১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিপর্যয়ের মধ্যে ৭৬তম নাকবা দিবস পালন ফিলিস্তিনিদের

উত্তর ইসরাইলের হাইফার কাছে ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে ইসরাইলে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিরা ৭৬তম নাকবাবার্ষিকী উপলক্ষে এক র‌্যালিতে অংশ নেন : ইন্টারনেট -

১৯৪৮ সালের ১৫ মে মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছিল ফিলিস্তিনিরা। সেই ঘটনাকে নাকবা বা বিপর্যয়ের দিন হিসেবে পালন করে তারা। গতকাল ছিল নাকবার ৭৬তম বার্ষিকী। গাজায় ইসরাইল যুদ্ধের নামে গণহত্যা করে তাদের অব্যাহত সংগ্রামের ভয়াবহ স্মৃতি জাগিয়ে দিচ্ছে।
প্রায় ৭ লাখ ফিলিস্তিনির ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের আগে এবং ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পরে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। ফিলিস্তিনিরা একে আরবিতে নাকবা বলে, যার অর্থ বিপর্যয়।
যুদ্ধের পরে ইসরাইল তাদের ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিতে অস্বীকার করে কারণ এর ফলে তাদের সীমানার মধ্যে ফিলিস্তিনিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হতো। পরিবর্তে তারা স্থায়ী উদ্বাস্তু সম্প্রদায়ে পরিণত হয়েছে যার সংখ্যা এখন প্রায় ৬০ লাখ। বেশির ভাগই লেবানন, সিরিয়া, জর্দান এবং ইসরাইল-অধিকৃত পশ্চিমতীরে বস্তিসদৃশ শরণার্থী শিবিরে বসবাস করে। গাজায় শরণার্থী এবং তাদের বংশধররা জনসংখ্যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ। ফিলিস্তিনিদের ফিরে যাওয়ার অধিকার ইসরাইলের প্রত্যাখ্যান এই সঙ্ঘাতের মূল কারণ। ১৫ বছর আগে ভেঙে যাওয়া শান্তি আলোচনার সবচেয়ে জটিল বিষয়গুলোর মধ্যে একটি।
এখন অনেক ফিলিস্তিনি ভয় পাচ্ছে যে তাদের বেদনাদায়ক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আরো ভয়াবহ মাত্রায় হতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরাইল তার আক্রমণ বৃদ্ধি করার সাথে সাথে সমস্ত গাজাজুড়ে ফিলিস্তিনিরা গাড়ি এবং গাধার গাড়ি লোড করে উপচে পড়া তাঁবু ছেড়ে নিরাপদ জায়গার খোঁজে হেঁটে রওনা হচ্ছে। সাত মাসের যুদ্ধে বিভিন্ন সময়ের গণউচ্ছেদের চিত্রগুলো ১৯৪৮ সালের সাদা-কালো ফটোগ্রাফের সাথে সম্পূর্ণভাবে মিলে যাচ্ছে।
মুস্তাফা আল-গাজার (৮১) তার পরিবার নিয়ে মাসব্যাপী পালিয়ে তাদের গ্রাম থেকে বর্তমান মধ্য ইসরাইলের দক্ষিণ শহর রাফাহ যাওয়ার কথা এখনো স্মরণ করতে পারেন। তখন তার বয়স ছিল ৫ এবং তারা (ইসরাইলিরা) এক পর্যায়ে আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ করেছিল। তখন আল-গাজার ও তার পরিবার উষ্ণতায় ঘুমানোর জন্য একটি গাছের নিচে গর্ত খনন করেছিল আশ্রয় নিয়ে ছিলেন।
আল-গাজার এই সপ্তাহেই আবার পালাতে বাধ্য হন। এইবার মুওয়াসিতে একটি অনুর্বর উপকূলীয় অঞ্চলের তাঁবুতে আশ্রয় নেন যেখানে ইতোমধ্যেই প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি বাস করছিল। তিনি বলেন, পরিস্থিতি ১৯৪৮ সালের চেয়ে খারাপ। তখন ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসঙ্ঘের সংস্থা নিয়মিতভাবে খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছিল। এখন সেটাও তারা পাচ্ছেন না। তিনি বলেছিলেন, ১৯৪৮ সালে আমার আশা ছিল ফিরে আসার, কিন্তু আজ আমার আশা বেঁচে থাকার। এখন আমি সারাক্ষণ ভয়ের মধ্যে থাকি। আমি আমার সন্তান ও নাতি-নাতনীদের ভরণপোষণ দিতে পারি না। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়তে পড়তে বলেন।


আরো সংবাদ



premium cement