০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১, ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব

- প্রতীকী ছবি

গত ১৫ বছরে আওয়ামী সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে স্বৈরশাসনের হাতিয়ারে পরিণত করে এবং উপহার দেয় পরপর তিনটি প্রহসনের নির্বাচন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত অবিলম্বে নির্বাচন ব্যবস্থার পুনর্গঠন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে কার্যকর নির্বাচন কমিশন লাগবে। কারণ, গত ১৫ বছরে দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো এটিকেও ধ্বংস করা হয়েছে। বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থায়, শুধু কমিশনের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে অবাধ, নিরপেক্ষ, কালো টাকা ও পেশিশক্তি বিবর্জিত এবং প্রশাসন-পুলিশের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না। নিতে হবে যুগান্তকারী ও টেকসই নির্বাচনী পদ্ধতি।

নির্বাচন আধুনিক গণতন্ত্রের ভিত্তি। নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র চলতে পারে না। তাই আধুনিক রাষ্ট্রে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে শুধু সরকারের বদল কিংবা সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার বাইরে সর্বজনগ্রাহ্য একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা আদৌ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। ১৯৯১ সালে দেশে সংসদীয় ব্যবস্থা চালুর পরে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে একটি তুলনামূলক ভালো নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছিল, মাঝখানে এসে সেই পদ্ধতি বাতিল করে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়। এ পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচন বিতর্কমুক্ত থাকেনি। তুলনামূলকভাবে কম বিতর্কিত নির্বাচনগুলো হয়েছে মূলত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।

বাস্তবতা হলো, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে যতই স্বাধীন বলা হোক না কেন, দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যখন দেশের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী দলগুলো সক্রিয় থাকে, তখন কমিশনের পক্ষে শতভাগ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করা কঠিন। আবার কমিশন যতই নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতমুক্ত থাকুক না কেন, মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কতটা চাপমুক্ত থাকতে পারে, সে প্রশ্ন পুরনো।

বিশ্বে অনেক ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তার মধ্যে First Past the Post (FPTP) পদ্ধতি, Additional Member পদ্ধতি, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক বা Proportional Representation (PR), মিশ্র নির্বাচনী ব্যবস্থা, পছন্দানুক্রম ব্যবস্থা বা preferential voting methods, সিঙ্গেল ট্রান্সফারেবল ভোট (STV) পদ্ধতি, সম্মিলিত অনুমোদন ভোটিং বা Collective Approval Voting (CAV) পদ্ধতি, Two Round of Voting (TRV) পদ্ধতি এবং সম্পূরক ভোট বা Supplementary Voting (SV) পদ্ধতি অন্যতম।

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা পৃথিবীব্যাপী জনপ্রিয় ব্যবস্থা। সংসদের আসন বণ্টনে জনগণের মতামতের আরো বেশি প্রতিফলন ঘটাতেই ওয়েস্টমিনস্টারিয়ান/মেজরিটেরিয়ান নির্বাচন ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে এই ব্যবস্থার উদ্ভব হয়। এ ব্যবস্থায় মূলত রাজনৈতিক দলগুলোকে পুরো দেশে অথবা একটি বৃহত্তর নির্বাচনী এলাকায় প্রাপ্ত মোট ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন দেয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ বলতে গেলে, কোনো দেশের জাতীয় সংসদে আসন সংখ্যা যদি ৫০০ হয়, তাহলে ক, খ এবং গ এই তিনটি রাজনৈতিক দল যদি যথাক্রমে সারা দেশের কাস্টিং ভোটের ৫০%, ৩০% এবং ২০% পেয়ে থাকে, তাহলে সংসদে ক-এর জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা হবে (৫০০-এর ৫০%) বা ২৫০, খ-এর জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা হবে (৫০০ এর ৩০%) বা ১৫০ এবং গ-এর জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা হবে (৫০০-এর ২০%) বা ১০০।

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা বেশ কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে : Party list, Single Transferable Vote এবং Mixed Member. বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা হচ্ছে ওয়েস্টমিনস্টারিয়ান ব্যবস্থার একটি বিশেষ রূপ First Past the Post (FPTP)। এই ব্যবস্থার মূল সমস্যা হচ্ছে, এতে জনগণের প্রচুর ভোট নষ্ট হয় অর্থাৎ সংসদে আসন বণ্টনে এসব ভোটের প্রতিফলন ঘটে না। উদাহরণস্বরূপ : একটি আসন থেকে ক ও খ- এই দু’টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ক পেয়েছে ৬০% ভোট এবং খ পেয়েছে ৪০% ভোট। এখন বিদ্যমান ওয়েস্টমিনস্টারিয়ান ব্যবস্থায় এই আসন থেকে ক-এর প্রার্থী বিজয়ী হবে। কিন্তু খ-এর প্রার্থী যে ৪০% ভোট পেয়েছে তার কোনো প্রভাব বাকি নির্বাচনে পড়বে না। ফলে এই ৪০% ভোটকে নষ্ট ভোট বলা হয়। অথচ এই নষ্ট ভোট মোট কাস্টিং ভোটের বিশাল অংশ হতে পারে।

