১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ৯ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের শেষ কোথায়

- প্রতীকী ছবি

গাজায় ইসরাইলি বর্বর হামলার এক বছর পূর্ণ হলো ৭ অক্টোবর। তেলআবিবে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের আক্রমণ এবং এর জেরে ইসরাইলি বাহিনী পুরো একটা বছরজুড়ে আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে। এ আগ্রাসন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে আর ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ আরো বিস্তৃত হয়েছে। একবছরে ইসরাইলি হামলায় ৪২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন কয়েক লাখ। হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশু বেশি। নিহত হয়েছে দুশো সাংবাদিক ও শত শত জাতিসঙ্ঘ কর্মী। এর পরও রণেভঙ্গ দেয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না ইসরাইলের। যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে অপহৃত ইহুদিদের ফিরে যাওয়ার পথ সুগম করতে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পদত্যাগ ও যুদ্ধবিরতি দাবি করে তেলআবিবসহ বিভিন্ন স্থানে লাগাতার আন্দোলন সমাবেশ হচ্ছে। কোনো কোনো সমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। তব নেতানিয়াহু নির্বিকার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নভেম্বরের নির্বাচনে প্রার্থী কমলা হ্যারিসসহ বিশ্ব নেতারা যুদ্ধবিরতির তাগিদ দেয়া সত্তে¡ও নেতানিয়াহু অনমনীয়। অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট এসব বললেও যুদ্ধের অস্ত্র তেলআবিবকে জোগান দিয়ে গেছেন। আরো কিছু ঘটনা ঘটেছে, হত্যা করা হয়েছে হামাসের অনেক শীর্ষ নেতাকে। লেবাননের হেজবুল্লাহ ও ইয়েমেনে হুতিদের টার্গেট করে একসঙ্গে তিন রণাঙ্গনে যুদ্ধ ছড়িয়ে দিয়ে নেতানিয়াহু ক্রমেই তৃতীয় বিশ^যুদ্ধের একটি আবহ তৈরি করতে যাচ্ছেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এটা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এসব করে হামাসকে কি ইসরাইল হারাতে পেরেছে? বিশ্লেষকদের বক্তব্য না বাচক। তারা বলছেন, এ পর্যন্ত ৪২ হাজার প্রাণ ঝরে গেল ইহুদি রাষ্ট্রটির চরম খামখেয়ালিপূর্ণ যুদ্ধকৌশলে। এ সময়ে যুদ্ধের সাধারণ নর্মসগুলোও মানেনি ইসরাইল। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ নিরপরাধ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর এত হত্যা করেও দমানো যায়নি হামাসকে। যুদ্ধ বাধিয়ে আসলে কিছু পায়নি ইসরাইল নিন্দা ও ধিক্কার ছাড়া। হামাসের হাতে আটক দুশতাধিক বন্দীর মধ্যে এখনো ১০১ জনকে উদ্ধার করা যায়নি বলে খবর। তাদের মধ্যে বেশ কিছু মারাও গেছে। যুদ্ধ বন্ধ না করে তাদের মুক্ত করা কঠিন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কী হবে এখন? এই বর্বরতার শেষ কোথায়?

এক বছর আগে হামাসের নজিরবিহীন এক আক্রমণের মধ্য দিয়ে নতুন যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণ ছিল ইসরাইলিদের জন্য ভয়াবহ একটি দিন। প্রায় বার শ’ মানুষ, যাদের বেশির ভাগ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিল এ নজিরবিহীন আক্রমণে। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টায় ইসরাইলে হামাসের হামলা শুরু হয়। তারা কঠিন বেড়াজাল ভেদ করে সীমান্ত পার হয়ে ইসরাইলের অনেকটা অভ্যন্তরে ঢুকে যায়। তারা শত শত রকেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় ইসরাইলি বাহিনী হতচকিত হয়ে পড়ে। বারশ’র বেশি ইসরাইলি নিহত হয়, দুই শতাধিক ইসরাইলিকে হামাস ধরে নিয়ে আসে। পরে তাদের জিম্মি করা হয়।

হামাস কেন ইসরাইলে হঠাৎ করে হামলা চালাল? সাধারণত ইসরাইলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা হামলা চালিয়ে আসছিল হামাস। এবার হামাস কেন আগে হামলা চালাল। আলজাজিরা বলছে, তাদের লক্ষ্য ছিল তাদের প্রতিবাদ বিশ^বাসীকে জানানো এবং বছরের পর বছর ধরে ইসরাইলি কারগারে বন্দী হামাস ও ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মুক্ত করা। হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি আলজাজিরাকে বলেছেন, দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো নৃশংসতার জবাবে এ সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। খালেদ আরো বলেন, ‘আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজায়, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর এবং আমাদের পবিত্র স্থাপনা আল-আকসায় ইসরাইলি নৃশংসতা বন্ধে উদ্যোগ নেবে। এগুলো হামাসের এ অভিযানের কারণ।’

হামাসের সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ বলেন, দুনিয়ার বুকে সর্বশেষ দখলদারিত্বের অবসানে সবচেয়ে বড় যুদ্ধের দিন আজ। তিনি বলেন, ‘যার কাছে একটি বন্দুক রয়েছে, তার উচিত সেটা নিয়ে বের হওয়া।’

ঘটনার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের রাষ্ট্রের ইতিহাসে কখনো এ ধরনের বর্বরতা দেখিনি।’ ইসরাইলিরা হামাসের ওই হামলাকে তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছিল। এরপর ইসরাইল গাজায় ভয়াবহ হামলা চালায়, যা এখনো চলছে। এতে বিপুল মানুষ হতাহত ছাড়াও গাজা উপত্যকার ৯০ ভাগ স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে।

গত বছর ডিসেম্বরে গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে ইসরাইল। গাজায় হামাসের ব্যবহৃত ৮০০টির মতো ‘সন্ত্রাসী টানেল’ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিল ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ। এর মধ্যে ৫০০টি ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। আর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাদের ভাষায় বিভিন্ন ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ ১০ হাজারের মতো বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে আইডিএফ। এ যুদ্ধ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ইসরাইলকে। কিন্তু এরপরও হামাসের বিনাশ বোধহয় সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, তারা জানান দিয়েছে তাদের মনোবল এখনো অটুট আছে। তারা ইসরাইলের ওপর যে মরণ কামড় এক বছর আগে দিয়েছে তার শেষ দেখতে চায়।

হামাসের হামলার ১২ মাস পর মধ্যপ্রাচ্য এখন ভয়াবহ ও আরো ধ্বংসাত্মক একটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। গত এপ্রিলে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ইসরাইলের হামলায় কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডারের মৃত্যুর ঘটনায় ইসরাইলে ৩০০টির বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছিল ইরান। ইসরাইলের ভ‚খণ্ড লক্ষ্য করে এটি ছিল ইরানের প্রথম সরাসরি হামলা। সে সময় প্রায় সব ড্রোন ভ‚পাতিত করেছিল ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের আরব মিত্ররা। ওই হামলায় ইসরাইলের একটি বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জবাবে ইরানের একটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল ইসরাইল। এরপর চলতি মাসের শুরুতে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে আবারো শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। মূলত হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর হত্যার জেরে এ হামলা চালায় ইরান। হামলায় ইসরাইলের ফায়ার পাওয়ার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। হামলার পর ইসরাইলজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানের মিসাইল নিক্ষেপের কথা জানিয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। বলেছে, প্রায় ১৮০টি মিসাইল ছোড়া হয়েছে। অনেক মিসাইল ভ‚পাতিত করা হয়েছে, তবে মধ্য এবং দক্ষিণাঞ্চলে ‘কিছু আঘাতের’ ঘটনা ঘটেছে। ইরানকে এ হামলার ‘পরিণাম ভোগ করতে হবে’ বলে হুমকি দিয়েছে ইসরাইল।

