২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

অনিরাপদ খাদ্যপণ্য নিয়ে আতঙ্কে ক্রেতারা

- ছবি : সংগৃহীত

আজ সোমবার (১৪ অক্টোবর) পালিত হবে ৫৫তম বিশ্ব মান দিবস-২০২৪। পণ্য ও সেবার মানের বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে ১৯৪৬ সালের ১৪ অক্টোবর লন্ডনে ২৫টি দেশের প্রতিনিধিরা একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মাননির্ধারক সংস্থার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেন। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই ‘১৪ অক্টোবর’ তারিখে মান দিবস পালন করা হয়। তবে ‘১৯৪৬ সালে ২৫টি দেশ একমত পোষণ করলে (International Organization for Standardization) আইএসও প্রতিষ্ঠিত হয় আরো পরে এবং আইএসও প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭০ সাল থেকে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালন করা হয়। বিশ্বায়নের যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য ও সেবা উৎপাদনের বিকল্প নেই। পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও সেবা প্রদানসহ সব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ অপরিহার্য। যেকোনো পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় তথা বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে ‘মান’ আস্থার প্রতীক হিসেবে কাজ করে। বিএসটিআই এ পর্যন্ত চার হাজারের বেশি পণ্যের মান নিশ্চিত করেছে। ২৭৩টি পণ্যের মান সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক করেছে। অর্থাৎ এসব পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে বাধ্যতামূলকভাবে বিএসটিআইয়ের অনুমতি নিতে হবে।

মানগুলো কী?
কিভাবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পণ্য সুরক্ষা থেকে শুরু করে সার্বিক গুণমান নিশ্চিত করে আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করে তা বোঝার জন্য কিছু সময় নিন।

সচেতনতা প্রচার করুন
সোস্যাল মিডিয়া বা আপনার সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্ব মান দিবস সম্পর্কে তথ্য শেয়ার করুন। অফিসিয়াল হ্যাশট্যাগগুলো ব্যবহার করুন। মান ও পণ্যের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও পণ্যের মান সম্পর্কে আলোচনাকে উৎসাহিত করুন।

ওয়েবিনার বা ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণ
অনেক সংস্থা বিশ্ব মান দিবসে মান সম্পর্কিত ওয়েবিনার, ওয়ার্কশপ এবং ইভেন্টগুলো হোস্ট করে। পণ্যের ব্যাপারে গভীরভাবে জানার জন্য ইভেন্টগুলোতে অংশ নিন।

অবদানগুলোকে স্বীকৃতি
মান উন্নয়ন ও বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাজের স্বীকৃতি দিন। নিরাপত্তা এবং উদ্ভাবনে তাদের অবদান উদযাপন করুন।

শিক্ষা ও অ্যাডভোকেসি
বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা, প্রযুক্তি এবং উৎপাদনের মতো ক্ষেত্রগুলোতে মানগুলো মেনে চলার গুরুত্ব সম্পর্কে অন্যদের শিক্ষিত করার সুযোগ হিসেবে দিনটিকে ব্যবহার করুন।

টেকসই অনুশীলনকে সমর্থন
স্থায়িত্ব এবং পরিবেশ সুরক্ষা-সম্পর্কিত মানগুলোর ব্যবহারকে প্রচার করুন। পরিবেশের ওপর প্রভাব কমিয়ে দেয় এমন অনুশীলনগুলোকে উৎসাহিত করুন।

গুণমান নিশ্চিতকরণ
উৎপাদন বা সংশ্লিষ্ট শিল্পে কাজ করে থাকলে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য পণ্য নিশ্চিত করার জন্য গুণমান নিশ্চিতকরণের গুরুত্বের ওপর জোর দিন।

পণ্য নিরাপত্তা
ক্ষতি থেকে ভোক্তাদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পণ্য নিরাপত্তা সম্পর্কে গুরুত্ব তুলে ধরুন।

উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি
পণ্যের মান উন্নয়নে উদ্ভাবনকৃত নব প্রযুক্তিকে স্বাগত জানান।

ব্যবসায়িক ব্যস্ততা
কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের অবস্থানে থাকলে পণ্য নিরাপত্তার মানগুলো মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিন। ব্যবসায়িক অনুশীলনে সেগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্বের ওপর জোর দিন।

সম্প্রদায়ের ব্যস্ততা
মানগুলো তাদের দৈনন্দিন জীবন ও নিরাপত্তায় কিভাবে প্রভাবিত করে তা নিয়ে আলোচনা করতে স্থানীয়দের সাথে জড়িত হোন।

অন্তর্ভুক্তির পক্ষে প্রবক্তা
উন্নয়নে বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি প্রচার করুন। নিশ্চিত করুন যে, সবার চাহিদা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করা হয়। জড়িত হোন মানসম্পর্কিত কোনো ক্ষেত্রে কাজ করলে মানোন্নয়ন কমিটি বা সংস্থাগুলোতে জড়িত হওয়ার কথা বিবেচনা করুন। আপনার শিল্পের সাথে প্রাসঙ্গিক মান তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণে অবদান রাখুন।

ক্রমাগত উন্নতি
কাঁচামাল থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত ক্রমাগত উন্নতির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, মানহীন খাদ্যপণ্য নিয়ে আতঙ্কে থাকছেন ক্রেতারা। রাষ্ট্রায়ত্ত মান সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) পণ্যের মান নির্ধারণ ও নিশ্চিত করার কাজ করে যাচ্ছে অবিরত। কিন্তু এরপরও পণ্যের মান নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছে প্রতিনিয়ত। আর এটি শুধু আমাদের দেশেই নয়, পুরো বিশ্বজুড়ে এ অবস্থা বিরাজমান। তাই গুণগত মান ঠিক রেখে পণ্য তৈরির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হচ্ছে কি না, সেটি নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে।

তা না হলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে মাননির্ধারণ করা হয়, সে ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্যের জন্য ভালো কিছু নিয়ে আসবে না। তাই মানসম্মত পণ্য আমাদের সবার কাম্য। মানহীন পণ্য বিক্রি করা অপরাধ। সবাই সচেতন না হলে শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে খাদ্য ও পণ্যের মান নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। মান নেই, তো নিরাপত্তা নেই। তাই আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনাপূর্বক বিএসটিআইয়ের মনিটরিং কার্যক্রমকে আরো ত্বরান্বিত করার ওপর জোর দিতে হবে। সঠিক মান বজায় রেখে পণ্য উৎপাদন, সেবা ও প্রক্রিয়া- এই তিনটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারলেই বিশ্ব মান দিবসের সার্থকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।

লেখক : কলাম লেখক
ই-মেল : drmazed96@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement