সিরিয়ায় বাথ পার্টি নিষিদ্ধ আল-সারা অন্তর্বতী প্রেসিডেন্ট

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাধ্যমে সিরিয়ায় রাজনৈতিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশটির বিপ্লবী নেতা আহমদ আল-শারার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সাথে সিরিয়ার সংবিধান স্থগিত করা হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের বাথ পার্টিও বিলুপ্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির বিদ্যমান সশস্ত্র বাহিনীগুলো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানার (এসএএনএ) বরাতে গতকাল বৃহস্পতিবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বুধবার সানার খবরে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার জন্য আল-শারাকে একটি অস্থায়ী আইন পরিষদ গঠনের ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে। নতুন একটি সংবিধান গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত এ আইন পরিষদ নিজেদের দায়িত্ব পালন করবে।
সিরিয়ার কার্যত নতুন সরকারের সামরিক পরিচালনা খাতের মুখপাত্র হাসান আবদুল গনি ওই ঘোষণা দিয়েছেন। দেশটির বিদ্যমান সশস্ত্র বাহিনীগুলোর বিলুপ্তিও ঘোষণা করেন তিনি। মুখপাত্র আবদুল গনি বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনী বিলুপ্ত ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে তা একীভূত করা হয়েছে।’ সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাও বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করেছেন আবদুল গনি। তিনি আরো বলেন, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের বাথ পার্টি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়ায় পৌঁছালে বাশারের বিরুদ্ধে গণপ্রতিবাদ শুরু হয়। শুরুতে তরুণদের বিক্ষোভ হিসেবে যাত্রা শুরু করা আন্দোলন ধীরে ধীরে রূপ নেয় পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে। এবার গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে পালিয়ে রাশিয়ায় যান সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ।
সিরিয়ার প্রকৃত নেতা আহমদ আল-শারাকে দেশটির অন্তর্বর্তী পর্যায়ের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে আক্রমণে নেতৃত্ব দেয়া সামরিক কমান্ড বুধবার এ ঘোষণা দিয়েছে।
সিরিয়ার সংবিধান স্থগিত করা হয়েছে এবং অন্তর্বর্তী পর্যায়ের জন্য শারা একটি অস্থায়ী আইন পরিষদ গঠনের ক্ষমতা পেয়েছেন। ঘোষণায় বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তী পর্যায়ে দেশের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন শারা। তিনি সিরিয়া আরব রিপাবলিকের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে প্রতিনিধিত্ব করবেন।’
নতুন সংবিধান গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত নতুন আইন পরিষদ তাদের দায়িত্ব পালন করবে। গত বছর আসাদের শাসনামলে যে পার্লামেন্ট নির্বাচিত হয়েছিল তা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করা হয়। ঘোষণায় বাশার আল আসাদের বাথ পার্টি ও তার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিলুপ্তির যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল তা পুনর্ব্যক্ত করা হয়। এতে আরো বলা হয়, যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে লড়াই করেছে সেগুলো বিলুপ্ত হয়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোতে আত্তীকৃত হবে।
ক্ষমতা থেকে বাশার আল আসাদকে উৎখাতে চালানো অভিযানে অংশ নেয়া সামরিক কমান্ডারদের এক সম্মেলনে এসব সিদ্ধান্ত হয়। ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) প্রধান নেতা শারা। সম্মেলনে দেয়া বক্তৃতায় শারা বলেছেন, সিরিয়ায় প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে ‘বৈধ ও আইনি পথে’ সরকারের শূন্যতা পূরণ করা।
তিনি আরো বলেন, অবশ্যই ‘ট্রানজিশনাল জাস্টিস’ এর মাধ্যমে নাগরিকদের শান্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রতিশোধের প্রদর্শনী প্রতিরোধ করতে হবে, সর্বাগ্রে সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন করতে হবে, অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় সম্মেলন, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার আর চূড়ান্ত পর্যায়ে নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক উত্তরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শারা। এগুলো সম্পন্ন করতে চার বছরের মতো সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
নতুন অস্থায়ী আইন পরিষদ কবে নাগাদ গঠিত হতে পারে তা বুধবারের ঘোষণায় জানানো হয়নি। অন্তর্বর্তী পর্যায়ের সময়সীমা নিয়েও নতুন করে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ চলাকালে নুসরা ফ্রন্ট দেশটিতে আল কায়েদার শাখা ছিল। নুসরা ফ্রন্ট ২০১৬ সালে আল কায়েদার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।