১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
প্রথম ভাষণে চীনের প্রতি হুমকি দেয়া বন্ধের আহ্বান

চীনের হুমকির মধ্যেই শপথ নিলেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন লাই চিং-তে (মধ্যে)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পূর্বসূরি সাই ইং-ওয়েন (বাঁয়ে) ও লাই -এর স্ত্রী (ডানে) : ইন্টারনেট -

তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন লাই চিং-তে। তাইওয়ানের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক চাপের মধ্যেই গতকাল সোমবার শপথ নেন তিনি। তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করা চীন ৬৪ বছর বয়সী লাইকে ‘ভয়ঙ্কর বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে অভিহিত করে থাকে। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন লাই। সাই ইং আট বছর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে চীনের সাথে তাইওয়ানের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়েছে। কারণ সাই ইং বরাবরই ইরানের দাবি প্রত্যাখ্যান করে এসেছেন।
সাই ইংয়ের মতো লাইও তাইওয়ানের গণতন্ত্র রক্ষার পক্ষে সোচ্চার। অতীতে তিনি নিজেকে তাইওয়ানের স্বাধীনতার জন্য নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তবে পরবর্তী সময় তিনি সুর কিছুটা নরম করেন। বলেন, তাইওয়ান প্রণালী এখন যে অবস্থায়, সে অবস্থা তিনি বজায় রাখবেন। এর মানে হলো তাইওয়ানের সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে, কিন্তু আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা করা হবে না। বেইজিং দীর্ঘদিন ধরে তাইওয়ানকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য শক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। লাইয়ের শপথ অনুষ্ঠানের আগে তাইওয়ানে চীনের কার্যালয় থেকে বলা হয়, ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা ও প্রণালীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা আগুন ও পানির মতো।’ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর দেয়া ভাষণে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামরিক ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ করতে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন লাই।
গতকাল তাইপেতে জাপানি ঔপনিবেশিক যুগে নির্মিত প্রেসিডেন্ট কার্যালয় ভবনে শপথ অনুষ্ঠান হয়। লাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পরপরই তার ভাইস প্রেসিডেন্ট শাও বাই খিমও শপথ নেন। লাই ও শাও দু’জনই ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) সদস্য। অনুষ্ঠানে আটজন রাষ্ট্রপ্রধান এবং যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, কানাডাসহ ৫১টি আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাইওয়ানের কূটনৈতিক স্বীকৃতির অভাব আছে। মাত্র ১২টি দেশের সাথে তাদের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে। তবে তাদের নিজস্ব সরকার, সেনাবাহিনী ও মুদ্রা আছে। তাইওয়ানের জনসংখ্যা ২ কোটি ৩০ লাখ। তাদের বেশির ভাগই মনে করে, চীনাদের থেকে আলাদা করে তাদের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় আছে। সাই ইং ওয়েনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে লাইও প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বাড়াবেন এবং গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সরকারের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করবেন। যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ও অস্ত্র সরবরাহকারী।
সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেয়া প্রথম ভাষণে লাই চিংতে বলেন, তাইওয়ান একমাত্র শান্তির পথ অনুসরণ করতে চায় এবং বেইজিংয়ের উচিত তাইওয়ানের জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান করা। রাজধানী তাইপের একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে এ ভাষণ দেন উইলিয়াম লাই নামেও পরিচিত এই নেতা।
ভাষণে আলোচনার মাধ্যমে চীনের সাথে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়ে উইলিয়াম লাই বলেন, ‘আমি চীনের প্রতি আহ্বান জানাই, তাইওয়ানকে রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে ভয় দেখানো বন্ধ করা হোক। বিশ্বে যেন ভয় না থাকে এবং যুদ্ধ শুরু না হতে পারে তা নিশ্চিত করতে এবং তাইওয়ান প্রণালী ও এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করার জন্য তাইওয়ানের সাথে একত্রে কাজ করার জন্য (চীনের প্রতি) আহ্বান জানাই।’


আরো সংবাদ



premium cement