১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
এ স্বেচ্ছাসেবীরা অভ্যুত্থানবিরোধী যোদ্ধাদের সাহসিকতায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন

মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দিচ্ছেন পশ্চিমা স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধারা

মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়া অজ্ঞাত পশ্চিমা স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধারা : ইন্টারনেট -

মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মাঝে বিদেশী যোদ্ধারাও আছেন। সংখ্যাটি খুব বড় না হলেও তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এদের মধ্যেই আছেন প্রাক্তন এক ব্রিটিশ সেনা এবং একজন মার্কিন যোদ্ধা। বিদ্রোহীদের সাথে স্বেচ্ছায় যুদ্ধে যোগ দেয়া এ পশ্চিমা যোদ্ধারা বলেছেন, তিন বছরেরও বেশি আগে মিয়ানমার জেনারেলরা ক্ষমতা দখল করেন। এরপর শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করা মিয়ানমারের প্রতিবাদকারীদেরও হত্যা করা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম নির্মম ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ সংগ্রাম দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েই তারা জান্তাবিরোধীদের পক্ষে লড়তে এসেছেন।
২০০৯ থেকে চার বছর ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে পদাতিক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জেসন (ছদ্মনাম)। আফগানিস্তানেও সাত মাস ছিলেন তিনি। জেসন বলেন, মিয়ানমারে জানতো বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে আট সপ্তাহ সম্মুখ সারিতে থেকে লড়ার পর গত এপ্রিলের শেষ দিকে পূর্ব মিয়ানমার থেকে দেশে ফেরেন। তিনি বলেন, ‘জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মতাদর্শ অনেকটাই হয় - সব নয়তো কিছুই নয়। জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে তারা মরতেও প্রস্তুত ছিল।
জেসনের মতে, তিনি বেশির ভাগ জায়গায় যেমন মনোভাবের সেনা দেখেছেন মিয়ানমারের প্রতিরোধ যোদ্ধারা তেমন নন। তাদের চোখে ভয় নেই। তারা সাহসী মানুষ। জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো কয়েক দশক ধরেই সামরিক বাহিনীর সাথে লড়াই করছে। বিদেশী স্বেচ্ছাসেবকরাও কখনো কখনো সাহায্য করেছেন। এসব লড়াই হয়েছে প্রধানত সীমান্ত অঞ্চলে। কিন্তু ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর এ লড়াই সীমান্ত থেকে কেন্দ্রে চলে আসে।
মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে রাশিয়া নির্মিত যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে নির্বিচার হামলা চালিয়ে বেসামরিকদের হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। জাতিসঙ্ঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসব ঘটনাকে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বর্ণনা করেছে। জেনারেলরা তবুও বিদ্রোহ দমন করতে পারেনি। প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো জান্তার বিপুল ক্ষয়সাধন করেছে এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বড় অংশের। জনসাধারণের দান এবং গত বছর প্রায় হাজারখানেক অপারেশন চালিয়ে বিশালসংখ্যক অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। বিদেশীদের সহায়তা ছাড়াই জান্তা সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে তারা।
ইউক্রেন কিংবা সিরিয়া যুদ্ধের মতো মিয়ানমারে বিদেশী স্বেচ্ছাসেবীদের ঢল দেখা যায়নি। বিদেশীদের নিয়োগের জন্য নেই কোনো সমন্বিত প্রচেষ্টা। তবে মিয়ানমারজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সশস্ত্র গোষ্ঠীর মোট সংখ্যা এখনো পরিষ্কারভাবে জানা না গেলেও তা অবাক করার মতো হতে পারে বলে অনুমান করছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। পূর্ব মিয়ানমারে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সাথে জেসনের ফুটেজ ও ছবি দেখেছে সংবাদমাধ্যমটি। এ ছাড়া, দুটি সূত্র তাকে যুদ্ধক্ষেত্রেও দেখেছে।
রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পরপরই প্রাক্তন এ ব্রিটিশ সেনা ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। তারপর প্রায় দেড় বছর দেশে কাটিয়েছেন তিনি। জেসন বলেন, ‘আমি ভাড়াটে যোদ্ধা নই। যে পক্ষকে সঠিক বলে মনে করি তাদের জন্য যুদ্ধ করি। আমার এ উদ্বেগ আছে যে, নির্বোধদের কারণে মিয়ানমার হতে পারে পরবর্তী ইউক্রেন।’ একটি নামহীন প্রতিরোধ বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন জেসন। বিদ্রোহীদের সাহায্য করতে তিনি এখন ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে ছয় থেকে ১০ জন প্রাক্তন সেনাদের নিয়ে একটি দল গঠনের পরিকল্পনা করেছেন।
জেসন বলেন, ‘আমাদের কাছে চারটি ভিন্ন সেনাবাহিনীর জ্ঞান রয়েছে, যা আমরা তাদের শেখাতে পারি। তারা শুধু তাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র চায়। আমরা আমাদের নিজস্ব দল নিয়ে বিদ্রোহীদের শ্বেতাঙ্গ ত্রাণকর্তা সাজতে চাই না। আমরা নিজেরা আলাদা দল গড়ার চেয়ে তাদের অধীনে কাজ করতে চাই।’ মিয়ানমারের অন্য পাশে ভারতের সীমান্তÍবর্তী চিন রাজ্যে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স জোল্যান্ড (পিডিএফ জোল্যান্ড) নামের প্রতিরোধ গোষ্ঠী গত ১১ মে সামাজিক প্ল্যাটফর্মে একটি ছবি পোস্ট করেছে, যেখানে দুই বিদেশি স্বেচ্ছাসেবককে দেখা গেছে। এর মাঝে একজন মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী আজাদ (ছদ্মনাম) এবং তার সাথে আছেন একজন ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবক।


আরো সংবাদ



premium cement