যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া আলোচনার পর ইউক্রেনকে দোষারোপ ট্রাম্পের

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে সৌদি আরবে যে আলোচনা হচ্ছে সেখানে কিয়েভকে আমন্ত্রণ না জানানো একটি ‘বিস্ময়’ বলে প্রেসিডেন্ট ভলোদেমির জেলেনস্কি মন্তব্য করার পর ইউক্রেনের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়ায় ‘অসন্তুষ্ট’ হয়েছেন আর দেশটি ‘একটি চুক্তি করতে পারত’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু করার জন্য আপাতভাবে ইউক্রেনকেই দোষারোপ করেছেন।
প্রায় তিন বছর আগে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের মধ্য দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। সৌদি আরবে আলোচনার পর রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইউক্রেইন যুদ্ধ শেষ করা নিয়ে আলোচনা শুরু করতে প্রতিনিধিদল নিয়োগে সম্মত হয়েছে তারা। এরপর ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে বিবিসি জিজ্ঞেস করে, ইউক্রেনীয়রা প্রতারিত বোধ করতে পারে, তাদের কাছে তার বার্তা কী।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমি শুনেছি তাদের জন্য কোনো আসন না থাকায় তারা হতাশ হয়েছে, ঠিক আছে, তিন বছর ধরে এবং তারও অনেক আগে থেকে তাদের জন্য একটি আসন ছিল। এটি খুব সহজেই মিটমাট করে নেয়া যেত। আপনাদের এটি শুরু করা উচিত হয়নি। আপনারাই একটি চুক্তি করতে পারতেন। আমি ইউক্রেনের জন্য একটি চুক্তি করতে পারতাম। তাতে তাদের প্রায় সব ভূমিই দেয়া হতো, সবকিছু, প্রায় সব ভূমি- আর কোনো মানুষ নিহত হতো না, কোনো শহর ধ্বংস হতো না। সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের বৈঠক শেষে ট্রাম্প জানান, তিনি ‘আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী’। তারা খুব ভালো। রাশিয়া কিছু করতে চায়। তারা এই হিংস্র বর্বরতা বন্ধ করতে চায়। আমার মনে হয়, এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানোর ক্ষমতা আমার আছে, বলেন তিনি। ইউক্রেনে ইউরোপীয় দেশগুলোর সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, তারা যদি সেটা করতে চায়, সেটি দারুণ হবে, আমি এর পক্ষে থাকব।
ইউক্রেনে রাশিয়া পূর্ণ মাত্রার আক্রমণ শুরু করার পর থেকে সৌদি আরবের রিয়াদেই রাশিয়া ও মার্কিন প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রথম সরাসরি বৈঠক হলো। এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাথে আলোচনা করার পর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, কোনো শান্তি চুক্তির অধীনেই ইউক্রেনে ন্যাটো জোটভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর শান্তিরক্ষা বাহিনী মেনে নেবে না রাশিয়া।
এ দিকে ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের বৈঠক। এই বৈঠককে ইউক্রেইন যুদ্ধ অবসানের দীর্ঘ ও কঠিন পথে যাত্রার ‘প্রথম ধাপ’ বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ও দিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া দুই দেশই পূর্ণ সহযোগিতার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে রাজি হয়েছে।
প্রায় তিন বছর ধরে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন চলছে। এর মধ্যে এবারই প্রথম সেই যুদ্ধ বন্ধে সরাসরি আলোচনায় বসল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। তবে এই আলোচনায় আমন্ত্রিত ছিল না ইউক্রেইন ও ইউরোপীয় দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিরা সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের দিরিয়া প্রাসাদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
বৈঠকের পর রুবিও বলেন, আমরা ইউক্রেন যুদ্ধ অবসান নিয়ে প্রাক-আলোচনা করছি না। এটি হচ্ছে কিছু সময়ের জন্য রুদ্ধকক্ষে কঠিন কূটনীতির মতো কিছু বিষয়। সঙ্ঘাত শেষ হতে হলে তাতে জড়িত সব পক্ষই এ প্রক্রিয়ায় রাজি থাকতে হবে বা তাদের কাছে প্রক্রিয়াটি গ্রহণযোগ্য হতে হবে।