উত্তর কোরিয়ার পর ভিয়েতনামে পুতিন
সম্পর্ক জোরদারের ঘোষণা- রয়টার্স
- ২১ জুন ২০২৪, ০১:২০
যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা অগ্রাহ্য করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে স্বাগত জানিয়েছে ভিয়েতনাম। এশিয়ার দুই দেশ সফরের অংশ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার পর কমিউনিস্ট শাসিত আরেক রাষ্ট্র ভিয়েতনামে গেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার ভোররাতে তিনি দেশটির রাজধানী হ্যানয়ে পৌঁছান।
বিমানবন্দরে ভিয়েতনামের উপপ্রধানমন্ত্রী চান হোং হা এবং দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ কূটনীতিক লে হাই চুং পুতিনকে স্বাগত জানান ও লাল গালিচা সংবর্ধনা দেন। সফর উপলক্ষে ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির সংবাদপত্র নান জানে লেখা এক নিবন্ধে পুতিন ইউক্রেইনের ‘সঙ্কট সমাধানে একটি বাস্তবসম্মত পথকে’ সমর্থন করায় হ্যানয়ের প্রশংসা করেন। ভিয়েতনামের শীর্ষ নেতারা মস্কোর সাথে তাদের ‘সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারিত্বের’ প্রশংসা করেন এবং সম্পর্ক আরো গভীর করার অঙ্গীকার করেছেন।
বৈঠকে ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট তো লাম পুনর্নির্বাচনের জন্য পুতিনকে অভিনন্দন জানিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল সমর্থন পাওয়ার জন্য আমাদের কমরেডকে আবারো অভিনন্দন। এটি রুশ জনগণের আস্থার প্রতীক। জবাবে পুতিন বলেন, ভিয়েতনামের সাথে সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারিত্বকে জোরদার করা রাশিয়ার অন্যতম অগ্রাধিকার। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সাথে সংলাপের প্রতি রাশিয়া সম্মান প্রদর্শন করে। ভিয়েতনাম এই জোটে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
বৃহস্পতিবার সকালে পুতিন ভিয়েতনামে পৌঁছান। এশিয়া সফরের শেষ পর্যায়ে রয়েছেন তিনি। এর আগে বুধবার তিনি উত্তর কোরিয়ার সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করেছেন। পুতিনের ভিয়েতনাম সফর মার্কিন সমালোচনার মুখে পড়েছে। গত বছর হ্যানয়ের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করেছে ওয়াশিংটন। বর্তমানে ভিয়েতনামের প্রধান রফতানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, কোনো দেশের উচিত না পুতিনকে তার আগ্রাসী যুদ্ধের প্রচারের জন্য কোনো মঞ্চ দেয়া।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণের পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। তিনি এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। রাশিয়া ও ভিয়েতনাম, কেউই আইসিসির সদস্য নয়।
মে মাসে পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতাগ্রহণের পর ভিয়েতনাম হবে পুতিনের সফর করা তৃতীয় দেশ। এর আগে তিনি চীন ও উত্তর কোরিয়া সফর করেছেন। আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর খুব কম বিদেশ সফর করছেন তিনি। ২০১৭ সালের পর প্রথম এবং সব মিলিয়ে এটি পুতিনের পঞ্চম ভিয়েতনাম সফর। তাকে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনা দেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে ভিয়েতনামের ‘ভারসাম্যপূর্ণ’ অবস্থানের প্রশংসা করার পাশাপাশি পুতিন নিজের লেখায় দুই দেশের মধ্যে আর্থিক, জ্বালানি ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন। বিশ্ব শক্তিগুলোর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম একটি নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে যাকে তারা ‘বাঁশের কূটনীতি’ বলে অভিহিত করে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের নিন্দা করেনি ভিয়েতনাম; পশ্চিমা দেশগুলো হ্যানয়ের এ অবস্থানকে ‘ক্রেমলিন ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে বিবেচনা করে। উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া- উভয়েই আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার মুখে থাকলেও ভিয়েতনাম সতর্কতার সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে একটি মিত্রতা গড়ে তুলেছে।
অতীত কমিউনিস্ট শাসনের সময় থেকেই রাশিয়ার সাথে ভিয়েতনামের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। শীতল যুদ্ধের সময় ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির হাজার হাজার কর্মী সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়তে যেত, দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির বর্তমান প্রধান নেয়ন ফু চংও তাদের মধ্যে ছিলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা