নির্ধারিত সময় শেষেও লেবানন ছাড়েনি ইসরাইলি বাহিনী
সীমান্তবর্তী লেবানিজদের ঘরে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা- বিবিসি ও রয়টার্স
- ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরাইলি সৈন্য প্রত্যাহারের সময়সীমা গতকাল রোববার ভোররাতে পার হয়ে গেলেও দেশটির সেনারা কয়েকটি এলাকায় রয়ে গেছেন। ইসরাইলের দাবি, হিজবুল্লাহর সাথে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় এমনটি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর সাথে ১৪ মাস ধরে চলা সঙ্ঘাত ৬০ দিনের এক যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
চুক্তিতে দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার ও হিজবুল্লাহর যোদ্ধা ও অস্ত্রশস্ত্র সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি নির্ধারিত হয়। একই সময়ে ওই এলাকায় কয়েক হাজার লেবাননী সেনা মোতায়েনের কথা রয়েছে। হিজবুল্লাহ কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে ছিল। এটি লেবাননের প্রেসিডেন্ট, সেনাবাহিনীর প্রধান যোসেফ আউনের জন্য প্রথম বড় ধরনের পরীক্ষা, যিনি দেশটিতে স্থিতিশীলতা আনতে চান।
শনিবার আউনের দফতর বলেছে, দক্ষিণের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ‘নিবিড় যোগাযোগ ও পরামর্শ’ অব্যাহত রাখা হয়েছে, এগুলোর মধ্যে ‘বিপজ্জনক ইসরাইলি অনুশীলনও’ অন্তর্ভুক্ত। নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ার পরও ইসরাইলি সেনা রয়ে যাওয়ার বিষয়টিতে হিজবুল্লাহ কী প্রতিক্রিয়া জানাতে যাচ্ছে তা পরিষ্কার হয়নি, তবে ইসরাইলের সাথে শত্রুতা আবার শুরুর বিষয়টি দেশটিজুড়ে প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শুক্রবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে, “যুদ্ধবিরতিতে ইসরাইলি বাহিনীর প্রত্যাহারের রূপরেখার শর্ত ছিল হিজবুল্লাহ নিজেদের প্রত্যাহার করে লিটানি নদীর অপর পাশে সরে যাবে আর চুক্তি পুরোপুরি এবং কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে দক্ষিণ লেবাননে দেশটির সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে।” লিটানি লেবানন ও ইসরাইলের মধ্যবর্তী অনানুষ্ঠানিক সীমান্ত ‘ব্লু লাইন’ থেকে লেবাননের ৩০ কিলোমিটার ভেতরের দিকের একটি নদী।
ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “যেহেতু লেবানন রাষ্ট্র এখনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেনি, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পূর্ণ সমন্বয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে প্রত্যাহার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে।” তবে ইসরাইলি বাহিনী লেবাননে আর কত দিন অবস্থান করবে বিবৃতিতে এ বিষয়ে পরিষ্কার কিছু বলা হয়নি। লেবাননে কত জন ইসরাইলি সেনা এখনো রয়ে গেছে তাও পরিষ্কার হয়নি।
শনিবার এক বিবৃতিতে লেবাননের সেনাবাহিনী বলেছে, “তারা সীমান্ত বরাবর এলাকাগুলোতে সেনা মোতায়েন বাড়ানোর মধ্য দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছে, কিন্তু সেনা প্রত্যাহারে ইসরাইলি শত্রুদের দীর্ঘসূত্রতা সেনাবাহিনীর মোতায়েন মিশনকে জটিল করে তুলছে।” বাসিন্দাদের সীমান্ত এলাকায় ফেরা থেকে বিরত থাকার জন্যও লেবাননের সেনাবাহিনী আহ্বান জানিয়েছে।
হিজবুল্লাহ এসব বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এর আগে বৃহস্পতিবার তারা বলেছিল, “সময়সীমা মেনে চলার ব্যর্থতা চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন হবে, আর এটি লেবাননের সার্বভৌমত্বেরও লঙ্ঘন হবে এবং দখলদারিত্বের একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করবে।” কিন্তু ইসরাইলি সেনারা চুক্তিতে নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ার পরও থেকে গেলে হিজবুল্লাহ কী প্রতিক্রিয়া জানাবে, সে বিষয়ে বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের পক্ষ নিয়ে ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহ। ইসরাইলও পাল্টা জবাব দিয়ে আসছিল। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই সঙ্ঘাত তীব্র যুদ্ধের রূপ নেয়। ইসরাইলের এসব আক্রমণে লেবাননজুড়ে প্রায় চার হাজার মানুষ নিহত হয়। এদের মধ্যে বহু বেসামরিক আছেন। প্রায় ১২ লাখ লেবাননি বাস্তুচ্যুত হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা