১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ৬ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

কর্তৃত্ববাদ খতম করতে হবে

- প্রতীকী ছবি

কর্তৃত্ববাদের কারণে বৈশ্বিকভাবে গণতন্ত্রের সঙ্কটের সূচনা হয়েছে ২০০৭-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে এবং তা অব্যাহত আছে ১৭ বছর ধরে। দেশে দেশে এই সঙ্কটের প্রকৃতি ও মাত্রাগত পার্থক্য আছে এবং অগণতান্ত্রিক শাসনের বিভিন্ন রূপ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এর কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্যও শনাক্ত করা যায়। বিভিন্ন গবেষণায় এসব সাধারণ প্রকৃতি, কারণ এবং পথরেখা নির্ধারণের চেষ্টা হয়েছে। গত কয়েক বছরে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এবং বিভিন্ন দেশের সুনির্দিষ্ট পটভ‚মিতে গণতন্ত্রের পশ্চাৎযাত্রা বিষয়ে গবেষণা হয়েছে, হচ্ছে। যেসব দেশে গণতন্ত্রের ক্ষয় হয়েছে, সেখানেই এ অবস্থার সূচনা এক দিনে হয়নি। কর্তৃত্ববাদ গণতন্ত্রের মুখোশের আড়ালে বজায় থেকেছে। যেকোনো সময়ে গণতন্ত্রের সঙ্কটের চেয়ে বর্তমান সঙ্কটের ভিন্নতা লক্ষণীয়।
নতুন কর্তৃত্ববাদ গণতন্ত্রের এক অনিবার্য উপাদান নির্বাচনের মধ্য দিয়েই সমর্থন ও বৈধতা লাভ করে। অনেক ক্ষেত্রে সেসব নির্বাচন হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন, অনেক ক্ষেত্রে সাজানো।

গণমাধ্যমের ওপরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চাপ তৈরি হয়েছে, তথ্য নিয়ন্ত্রণের বহুবিধ পথ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তৈরি করেছিল। ‘ডিজিটাল কর্র্তৃত্ববাদ’-এর প্রসার ঘটেছে। আওয়ামী লীগ সরকার নাগরিকের মৌলিক অধিকার সঙ্কুচিত করে, অনেক ক্ষেত্রে নাগরিকের জীবন বিপন্ন করে। কেবল যে নির্বাহী বিভাগের হাতে ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ ঘটে তা-ই নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়। আদর্শ হিসেবে জনতুষ্টিবাদ বা পপুলিজম, বিশেষত দক্ষিণপন্থী জনতুষ্টিবাদ জনপ্রিয়তা লাভ করে। সব ক্ষেত্রে শাসনব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল করে ফেলা হয়। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সংবিধানের বিধিবিধান বদলে দেয়ার ঘটনা ঘটে, আইনসভা হয়ে ওঠে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার। বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও সীমিত করা হয়।

সাম্প্রতিক পটপরিবর্তনে দেশে কর্তৃত্ববাদ খতম করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাংবিধানিক সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে।

বাংলাদেশের গত তিন দশকের রাজনৈতিক পথপরিক্রমা বিবেচনা করলে দেখা যায়, যে আশাবাদ ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে ১৯৯১ সালে গণতন্ত্রায়নের সূচনা হয়েছিল, তা থেকে যাত্রাপথ ভিন্ন হয়ে গেছে। এই শাসনব্যবস্থা এখন এমন একপর্যায়ে এসে উপস্থিত হয়েছে যে, এর সমর্থকরা পর্যন্ত একে আর ‘উদার গণতন্ত্র’ এমনকি ‘নির্বাচনী গণতন্ত্র’ বলতে পারছেন না।

২০১৪ সালে তাদের প্রত্যাশিত শাসন ছিল, তাদের ভাষায়- ‘গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব’। ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের আগে একে দেখানো হয়েছিল ‘কর্তৃত্ববাদ ও উগ্রবাদ’-এর মধ্যে পছন্দ হিসেবে, ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় শেখ হাসিনার ‘কর্তৃত্ববাদী’ বলে চিহ্নিত হওয়াকে ‘ব্যাজ অব অনার’ বা ‘সম্মাননা স্মারক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন (রয়টার্স, ২০১৮)।

২০২০ সালে এসে ক্ষমতাসীন দলের ওপরে প্রভাবশালী বলে পরিচিত একজন লেখক বলছেন, ‘দুর্বল ও আপসকামী গণতন্ত্রের বদলে কর্তৃত্ববাদী গণতন্ত্র চাই’, শেখ হাসিনা ‘প্রকৃত কর্তৃত্ববাদী গণতন্ত্র এখনো অনুসরণ করছেন না’ এবং ‘শেখ হাসিনাকে কর্তৃত্ববাদী গণতন্ত্র আরো কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।’ (চৌধুরী, ২০২০) তার পরও শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগের প্রচলিত একদলীয় ব্যবস্থা ‘বাকশাল’কে ‘জাতীয় ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম’ বলে বর্ণনা করেন (চ্যানেল আই, ২০১৯; বাংলা নিউজ২৪, ২০২০)। ২০১৬ সালে স্ট্র্যাটেজিক ফোরকাস্ট এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, বাংলাদেশ একদলীয় কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে’ (স্ট্র্যাটেজিক ফোরকাস্ট ২০১৬)।

২০১৮ সালে একটি আন্তর্জাতিক সাময়িকী একই উপসংহারে পৌঁছায় (ইকোনমিস্ট ২০১৮)। আরেকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ২০১৮ সালে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল ‘বাংলাদেশ কি একদলীয় ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে? (আলজাজিরা, ২০১৮) ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর একজন বিশ্লেষক বলেন, বাংলাদেশ এখন কার্যত একদলীয় রাষ্ট্র (ডায়ার, ২০১৯)।

গণতন্ত্রের সঙ্কটের এসব বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক পর্যায়ে গণতন্ত্রের সঙ্কটে এসব বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষাপটে ক্রমান্বয়, এ প্রশ্নটিই এখন সামনে আসছে যে, এ সঙ্কট থেকে বেরোনোর পথ কী। একইভাবে বাংলাদেশের ক্ষয়িষ্ণু গণতন্ত্রের ধারা, যা ইতোমধ্যেই হেজিমনিক ইলেকটোরাল অথরিটারিয়ানিজম বা আধিপত্যশীল নির্বাচনী কর্তৃত্ববাদে রূপ নিয়েছে- তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোন পথে? গণতন্ত্রের এই সঙ্কটে ২০২০ সালে মাত্রা যোগ হয়েছে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড ১৯-এর কারণে। মার্চ মাসে মহামারী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পটভ‚মিকায় এর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় অনেকেই এটি গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেন যে, জনস্বাস্থ্যের কথা বলে একনায়ক শাসকরা এমনকি উদার গণতন্ত্রের কোনো কোনো শাসকও জনগণের অধিকার সঙ্কুচিত করবেন। মার্চ মাসে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান যখন সংসদের মাধ্যমে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য জরুরি অবস্থাকালীন ক্ষমতা লাভ করেন, সেই সময়ে এ আশঙ্কা আরো স্পষ্ট হয়। পরে বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই নাগরিকের অধিকার সঙ্কুচিত হতে থাকে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চীনের ‘সাফল্য’ এবং বিপরীতে ইউরোপের ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যর্থতা’ এই প্রশ্নের জন্ম দেয় যে, মহামারী মোকাবেলায় গণতন্ত্রের চেয়ে কর্তৃত্ববাদ অধিকতর কার্যকর কি না, যা আসলে ‘সহনীয় মাত্রায় কর্তৃত্ববাদের’ দিকেই ইঙ্গিত করতে চাইছে (ব্লুমফিল্ড ২০২০)। এই বিতর্কের কোনো চূড়ান্ত উত্তর আমরা এখনো পাইনি, তবে এটি ঠিক, গণতন্ত্রকে আদর্শিকভাবে দুর্বল করতে যারা উৎসাহী, তারা এভাবেই বিতর্কের এজেন্ডা তৈরি করতে চান।