ইসরাইলিদের হাতে নিহত হন হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া ও লেবাননের হেজবুল্লাহ প্রধান নাসরুল্লাহ। ইসমাইল হানিয়া ইসরাইলি হামলায় ‘নিহত’ হওয়ার কথা সংগঠনটি জানায় ৩১ জুলাই। ইরানের রাজধানী তেহরানে তার অবস্থানস্থলে ‘জায়নবাদী গুপ্ত হামলায়’ এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তারা। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তিনি তেহরানে গিয়েছিলেন। ইসমাইল আবদেল সালাম হানিয়া হামাস আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ সরকারের দশম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। অন্য দিকে শেখ হাসান নাসরুল্লাহ ১৯৯২ সাল থেকে লেবাননের ইরানপন্থী শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২৮ সেপ্টেম্বর ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স দাবি করে, বৈরুতে এক হামলায় হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। পয়লা অক্টোবর থেকে ইসরাইল লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে স্থল অভিযান শুরু করেছে বলে জানায় তাদের ডিফেন্স ফোর্স আইডিএফ। সেখানেও নিহতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে।

হিজবুল্লাহ স্থাপনা লক্ষ্য করে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন, এ হামলায় অন্তত ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। হিজবুল্লাহর ডেপুটি কমান্ডার নাইম কাসেম বলেছেন, ইসরাইলেরে স্থল অভিযানে তারা প্রস্তুত এবং এ যুদ্ধ ‘দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে’। ইসরাইল-গাজা যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে মার্কিন একটি প্রস্তাব জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়েছে গত জুনে। প্রস্তাবে শর্ত হিসেবে রাখা হয়েছে ‘পরিপূর্ণ যুদ্ধবিরতি’, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তি, মৃতদের দেহাবশেষ ফেরত দেয়া এবং ফিলিস্তিনি বন্দী বিনিময়। ইসরাইল ইতোমধ্যে প্রস্তাবে সম্মত আছে বলে রেজল্যুশনে উল্লেখ করা হয়। হামাসকেও রাজি হতে তাগিদ দেয়া হয়েছে এতে। কিন্তু নেতানিয়াহুর একরোখা মনোভাবে আর অগ্রগতি হয়নি।

চলতি বছর এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। পরে পঁচিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। লস অ্যাঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া এবং আটলান্টায় বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয় এ ঘটনায়। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের প্রতিবাদও নজিরবিহীন।

