২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন

- প্রতীকী ছবি

আমাদের দেশে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ অনুযায়ী প্রকাশ্যে ধূমপান করলে ৩০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানার কথা বলা হয়েছে। বাস্তবে এই আইন মাঠপর্যায়ে কখনো প্রয়োগ হয়নি। ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের সাথে সামঞ্জস্য আনতে আইন সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দেশে গত পাঁচ বছরে হেক্টরপ্রতি তামাক উৎপাদন ২১ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, তামাকচাষিরা অন্যান্য কৃষকের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি আয় করেন; যা অন্যতম অর্থকরী ফসল পাটের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি। তামাক চাষে মাটি ও পানিদূষণসহ বহুমুখী ক্ষতিকর প্রভাব থাকলেও এর উৎপাদন ঊর্ধ্বগামী। এতে শুধু জনস্বাস্থ্য নয়, পরিবেশেরও ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ বন উজাড় করা হয়, তার ৩০ শতাংশের বেশি হয় তামাক চাষে।

২০১৫ সালে কুষ্টিয়ায় পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, কীটনাশক থেকে অ্যালডিকার্ব সালফোনিকের মতো বিষাক্ত বিভিন্ন বিপজ্জনক অবশিষ্টাংশ মিসে পানি বিষাক্ত করে। যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। তামাকজাত পণ্যের মধ্যে প্রধান হচ্ছে সিগারেট, যা গ্রহণ করাকে ধূমপান বলা হয়। পৃথিবীতে এটি এমন একটি পণ্য, যার গায়ে বড় স্পষ্ট করে লেখা থাকে ‘ধূমপান মৃত্যু ঘটায়’, ‘ধূমপান ক্যান্সারের কারণ’ ইত্যাদি।

গবেষণায় প্রতীয়মান হয়, সিগারেটে নিকোটিনসহ ৫৬টি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী মিউটাজেন। এটি মানুষের মুখ, শ্বাসনালি এবং ফুসফুসে ক্যান্সার সৃষ্টি করে। ধূমপান শুধু ধূমপায়ীর ক্ষতি করে না, ধূমপায়ীর কাছাকাছি থাকা অধূমপায়ীরও ক্ষতি করে। পরোক্ষ ধূমপানে ফুসফুসে ক্যান্সার, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিস (সিওপিডি), যক্ষা ও অ্যাজমা হয় বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এরকম স্বঘোষিত ক্ষতিকারক একটি পণ্যের প্রতি আসক্তি তরুণ প্রজন্মের ওপর জেঁকে বসেছে। সংবাদমাধ্যমের খবর, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাসে কোটি টাকার সিগারেট বিক্রি হয়। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও দিনে বিক্রি হয় লাখ টাকার সিগারেট। যেখানে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ধূমপানে আসক্ত। আবার ধূমপান আসক্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী রয়েছেন। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ধূমপানে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। বাংলাদেশে বছরে তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যান। অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্সের (আত্মা) পরিসংখ্যান, দেশে তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতায় বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়, যা তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের চেয়ে বেশি।

আমাদের যত না ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি জরুরি প্রতিরোধ আইন। তামাকজাত পণ্য ধূমপান আসক্তি পরবর্তীতে মাদকাসক্তির দিকে আকৃষ্ট করে, যা সর্বোপরি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য ক্ষতিকর।

যেকোনো মাদকে আসক্ত ব্যক্তি সামাজিক মূল্যবোধহীন হয়ে থাকেন; একই সাথে সবার জন্য হয়ে পড়েন বোঝা। আর ধূমপান যেহেতু মাদকাসক্ত হওয়ার প্রথম ধাপ; তাই ধূমপানের প্রতি প্রলুব্ধ করা বন্ধ করতে হবে। হরহামেশা সিনেমা, নাটক বা যেকোনো ওয়েব সিরিজে সিগারেটকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা হয়। এটি কঠোরভাবে বন্ধ করা দরকার। তরুণ ও বৃদ্ধদের মতো শিশুরাও ধূমপানের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, যেটি সমাজের জন্য আগাম ধ্বংসের বার্তা। ধূমপান নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রজননে বিরূপ প্রভাব ফেলে। ধূমপায়ী নারীর মা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়, শিশু মৃত্যুহার বেড়ে যায়। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের এতসব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতির পাশাপাশি ধর্মীয় অনুশাসনে বিশেষ করে ইসলামে নিন্দনীয়। অথচ বাংলাদেশে বিরানব্বই শতাংশ মানুষ মুসলিম। কিন্তু এ দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ ধূমপায়ী।

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান একটি দেশ। এখানকার মাটি খুব উর্বর। এটা কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশে আরো সুফল বয়ে আনতে পারে। এটি মানুষের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা যেমন আনবে, তেমনি অন্য কৃষিজ পণ্য উৎপাদিত হয়ে বাংলাদেশের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাই তামাকশিল্পের প্রভাব কমাতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে এটিই জনপ্রত্যাশা।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া


আরো সংবাদ



premium cement
ডেসটিনির রফিকুল আমীনসহ ১৯ জনের মামলার রায় ১৫ জানুয়ারি আবারো হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে ট্রাকের ধাক্কা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের ইসকন ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে সরকার : হাইকোর্টকে রাষ্ট্রপক্ষ উজিরপুরে রিকশা ও ইজিবাইকের ব্যাটারি চুরির হিড়িক ৯ দফা দাবিতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমাবেশের ডাক চট্টগ্রাম আদালতে দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতি চলছে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন বরখাস্ত ম্যাজিস্ট্রেট উর্মি শ্রীলঙ্কায় আকস্মিক বন্যায় পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অপ্রীতিকর ঘটনায় প্রধান বিচারপতির উদ্বেগ, ন্যায়বিচারের আশ্বাস তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছে ১২ ডিগ্রির ঘরে

সকল