গণতন্ত্রের এ সঙ্কটের বিভিন্ন দিক নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, সেখানে এ বিষয়ও গুরুত্ব পাচ্ছে যে, এ সঙ্কটের কারণ কী। অবশ্যই প্রতিটি দেশে রাজনীতির বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ এই সঙ্কটের গভীরতা ও ব্যাপ্তি তৈরি করেছে। কিন্তু সাধারণভাবে এর কতগুলো কারণও সুস্পষ্ট। এর অন্যতম দিক হচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো।

২০০৮ সালে বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা যায় তার উৎস যুক্তরাষ্ট্রে, কিন্তু তা যে কেবল সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছিল তা নয়, এর মধ্য দিয়ে বিরাজমান বৈষম্য এবং কাঠামোগত দুর্বলতা উৎকটভাবে চোখে পড়ে। এর অন্তর্নিহিত কারণ হচ্ছে, যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে এবং মধ্য ১৯৮০-এর দশক থেকে যে অর্থনৈতিক আদর্শ-নিওলিবারেলিজম-দেশে দেশে নীতিনির্ধারণে দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

২০০৯ সালে পৃথিবীর ৩৫ শতাংশের বেশি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের পরাজয় ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, বিরাজমান ব্যবস্থায় নাগরিকরা অসন্তুষ্ট। যদিও এক বছর পর ২০১০ সালে এসে কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেছিলেন, গণতান্ত্রিক দেশগুলো এ সঙ্কট মোকাবেলায় তুলনামূলক সফল (ডেভিস ও ক্যারোথারস ২০১০)। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বড় ধরনের সঙ্কটের ইঙ্গিত তখনই দেখা গিয়েছিল।

লক্ষণীয় যে, উদার গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ ও অসন্তোষ আসলে আরো গণতন্ত্রের দাবি তুলেছে- গণতন্ত্র পরিহারের নয়। সংস্কার বা পরিবর্তন যেভাবেই এই দাবিকে প্রকাশ করা হোক না কেন, তার সারমর্ম অংশগ্রহণের, জবাবদিহির। এর অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে ২০২০ সালের গ্রীষ্মকালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্লাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন। মহামারীর বিস্তার সত্ত্বেও ২০২০ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে স্মরণকালের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক ভোটারের অংশগ্রহণ এই ইঙ্গিতও দেয় যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই নাগরিকরা তাদের রায় দিতে চান। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদিও নির্বাচনের ব্যাপারে নভেম্বরের ভোটের আগেই সংশয়-সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা নির্বাচনের ওপরে আস্থা রেখেছেন এবং প্রেসিডেন্টের হুমকি সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচন এবং নতুন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে গণতন্ত্রের যে ক্ষয় ঘটেছে, তাকে সম্ভবত বদলাতে সক্ষম হবে, কিন্তু সমাজের ভেতরে যে গভীর বিভাজন, তা ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের জন্য আরো বড় ধরনের হুমকি তৈরি করবে কি না, সেটি একটা প্রশ্ন। উপরন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আর বৈশ্বিক পর্যায়ে গণতন্ত্রের নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব কি না, সেই প্রশ্নও বিবেচ্য। তাই অতি আধুনিক পুঁজিবাদ ও নয়া উদারবাদী অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষকে সুবিধা দেয়ার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নীতি।

সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে যেসব পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তারা বলেছেন তার মধ্যে আছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বজায় রাখতে রাজনীতিতে অর্থের ভ‚মিকা নিয়ন্ত্রণ করা, প্রাতিষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা সমুন্নত রাখা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহারে সংযম দেখানো : বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা এবং বিচারপতিদের নিয়োগ ও বহাল রাখার ব্যাপারে স্বচ্ছ পদ্ধতি তৈরি করা; স্বচ্ছ বিচার বিভাগীয় পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা। বিরোধী রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীগুলোর প্রতি তাদের সুপারিশ হচ্ছে অন্য বিরোধী দলের সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি করা। তারা এই নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে বলেছেন সিভিল সোসাইটির গোষ্ঠীগুলোকে এবং যেখানে সম্ভব যথোপযুক্ত আন্তর্জাতিক সংগঠন ও ব্যক্তিদের। তাদের দ্বিতীয় সুপারিশ হচ্ছে- যেখানেই সম্ভব বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক বিরোধী জোট গঠন করা এবং গণভোটের জন্য চাপ দেয়া। নির্বাচন মনিটরিংয়ের সক্ষমতা তৈরি এবং নির্বাচনপদ্ধতি সংস্কারের দাবি তুলতে নির্বাচনের সময় সংঘটিত ব্যত্যয়গুলো প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা। স্বাধীন গণমাধ্যমকে চারটি প্রধান বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে; তাতে আছে গণমাধ্যমগুলোর নিজস্ব পরিচালনা পদ্ধতিতে উন্নয়ন ও স্বচ্ছতা আনা এবং গণমাধ্যমের আত্মসমালোচনার এবং সমালোচক গোষ্ঠী তৈরি করা।

আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি যেসব সুপারিশ করা হয়েছে তার একটি দিক হচ্ছে, মিথ্যা তথ্য প্রচারের মুখোশ খুলে দেয়ার কাজে স্থানীয় স্বাধীন গণমাধ্যম ও সিভিল সোসাইটি সংগঠনকে সাহায্য করা এবং এগুলোকে শনাক্ত করার দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করা। এসব পরামর্শের কিছু কিছু ক্ষীয়মাণ গণতন্ত্রের জন্যও প্রযোজ্য। গণতন্ত্রকামীদের জন্য এ থেকে শিক্ষা নেয়ার, কার্যকর কৌশল তৈরির পথ খোঁজার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির। মনে রাখা জরুরি, বৈশ্বিক এ সঙ্কট যেন কোনো দেশে গণতন্ত্রকে হত্যার বৈধতা না দেয় : যেন স্বৈরাচারী শাসকরা না বলতে পারেন, এই প্রবণতা বৈশ্বিক, ফলে এটিই স্বাভাবিক। কোনো রোগ মহামারী হয়ে ওঠার মানে এই নয় যে, তা-ই স্বাভাবিক। এই প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পথরেখাকে চিহ্নিত করার কথা বিবেচনা করতে হবে।

গত এক দশকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের যে ব্যাপক ক্ষয় হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে, বিরাজনীতিকরণের পরিসর যেভাবে সর্বব্যাপ্ত হয়েছে, সেই বিবেচনায় এই ধারাকে উল্টে দেয়ার কাজ সহজ হবে না। এ অবস্থা থেকে সরে আসার জন্য প্রথমেই দরকার একটি সুষ্ঠু, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা। সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বা রক্ষা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ, অন্যান্য আইন এবং বিভিন্ন সময়ে উচ্চ আদালতের দেয়া রায় থেকে এটি স্পষ্ট যে, দেশের নির্বাচন কমিশনের হাতে যে ধরনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বাস্তবে এ ক্ষমতার প্রয়োগ সীমিত, আর তার অন্যতম কারণ বিরাজমান শাসনব্যবস্থা। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের মধ্য দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর দেশে একটিও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি।

আওয়ামী লীগ আমলাতন্ত্রকে যেভাবে ভোট ডাকাতি, সন্ত্রাসী ও বেআইনি কাজে ব্যবহার করেছিল, তা কাঠামোগতভাবে গণতন্ত্রের জন্য বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। এবারের গণ-অভ্যুত্থানে তা তছনছ হয়ে গেছে। দেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

লেখক : কলামিস্ট, নব্বইয়ের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্রনেতা


আরো সংবাদ



premium cement