এত কিছুর পরও কি জয় হয়েছে ইসরাইলের? বলা হচ্ছে গাজা যুদ্ধে ইসরাইলের অর্জন সামান্য। আর এটা মনে করেন অনেকে। ইসরাইলি সাংবাদিক ও লেখক গিডিয়ন লেভি দেশটির প্রাচীনতম দৈনিক হারেৎজের নিয়মিত কলামিস্ট ও সম্পাদনা পরিষদের সদস্য। তাকে প্রশ্ন করা হয়, ইসরাইলের অভ্যন্তরে ঢুকে হামাসের হামলায় সহস্রাধিক ইসরাইলি নিহত ও দুই শতাধিককে জিম্মি করার ঘটনার পর এ অসম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তেলআবিব। এত মানুষের প্রাণহানির পর এ যুদ্ধের ফল কী দাঁড়িয়েছে বলে আপনি মনে করেন? গিডিয়ন লেভি বলেন, গাজা যুদ্ধ থেকে ইসরাইল কিছুই অর্জন করতে পারেনি; বরং সম্পূর্ণ এক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে, শিশু, নারীসহ হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। গাজায় ঘরবাড়ি, স্কুল-হাসপাতালসহ যাবতীয় অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দিয়েছে। সেখানকার মানুষ যারা বেঁচে আছেন, তারা অনাহার, অপুষ্টি ও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তারা অমানবিক জীবনযাপন করছেন। তিনি বলেন, সামরিকভাবে হামাস অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করছে, হামাসের সামরিক শক্তি নিঃশেষ। এখন তাই গেরিলা কায়দায় লড়তে চেষ্টা করছে। কিন্তু হামাস রাজনৈতিকভাবে আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়েছে। আবার ২৫৫ জিম্মির মধ্যে ১৫৪ জনকে মুক্ত করে আনা সম্ভব হয়েছে। বাকি ১০১ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে। বস্তুত, গাজায় ইসরাইল গণহত্যা চালিয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর ২০২৩ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে এক সপ্তাহ যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। তারপর গত ১০ মাসে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টার পরও কেন যুদ্ধবিরতি হয়নি। তিনি বলেন, কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ঠিকঠাকভাবে চেষ্টা করেনি। ইসরাইলেরে ওপর চাপ তৈরি করেনি। যুক্তরাষ্ট্র শুধু কথা বলেছে আর দুই পক্ষকে থামতে আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি ইসরাইলেকে ক্রমাগতভাবে অস্ত্রশস্ত্র জোগান দিয়ে গেছে, যার মানে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে মদদ দিয়ে গেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় কেউই এখন আর সক্রিয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রশ্ন আসছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে তো পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে? উত্তরে বলা হচ্ছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তা শুধু এই অঞ্চলের জন্য নয়, বরং সারা দুনিয়ার জন্যই খুব খারাপ হবে। অন্যান্য বিশ্লেষকদের মনোভাবও এ রকমই।

আলজাজিরা অনলাইন ১০ অক্টোবর জানাচ্ছে, গাজার সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ হাসান আল-নবী এক নিবন্ধে লিখেছেন, উপত্যকায় ইসরাইলের গণহত্যামূলক যুদ্ধের এখন এক বছর হয়ে গেছে। ইসরাইলি বিমান, ট্যাংক ও যুদ্ধজাহাজ নির্বিচারে গোটা ভ‚খণ্ডে বোমাবর্ষণ করছে। জীবনের সব দিক ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। বাড়িঘর, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ, গির্জা, হাসপাতাল, বেকারি এবং জাতিসঙ্ঘের আশ্রয়কেন্দ্রসহ হাজার হাজার বেসামরিক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।

আরেক নিবন্ধে এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোপিয়ান সেন্টার অব প্যালেস্টাইন স্টাডিজের পরিচালক ইলান পাপ্পে বলেন, ‘ইসরাইলে কী ঘটবে তা ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন, তবে ইতিহাস আমাদের একটি সূত্র দিতে পারে। গত এক বছরে পূর্ণ শক্তিতে যে দ্বিতীয় প্রক্রিয়াটি সামনে এসেছে তা হলো ইসরাইলের বিচ্ছিন্নতা এবং ইহুদিবাদী প্রকল্পের সম্ভাব্য পতন।’ তার বর্ণিত ইতিহাসের সূত্র হচ্ছে আখেরে ইসরাইলের বিজয়ী না হওয়া। তার মতে, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যত করার মাধ্যমে আরব বিশ্বের কেন্দ্রস্থলে ইউরোপীয় ইহুদি রাষ্ট্র স্থাপনের মূল জায়নবাদী ধারণাটি ছিল অযৌক্তিক, অনৈতিক।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে নির্বিচারে নারী শিশু হত্যা করে ইসরাইল ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়ছে। অর্থনৈতিকভাবেও আকার ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে দেশটি। শত্রæর আক্রমণ দেশের ভেতরে ঐক্য সৃষ্টি করে। কিন্তু তেলআবিবে তা হয়নি। বরং রাজনীতিবিদরা বিভক্ত, কট্টরপন্থী উদারপন্থী বিভেদ আগের চেয়ে বেশি এখন। পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়তো এরপর কঠিনতর হবে।

লেখক : সাংবাদিক


আরো সংবাদ



premium cement