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক বা PR নির্বাচন ব্যবস্থায় ভোট নষ্ট হওয়ার ব্যাপারটি নেই। এ ব্যবস্থায় আলাদা আলাদা আসনে নির্বাচনের ফলের ভিত্তিতে নয়; বরং পুরো দেশে প্রাপ্ত মোট ভোটের অনুপাতে কোনো রাজনৈতিক দলকে সংসদে আসন দেয়া হয়।

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থার আরো বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি আসনভিত্তিক হওয়ায় ছোট ও নতুন দলগুলোর সংসদে আসন পাওয়াই দুষ্কর। অথচ এসব দলের কাছে বড় দলগুলোর চেয়ে ভালো চিন্তা ও ধারণা থাকতে পারে। আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার ফলে অনেক ছোট এবং নতুন রাজনৈতিক দল সংসদে আসন পেয়ে দেশের জন্য আরো বড় পরিসরে অবদান রাখার সুযোগ পায়। এ ব্যবস্থার আরেকটি সুবিধা হচ্ছে উপনির্বাচনের ঝামেলা এড়ানো। সংসদে কোনো আসনের প্রতিনিধি মারা গেলে অথবা অন্য কারণে তার দায়িত্ব সম্পাদনে আর সমর্থ না হলে ওই আসনপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দলের লিস্টে ক্রমানুসারে থাকা পরবর্তী প্রার্থী সেই আসনের প্রতিনিধিত্ব পাবেন। এর ফলে উপনির্বাচনের ঝামেলা ও বিশাল খরচ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ ব্যবস্থায় আসনভিত্তিক প্রার্থীকেন্দ্রিক নির্বাচন না হওয়ায় নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের টাকার খেলা, পেশিশক্তি, সহিংসতা, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাইসহ বিভিন্ন অরাজকতা কমবে।

আনুপাতিক ব্যবস্থায় নির্বাচনী ফলাফলের একটি স্থিতিশীলতা থাকে। পাঁচ বছর পরপর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে ক্ষমতাসীন ও প্রধান বিরোধী দলের প্রাপ্ত ভোট এবং সে অনুপাতে প্রাপ্ত আসন সংখ্যা খুব নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয় না। ফলে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল জানে পরবর্তী মেয়াদে সে ক্ষমতাসীন নাও থাকতে পারে। ফলে বিরোধী দলের ওপর রাজনৈতিক নিপীড়নের শঙ্কা হ্রাস পায়।

আনুপাতিক ব্যবস্থার কিছু জটিলতাও রয়েছে। সাধারণত, এ ব্যবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাখা হয় না। ফলে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শ ও কর্মসূচির সাথে একমত না হলে নির্বাচনে দাঁড়ানো যায় না, যা গণতন্ত্রের চেতনাবিরোধী। এ ছাড়াও এ ব্যবস্থায় আসনভিত্তিক প্রার্থীকেন্দ্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ সদস্য উঠে আসে না; বরং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী লিস্ট থেকে সংসদ সদস্য উঠে আসে। ফলস্বরূপ কোনো অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য সে অঞ্চলের বাইরে থেকে আসতে পারেন। ফলে ওই অঞ্চলের মানুষের চাহিদা, আকাক্সক্ষা, সমস্যা তিনি নাও বুঝতে পারেন।

বাংলাদেশে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চারটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে ধরে নেয়া হয়। এই চারটি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৩০.৮১% ভোট এবং আওয়ামী লীগ পায় ৩০.০৮% ভোট। কিন্তু তাদের প্রাপ্ত মোট ভোটের মাত্র ০.৭৩% পার্থক্যের জন্য তাদের প্রাপ্ত আসনের পার্থক্য ছিল ৫২টি বা ১৭.৩৩%। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৩৩.৬১% ভোট এবং আওয়ামী লীগ ৩৭.৪৪% ভোট পায়। কিন্তু তাদের প্রাপ্ত মোট ভোটের মাত্র ৩.৮৩% পার্থক্যের জন্য তাদের প্রাপ্ত আসনের পার্থক্য ছিল ৩০টি বা ১০%। এ থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের নির্বাচনগুলোতে প্রাপ্ত কাস্টিং ভোটের পার্থক্যের তুলনায় প্রাপ্ত আসনের পার্থক্য কতটা বেশি। বিদ্যমান ব্যবস্থায় সংসদে আসনের পার্থক্যের মাধ্যমেই রাষ্ট্রীয় পলিসি নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশীদারিত্ব নির্ধারিত হয়। কিন্তু পূর্বোল্লিখিত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ফলাফল থেকেই বোঝা যায় যে, বাংলাদেশের ভোটারদের ভোটের যথাযথ প্রতিফলন সংসদীয় আসন তথা রাজনৈতিক দলগুলোর অংশীদারিত্বের বণ্টনের ক্ষেত্রে হয়নি। তাই প্রাপ্ত ভোট ও আসনের এই অসামঞ্জস্য পুরোপুরি অন্যায্য।

বরঞ্চ পুরো দেশে প্রাপ্ত মোট ভোট অনুযায়ীই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আসন বণ্টন হওয়া উচিত, যা কেবল আনুপাতিক ব্যবস্থাতেই সম্ভব।

পৃথিবীর অনেক দেশে আনুপাতিক ব্যবস্থা গ্রহণের সময় সেসব দেশের চাহিদা ও পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ী গড়েপিটে নেয়া হয়েছে। আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আসনভিত্তিক প্রার্থীর ধারা যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হলে এটি বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত মডেল হতে পারে।
বাংলাদেশে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনী ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হলো :

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যবস্থা হবে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক। এতে দেশে ও প্রবাসে অবস্থানরত সব ভোটারের প্রাপ্ত মোট ভোটের অনুপাতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংসদীয় আসন বণ্টন করা হবে।

কোনো রাজনৈতিক দল যতগুলো আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় ঠিক ততসংখ্যক প্রার্থীর তালিকা নির্বাচন কমিশনে জমা দেবে। এ ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দল সর্বোচ্চ ৩০০ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করতে পারবে। কোনো দলের প্রার্থী একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। তবে কোনো আসনে কোনো দলের মনোনীত প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হলে, প্রত্যাহার করলে, নিরুদ্দেশ হয়ে গেলে কিংবা মারা গেলে, দলটি ওই আসনে ভিন্ন প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে।

সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে হলে কোনো রাজনৈতিক দলকে সারা দেশে মোট কাস্টিং ভোটের কমপক্ষে ০.৩৪% ভোট পেতে হবে। যেহেতু বাংলাদেশে সংসদীয় আসন ৩০০টি, সেহেতু আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থায় একটি আসনের মাধ্যমে ০.৩৪% ভোটের প্রতিফলন ঘটে।

বাংলাদেশের সব নাগরিকের নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ ও সংসদে স্বাধীন প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থাতেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা আবশ্যক। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনটি সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী সারা দেশে মোট কাস্টিং ভোটের ন্যূনতম ০.৩৪% ভোট পেলে সংসদ সদস্য হতে পারবেন। তবে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত ০.৩৪%-এর যত বেশিই হোক না কেন, একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী একটি আসনেরই প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন।

কোনো রাজনৈতিক দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থী যে আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় সে আসনের কমপক্ষে ৩% ভোটারের সম্মতিক্রমে তাদের টিপসই বা স্বাক্ষর (ভোটার আইডির নাম্বারসহ) নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে।

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থায় আসনভিত্তিক ফলাফলের পরিবর্তে সারা দেশে মোট কাস্টিং ভোটের ভিত্তিতে ফলাফল নির্ধারিত হবে। নির্বাচনে বিশাল প্রবাসী জনগোষ্ঠীর মতামতের প্রতিফলন ঘটাও জরুরি। এ কারণে নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রবাসীদেরও ভোটদানের সুযোগ রাখা হবে। বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করবে।

কোনো রাজনৈতিক দল প্রার্থী তালিকার বাইরে সর্বোচ্চ ১০% সংসদ সদস্য নিয়োগ দিতে পারবে।

নির্বাচনের স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য বিতর্কিত ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থা বাতিল করা।
নির্বাচন নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ রাখতে নির্বাচন কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোট দানের সুযোগ না রাখা এবং কোনো সরকারি চাকরিজীবী চাকরি ছাড়ার কমপক্ষে পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা বাতিল করা।
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সবচেয়ে বড় নিয়ামক শক্তি হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য দরকার সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনকে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে হলে এতেও আশু সংস্কার প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাব :

নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে সরকারপ্রধান, প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা এবং প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন।

কমিটি অবসরপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্ন ভাবমর্যাদাসম্পন্ন বিচারপতি ও স্বায়ত্তশাসিত পদধারীদের মধ্য থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দানের সুপারিশ করবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানপরবর্তী নতুন বাংলাদেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি এবং সহনশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন জনগণের মতামতের নিখুঁত প্রতিফলন ঘটে এমন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ধারা প্রচলন করা। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা চালু করা হলে আপামর জনগণ ও বিপ্লবী ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্খার বাস্তব প্রতিফলন ঘটবে।

লেখক : এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ অ্যান্ড থটস


আরো সংবাদ



premium cement