গাজা, সুদান ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ব্যর্থ নিরাপত্তা পরিষদ
আলজাজিরাকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে গুতেরেস- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:২৩
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরাইলের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ব্যর্থতা সামগ্রিকভাবে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। গুতেরেস বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ একটি ‘সেকেলে;, ‘অন্যায্য’ এবং ‘অকার্যকর একটি ব্যবস্থায়’ পর্যবসিত হয়েছে।
আলজাজিরা অ্যারাবিয়াকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এসব কথা বলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে স্থায়ী সদস্যদের ভেটো ক্ষমতা বিভিন্ন সময়ে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে বাধা হয়েছে।
গুতেরেস বলেছেন, ‘এই কাউন্সিল আজকের বিশ্বের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়’। সমালোচনা করে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আরো বলেন, ‘প্রকৃত সত্য হলো, সুদান, গাজা, ইউক্রেনে সঙ্ঘাত বন্ধে নিরাপত্তা পরিষদ নিজের সক্ষমতা প্রমাণে পদ্ধতিগতভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’
অ্যান্তোনিও গুতেরেস ২০১৭ সাল থেকে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১১ মাসের বেশি সময় ধরে চলা গাজা যুদ্ধ সম্পর্কে গুতেরেস বলেন, জাতিসঙ্ঘের অন্যান্য সংস্থা, বিশেষ করে মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো গাজায় প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে, নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধ বন্ধে রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আর এ ব্যর্থতা জাতিসঙ্ঘের অন্য সংস্থাগুলোকে আশাহত করছে।
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বলেন, ‘জাতিসঙ্ঘ মানে শুধু নিরাপত্তা পরিষদ নয়।’ তিনি উল্লেখ করেন, জাতিসঙ্ঘের কর্মীরা যুদ্ধক্ষেত্রে দারুণ কাজ করছেন; বিশেষ করে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসঙ্ঘের সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কর্মীরা। এটাও সত্য, মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে ভাবে, নিরাপত্তা পরিষদ তাদের ব্যর্থ করেছে। গুতেরেস বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতা মাঠপর্যায়ে কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের গুরুতর অসুবিধায় ফেলেছে।’
গাজায় ২০০ কর্মী নিহত : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর থেকে সেখানে ইউএনআরডব্লিউএ’র ২০০ কর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানান জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, গাজায় যেসব ফিলিস্তিনির কাছে সংস্থাটির কার্যক্রম পৌঁছাতে পেরেছে, তারা এর স্বীকৃতি দিয়েছেন। এমনকি এ বছরের শুরুর দিকে গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ’র ত্রাণ কার্যক্রম ইসরাইলি হামলার শিকার হয়েছিল। ইসরাইল অভিযোগ করেছিল, সংস্থাটির কর্মীরা ‘সন্ত্রাসবাদের’ সাথে সম্পৃক্ত। তখন কয়েকটি দেশ অর্থায়ন প্রত্যাহার করে নেয়। পরবর্তী সময়ে সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বলেন, শুরুর দিকে কিছু দেশ এ কার্যক্রমে অর্থায়ন করতে দ্বিধায় ভুগেছে। কোনো কোনো দেশ অর্থায়ন স্থগিত করেছে। তবে ইউএনআরডব্লিউএ মেরুদণ্ড সোজা রেখেই গাজাবাসীকে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে নিরলস কাজ করে গেছে। অ্যান্তোনিও গুতেরেস আরো বলেন, যখনই পরিস্থিতি অনুকূলে এসেছে, পোলিও টিকা কার্যক্রমের মতো গাজাবাসীর জন্য দ্রুত কাজ করে গেছে ইউএনআরডব্লিউএ।
‘জবাবদিহি নেই’ : সাক্ষাৎকারে অ্যান্তোনিও গুতেরেস অভিযোগ করেন, বিশ্বের বড় শক্তিগুলো গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে দায়মুক্তির সংস্কৃতি প্রদর্শন করছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব। এরপরও তিনি বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ দায়মুক্তির পরিবেশে বসবাস করছি।’ গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরাইলকে আরো চাপ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র- এমনটাই মত জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের। তিনি বলেন, ‘ইসরাইলের সাথে সম্পর্কে আরো কঠোর হতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আমরা আহ্বান জানিয়েছি।’
‘দখলদারি বৈধ নয়’ : গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে ইসরাইলের দখলদারত্ব নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন অ্যান্তোনিও গুতেরেস। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বলেন, পশ্চিমতীরে ইসরাইলি বসতি ও চৌকি বিস্তৃত করার চলমান প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বেআইনি। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা পশ্চিমতীরে সম্ভাব্য যেকোনো দখলদারি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। গাজা, পশ্চিমতীর, পূর্ব জেরুসালেম ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অংশ হবে।’ ইসরাইলের কর্মকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি অবস্থান আছে উল্লেখ করে অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, অবস্থানটি স্পষ্ট, এটা দখলদারত্ব। এই দখলদারত্ব মোটেও বৈধ নয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা