এশিয়া প্যাসিফিকে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক মহড়া শুরু

চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা আর প্রতিযোগিতার মধ্যেই হাওয়াইয়ে বিশ্বের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক মহড়া ‘ইউএস প্যাসিফিক ফ্লিট রিম অব দ্য প্যাসিফিক (রিমপ্যাক)’ শুরু হয়েছে। ২৭ জুন এই মহড়া শুরু হয়।
প্রতি বছরই রিমপ্যাক অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর বহুপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার এবং একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক প্রচারের জন্য প্রস্তুতি বাড়ানোর লক্ষ্যে ২৯টি দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে পাঁচ সপ্তাহের প্রশিক্ষণের জন্য একত্র করা হবে। এই মহড়া শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। তবে চলতি বছরের মহড়ায় দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং ভারতের সামরিক বাহিনী সেই সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, লাতিন আমেরিকা এবং সাতটি ইউরোপীয় দেশ অংশ নিচ্ছে।

ইসরাইলও তৃতীয়বার রিমপ্যাকে অংশগ্রহণ করবে। গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইসরাইলের এই অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলের ফিলিস্তিনপন্থী গ্রুপগুলো প্রতিবাদ জানিয়েছে। ইসরাইল এই বৃহৎ মহড়ায় অংশ নেবে, তবে মহড়ায় তাদের কোনো বিমান বা জাহাজ থাকবে না বলে রিমপ্যাকের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স নিশ্চিত করেছে। মহড়ায় অংশগ্রহণের বিষয়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এই মহড়ায় স্থলভাগে, আকাশ ও সমুদ্রে যুদ্ধ এবং আনুষঙ্গিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ১৫০টি বিমান, ৪০টি সারফেস জাহাজ, তিনটি সাবমেরিনসহ ২৫ হাজারের বেশি সামরিক সদস্যকে জল ও স্থলভাগে অবতরণ, শহুরে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ, সাবমেরিন ধ্বংস, জাহাজ ডুবানোর অনুশীলনের পাশাপাশি সাইবার এবং স্পেস অপারেশনের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
রিমপ্যাকের মুখপাত্রের মতে, ‘রিমপ্যাক ২০২৪’ একটি শক্তিশালী এবং জটিল কৌশলগত পর্যায়। যেখানে ব্যাপক মানবিক ও দুর্যোগ ত্রাণ কার্যক্রম এবং সমন্বিত মাল্টি-ডোমেন যুদ্ধের ওপর জোর দেয়া হবে। এ বছর রিমপ্যাক ব্যাপক আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চীনের সঙ্গে এই অঞ্চলে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এবারের মহড়াটি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহুপক্ষীয় আন্তঃআঞ্চলিক অংশীদারত্বকে জোরদার করেছে, নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি স্থাপন করেছে এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে তার সামরিক সক্ষমতা উন্নত করেছে।

অন্য দিকে চীন তাইওয়ানের চারপাশে তার সামরিক মহড়া বাড়িয়েছে। এ দিকে রাশিয়াও এই অঞ্চলে আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে।গত দুই মাসে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চীন, উত্তর কোরিয়া এবং ভিয়েতনাম সফর করেছেন। তিনি ইউক্রেনে তার পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণের জন্য সমর্থন চেয়েছেন এবং পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তিও স্বাক্ষর করেছেন। উল্লেখ্য, চীন ২০১৪ ও ২০১৬ সালের রিমপ্যাকে যোগ দিয়েছিল। তবে ২০১৮ সালে সরে যায়। এ বছর তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
এ দিকে এই মহড়ার মাত্র কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত বোমা মহড়া সম্পন্ন করেছে, কোরিয়ান উপদ্বীপে পরমাণু শক্তি-চালিত বিমানবাহী রণতরি পাঠিয়েছে, তাইওয়ানে যুদ্ধমহড়া চালিয়েছে। হাওয়াইভিত্তিক এশিয়া প্যাসিফিক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্যাসিফিক ফোরামের সভাপতি ও সিইও ডেভিড স্যানটোরো বলেন, ‘২৫ বছর ধরে সন্ত্রাস দমন এবং বিদ্রোহ দমনের পর এখন যুদ্ধের অপরিমার্জিত সমস্যা ফিরে এসেছে। আমরা এটি ইউরোপে দেখছি, মধ্যপ্রাচ্যে দেখছি এবং ইন্দো-প্যাসিফিকে তা হওয়ার জোরাল আলামত দেখছি।’ তিনি বলেন, বিশ্ব দৃশ্যত অন্তর্ভুক্তিমূলক নিরাপত্তা থেকে কঠিন নিরাপত্তার অগ্রাধিকারের দিকে ছুটে যাচ্ছে। আর বৈশ্বিক জোটের রাজনীতি স্নায়ুযুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই উদ্বেগজনক, কঠিন পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি।’