২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

চাঁদাবাজদের খুঁটির জোর কোথায়

- প্রতীকী ছবি

নীরবে নিভৃতে চলছে চাঁদাবাজি। প্রতিরোধ সেভাবে করা যাচ্ছে না। তবে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগের কথা বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, বাজারব্যবস্থায় চাঁদাবাজি বন্ধ না হয়ে শুধু মুখবদল হয়েছে। (সূত্র : ০৯ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো)

রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি আবার আগেররূপে ফিরে এসেছে। মুদির দোকান থেকে শুরু করে চায়ের দোকান, রাস্তার পাশে তরকারি দোকান, ভ্যানগাড়ির দোকান, ফুটপাথের দোকান, নতুন ভবন নির্মাণ, অটোরিকশায়, লেগুনা গাড়িতে, বাসে, ট্রাকে, সিএনজিতে, ময়লার গাড়িতে, বালু উত্তোলনে, যেকোনো বাজারে, গার্মেন্ট কারখানায় চাঁদাবাজি চলে। ফুটপাথের চাঁদাবাজি বন্ধ করার জন্য সরকার কার্ড পদ্ধতি চালু করতে পারে। যে কেউ ইচ্ছে করলেই যেন ফুটপাথে বসতে না পারে। যাদের কার্ড থাকবে তারাই ফুটপাথে বসতে পারবে। সবচেয়ে ভালো হয় ফুটপাথের ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট দিনে বসার ব্যবস্থা করে দেয়া। দেশের মানুষ দুইভাবে চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে। প্রথমত, কিছু মানুষকে সরাসরি চাঁদা দিতে হয়। দ্বিতীয়ত, পণ্য পরিবহন ও পরিবহন খাতে চাঁদা দিতে হয়। ব্যবসায়ীরা চাঁদা দেয়াকে ব্যবসার খরচ হিসেবে মেনে নিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে ভোক্তাপর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। কোনো পণ্য সরাসরি ভোক্তার কাছে আসে না। ভোক্তাপর্যায়ে আসতে হলে অনেক ধাপ অতিক্রম করতে হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী, স্থানীয় মজুদদার, খুচরা বাজার, পাইকারি বাজার, পাইকারি ব্যবসায়ী, কেন্দ্রীয় বাজার, প্রক্রিয়াজাতকারী ও আড়তদার পর্যন্ত আসতে ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদা ভাগ-বাটোয়ারা হয়। কারা কারা এখান থেকে ভাগিদার হয় তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বিএনপিকে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করতে হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে না পারলে দলটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সারা দেশে পরিবহন খাত থেকে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নামে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার চাঁদা তোলা হয়। প্রতিটি বাস-ট্রাক থেকে প্রতিদিন ৭০ টাকা তোলা হয়, গেটপাস বা জিপি কিংবা সমিতির সদস্য ফি বাবদ দৈনিক, মাসিক ও এককালীন আরো বিপুল টাকা চাঁদা তোলা হয়। পরিবহন খাতে তিন পদ্ধতিতে চাঁদা তোলা হয়। এক. দৈনিক মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদা; দুই. বাস-মিনিবাস নির্দিষ্ট পথে নামানোর জন্য মালিক সমিতির চাঁদা এবং তিন. রাজধানী ও এর আশপাশে কোম্পানির অধীনে বাস চালাতে দৈনিক ওয়েবিল বা গেটপাস (জিপি) চাঁদা।

পরিবহন খাতে ব্যক্তিরা শ্রমিক সংগঠনের নামে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা চাঁদা তোলেন। অথচ এই খাতের সাধারণ শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন এতদিন সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। সড়কে শাজাহান খানের চাঁদাবাজি পকেটে ছয় হাজার কোটি টাকা শিরোনামে ৭ আগস্ট পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান সড়কে চাঁদাবাজিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত ২৪৯ শ্রমিক ইউনিয়নের মাধ্যমে চাঁদা তোলা হতো এবং একটি বড় অংশ শাজাহান খানের পকেটে যেত। শাজাহান খানের নির্বাচনী হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০০৮ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ছয় লাখ ৮৫ হাজার টাকা, যা ২০২৪ সালে হয়েছে দুই কোটি ২১ লাখ টাকা। এ সময়ে তার আয় প্রায় ৩২ গুণ বেড়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পরিবহন সেক্টরে ১২ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন শাজাহান খান (সূত্র : ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ যুগান্তর)। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সড়কের সব চাঁদাবাজির মুখোশ উন্মোচন করা প্রয়োজন। প্রয়োজন সব চাঁদাবাজকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা, যেন পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা ও বাড়তি ভাড়ার নৈরাজ্য বন্ধ হয়।

চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ। প্রতি ট্রাক ৪০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরো বেশি নেয়া হচ্ছে। আওয়ামী সরকারের শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চাঁদা তুলত। এখন তাদেরই একটি অংশ বিএনপির নেতা সেজে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করছে। চাঁদা না দিলে চালক হেলপারদের মারধর ও হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজির কারণে বড় বিপদে আছেন। (যুগান্তর ৩১ আগস্ট ২০২৪) প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সর্বস্তরের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহŸান জানিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি চোখে পড়েনি। জমি কেনা, বাড়ি নির্মাণ কিংবা ব্যবসা করতে গেলেও চাঁদা গুনতে হয়। চাঁদা না দিলে মারধরের শিকার হতে হয়। ঢাকা শহরে হরহামেশাই চাঁদাবাজি হচ্ছে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা মামলা করছে না। কেন করছে না সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। অথচ চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর আইন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২ এর ধারা ২ (খ) (অ)১ আইনে সুনির্দিষ্টভাবে চাঁদাবাজিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হইতে চাঁদা, সাহায্য বা অন্য কোনো নামে অর্থ বা মালামাল দাবি আদায় বা অর্জন করা বা অন্য কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা আদায় করা বা আদায়ের চেষ্টা করলে তা হবে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তির কথা ৪ ধারায় বলা আছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি উক্ত অপরাধ করে তাহলে সে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি হয় পলাতক ও কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে। চাঁদাবাজদের তালিকায় ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম যখনই আসে তখন সংগঠন থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়। জিরো টলারেন্সের কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে দৃশ্যমান কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। ইদানীং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে দেশের কোথাও কোথাও একটি চক্র চাঁদাবাজি শুরু করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চাঁদা না দিলে ফেসবুকে বিষোদগার ও মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। ভয় দেখিয়ে টাকা চাইছে। যারা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করছে, তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া আইডি থেকে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
লেখক : আইনজীবী


আরো সংবাদ



premium cement
আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন বরখাস্ত ম্যাজিস্ট্রেট উর্মি শ্রীলঙ্কায় আকস্মিক বন্যায় পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অপ্রীতিকর ঘটনায় প্রধান বিচারপতির উদ্বেগ, ন্যায়বিচারের আশ্বাস তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছে ১২ ডিগ্রির ঘরে মিরসরাইয়ে কৃষকের ৪টি গরু চুরি ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তিদের ওপর হামলা হচ্ছে : এফবিআই জামিন মেলেনি হলমার্ক গ্রুপের জেসমিনের গ্লোবাল লিগ : অবিশ্বাস্য হারে আসর শুরু রংপুর রাইডার্সের আফ্রিকায় ধর্ষকদের রক্ষায় আইনি ফাঁকফোকর নিয়ে প্রতিবেদন মেহেরপুরে আলগামন উল্টে চালক নিহত ভিড়ল কয়লার জাহাজ, উৎপাদনে ফিরছে মাতারবাড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

সকল