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনায় বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষানুরাগী শিক্ষক-শিক্ষাবিদ সদস্য, দাতা সদস্যের বাইরে উদ্যোক্তা-প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। এ ছাড়া একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে কমিটিতে আওতাভুক্ত করা উচিত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা যাতে যত্রতত্র কলেজ-মাদরাসা গড়ে উঠতে না পারে এবং দক্ষ গ্র্যাজুয়েট বের হতে পারে।

এ ছাড়া স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষার সব স্তরের শিক্ষকদের সরাসরি দলীয় রাজনীতির চর্চায় যুক্ত থাকাকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। শিক্ষকতা পেশায় জড়িতদের সরাসরি রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের চেয়ে লেখাপড়া, গবেষণা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় মনোযোগী হওয়া জরুরি। শিক্ষার্থীদেরও দলীয় লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে পড়াশোনা, আত্মগঠন, দক্ষতার উন্নয়ন ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় গুরুত্ব দেয়া দরকার।
সর্বোপরি জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্কট মোকাবেলায় দ্রুত শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন, পরে স্থায়ী জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে। যেখানে শিক্ষানীতি, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যক্রম ও শিক্ষাব্যবস্থাপনায় বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্ব, দেশের শিল্প এবং শ্রমবাজারের সাথে পরিচিত ব্যক্তিত্ব ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। কেবলমাত্র নির্দিষ্ট ভিশন ও সুদৃঢ় কমিটমেন্টে ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে, তবুও সমন্বিত শিক্ষাকার্যক্রমের পথে এখনো বহু বাধা-বিপত্তি রয়েছে; যা অবিলম্বে, স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি- এ তিন ধাপে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

বর্তমানে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি। যেহেতু এই সরকার বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের নয় বা বিশেষ কোনো নীতি বা আদর্শের সমর্থনে সংগঠিত মতাদর্শের নয়; ফলে শিক্ষাসংস্কারের উপযুক্ত সময় এখনই। বিশেষ দল বা মতের সরকার যেহেতু নিরপেক্ষভাবে সব বৈচিত্র্য, ভিন্নতা ও বহুবিধ বাস্তবতাকে ধারণ করে নীতিমালা ও কর্মকৌশল প্রণয়ন করতে পারে না; সেহেতু এখনই শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কারের কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার বিকল্প নেই।

লেখক : শিক্ষাবিদ, গবেষক ও শিক্ষা-উদ্যোক্তা
ইমেল : abdulazizbd14@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement