০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ৫ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় করণীয়

- প্রতীকী ছবি

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন। পালানোর আগ পর্যন্ত শেখ হাসিনার যুদ্ধংদেহী মনোভাব ছিল এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে তিনি আরো অনেক মানুষ মারার পক্ষপাতী ছিলেন। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনীর ওপর তিনি চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছিলেন কিন্তু শেষমেশ পরিস্থিতি বেগতিক বুঝতে পেরে হেলিকপ্টারে করে দ্বিতীয়বারের মতো ভারতে আশ্রয় নেন। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর তিনি জার্মানি থেকে ভারতে গিয়েছিলেন এবং ছয় বছর সেখানে অবস্থান করেন।

আগস্ট মাসে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার আগ পর্যন্ত কতজন আন্দোলনকারী শাহাদতবরণ করেছেন এবং কতজন আহত হয়েছেন তার চূড়ান্ত কোনো সরকারি হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। সরকারি হিসাবে সাড়ে ৭০০র মতো, আর ছাত্র সমন্বয়কদের মতে দেড় হাজারের মতো। হিসাবের এত পার্থক্য কেন হচ্ছে খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ এখন পর্যন্ত যদি শহীদ ও আহতদের হিসাবই না পাওয়া যায় তা হলে সরকারি সহায়তা কিভাবে সবাইকে পৌঁছানো সম্ভব?
এ ছাড়া শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সেটাও সবার জানা দরকার। গণভবনকে মিউজিয়াম বানানোর ঘোষণা ছাড়া এ ধরণের আর কোনো ঘোষণা এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে খেতাব দেয়া হয়েছিল এবারো শহীদ ও আহতদের সে রকম খেতাব দেয়া যেতে পারে। তবে তখন যেমন ‘বীরশ্রেষ্ঠ’, ‘বীর উত্তম’, ‘বীর বিক্রম’ ও ‘বীর প্রতীক’ খেতাব দেয়া হয় এবার সে রকম খেতাব দেয়ার দরকার নেই। কারণ মুক্তিযুদ্ধ ছিল সশস্ত্র লড়াই আর এবারের লড়াই ছিল সশস্ত্রদের বিরুদ্ধে নিরস্ত্রদের লড়াই। এ লড়াই এ দিক থেকে এক অনন্য লড়াই। হিংস্র, নৃশংস ঘাতকদের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে গুলি খাওয়ার লড়াই।

এ ব্যাপারে আমাদের প্রস্তাব হলো, শহীদদের জন্য দুই ধরনের খেতাব দেয়া যেতে পারে যেমন, ‘নাগরিক বীরশ্রেষ্ঠ’ ও ‘নাগরিক বীর উত্তম’ আর আহতদের দেয়া যেতে পারে ‘নাগরিক বীর’। বাংলাদেশে সাহসিকতাপূর্ণ অবদান রাখতে নাগরিকদের কোনো খেতাব দেয়া হয় বলে আমাদের জানা নেই। যদি এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা না থাকে তা হলে সাহসিকতার জন্য নাগরিকদের খেতাব দেয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পৃথিবীর অনেক দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে।
এবারের গণ-অভ্যুত্থানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র শহীদ আবু সাঈদের বুকচিতিয়ে গুলি খাওয়ার দৃশ্য ছাত্রদের মন থেকে গুলি খাওয়ার ভীতি সরিয়ে দিয়ে উল্টো হাসিমুখে গুলি খাওয়ার স্পৃহা জাগিয়ে দিয়েছে। ফলে ফ্যাসিস্ট বাহিনী যতই গুলি করেছে ছাত্র-জনতা আরো বেশি করে রাস্তায় নেমে এসেছে। সে কারণে আবু সাঈদের স্মৃতি জাগরুক করে রাখতে উত্তরবঙ্গে তার নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করা যেতে পারে। এ ছাড়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নতুন হলের নাম তার নামানুসারে রাখা যেতে পারে। আবু সাঈদের শাহাদতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি শর্ট ফিল্মও তৈরি করা যেতে পারে।

অনেকেই মনে করেন, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র শহীদ আবরার ফাহাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের ঘৃণা তীব্রতর করেছে। তার স্মৃতিরক্ষার্থে বুয়েটে তার নামে একটি নতুন হল নির্মাণ করা যেতে পারে। আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। সেই বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা উচিত।

দেশের বিভিন্ন স্থানে শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে যেসব প্রতিষ্ঠান (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ) রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে শহীদদের নামে রাখা যেতে পারে। শহীদরা যেসব এলাকায় বসবাস করতেন সেসব এলাকার সড়কগুলোর নামও পরিবর্তন করা যেতে পারে।
এ ছাড়া ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা প্রয়োজন। যেখানে সব শহীদের নাম উৎকীর্ণ থাকবে। আন্দোলনের যে চারটি ‘হট স্পট’ ছিল উত্তরা, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী ও মিরপুর, তার যেকোনো একটি স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সাথে নতুন কিছু সংযুক্ত করে শহীদদের স্মরণে কোনো কিছু করা যায় কি না সরকার সেটাও ভেবে দেখতে পারেন। কারণ সারা দেশেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার রয়েছে এবং তাতে নতুন কোনো স্তম্ভ যুক্ত করা হলে নতুন করে আর কোনো জায়গা বরাদ্দ করতে হবে না। নির্মাণ খরচও কম পড়বে। এ ব্যাপারে স্থপতিসহ অন্যদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement