২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

হাসিনার পদত্যাগ বিতর্ক

শেখ হাসিনা - ফাইল ছবি

বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৭(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হবে, যদি (ক) তিনি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন; অথবা (খ) তিনি সংসদ-সদস্য না থাকেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। কিভাবে তিনি পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছিয়েছেন তা মুখ্য বিষয় নয়। পদত্যাগপত্র পেশের খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।

সেনাপ্রধান ৫ আগস্ট বিকেল ৪টায় রেডিও ও টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন মর্মে উল্লেখ করেন। রাতে রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে ভাষণের সময় বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র পেশ করেছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। সাথে সাথে গেজেটও প্রকাশ হয়। তা ছাড়া রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। আর সংসদ ভেঙে দিলে শেখ হাসিনা আর সংসদ সদস্য থাকেন না। সংসদ সদস্য না থাকলে তার প্রধানমন্ত্রী থাকার প্রশ্ন ওঠে কিভাবে?

সংবিধানে সংসদ ভেঙে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর একটি পরামর্শ দেয়ার কথা বলা আছে। তিনি যেহেতু পদত্যাগ করেছেন এবং দেশ ছেড়েও পালিয়েছেন তাই সংসদ ভাঙার প্রশ্নে তার পরামর্শ দেয়ার সুযোগ থাকে কোথায়? সংসদ কার্যকর থাকলে তিনি পদত্যাগ করলেও সংসদ উপনেতা সংসদ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারতেন। কিন্তু সে সুযোগও থাকে না সংসদ ভাঙার পর।

ইতোমধ্যে জাতিসঙ্ঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। আওয়ামী সরকারের পরম বন্ধু ভারতও এই সরকারের সাথে কাজ করার কথা বলে আসছে এবং তাদের হাইকমিশনার নিয়মিত সরকারের সাথে যোগাযোগ রাখছে। তবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে একটি আওয়ামী বয়ান তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ ৫৭(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বপদে বহাল থাকবেন। এটি কিন্তু সংসদ ভেঙে দেয়া বা পদত্যাগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় একবার তার মা পদত্যাগ করেনি বলে মন্তব্য করলে নেট দুনিয়ায় ঝড় ওঠে। পরে এ নিয়ে তিনি আর রাঁ করেননি। এতদিন আওয়ামী লীগ তো কোনো কথা বলেনি। শেখ হাসিনা যখন এ বিষয়ে কথা বলেছেন তখনই তারা মুখ খুলতে শুরু করেছে। সবারই স্মরণ থাকার কথা, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাও কিন্তু পদত্যাগ করেননি। তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। বিচারপতি সিনহা অসুস্থ ছিলেন না। তাকে অসুস্থ বানানো হয়েছে। তাকে তাড়ানোর জন্য আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের দিয়ে জুডিশিয়াল ক্যু করা হয়েছে।

এখানে শেখ হাসিনা ও লে. জেনারেল সাইফুল আলম সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রদ্রোহ করেছেন। বিচারপতি এস কে সিনহাকে তার দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়েছেন। এখানে হাসিনা তার শপথে সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানে চরম উপেক্ষা ও ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন।

তাছাড়া ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনের সময় তিনি রাগ করে কোটা বাতিল করে দেন, যা তিনি ১৪ জুলাই ২০২৪ চীন সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে তিনি প্রশাসনকে কঠোর হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। যার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন বলে শেখ হাসিনা যে মন্তব্য করেন, তা সঠিক নয়। সে টাকা ব্যাংকে থেকে অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বেগম খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতুতে নিয়ে নদীতে চুবানো ও টুস করে ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। এই সব কাজই তার শপথ বঙ্গের উদাহরণ। শপথবাক্যে, ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সবার প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহিত আচরণ করেছিলেন। তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তার এসব আচরণ দেখে মনে পড়ে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ একসময় তাকে রং হেডেড বলে উল্লেখ করেছিল। সর্বোচ্চ আদালতের সেই পর্যবেক্ষণই আজ অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণিত হলো।

কিন্তু আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যারা কোনো যুক্তির ধার ধারে না। গলার জোরে জিততে চায়; তাতে না পারলে পেশির জোর খাটায়। শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, অনেক লোককে হত্যা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতা দখল করেছেন। অথচ তার পলায়নের সময় ইউনূস দেশে ছিলেন না।

গণহত্যা ২০২৪ তদন্তে জাতিসঙ্ঘ টিম কাজ শুরু করেছে। হাসিনার নির্দেশে সংঘটিত প্রতিটি হত্যার জবাবদিহি তাকে করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement