২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

পিলখানা হত্যার পুনঃতদন্ত ও বিচার প্রসঙ্গ

- প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) যা বর্তমানে নাম পাল্টে হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি, একটি ঐতিহ্যবাহী সশস্ত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এটি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের উত্তরসূরি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে এবং দেশে দুষ্কৃতিকারী দমনে এবং বিশেষ করে সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধে এর রয়েছে সাহসী ও প্রশংসনীয় ভ‚মিকা। রাষ্ট্রের এই বাহিনীর নেতৃত্বে শুরু থেকেই ছিলেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা। এ কারণে বিডিআরের সিপাহি ও সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে মানসিক দ্বন্দ্ব ছিল। শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অনৈতিক কাজের জন্য বিডিআর সদস্যদের শাস্তি দিয়ে থাকেন তাদের কর্মকর্তারা, এটিই বাহিনীর বিভাগীয় বিধান। বলা হয়, এসব কারণে বিডিআর সদস্যরা সেনাবাহিনী নেতৃত্বকে সহজভাবে নিতে পারত না। এটি চরম অপেশাদার মানসিকতা। অন্য দিকে ডাল-ভাত কর্মসূচির সুযোগ-সুবিধা এবং টাকা-পয়সার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে বিডিআরের সিপাহি এবং সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল বলেও জানা যায়। কিন্তু তাতে পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে এত বড় হত্যাকাণ্ড হতে পারে তা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তা হলে সে সময় পিলখানায় কেন ঘটল এই গণহত্যা? এর পেছনে কী কোনো দেশী-বিদেশী মাফিয়া কিংবা রাষ্ট্রের হাত ছিল? নাকি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ডতুল্য সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর দেশবাসী বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পায়নি। কারণ প্রশ্ন তোলারই সুযোগ ছিল না। ছিল গুম হয়ে যাওয়ার ভয়। এখন মুক্ত পরিবেশে দেশবাসী পিলখানায় সংঘটিত গণহত্যার নতুন তদন্ত ও পুনঃবিচার চায়। চানতে চায় এর নেপথ্যের খলনায়কদের সম্পর্কে।

বিদ্রোহের পরিকল্পনা : তদন্তে সহায়তাকারী একটি সংস্থার তথ্যানুসারে, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রæয়ারি হত্যাকাণ্ড, লুটতরাজ ও অন্যান্য অপরাধের পরিকল্পনার সাথে বিডিআরের অনেক সদস্যসহ বেসামরিক ব্যক্তিরা জড়িত ছিল। প্রায় দুই মাস ধরে চলছিল এ ষড়যন্ত্র।

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে বিডিআরের বেশ কিছু সদস্য ব্যারিস্টার তাপসের অফিসে যান। এদের মধ্যে উল্লেখ্য, হাবিলদার মনির, সিপাহি তারেক, সিপাহি আইয়ুব, ল্যান্স নায়েকের সহকারী সাইদুরসহ ২৫-২৬ জন জওয়ান ও জাকির নামে একজন। নির্বাচনের তিন-চার দিন পর কয়েকজন বিডিআর সদস্য এমপি তাপসের বাসভবন ‘স্কাই স্টারে’ যান। সেখানে তাপসকে দাবি পূরণের কথা বলা হলে তিনি রেশনের বিষয়টি ছাড়া অন্য কোনো বিষয় বিবেচনায় আনা সম্ভব নয় বলে জানান। ফেব্রæয়ারি মাসের মাঝামাঝি দু’জন ডিএডি এবং বেসামরিক ব্যক্তি জাকিরের নেতৃত্বে ১০-১২ জন বিডিআর সদস্য সংসদ সদস্য শেখ সেলিমের বাসায় তার সঙ্গে দেখা করেন। এমপি সেলিম জানান, এসব দাবি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তিনি দাবিনামার একটি কপি তাকে দিতে বলেন। পরে এ দলটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছিল। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছ থেকে দাবি-দাওয়া সম্পর্কিত ব্যাপারে আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে জওয়ানরা নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করেন।

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, সদর রাইফেল ব্যাটালিয়নের বাস্কেটবল মাঠে এক বৈঠকে একজন বিডিআর সদস্য মন্তব্য করেন, ‘এরকম দাবি করে লাভ নেই, অফিসারদের জিম্মি করে দাবি আদায় করতে হবে।’ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, সন্ধ্যায় ৫ নং গেটসংলগ্ন বেসামরিক ব্যক্তি জাকিরের প্রাইম কোচিং সেন্টারে বৈঠক হয়। তাদের দাবি-দাওয়াসংবলিত একটি খসড়া প্রচারপত্র প্রাইম কোচিং সেন্টারে টাইপ করিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি পিলখানার সব ব্যাটালিয়নসহ আরএসইউ অফিসারদের কাছে বিতরণ করা হয়। ডিএডি তৌহিদ, ডিএডি রহিমসহ আরো তিন-চারজন ডিএডি ৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নের এক সৈনিকের বাসায় বৈঠক করেন। ঘটনার আগের রাতে ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের মাঠে একটি চূড়ান্ত বৈঠক হয়। কিন্তু সেখানে লোকসংখ্যা বেশি হওয়ায় ল্যান্স নায়েক জাকারিয়ার (সিগন্যাল) টিনশেড বাসায় গভীর রাত পর্যন্ত শলাপরামর্শ করেন। ওই বৈঠকেই বিডিআরের সেনা কর্মকর্তাদের জিম্মি করার কৌশল ঠিক করা হয়। বলা হয়, ‘ডিজি ও ডিডিজিকে জিম্মি করা হবে এবং তাদের মাধ্যমে অন্যান্য অফিসারেরও জিম্মি করা হবে। কোনো বাধা এলে গুলি করা হবে। তাদের হত্যা করা হবে।’
২৫ ফেব্রæয়ারি ২০০৯, সকালে ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহম্মদ দরবারে তার বক্তৃতায় ডাল-ভাত কর্মসূচিসহ অন্যান্য বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় বিডিআরের এক বিদ্রোহী সদস্য মঞ্চে অস্ত্রসহ আচমকা প্রবেশ করে। সে ডিজি শাকিলের দিকে অস্ত্র তাক করার পরপরই দরবার হলের বাইরে ফাঁকা গুলি করা হয়। যা ছিল বিদ্রোহ শুরুর সিগন্যাল। ওই গুলির শব্দের সঙ্গে সঙ্গে দরবার হলে উপস্থিত বিদ্রোহী সিপাহিরা ‘ভাগো’ বলে চিৎকার করে ওঠে এবং বিডিআরের সৈনিকদের দরবার ত্যাগের ইশারা করতে থাকে। এরপর মুহূর্তেই গুজব ছড়ানো হয়, সেনা কর্মকর্তারা গুলি করে বিডিআর সৈনিকদের হত্যা করছে। যদিও পরে তদন্তে এটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারণে বিডিআর সদস্যরা তাদের কমান্ডিং প্রধানসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করবে, এটি যুক্তি-বুদ্ধির আলোকে বিবেচনা করা মুশকিল। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শিরদাঁড়া ভেঙে দেয়ার জন্য কোনো দেশী বা বিদেশী চক্র কী এতে জড়িত ছিল? তৎকালীন সরকারের কোনো অংশ কি এই গণহত্যার হোতা? এখন সময় এসেছে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের যথাযথ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করার। প্রয়োজনে এ কাজের জন্য বিদেশী গোয়েন্দা ও বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে।

লিফলেট বিলি : তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্বোধন করে ২১ ফেব্রুয়ারি একটি প্রচারপত্র পিলখানায় বিলি করা হয়। প্রচারপত্রটি বিডিআরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। তবে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ প্রচারপত্র বিলি সম্পর্কে কিছুই জানত না। প্রধানমন্ত্রীর পিলখানা সফর উপলক্ষে বিলি করা প্রচারপত্রে বিডিআরে কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন সম্পর্কে উষ্মা প্রকাশ করা হয়। তা ছাড়া ডাল-ভাত কর্মসূচির টাকা আত্মসাৎ, বিডিআর সৈনিকদের নাশতার টাকা আত্মসাৎ, নির্বাচনের বিল পরিশোধ না করাসহ অন্যান্য অভিযোগ তোলা হয় ডিজি শাকিল আহম্মদ এবং ঢাকার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে।

২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় দরবার হলের মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহম্মদ এবং তার বাঁ পাশে একটু পেছনে ছিলেন উপমহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এ বারী। দরবার শুরু হয় সকাল ৯টা ২ মিনিটে। দরবারে মোট উপস্থিত ছিলেন দুই হাজার ৫৬০ জন। সকাল ৯টা ৬ মিনিটে মহাপরিচালক বক্তব্য দিতে শুরু করেন। কুশলবিনিময়ের পর তিনি ২৪ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত প্যারেড পরিদর্শন করে প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন এবং প্যারেডের প্রশংসা করেছেন মর্মে সবাইকে অবহিত করেন। মহাপরিচালকের বক্তব্য চলাকালেই সকাল ৯টা ২৬ মিনিটে মঞ্চের বাঁ দিকের পেছনে (দক্ষিণ-পূর্ব) অবস্থিত প্যান্ট্রি থেকে হঠাৎ দু’জন বিদ্রোহী বিডিআর সিপাহি অতর্কিত মঞ্চে প্রবেশ করেন। এদের একজন ছিলেন সশস্ত্র। নিরস্ত্র সৈনিকটি মঞ্চের ওপর দিয়ে দৌড়ে দরবার হলের উত্তর পাশের কাচের জানালা ভেঙে বের হয়ে যান। অন্য জওয়ানের হাতে ছিল একটি এসএমজি (স্মল মেশিনগান)। অস্ত্রধারী বিদ্রোহী সিপাহি মহাপরিচালককে বাঁ দিক থেকে আঘাত করলে তিনি চেয়ার থেকে মেঝেতে পড়ে যান। আনুমানিক সাড়ে ৯টায় মহাপরিচালক শাকিল আহম্মদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেনাবাহিনী প্রধান, র‌্যাবের মহাপরিচালক ও ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালকের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন এবং জানান, ৪৪-রাইফেল ব্যাটালিয়ন বিদ্রোহ করেছে। তিনি অবিলম্বে সেনা হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানান। এ ছাড়াও অবরুদ্ধ অন্য সেনা কর্মকর্তারাও তাদের মোবাইলে বিভিন্ন স্থানে টেলিফোন করেন এবং এসএমএস পাঠান যে, তারা বিদ্রোহী বিডিআর সিপাহিদের হাতে অবরুদ্ধ। তাদের বেঁচে থাকার সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। বিদ্রোহী সিপাহিরা সেনা কর্মকর্তাদের দরবার হল থেকে বের হয়ে আসার নির্দেশ দেয়, অন্যথায় তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়। এ অবস্থায় মঞ্চের পেছনে আত্মরক্ষার্থে অবস্থান নেয়া অফিসাররা ডিজিকে বৃত্তাকারে ঘিরে মঞ্চের পেছন থেকে বের হয়ে আসেন। বিদ্রোহীরা তাদের হাত তুলে সিঙ্গেল লাইনে এগোতে বলে। ডিজি নিজে উদ্যোগী হয়ে লাইনের সম্মুখে চলে আসেন এবং বিদ্রোহীদের নির্দেশ অনুযায়ী হাত মাথার উপর তুলে পশ্চিম দিকের দরজার দিকে এগোতে থাকেন। এ সময় বিদ্রোহীরা অফিসারদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকেন। দরবার হল থেকে বের হয়ে তিনি যেই মাত্র সিঁড়িতে পা দিয়েছেন তখনই বাইরে দাঁড়ানো পিকআপের পাশে থেকে মুখোশপরা একদল বিডিআর সিপাহি সেনা কর্মকতাদের লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করে। মহাপরিচালক শাকিল আহম্মদের বুকে গুলি লাগে। তিনি ডান দিকে কাঁৎ হয়ে পড়ে যান এবং সাথে সাথে মৃত্যুবরণ করেন। লাইনে থাকা আরো কয়েকজন অফিসার ব্রাশ ফায়ারে মারা যান। দু-একজন যারা শরীরে গুলি লাগার পরও বেঁচে ছিলেন তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে সৈনিকরা আবার এসে আহতদের লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করে এবং বেয়নেট দিয়ে খোঁচায়। এর পরও যারা বেঁচে যান, তারা কেউ বাথরুমে, কেউ দরবার হলের বাইরে বেরিয়ে চার দিক ছড়িয়ে পড়েন। এদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুজ্জামান, মেজর মুনীর অন্যতম। এরপর বিদ্রোহীরা সেনা কর্মকর্তাদের স্ত্রী ও শিশুসন্তানসহ অতিথিদের কোয়াটার গার্ডে নিয়ে আটকে রাখেন।

এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় ৩ নম্বর গেটের সামনে বিডিআরের পক্ষে শতাধিক মানুষের মিছিল হয়। এরা বিডিআর জওয়ানদের দাবি-দাওয়ার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে ‘জয় বাংলা-জয় বিডিআর’, বিডিআর জনতা ভাই ভাই প্রভৃতি স্লোগান দেয়। এরপর বিদ্রোহীরা ২০ মিনিট ধরে এলোপাতাড়ি কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর পর পরই তারা মাইকে ঘোষণা দিয়ে জানায়, আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পিলখানায় আসতে বাধা নেই। এরপর বিদ্রোহীদের নিরস্ত্রীকরণের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সাদা পতাকা নিয়ে ৪ নং গেটের সামনে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস ও মির্জা আজমের সাথে ৪ নং গেটের সামনে অবস্থানরত বিডিআর বিদ্রোহীরা কথা বলতে রাজি হয়। জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম বিডিআর বিদ্রোহীদের সাথে আলোচনার পর তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলতে রাজি করান। পরে এই দুই আওয়ামী লীগ নেতা ১৪ সদস্যের বিডিআর প্রতিনিধিদল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার জন্য রওনা হন। কিন্তু এই ১৪ জনের নামের তালিকা বিডিআর বিদ্রোহবিষয়ক তদন্ত কমিশন খুঁজে পায়নি। প্রতিনিধিদলটি ৩টা ৪০ মিনিটে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মিন্টো রোডের যমুনায় প্রবেশ করে। যমুনায় প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থিত হয়ে বিদ্রোহী প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বলে, ‘চাকরিরত বা অবসরপ্রাপ্ত কোনো সেনা কর্মকর্তা তাদের সামনে থাকলে তারো কোনো প্রকার আলোচনা করবে না।’ একপর্যায়ে সেখানে অবস্থানরত তিন বাহিনীর প্রধানসহ নিরাপত্তা উপদেষ্টারা বের হয়ে যান। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য এসএসএফের চারজন সদস্য রয়ে যান। প্রতিনিধিদলটি তখন তাদের দাবি ও শর্ত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে। এ আলোচনায় বিদ্রোহীদের পক্ষে কথা বলেন ডিএডি তৌহিদুল ইসলাম।

বিডিআর প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিদ্রোহী সদস্যদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। আটককৃত শিশু ও মহিলাদের ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে তখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকার দেশবাসীকে জানাতে পারেনি বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহম্মদসহ অন্য সেনা কর্মকর্তারা জীবিত আছেন কি নেই। অন্য দিকে পিলখানায় ফিরে ডিএডি তৌহিদ যমুনায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্রোহীদের অস্ত্র জমা দিতে রাজি করাতে পারেননি। এ সময় বিদ্রোহীরা তাদের অপকর্ম গোপন রাখার জন্য পিলখানার ভেতরে কয়েকটি স্থানে বিদ্যুৎ বিছিন্ন করে অন্ধকার করে রাখে। কিন্তু পিলখানা এলাকা কেন বিকল্প ব্যবস্থায় আলোকিত করার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তদন্ত কমিটি এর সদুত্তর পায়নি। এ কারণে প্রশ্ন জাগে, বিডিআর বিদ্রোহে কি সরকারের কোনো মহলের হাত ছিল?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বিডিআর গণহত্যার যে বিচার হয়েছিল, সেই বিচারের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও তদন্ত প্রতিবেদনের মান ও বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে নিহতদের স্বজন এবং বিচার-বিশেষজ্ঞদের অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তাই দেশবাসী বিডিআর বিদ্রোহে সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস কর্মকর্তা হত্যার পুনঃবিচার দাবি করছে। নতুন তদন্ত কমিশন গঠন করে উন্মুক্ত আদালতের মাধ্যমে এ গণহত্যার বিচার হওয়া উচিত।

লেখক : নব্বইয়ের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা ও রাজনীতিক


আরো সংবাদ



premium cement