১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

শিক্ষকদের পে-স্কেল দেয়া সময়ের দাবি

- প্রতীকী ছবি

আহ! কেমন জীবন এটি। সগৌরবে বেঁচে থাকার জন্য কত আকুতি এ দেশের শিক্ষকদের। অথচ সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে (১৫-এর ক) আমাদের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। সর্বজনীন মানবাধিকারের ২৫ নং অনুচ্ছেদ এবং সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগ (১৫-এর ক) অনুযায়ী একজন শিক্ষকের মৌলিক অধিকার পাওয়ার কথা। সংবিধানের চতুর্থ পরিচ্ছেদের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগকে মৌলিক অধিকার বলবৎ করার এখতিয়ার দেয়া আছে। ন্যূনতম মাসিক বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকায় একজন শিক্ষক কি খাচ্ছে, কেমন কাটছে তাদের জীবন, সেটি দেখার কেউ নেই। সব সেক্টরে ব্যয় বাড়ার সাথে সাথে আয় বাড়ে। কিন্তু শিক্ষকদের ব্যয় বাড়লেও তুলনামূলক আয় বাড়তে দেয় না সরকার। এটি সংবিধানবিরোধী। কাগজে-কলমে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৮৪ মার্কিন ডলার। অথচ খাবার কিনতে পারছে না শিক্ষক। যে বেতন পায় তা দিয়ে মাসের ১৫ দিন যেতে না যেতেই দোকানির বাকি খাতায় শিক্ষকের নাম থেকেই যায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শিক্ষকরা পিষ্ট। সাধারণ মানুষের মতো শিক্ষকরা সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বেতন দিয়ে না চলায়, আগের জমানো অর্থ ভেঙে খরচ করছেন লাখ লাখ শিক্ষক। কিন্তু এভাবে কত দিন চলবে?

দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় চাপ বিবেচনায় আয় বেড়েছে বড় স্কেলের (প্রধান শিক্ষকসহ) ১০ শতাংশ শিক্ষকের, আয় কমেছে ছোট স্কেলের (সাধারণ শিক্ষক) ৮০ শতাংশ শিক্ষকের। নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের মতো শিক্ষক সমাজ হতাশা ও কষ্টে ধুঁকছে। শিক্ষকদের মধ্যে বড় স্কেলে চাকরি করা শিক্ষকরা কিছুটা ভালো আছেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা তো আয় বেড়ে যাওয়াদের তালিকাতে শীর্ষে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গণিত, ইংরেজি, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষকরা টিউশনি করে কিছুটা ভালো আছেন। যারা ভালো আছেন এমন শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশের কাছাকাছি। বাকি আশি ভাগ শিক্ষকই পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আরেকটু সহজ করে বললে শিক্ষকরা সীমাহীন কষ্টে জীবনযাপন করছেন। এমতাবস্থায় বিশেষ ইনক্রিমেন্ট কিংবা মহার্ঘ্য ভাতা ও পে-স্কেল চালুর বিকল্প নেই। বরং এটি এখন আইনগত অধিকারও বটে।

বিগত সরকারের প্রধান বলেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে শিক্ষকদের রাস্তায় নামতে হবে না কিন্তু গত প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকেও শিক্ষকদের জন্য তেমন কিছুই করেননি। যা কিছু করেছিলেন তা গতানুগতিক এবং বর্তমান সময়ে বেঁচে থাকার মতো নয়।

২০১৫ সালে সর্বশেষ জাতীয় বেতন কাঠামো ঘোষণা হয়েছিল, যা এখনো কার্যকর রয়েছে। অথচ এই সময়ে জীবনযাত্রার ব্যয় প্রায় দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। গত দুই বছরের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য,পরিবহন ব্যয়, বাসাভাড়া, শিক্ষার খরচ সবই হু হু করে বেড়েছে। কিন্তু একজন শিক্ষকের আয় দুই বছর আগে যা ছিল, এখনো প্রায় তা-ই আছে। সংসার চালাতে এখন প্রতি মাসেই ধারকর্জ করে চলতে হচ্ছে শিক্ষকদের।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাম্প্রতিক এক জরিপ থেকে জানা যায়, খাদ্য মূল্যস্ফীতি চলতি বছর রেকর্ড ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। গত দুই মাসে তা ১৮ শতাংশ। অন্যদিকে, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির তথ্যমতে, দেশে গত পাঁচ বছরে শুধু ভোগ্যপণ্যের দাম ৩১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

গত ৯ বছরে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন কাঠামোতে তেমন বৃদ্ধি দেখা যায়নি। এমতাবস্থায় চরম দিশেহারা শিক্ষক সমাজ। এই সমস্যা সমাধানে এখনই বিশেষ ইনক্রিমেন্ট, ৩০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা এবং পে-স্কেল চালু করা অতীব জরুরি এবং তা আইনগত অধিকারও বটে। এমনটি না হলে ফ্যাসিজম দূরীকরণে আগামী নির্বাচনে এটির প্রভাব পড়বে সারা দেশের মানুষের মধ্যে। কারণ এ দেশের মানুষ এখনো শিক্ষকদের ভালোবাসেন, বিশ্বাস করেন এবং তাদের কথাগুলো মূল্যায়ন করেন।

লেখক : কলামিস্ট
E-mail: alamferoz4525@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement